Advertisement
০২ মে ২০২৪

করাচিতে জোড়া পরমাণু চুল্লি, উদ্বেগে নয়াদিল্লি

দু’টি পরমাণু চুল্লি আগেই ছিল। এ বার তার সঙ্গে জুড়ছে আরও দু’টি নতুন চুল্লি (রিঅ্যাক্টর)। গত সপ্তাহে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে আসা একটি রিপোর্ট বলছে, করাচিতে নতুন দু’টি পরমাণু চুল্লি বসাতে চিনের সঙ্গে অতি সম্প্রতি চুক্তি করেছে পাকিস্তান।

অগ্নি রায়
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

দু’টি পরমাণু চুল্লি আগেই ছিল। এ বার তার সঙ্গে জুড়ছে আরও দু’টি নতুন চুল্লি (রিঅ্যাক্টর)। গত সপ্তাহে বিদেশ মন্ত্রকের কাছে আসা একটি রিপোর্ট বলছে, করাচিতে নতুন দু’টি পরমাণু চুল্লি বসাতে চিনের সঙ্গে অতি সম্প্রতি চুক্তি করেছে পাকিস্তান। বিষয়টি যতটা সম্ভব গোপনেই রেখেছে ইসলামাবাদ এবং বেজিং। সূত্রের খবর, এই নতুন চুল্লি বসানোর জন্য আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত সমস্ত সহায়তাই দেবে চিন। এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে বিদেশ প্রতিমন্ত্রী ভি কে সিংহ জানিয়েছেন, ‘‘ভারত সরকার এ ব্যাপারে অবগত। ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থ যাতে অক্ষুণ্ণ থাকে তা নিশ্চিত করতে সব রকম ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’’

মূলত বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে করাচির নতুন পরমাণু চুল্লি দু’টিতে। তা হলে ভারতের উদ্বেগের কারণ কী?

বিদেশ মন্ত্রকের এক কর্তা জানাচ্ছেন, পরমাণু চুল্লিতে বিদ্যুতের পাশাপাশি অস্ত্র বানানোর প্রক্রিয়া পাকিস্তান বরাবর চালিয়ে গিয়েছে। ভারতের অভিযোগ, চুল্লিতে বা়ড়তি জ্বালানি ব্যবহার করে তা বোমা তৈরির জন্য সরিয়ে রাখে ইসলামাবাদ। তারা নিউক্লিয়ার সাপ্লাই গ্রুপ (এনএসজি)-এর সদস্য না হওয়ায় পাক চুল্লিগুলিতে কোনও আন্তর্জাতিক নজরদারির ব্যবস্থা নেই। তা ছাড়া এখনও পর্যন্ত পরমাণু অস্ত্র প্রসার-রোধ চুক্তিতে স্বাক্ষর না-করায় গোপনে তারা কার্যত অবাধে পরমাণু অস্ত্র কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানের কাছ থেকেই ইরানে পরমাণু প্রযুক্তি চোরাচালান হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য জেলে যেতে হয়েছে পাকিস্তানের পরমাণু কর্মসূচির জনক আব্দুল কাদির খানকে। পাকিস্তানের মাধ্যমে তালিবান ও অন্য সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীও পরমাণু বোমা পেয়ে যেতে পারে বলে অনেক বার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আন্তর্জাতিক মান্য গবেষকরা। বিদেশ মন্ত্রকের বক্তব্য, পরমাণু অস্ত্র নিয়ে বরাবরই ভারতকে চাপে ফেলার কৌশল নিয়ে চলেছে চিন ও পাকিস্তান। তাই নতুন দু’টি চুল্লি তৈরির খবরকে নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে দিল্লি।

খবর পাওয়ার পর গত সপ্তাহের গোড়ার দিকেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা এবং বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর দফতরের শীর্ষ কর্তারা। পরমাণু অস্ত্রের প্রশ্নে ভারতের শক্তি এই মুহূর্তে ঠিক কোন জায়গায়, তা আরও এক বার ঝালিয়ে দেখা হচ্ছে। পরমাণু অস্ত্র প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনাও নেওয়া হচ্ছে। ৪০ হাজার কোটি টাকায় রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী ব্যবস্থা কেনার বিষয়ে আজই ছাড়পত্র দিয়েছে সরকার।

প্রতিরক্ষা সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই আন্তর্দেশীয় দূর নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র, জাহাজ থেকে উৎক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং পরমাণু অস্ত্র প্রতিরোধ ব্যবস্থার আওতা বাড়ানোর দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে। শেষ খবর অনুযায়ী ভারতের থেকে পাকিস্তানের হাতে ১০টি বেশি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে। চিনের রয়েছে ১৪০টি বেশি। পাশাপাশি এই তথ্যটাও দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমি পর্যবেক্ষকেরা তুলে ধরছেন যে বিশ্বের মধ্যে পাকিস্তানেই সব চেয়ে দ্রুত হারে বাড়ছে পারমানবিক অস্ত্র। দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার অস্থির এই সময়ে পরমাণু-বিপদের আশঙ্কাও এই দেশ থেকেই সব চেয়ে বেশি বলে মনে করা হচ্ছে। তবে গবেষকদের একাংশের মতে, কোন দেশে কতগুলি পরমাণু অস্ত্র রয়েছে তার পাল্লা দেওয়াটা নিরর্থক। কারণ, হিসেব অনুযায়ী পরমাণু অস্ত্রের এক

কণা অর্থাৎ মাত্র ১ মেগাটনই উড়িয়ে দিতে পারে ২১০ বর্গ কিলোমিটার (যা দক্ষিণ মুম্বইয়ের তিন গুণ এলাকা)! ফলে বেশি অস্ত্র বাড়়ানোর পাশাপাশি পরমাণু অস্ত্র প্রতিরোধ করার ক্ষমতা বাড়ানোর দিকে জোর দেওয়া বেশি প্রয়োজন বলে মনে করছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক।

বেজিং-ইসলামাবাদ— পরমাণু শক্তিধর এই প্রতিবেশী অক্ষটি বরাবরই ভারতকে চাপে রেখে এসেছে। কিছু দিন আগে আর্থিক করিডর গড়তে দু’দেশের মধ্যে ৪৬০০ কোটি ডলারের চুক্তি হয়েছে। যে চুক্তির মধ্যে রয়েছে দু’দেশের মধ্যে রেল এবং সড়ক পরিকাঠামো তৈরির কথা। ভারত তাতে প্রবল আপত্তি তুলে জানিয়েছিল, প্রস্তাবিত এই রেলপথ পাক অধিকৃত জম্মু ও কাশ্মীরের একটি অংশের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। সাউথ ব্লকের উদ্বেগের কারণ, এই অর্থনৈতিক করিডরের ফলে কাশ্মীরের বিতর্কিত অংশে নিজেদের পেশি প্রদর্শন বাড়াবে ইসলামাবাদ এবং পাক সীমান্তে আরও বেশি করে ঘাঁটি গাড়বে চিন— যা ভারতের সীমান্ত নিরাপত্তার পক্ষে উদ্বেগের।

অথচ প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্বভার নেওয়ার পর প্রতিবেশী-কূটনীতিই প্রধানমন্ত্রীর বিদেশনীতিতে অগ্রাধিকার পেয়েছে। ইউপিএ আমলে ভারতকে সব চেয়ে চাপে রাখা দুই প্রতিবেশী পাকিস্তান এবং চিনকে নিয়ে পৃথক কৌশল রচনা করেছে মোদী সরকার। দু’দেশের সঙ্গে সংঘাতের জায়গাগুলিকে পৃথক ভাবে চিহ্নিত করে পাশাপাশি বাণিজ্য ও দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছে সরকার। তবে দু’দেশের সঙ্গেই এই কৌশলে বার বার দিল্লিকে পিছু হঠতে হয়েছে। পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ সংঘাতের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পর ফের শুরু হয়েছে আলোচনা প্রক্রিযা। বিদেশ মন্ত্রকের ওই কর্তার মতে, ‘‘আলোচনা শুরু হয়েছে মানে এই নয় যে নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এতটুকু আলগা দেওয়া হয়েছে। বরং সতর্কতা আরও বাড়ানো হচ্ছে।’’

এই অবস্থায় পাকিস্তানে নতুন পরমাণু চুল্লি তৈরি হওয়ার বিষয়টি নিঃসন্দেহে অস্বস্তি বাড়াচ্ছে দিল্লির। বিশেষ করে সে চুল্লি যখন তৈরি করছে চিন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE