নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
লক্ষ্য ছিল, লালকেল্লায় বক্তৃতা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে তুলোধোনা করা। আর তা করতে গিয়ে মোদীর পূর্বসূরি অটলবিহারী বাজপেয়ীকে ‘নিজেদের’ করে নিলেন বিরোধীরা। আজ রাজধানীতে এক সভায় এবং তার আগে আলাপচারিতায় দুই প্রধানমন্ত্রীর তুলনা করে রাহুল গাঁধী, সীতারাম ইয়েচুরিরা বুঝিয়ে দিলেন, বর্তমান প্রধানমন্ত্রী এখন যতই অটল-ভজনা করুন, তাতে ইতিহাস পাল্টানো যাবে না। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর আদর্শের উত্তরসূরি অন্তত বর্তমান নন।
গুজরাতের দাঙ্গার পরে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদীকে রাজধর্ম পালন করতে বলেছিলেন প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী। তা নিয়ে উত্তাল হয়েছিল জাতীয় রাজনীতি। সেই ঘটনার এক যুগ পরে প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন মোদী। এ দিন সেই সূত্র ধরেই সভামঞ্চের নীচে দাঁড়িয়ে বিরোধী নেতারা আলাপচারিতায় বললেন, ‘‘কোথায় বাজপেয়ী, আর কোথায় মোদী-অমিত শাহ! আজও রাজধর্মের মানে জানেন না মোদী। শুধুই ক্ষমতার লোভ!’’
দুপুর ১টায় সভা যখন শুরু হল, মঞ্চে তখন রাহুল গাঁধী, মনমোহন সিংহ, সীতারাম ইয়েচুরি, ফারুক আবদুল্লা, জয়ন্ত চৌধরি, শরদ যাদবেরা। এসেছেন সদ্য বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়া চন্দন মিত্রও। সভা শুরুর আগে আলাপচারিতায় বিরোধী নেতারা যা বলছিলেন, মঞ্চেও ঘটল তারই প্রতিফলন। রাহুল গাঁধী বাজপেয়ীর জন্য প্রার্থনা করলেন। সভা সেরেই ছুটলেন এইমসে, সঙ্কটজনক প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীকে দেখতে। আজই রাহুল ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, বাজপেয়ী এমন এক জন ব্যক্তিত্ব, যিনি শুধু নিজের দলেই নন, বিরোধীদের কাছেও গ্রহণযোগ্য ছিলেন। সেই সূত্র ধরে অন্য বিরোধী নেতারাও বোঝালেন, বাজপেয়ীর উচ্চতার ধারেকাছে নন মোদী-শাহরা।
ফারুক আবদুল্লা সভায় বললেন, ‘‘এই অটলকেই এক সময় চিনেছিলেন নেহরু। নিজে কংগ্রেসি হয়েও জনসঙ্ঘের অটলকে বলেছিলেন, আপনি একদিন দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। আর আজ মোদী ধর্মের নামে বিভাজনের চেষ্টা করছেন। বিরোধীদের একজোট হতে হবে। মুসলিম মানেই সন্ত্রাসবাদী নয়। নেহরু-ইন্দিরা-রাজীবের দেখানো পথেই চলতে হবে।’’ সপা-র ধর্মেন্দ্র যাদব বললেন, ‘‘মোদী বলেন, তাঁর আসার আগে কংগ্রেস কোনও কাজ করেনি। কংগ্রেস তো দূর, মোদী বাজপেয়ী জমানার সাফল্যও মুখে আনেন না!’’ এই প্রসঙ্গেই কংগ্রেস নেতারা বলছেন, গত কাল কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে বাজপেয়ীর পথ নেওয়ার কথা বলেছেন মোদী। চার বছর ধরে কেন সেই পথ নেওয়ার কথা মোদী ভাবেননি? সভায় আরএলডির জয়ন্ত চৌধরি উদ্ধৃত করলেন বাজপেয়ীর কবিতা, ‘বাধায়ে আতি হ্যায়… কদম মিলাকর চলনা হোগা।’ জয়ন্ত বললেন, বাজপেয়ী এ কবিতা বিরোধীদের জন্যই লিখে গিয়েছেন।
বিরোধীদের সেই সভা শেষের কিছু পরেই ঘোষণা হল বাজপেয়ীর প্রয়াত হওয়ার খবর। দ্রুত টুইট করে শ্রদ্ধা জানালেন রাহুল। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত এক মহান সন্তানকে হারাল। আমরা ওঁকে মিস করব।’’ সনিয়া গাঁধী তাঁর শোকবার্তায় বাজপেয়ীকে শ্রদ্ধা জানিয়ে বলেন, ‘‘জাতীয় জীবনে এক অন্য উচ্চতার মানুষ ছিলেন উনি। ওঁর মৃত্যু এক বিরাট শূন্যতা তৈরি করল।’’ টুইটারে তাঁর পূর্বসূরিকে শ্রদ্ধা জানালেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহও। তিনি বাজপেয়ীর পালিতা-কন্যা নমিতা ভট্টাচার্যকে শোক জানিয়ে চিঠিও দেন। দলমত নির্বিশেষে প্রয়াত প্রধানমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সকলেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy