বৈশাখের ঝড়বৃষ্টিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে বরাক উপত্যকার হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান। মাথায় হাত পড়েছে লক্ষাধিক কৃষকের।
হাইলাকান্দি–করিমগঞ্জের লাগোয়া শনবিল, হাইলাকান্দির বক্রিহাওর এবং কাছাড় জেলার চাতলাহাওর এলাকায় এই মরসুমে বোরো ধানের চাষ হয়। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময় থেকে ধান কেটে গোলায় মজুত করেন চাষিরা। কিন্তু এ বার বৈশাখে প্রবল ঝড়বৃষ্টির জেরে জমিতেই নষ্ট হয়েছে ফসল। তাতেই আশঙ্কায় পড়েছেন কৃষিজীবীরা।
করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির মাঝখানে রয়েছে শনবিল। শীতের সময় বিলের প্রায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চারা রোপণ করা হয়। গরমে ঘরে ঘরে সোনালি ফসল ওঠে। এ বারও কয়েক দিন পরই ফসল তোলার কথা ছিল। ধান গোলায় উঠলে অভাবের সংসারে কিছু দিনের জন্য হলেও স্বস্তি আসবে। কিন্তু বৈশাখ শুরু হতেই একটানা বৃষ্টি শুরু হয়। সঙ্গে ঝড়ও। মাঠের ধান মাঠেই নষ্ট হয়ে যায়।
শনবিলের আনন্দপুর গ্রামের কৃষক মিহির দাস বলেন, ‘‘কী ভাবে মহাজনের টাকা ফেরত দেব বুঝতে পারছি না।’’ দেবদ্বার গ্রামের লক্ষণ দাস দেড় বিঘা জমিতে বোরো ধান চাষ করেছিলেন। ধানে সোনালি রঙ ধরতে শুরু করেছিল। তখনই নামে বিপর্যয়। বৃষ্টিতে ডুবে যায় খেতের ফসল। লক্ষণবাবুর মন্তব্য, ‘‘ঋণের বোঝা কয়েক গুণ বাড়ল। চিন্তায় রাতের ঘুম উড়েছে।’’ করিমগঞ্জ জেলার কৃষি আধিকারিক অতুলচন্দ্র বরা এলাকা ঘুরে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘‘ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট সরকারের কাছে দাখিল করা হবে। চেষ্টা করছি যাতে ওই কৃষকরা উপযউক্ত ক্ষতিপূরণ পান।’’ শনবিলের দেবদ্বার, ফকুয়া, কৈলাসপুর, দুবাতল, সন্তোষপুর, বসন্তপুর গ্রামের ছবিটা এখন এক। হাহাকার ছড়িয়েছে সব গ্রামেই। পরিস্থিতি মিলেছে কাছাড় জেলার চাতলা, তাপাং ব্লকের তাপাং, বড়সাংগং, হরিন্তিলা, চালতাপুর, নরপতি ও হাইলাকান্দি জেলা সংলগ্ন বক্রিহাওরে। চাতলা, বক্রিহাওর এলাকার কৃষকরা বেশির ভাগই তপসিলি। বরাক উপত্যকা কৈবর্ত সমাজ উন্নয়ন পরিষদের সভাপতি গিরীন্দ্র দাস ও সম্পাদক অঞ্জন চৌধুরী ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, কৃষকরা চরম সঙ্কটে পড়েছেন। তাঁদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি সরকারের কাছে জানানো হবে। এ নিয়ে স্থানীয় সাংসদ রাধেশ্যাম বিশ্বাস কোনও পদক্ষেপ করছেন না বলে অভিযোগ তুলেছেন পরিষদের কর্তারা। এ নিয়ে সাংসদ বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়ানোর যথাসাধ্য চেষ্টা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy