সোমবার সাংবাদিক বৈঠকে জিতনরাম মাঁঝি, অমিত শাহ, রামবিলাস পাসোয়ান এবং উপেন্দ্র কুশওয়াহা। ছবি: পিটিআই।
একের পর এক ফাঁড়া।
রামবিলাস পাসোয়ানকে লাড্ডু খাইয়ে সবে আসন বণ্টন ঘোষণা করতে যাবেন অমিত শাহ, বেঁকে বসলেন জিতনরাম মাঁঝি। যার জন্য আর শনিবার ঘোষণাই করা গেল না। তার মধ্যে আবার আদর্শ আচরণবিধি ভেঙে টাকা নিয়ে যাওয়ার দায়ে আটক হলেন জিতনরামের ছেলে অমিত।
আবার দু’দিন ধরে জিতনরামকে বুঝিয়ে, আসন বাড়িয়ে তাঁকে লাড্ডু খাওয়ালেন অমিত শাহ। বিজেপি সভাপতির বাড়ি থেকে বেরোতেই অন্য একটি গাড়ির সঙ্গে টক্কর হয়ে গেল জিতনরামের গাড়ির।
যা-ই হোক, সব কিছু সামাল দিয়ে শেষমেশ এনডিএ-র ঐক্যের ছবি দেখিয়ে আজ যৌথ সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন অমিত শাহ। এক পাশে জিতনরাম, অন্য পাশে রামবিলাস, উপেন্দ্র কুশওয়াহাকে নিয়ে জানালেন, আর কোনও বাধা নেই। মুশকিল আসান হয়ে গিয়েছে। বিহারে বিজেপি লড়বে ১৬০টি আসনে, রামবিলাসের লোকজনশক্তি পার্টি ৪০টিতে, উপেন্দ্র কুশওয়াহার দল ২৩টিতে। আর যে জিতনরামকে প্রথমে ১৫টি আসন দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল, তিনি দরদস্তুর করে সরকারি ভাবে ২০টি আসনে লড়তে রাজি হয়েছেন। কিন্তু ঘুরপথে লড়বেন আরও আসনে। তাঁরই দলের কিছু নেতা বিজেপির টিকিটে প্রার্থী হবেন। ক’জন? অমিত শাহের কথায়, ‘‘সেটি স্থির করবেন জিতনরাম মাঁঝিই।’’
কিন্তু ঐক্যের হাসিমুখের এই ছবিটি দেখালেও এখনও অনেক প্রশ্ন রয়ে গিয়েছে বলে ঘরোয়া আলোচনায় স্বীকার করে নিচ্ছেন এনডিএ নেতারাই। গত কয়েক দিন ধরে পর্দার আড়ালে তীব্র লড়াই চলছে রামবিলাস পাসোয়ান ও জিতনরাম মাঁঝির মধ্যে। জিতনরাম চান, কোনও ভাবে তাঁর কাঁধ খাটো না হোক। রামবিলাসের সমান আসন চেয়েছিলেন ওই দলিত নেতা। কিন্তু অত আসন দিতে গেলে রামবিলাসের গড় থেকে কাটছাঁট করে তা জিতনরামের হাতে তুলে দিতে হবে। আবার জিতনরামের নিজের যা শক্তি, তাতে এত জন ওজনদার প্রার্থীও তাঁর হাতে নেই। শেষ পর্যন্ত মধ্যপন্থা বেছে নিয়ে অমিত শাহ জিতনরামকে কুড়িটিতেই রাজি করিয়েছেন। আর তাঁর কিছু প্রার্থীকে বিজেপির টিকিটে লড়াতে রাজি হয়েছেন। কিন্তু সেই সংখ্যাটি কত তা অমিত খোলসা করছেন না বলে গোঁসা হয়েছে রামবিলাসের।
মুখে অবশ্য রামবিলাস ও তাঁর ছেলে চিরাগ বলছেন, ‘‘আসন সংখ্যা আমাদের কাছে কোনও দিনই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। আসল বিষয়টি হল এনডিএ-র জয়।’’ কিন্তু দলীয় সূত্রে খবর, জিতনরামের সঙ্গে গোপন সমঝোতা হয়েছে কি না জানতে রামবিলাস ফের অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করতে চান। কারণ, রামবিলাসরা মনে করছেন শেষ মুহূর্তে জিতনরামকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেওয়া শুরু করেছেন অমিত শাহ। তাঁদের প্রশ্ন, এনডিএ ক্ষমতায় এলে জিতনরামকে উপমুখ্যমন্ত্রীর পদও দেওয়া হবে? তা হলে বিহার রাজনীতিতে পাসোয়ানের থেকে অনেক বেশি প্রভাবশালী হয়ে উঠবেন জিতনরাম। অমিত শাহ অবশ্য এর সরাসরি জবাব আজ এড়িয়ে গিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘বিহারের বিধানসভা নির্বাচন হবে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বেই। তার পর ভোটের পর এনডিএর বিধায়করা মিলে স্থির করবেন, কে মুখ্যমন্ত্রী হবেন, কে উপমুখ্যমন্ত্রী।’’
আজ যৌথ সাংবাদিক সম্মেলনের আগে রামবিলাস, জিতনরাম আর উপেন্দ্রকে নিয়ে পৃথক বৈঠক করেন অমিত শাহ। পাখি পড়ানোর মতো তাঁদের শিখিয়ে দেওয়া হয় সংবাদমাধ্যমকে কী বলা হবে। তাই পাসোয়ান থেকে মাঁঝি, কুশওয়াহা সকলেই এখন এক বাক্যে বলছেন, ‘‘আমাদের লক্ষ্য শুধু এনডিএ-র জয়। আসন কোনও বিষয়ই নয়। ভোটের স্লোগান শুধু উন্নয়ন, উন্নয়ন, উন্নয়ন।’’ কিন্তু মুখে এ কথা বললেও অমিত শাহ জানেন, দিল্লি বিধানসভার মতো যদি বিহারেও বিজেপি ও শরিকদের কর্মীরা নানা আসনে নিষ্ক্রিয় হয়ে যান, তা হলে সমূহ বিপদ। তাই এনডিএ-র মঞ্চ থেকেই তিনি আবেদন করেন, ‘‘বিজেপি কর্মীরা যেন অন্য শরিক দলের প্রার্থীদের জেতানোর ব্যাপারে আরও বেশি পরিশ্রম করেন। অন্য শরিক দলের কর্মীরাও বিজেপি প্রার্থীদের জন্য একই কাজ করবেন, এমনটাই প্রত্যাশা।’’ বিজেপি জোটের মধ্যে এই সামঞ্জস্যের অভাবে দেখে কংগ্রেসের সি পি জোশীর কটাক্ষ, ‘‘আমাদের জোটের একটি মজবুত ভিত রয়েছে। কিন্তু শুধু বিভাজনের রাজনীতি করার লক্ষ্যে বিজেপি যে জোট করেছে, তা এখনও নড়বড়ে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy