আদালতে কিছুটা নতি স্বীকার করতে হলেও, রাজনৈতিক লড়াই জারি রাখছে রাহুল-ব্রিগেড। —ফাইল চিত্র।
শাস্তির খাড়া থেকে বাঁচতে ঢোক গিললেন রাহুল গাঁধী। সুপ্রিম কোর্টকে বললেন, মহাত্মা গাঁধীর হত্যার জন্য আরএসএসকে দায়ী করেননি তিনি।
লোকসভা নির্বাচনের প্রচারের সময় মহারাষ্ট্রের একটি সভায় রাহুল গাঁধী বলেছিলেন, ‘‘আরএসএসের লোকেরা গাঁধীজিকে হত্যা করেছে।’’ মহাত্মা গাঁধীর হত্যার জন্য সরাসরি আরএসএসকে দায়ী করায় সঙ্ঘের পক্ষ থেকে রাহুলের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়। এত দিন গোঁ ধরে বসে থাকলেও আজ রাহুলের পক্ষ থেকে আইনজীবী কপিল সিব্বল জানিয়ে দেন, গাঁধী-হত্যার জন্য রাহুল আরএসএসকে একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে দায়ী করেননি। আরএসএসের কিছু লোকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছিলেন। এর পরেই মানহানির মামলা থেকে রাহুলকে নিষ্কৃতি দেওয়ার ইঙ্গিত দেন বিচারপতি। ১ সেপ্টেম্বর এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবে শীর্ষ আদালত।
বিচারপতি দীপক মিশ্র ও আর এফ নরিম্যানের বেঞ্চ গত জুলাই মাসে শুনানিতে রাহুলকে বলে, আপনি কোনও সংগঠনের বিরুদ্ধে এ ধরণের অভিযোগ করতে পারেন না। রাহুলের কৌঁসুলি আদালতকে তখন জানান, এটি ঐতিহাসিক তথ্য। সরকারি রেকর্ডেও এর উল্লেখ রয়েছে। শীর্ষ আদালত তখন বলে, যদি তাই হয়, তাহলে রাহুল গাঁধীকে আদালতে প্রমাণ করতে হবে, আরএসএস এর সঙ্গে জড়িত ছিল। সে ক্ষেত্রে মামলার শুনানি হবে। নয়তো রাহুলকে ক্ষমা চাইতে হবে। বেগতিক বুঝে আজ রাহুলের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়, সংগঠন হিসেবে আরএসএসের বিরুদ্ধে কোনও মন্তব্য তিনি করেননি। এর পরই সুপ্রিম কোর্ট বলে, মানহানির মামলা তুলে নেওয়ার জন্য এটি পর্যাপ্ত। আরএসএসের পক্ষ থেকে আইনজীবী ইউ আর ললিত বলেন, তাঁর মক্কেলের সঙ্গে পরামর্শ করার জন্য কিছু সময় প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয়, পরবর্তী শুনানি হবে ১ সেপ্টেম্বর।
আদালতে পিছু হঠলেও, রাহুলের আইনজীবী তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কপিল সিব্বল আরএসএস-কে রাজনৈতিক আক্রমণ করতে কিন্তু ছাড়েননি। বিকেলে তিনি এক সাংবাদিক সম্মেলন করে ১৯৪৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির একটি সরকারি বিজ্ঞপ্তি সামনে এনেছেন। সেই বিজ্ঞপ্তিতে সঙ্ঘকে ‘বিপজ্জনক’ কাজে লিপ্ত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। দেশের অনেক প্রান্তে সঙ্ঘের সদস্যরা হিংসা, ডাকাতি ও হত্যার কাজে লিপ্ত বলে সেই বিজ্ঞপ্তিতে লেখা হয়েছিল। সিব্বলের মতে, ‘‘এই কথা রাহুল গাঁধী বলছেন না। সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে আছে।’’ সিব্বলের প্রশ্ন, ‘‘আরএসএস এই সবের বিরুদ্ধে মামলা করে না কেন?’’
আরও পড়ুন: সমালোচনা থামাতে মরিয়া জয়ললিতাকে তিরস্কার সুপ্রিম কোর্টের
গাঁধী-হত্যাকারী নাথুরাম গডসের সঙ্গে সঙ্ঘের কোনও যোগসূত্র নেই বলে লালকৃষ্ণ আডবাণীও এক সময় দাবি করেছিলেন। নাথুরাম গডসের ভাই গোপাল সে সময় আডবাণীর দাবির বিরোধিতা করে বলেছিলেন, তাঁরা সব ভাইয়েরাই সঙ্ঘের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সিব্বল সে প্রসঙ্গও এ দিন তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘‘ঐতিহাসিক প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও নিছক রাজনৈতিক কারণে রাহুলের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।’’ আরএসএস সূত্র বলছে, রাহুল নিজের বক্তব্য থেকে পিছু না হঠলে কোনও ভাবেই তাঁকে ছাড়া হত না। রাহুল পিছু হঠেছেন। তাই এ বার শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, ১ সেপ্টেম্বর আদালতকে কী জানানো হবে। বিজেপির মুখপাত্র সম্বিত পাত্র বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী সরাসরি ক্ষমা চাননি বটে। কিন্তু নিজের মন্তব্য থেকে পিছু হঠে অন্য ভাবে ভুল স্বীকার করেছেন। যে ভাবে সুপ্রিম কোর্ট তাঁর বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান নিয়েছে, তাতে নিজের ইগো গিলতে হল। আর এ-ও প্রমাণ হল, ইতিহাস এখনও ভুল জানেন তিনি। ভুল অভিযোগ করে তিনি যে পার পাবেন না, সেটি বুঝেছেন। বিজেপি এখনও চায়, তিনি ক্ষমা চান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy