শরণার্থীদের নাগরিকত্ব বিল নিয়ে প্রশ্ন তুললেন অসমের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী, অগপ বিধায়ক প্রফুল্লকুমার মহন্ত। বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, পার্সিরা যদি নাগরিকত্ব পেয়ে যান, তাহলে অসমের ওপর বিরাট বোঝা চাপবে বলে তিনি রাজ্য সরকারকে সতর্ক করে দেন। আজ গুয়াহাটিতে, বিধানসভায় দাঁড়িয়ে অসম চুক্তির প্রসঙ্গ টেনে মহন্ত ভূমিপুত্রদের সুরক্ষার দিকটি বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখতে সরকারকে পরামর্শ দিলেন।
তবে লিখিত প্রশ্নের জবাবে সরকার এক বাক্যে সব কিছু এড়াতে সক্ষম হয়। কিন্তু মুশকিলে পড়ে পরিপূরক প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে। অনেকটা বিরোধী দলের সদস্যের মতো সরকারকে চেপে ধরেন শাসক জোটের অন্যতম শরিক অসম গণ পরিষদের এই নেতা।
অসম চুক্তি অনুসারে ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের আগে থেকে যারা এই রাজ্যে বসবাস করছেন, তাঁরাই নাগরিকত্বের অধিকারী। সেই সূত্র মেনেই এনআরসি-তে নাম তোলার প্রক্রিয়া চলছে। এরই মধ্যে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব প্রদানে সংশোধনী বিল লোকসভায় পেশ হয়েছে। এ নিয়েই প্রফুল্ল মহন্ত আজ বিধানসভায় জানতে চান, ওই তারিখের পরও বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা অসমে প্রবেশ করলে তাদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারেও রাজ্য সরকার কেন্দ্রকে সুপারিশ করেছে কিনা। তাঁর আরও জিজ্ঞাস্য, শরণার্থীর বোঝা যে আর অসমের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়, তারা কি তা কেন্দ্রকে জানাবে? তারা কি কেন্দ্রের প্রস্তাবে আপত্তি জানাবে? মুখ্যমন্ত্রীর হয়ে লিখিত প্রশ্নের জবাব দেন পরিবহণ মন্ত্রী চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি। অতি সংক্ষিপ্ত উত্তর। প্রথম ও তৃতীয় প্রশ্নে শুধুই ‘না’ লেখা। দ্বিতীয় প্রশ্নে একটিমাত্র বাক্যে উত্তর, ‘বোঝার কথা রাজ্য সরকারের জানা নেই।’
প্রায় একই ধরনের প্রশ্ন লিখিত ভাবে পেশ করেছিলেন কংগ্রেস বিধায়ক আব্দুল খালেকও। তাঁর প্রশ্ন, বৈধ বা অবৈধভাবে যে সব হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন ভারতে প্রবেশ করেছেন, কেন্দ্র যে তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের কথা ভাবছে, অসম সরকার তা অবগত কিনা। দ্বিতীয়ত, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর যারা এসেছে তাদেরও কি নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে? এতে কি অসম চুক্তি লঙ্ঘিত হবে না? এবং চতুর্থত, পালিয়ে আসা মানুষদের কী কী শর্তে নাগরিকত্ব প্রদানের কথা ভাবছে কেন্দ্র?
অসম চুক্তি রূপায়ণ বিভাগ এই সময়ে মুখ্যমন্ত্রীর সর্বানন্দ সোনোয়ালের হাতে। তাঁর হয়ে লিখিত জবাব দেন জলসম্পদ মন্ত্রী কেশব মহন্ত। মন্ত্রী জানান: বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে আসা যে সব হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান, জৈন, পার্সি প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর মানুষ ভারতে বসবাস করছেন, ১৯৫৫ সালের ভারতীয় নাগরিকত্ব আইনের সংশোধন করে কেন্দ্র তাদের নাগরিকত্ব প্রদানের কথা গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। গত ১৫ জুলাই এ সংক্রান্ত একটি সংশোধনী বিল সংসদে পেশ করা হয়েছে। কিন্তু এই বিল সম্পর্কে বিস্তৃত তথ্য এখনও রাজ্য সরকারের হাতে পৌঁছয়নি। দ্বিতীয়ত, সংশোধনী বিলে কী কী প্রস্তাব আনা হয়েছে, তা জানা নেই বলে এখনই আর কিছু বলা সম্ভব নয়। এরপর অবশ্য আর কোনও জবাবের প্রশ্ন ওঠে না।
এ ভাবেই লিখিত প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে যেতে সক্ষম হন দুই মন্ত্রী। মুশকিলটা হয় বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মহন্ত পরিপূরক প্রশ্ন করলে। একে অবশ্য শুধু প্রশ্ন বলা চলে না। তিনি রীতিমতো এ নিয়ে বক্তৃতা করেন। পরে ইনিয়ে-বিনিয়ে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বারবার জানতে চান, অসম চুক্তির শর্তের সঙ্গে শরণার্থীদের নাগরিকত্ব বিলের কোথাও কি সংঘাতের সম্ভাবনা রয়েছে? চন্দ্রমোহন পাটোয়ারি বারবার তাঁকে বলেন, সংশোধনীতে কী কী প্রস্তাব রাখা হয়েছে, রাজ্য সরকার এখনও অবগত নয়। আর তা না জেনে কিছু বলাও ঠিক হবে না। এরপরও যখন, কেন এতদিনেও অসম চুক্তি বাস্তবায়ন হল না, জানতে চাইলেন মহন্ত, তখন আর মেজাজ ধরে রাখতে পারেননি তাঁর একদা-সতীর্থ চন্দ্রমোহন। মহন্ত যে দু’বার মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, নিজে অসম চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন, স্মরণ করিয়ে দিয়ে পাটোয়ারি পাল্টা জিজ্ঞেস করেন, এরপরও কেন অসম চুক্তি বাস্তবায়িত হয়নি বলে অভিযোগ করতে হচ্ছে!
এরপরই নিরস্ত হন প্রফুল্ল মহন্ত। শাসকজোটের শরিক অগপ দলের অন্য বিধায়করা তখন নীরবই ছিলেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy