আরএসএসের আমন্ত্রণ পেলেও রাহুল গাঁধী তাদের অনুষ্ঠানে যাবেন, এমন কোনও ইঙ্গিত এখনও দিচ্ছেন না কংগ্রেস নেতারা। কিন্তু ভোটের আগে নরেন্দ্র মোদীর থেকেও আরএসএসকেই যে কার্যত প্রধান প্রতিপক্ষ বানিয়ে দিয়েছেন রাহুল, তাতে খুশি কংগ্রেস। আর রাহুলের এই কৌশল অস্বস্তির বিষয় হয়ে উঠেছে বিজেপির কাছে।
রাফাল আর বেকারি নিয়ে রাহুল যে মোদীকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাচ্ছেন না, এমন নয়। কিন্তু তার থেকেও বেশি আক্রমণ করে যাচ্ছেন আরএসএসকে। বিদেশে গিয়ে ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’-এর সঙ্গেও তুলনা করেছেন তাদের। তার পরেই যে আরএসএস সাধারণত প্রচারের আলোয় থাকতে চায় না, তারাও মোহন ভাগবতকে দিয়ে দিল্লির বুকে তিন দিনের আলোচনা সভা করতে চলেছে। সেখানে বিরোধী দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানিয়ে সঙ্ঘ সম্পর্কে ‘ভুল ধারণা’ কাটাতে চাইছে। কংগ্রেস নেতারা মুখে জানাচ্ছেন, আমন্ত্রণ পেলে রাহুল যাওয়ার ব্যাপারে তাঁর মতামত জানাবেন।
কিন্তু ঘরোয়া মহলে কংগ্রেস বলছে, কেনই বা যেতে যাবেন তিনি? বিশেষ করে কংগ্রেস সভাপতি যখন আরএসএসকেই প্রধান প্রতিপক্ষ বানিয়ে মোদীর শিকড় ধরে টান দিচ্ছেন! কংগ্রেস নেতাদের মতে, আরএসএসকে আক্রমণ করে একসঙ্গে অন্তত চারটি উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারছেন রাহুল।
• মোহনদাস গাঁধীর হত্যার পিছনে আরএসএসের লোকেরা ছিল বলার জন্য এখনও মামলা চলছে রাহুলের বিরুদ্ধে। রাহুল এখন গাঁধীর আদর্শকে মোদীর বিকল্প হিসেবে মেলে ধরছেন। এতে আরএসএসের ভূমিকাও আলোয় চলে আসছে।
• স্বাধীনতা আন্দোলনে আরএসএসের কোনও ভূমিকা না-থাকা ও কংগ্রেসের অবদানের ফারাকটি মেলে ধরা যাচ্ছে এতে।
• আরএসএসকে নিষিদ্ধ করার জন্য জওহরলাল নেহরুকে দায়ী করে সঙ্ঘ। আর রাহুল এখন ‘মুসলিম ব্রাদারহুড’-এর সঙ্গে তুলনা করে আরএসএসকে গোপন ফ্যাসিবাদী সংগঠন প্রতিপন্ন করতে চাইছেন। এ ভাবে সঙ্ঘকে নিশানা করে ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংখ্যালঘুদের প্রতি তাদের বিরূপ মনোভাবটি সামনে নিয়ে আসতে পারছেন।
• বিজেপিকে সামনে রেখে আরএসএস তৃণমূল স্তরে কাজ করে। দলিতদের মধ্যেও গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর চেষ্টা করছে তারা। তাদের তুলনায় কংগ্রেসের সংগঠন ততটা পোক্ত নয়। এই অবস্থায় আরএসএসকে নিশানা করে গেলে সেটা তাদের দলিত মন জয়ের চেষ্টায় জল ঢালার কাজ করবে।
বিজেপি জানে, রাজনৈতিক ভাবে রাহুল যত বেশি মোদীকে বিঁধবেন ততই তাদের লাভ। মোদী সে ক্ষেত্রে নিজেকে ‘কামদার’ বলে রাহুলকে ‘নামদার’ বলতে পারবেন। পরিবারতন্ত্র নিয়ে বিঁধতে পারবেন। বিজেপির এক নেতার বিশ্লেষণ, ‘‘ব্যক্তি মোদীকে আক্রমণ করলে প্রধানমন্ত্রীই উল্টে বাজি মারছেন। সে কারণেই সম্ভবত রাহুল কৌশল বদলে শুধু দুর্নীতি আর বেকারি নিয়েই আক্রমণ করছেন। আর মূল আক্রমণটি করছেন আরএসএসকে।’’ কংগ্রেসের জয়পাল রেড্ডির কথায়, ‘‘বিজেপির শিকড় আরএসএসেই। শিকড়কে আক্রমণ করলে বাকি সকলেই চলে আসেন।’’ ঘরোয়া মহলে কংগ্রেস বলছে, রাহুলের কৌশল অস্বস্তিতে ফেলছে বিজেপিকে। আরএসএসকে নিশানা করলে মোদীরও ভাল
লাগার কথা নয়। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হিসেবে এর জবাব দিতে গিয়ে বেগ পেতে হচ্ছে তাঁকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy