Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

ক্যাশলেসে দুর্ভোগ বাড়ছে চা শ্রমিকদের

বরাক উপত্যকার চা বাগানগুলিকে ‘ক্যাশলেস’ করার উদ্যোগ মার খেতে চলেছে। বাগান এলাকায় না আছে ব্যাঙ্কের উপযুক্ত পরিকাঠামো, না বিএসএনএল সংযোগ। তার দরুন শ্রমিকরা মজুরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। আর এই অনিশ্চয়তাকে কাজে লাগিয়েই কংগ্রেসের দখলে থেকে সব থেকে বড় চা-শ্রমিক সংগঠন ‘বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়ন’ প্রতিটি বাগানে বিক্ষোভে সামিল হয়েছে।

উত্তম সাহা
শিলচর শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০১৭ ০২:৩৪
Share: Save:

বরাক উপত্যকার চা বাগানগুলিকে ‘ক্যাশলেস’ করার উদ্যোগ মার খেতে চলেছে। বাগান এলাকায় না আছে ব্যাঙ্কের উপযুক্ত পরিকাঠামো, না বিএসএনএল সংযোগ। তার দরুন শ্রমিকরা মজুরি নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। আর এই অনিশ্চয়তাকে কাজে লাগিয়েই কংগ্রেসের দখলে থেকে সব থেকে বড় চা-শ্রমিক সংগঠন ‘বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়ন’ প্রতিটি বাগানে বিক্ষোভে সামিল হয়েছে।

সঙ্কটের শুরু গত ৯ নভেম্বর থেকে। ৫০০ ও ১ হাজার টাকার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর বাগানগুলিতেও খুচরো টাকার অভাব দেখা দেয়। একই সঙ্গে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তোলার উর্ধ্বসীমা ঘোষিত হওয়ায় মজুরি কী ভাবে দেওয়া হবে, তা নিয়ে সমস্যা তৈরি হয়।

শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হয়, জেলাশাসকের নামে বাগান শ্রমিকদের মজুরি বাবদ একটি বিশেষ অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। বাগান মালিকরা ওই অ্যাকাউন্টে চেকে বা বড় নোটে মজুরির টাকা জমা দেবেন। পরে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ সেই হিসেবে ছোট নোট দেবে। পাশাপাশি, চলতে থাকবে ব্যাঙ্কের মাধ্যমে মজুরি দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি। দু’মাস ধরে এই প্রস্তুতি চললেও সাফল্য প্রায় মেলেনি। এ পর্যন্ত ৮-১০টি বাগানে শ্রমিকদের এটিএম কার্ড দেওয়া সম্ভব হয়েছে।

যে সব বাগানে কার্ড দেওয়া হয়েছে, সেখানেও নিত্য নতুন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। উপত্যকার শতাধিক বাগানে সাপ্তাহিক মজুরি দেওয়ার মতো পরিকাঠামোই নেই এখানকার ব্যাঙ্কগুলির। কথা ছিল, মজুরির টাকা তোলার জন্য শ্রমিকদের ব্যাঙ্কে যেতে হবে না। ব্যাঙ্কই প্রতি বাগানে ‘কাস্টমার সার্ভিস পয়েন্ট’ চালু করবে। কার্ড দেখিয়ে সেখান থেকে নগদে মজুরি সংগ্রহ করবেন শ্রমিকরা।

কিন্তু কোনও সার্ভিস পয়েন্টেই দিনে ১০০ জনের বেশি শ্রমিককে মজুরি দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ফলে হয়রানি হচ্ছে শ্রমিকদের। এ ছাড়াও, বাগানগুলিতে বিএসএনএল নেটওয়ার্কের প্রচণ্ড সমস্যা। ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া প্রায় দুষ্কর। সব মিলিয়ে শ্রমিকরা দু’মাসের বেশি সময় ধরে এই মজুরি-সঙ্কটে ভুগছেন।

এর প্রতিবাদে ৬ জানুয়ারি থেকে গোটা উপত্যকা জুড়ে তিন দিন বিক্ষোভ-প্রতিবাদের ডাক দেয় বরাক চা শ্রমিক ইউনিয়ন। প্রত্যেক শ্রমিক কাজে যাওয়ার আগে এক ঘণ্টা ও ফেরার পথে এক ঘণ্টা বাগান-গেটে বিক্ষোভ দেখায়। ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক, কংগ্রেসের প্রাক্তন মন্ত্রী অজিত সিংহ বলেন, ‘‘মোদীর আচমকা সিদ্ধান্তের দরুন শ্রমিকদের অসহায় অবস্থায় দিন কাটাতে হচ্ছে।’’ তাঁর কথায়, এ সব করার আগে প্রতিটি বাগানে এটিএম বসানো উচিত ছিল। ইন্টারনেট পরিষেবা উন্নত করার দরকার ছিল। যতক্ষণ তা না হচ্ছে ততক্ষণ পুরনো পদ্ধতিতেই মজুরি দেওয়ার দাবি করেন তিনি। অজিতবাবু বলেন, ‘‘শীঘ্র উপযুক্ত সিদ্ধান্ত না নিলে তাঁরা পরবর্তী স্তরে বৃহত্তর আন্দোলনে নামবেন।’’

পাশাপাশি, বাগান মালিকদের সংগঠন ‘টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’র সহ-সম্পাদক শরদিন্দু ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ব্যাঙ্কগুলিই তাদের কাজ করে উঠতে পারছে না। পরিকাঠামো নেই। আমাদের অবশ্য তাতে কোনও লাভ-লোকসান নেই। আমরা নিয়মিত ব্যাঙ্কে শ্রমিকদের টাকা জমা করছি।’’

কাছাড়ের জেলাশাসক এস বিশ্বনাথন অবশ্য এই সমস্যা সমাধানে আশাবাদী। তিনি বলেন, ‘‘২১ জানুয়ারি পর্যন্ত জেলাশাসকের অ্যাকাউন্ট থেকেই মজুরির টাকা ব্যাঙ্কগুলিতে যাবে। ফলে তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’ কিন্তু ২১ জানুয়ারির পরে কী হবে, এই প্রশ্নে জেলাশাসক বিশ্বনাথন বলেন, ‘‘সমস্ত বিষয় খতিয়ে দেখা হবে। পরে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Tea Workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE