Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

সাতসকালে দিল্লির রাস্তায় রাহুল

সন্ধ্যায় ইফতার। সকালে মন্দির। মাঝখানে গুজরাতি সম্প্রদায়ের হকারদের পাশে দাঁড়ানো। সোমবার এক ঢিলে তিন পাখি মারার চেষ্টা করলেন রাহুল গাঁধী। বিজেপি বিরোধী দলের নেতাদের সোমবার সন্ধ্যায় ইফতারে নিমন্ত্রণ করেছেন সনিয়া গাঁধী। সেই ইফতারে যোগ দেওয়ার আগে সাতসকালে দিল্লির রঘুবীর নগর মন্দিরে পুজো দিলেন রাহুল গাঁধী।

রঘুবীর নগরের হকাররা রাহুলকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত। ছবি: পিটিআই।

রঘুবীর নগরের হকাররা রাহুলকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত। ছবি: পিটিআই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৩ জুলাই ২০১৫ ১৪:৫০
Share: Save:

সন্ধ্যায় ইফতার। সকালে মন্দির। মাঝখানে গুজরাতি সম্প্রদায়ের হকারদের পাশে দাঁড়ানো। সোমবার এক ঢিলে তিন পাখি মারার চেষ্টা করলেন রাহুল গাঁধী।

বিজেপি বিরোধী দলের নেতাদের সোমবার সন্ধ্যায় ইফতারে নিমন্ত্রণ করেছেন সনিয়া গাঁধী। সেই ইফতারে যোগ দেওয়ার আগে সাতসকালে দিল্লির রঘুবীর নগর মন্দিরে পুজো দিলেন রাহুল গাঁধী।

ধর্মনিরপেক্ষতার রাজনীতি যদি রঘুবীর নগরে যাওয়ার একটি উদ্দেশ্য হয়, তা হলে অন্য উদ্দেশ্য ছিল ওই এলাকার পুরনো জামাকাপড়ের হকারদের পাশে দাঁড়ানো। যাঁরা মূলত গুজরাতি বাঘরি সম্প্রদায়ের। বহু দিন ধরেই তাঁরা নিজেদের সমস্যা নিয়ে সরব। রাহুল বলেন, ‘‘হকাররাই আমাকে ডেকেছিলেন। পর্যাপ্ত সুবিধা পাচ্ছেন না তাঁরা। মাথার উপরে ছাদ ছিল। সেটিও সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। শহরের মধ্যে এদের কোনও জায়গা দেওয়া হয়নি। দমিয়ে রাখা হচ্ছে। সেই জন্যই আমি এখানে এসেছি।’’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গুজরাতের। গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকেই তাঁর প্রধানমন্ত্রীর পদে উত্তরণ। সেই কারণেই কি বেছে বেছে গুজরাতি সম্প্রদায়ের সমস্যায় পাশে দাঁড়াতে গেলেন রাহুল? পুজোর পরে কপালে টিকা পরে রাহুল এই প্রশ্নের উত্তরে কোনও জবাব দেননি। শুধু মুচকি হেসেছেন। কিন্তু রঘুবীর নগরের হকাররা রাহুলকে পেয়ে উচ্ছ্বসিত। রাহুলের সঙ্গে কথা বলার পর বিমলা বাঘরি বলেন, ‘‘আমাদের মাণ্ডির উপরের ছাদ ভেঙে পড়ছে। কোনও দিন কেউ আসেনি। রাহুলজিই প্রথম এলেন।’’ রাহুল প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, তিনি ‘কিছু করা’-র চেষ্টা করবেন। প্রশাসনকে জানাবেন। সংসদেও বিষয়টি তুলবেন। তাতেই খুশি বিমলারা।

এ দিন সকাল থেকে রাহুলের এই তৎপরতা দেখে বিজেপি নেতারাও পাল্টা আক্রমণে নেমে পড়েছেন। কেন্দ্রীয় সংসদীয় প্রতিমন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি বলেন, ‘‘এ সব হল একজন পার্ট-টাইম রাজনীতিকের পার্ট-টাইম নাটক। এতে দেশের কোনও উন্নতি হবে না। বিজেপি হকারদের উন্নয়ন ও সমস্যার সমাধানের জন্য আইন তৈরি করেছে। রাহুল এ সব কিছুই জানেন না। তাই উনি এই সব নাটকে ব্যস্ত।’’

বিজেপির এই দাবি অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অজয় মাকেন। আজ সকালে মাকেন এবং এআইসিসি-তে দিল্লির ভারপ্রাপ্ত নেতা পি সি চাকো-ও রাহুলের সঙ্গে গিয়েছিলেন। মাকেন বলেন, ‘‘রাস্তার হকারদের জীবিকা সুরক্ষা ও নিয়ন্ত্রণ বিল ইউপিএ-সরকারের আমলে তৈরি হয়েছিল। ইউপিএ-আমলেই এই বিল পাশ হয়েছে। রাহুল গাঁধী এই বিল তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। হকারদের সামাজিক সুরক্ষা, জীবিকার অধিকার নিশ্চিত করার পাশাপাশি হকারদের যাতে পুলিশি হেনস্থার মুখে পড়তে না হয়, তা-ও রয়েছে এই বিলে।’’

কংগ্রেস সূত্রের খবর, সব দিক দেখেই রাহুল আজ রঘুবীর নগর এলাকা বেছে নিয়েছেন। কারণ ১৯৬৪ থেকেই এখানে গুজরাতি বাঘরি সম্প্রদায়ের বসবাস। তখন থেকেই তারা পুরনো জামাকাপড়ের ব্যবসা করছেন এখানে। ২৭ বছর আগে বাজার তৈরি হয়। মধ্যরাতে বাজার খোলে। দিল্লির বিভিন্ন এলাকা তো বটেই, উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব, হরিয়ানা থেকেও গরিব মহিলারা এখানে পুরনো কাপড় বেচাকেনা করতে আসেন। কংগ্রেস নেতারা বলছেন, আজ রাহুল শুধু যে বিজেপি তথা মোদী সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলার চেষ্টা করেছেন, তা-ই নয়, অরবিন্দ কেজরীবাল দিল্লির যে ভোট কংগ্রেসের থেকে নিজের পকেটে পুরে ফেলেছিলেন, সেই ‘আম আদমি’-র সমর্থনও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন রাহুল।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE