নোটবন্দির এক বছর। —ফাইল চিত্র।
‘মিত্রোঁ...’
ঠিক এক বছর আগে। রাত ৮টা। টিভির সামনে চমকে উঠেছিল শ্যামবাজার থেকে সোনমার্গ, কোচি থেকে কোলাবা। মাঝরাত থেকে ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট স্রেফ কাগজের টুকরো! প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছিলেন, দেশের জন্য একটু কষ্ট করতে হবে। বুঝিয়েছিলেন, কালো টাকা আর থাকবে না। উধাও হয়ে যাবে সব জাল নোট। সন্ত্রাসে টাকা জোগানোও বন্ধ হয়ে যাবে।
এক বছর পরের ছবিটা কেমন?
সোমবার দিল্লির শাহিন বাগের এটিএম থেকে টাকা তুলে গিয়েছিলেন মহম্মদ শাদাব। চারটি ২০০০ টাকার নোটের মধ্যে একটি জাল। শাদাবের প্রশ্ন, ‘‘এটিএম থেকেই জাল নোট বার হলে আসল নোট কোথায় মিলবে?’’
নতুন ২০০০ টাকার নোট চালুর দু’-তিন মাসের মধ্যেই পাকিস্তানে ছাপা জাল নোট বাজারে এসে গিয়েছিল। বাংলাদেশ হয়ে এ দেশে ঢোকা সেই নোট মিলেছিল মালদহের আজিজুর রহমানের কাছে। গোয়েন্দারা চোখ কচলে দেখেছিলেন, নোটের ১৭টি ‘সিকিউরিটি ফিচার’-এর মধ্যে ১১টিই হুবহু নকল হয়ে গিয়েছে। তার পর এই এক বছরের মাথায় আরও তিনটি ফিচার নকল করে ফেলেছে জাল টাকার কারবারিরা।
গত ৮ নভেম্বর কালো টাকার বিরুদ্ধেও যুদ্ধ ঘোষণা করেছিলেন মোদী। তিনি ও তাঁর অর্থমন্ত্রী, অরুণ জেটলি এখনও সেই যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে চলেছেন। যুদ্ধ কবে শেষ হবে, তা জানা যায় না। কখনও সন্দেহজনক ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, কখনও ভুঁইফোড় কোম্পানির সংখ্যা, তারা কত টাকা জমা করেছে, সেই তথ্য দেন মোদী-জেটলি। হুঁশিয়ারি দেন, সকলের উপরে নজর রাখা হচ্ছে। বেআইনি লেনদেনের তদন্ত হচ্ছে। কারও নিস্তার নেই। যে সব প্রশ্নের উত্তর মেলে না, তা হল, এর কতটা শেষ পর্যন্ত কালো টাকা হিসেবে চিহ্নিত হবে? কত জন কালো টাকার কারবারির শাস্তি হবে?
আরও পড়ুন: নোট বাতিলের এক বছর
প্রশ্নের মুখে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও। তারা এখনও জমা পড়া বাতিল নোট গোনা শেষ করে উঠতে পারেনি। শীর্ষ আদালতে সরকার দাবি করেছিল, কালো টাকার মালিকেরা ভয়ে বাতিল নোট বদল করতে ব্যাঙ্কমুখোই হবে না। কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে বাতিল নোটের ৯৮.৯৬ শতাংশ ফেরত চলে এসেছে।
সন্ত্রাসের তহবিলের সন্ধানে নেমে আজ এনআইএ কাশ্মীর থেকে ৩৬.৩৪ কোটি টাকার বাতিল নোট উদ্ধার করেছে। তবে সন্ত্রাসে আর্থিক মদত বন্ধ হয়েছে, এমন দাবি করার মতো তথ্য নেই সরকারের হাতে। বরং কাশ্মীরে সন্ত্রাস, নিরীহ মানুষের মৃত্যু, জওয়ানদের মৃত্যু, সবই বেড়েছে।
তা হলে পূরণ হল কোন লক্ষ্যটি? প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের মতে, ‘‘একটিও না। তাই তো ওরা লক্ষ্যই বদলে ফেলল। বলতে শুরু করল, কম নগদের অর্থনীতি হবে। ডিজিটাল লেনদেন বাড়বে। এটা অবশ্য পরে ভেবে বার করেছে।’’ কিন্তু সে লক্ষ্যও পূরণ হয়েছে, এমন প্রমাণ নেই। বাজারে নগদ কম থাকায় ডিজিটাল লেনদেন বেড়েছিল। এখন আবার পুনর্মূষিক দশা। উল্টে জিএসটি ফাঁকি দিতে ফের বেড়েছে নগদ লেনদেন।
মাঝখান থেকে ক্ষতি হয়েছে বিস্তর। ছোট-মাঝারি শিল্প মার খেয়েছে। ফলে বেড়েছে চিন থেকে আমদানি। বৃদ্ধির হার কমেছে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কৌলিন্য ধুলোয় মিশেছে। চিদম্বরমের কটাক্ষ, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজেও আর ‘অচ্ছে দিন’-এর কথা বলেন না। জানেন, লোকে হাসবে।’’
একটি বিষয় অবশ্য করে দেখিয়েছিলেন মোদী। ৮ নভেম্বর রাত ৮টার নোট বাতিলের ঘোষণার আগে কাউকে ঘুণাক্ষরেও সে কথা জানতে দেননি। অর্থ মন্ত্রকেও নাকি শুধু মোদীর বিশ্বাসভাজন হাসমুখ আঢিয়াই এ কথা জানতেন। নোট বাতিলের বর্ষপূর্তিতে হাসমুখ পদোন্নতি পেয়ে অর্থসচিব হয়েছেন।
কালো টাকা এল?
সরকার বলেছিল, কালো টাকা হওয়ার কারণে ৪ থেকে ৫ লক্ষ কোটি টাকা ফিরবে না
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক জানিয়েছে, ৯৮.৯৬% নোট ফেরত এসেছে। এখনও গোনা শেষ হয়নি
জালে কত জাল ?
জুলাইয়ে অর্থ মন্ত্রক জানায়, নোট বাতিলের পরে ১১.২৩ কোটি টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বলছে, ২০১৬-’১৭-য় ৪৩ কোটি টাকার জাল নোট ধরা পড়েছে। যা বাতিল নোটের ১ শতাংশও নয়
সন্ত্রাস কি কমেছে?*
কাশ্মীরে সন্ত্রাস বেড়েছে ৩৮%, আমজনতার মৃত্যু বেড়েছে ২৫ গুণ এবং জওয়ানের মৃত্যু বেড়েছে ২%
মাওবাদী এলাকায় জওয়ানের মৃত্যু বেড়েছে ৮২%
*নোট বাতিলের আগের ১০ মাসের তুলনায়
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy