Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বেতনের বদলে পড়িয়ে প্লাস্টিক নেয় অক্ষর স্কুল

২০১৩ সালে আমেরিকা থেকে অসমের শিশুদের অবস্থা নিয়ে গবেষণা করতে এসেছিলেন মাজিন মুখতার।

স্কুলের ‘বেতন’ হাতে ছাত্রছাত্রীরা। গুয়াহাটির অক্ষর স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

স্কুলের ‘বেতন’ হাতে ছাত্রছাত্রীরা। গুয়াহাটির অক্ষর স্কুলে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৩ মে ২০১৯ ০২:১৩
Share: Save:

স্কুলের বেতন দেওয়ার দিন। গুয়াহাটির দীপর বিল ঘেঁষা পামহির ‘অক্ষর’ স্কুলে ছাত্রছাত্রীর দল তাই পিঠে স্কুল ব্যাগ আর হাতে বেতনের ‘থলে’ নিয়ে স্কুলে সারিবদ্ধ। থলের ভিতরে টাকা-পয়সা নয়, আছে চারপাশে কুড়িয়ে পাওয়া প্লাস্টিকের প্লেট, বোতল, খেলনা, কৌটোর মতো বিভিন্ন বর্জ্য! অক্ষরের নিয়মই তো তাই। এই স্কুলে লেখাপড়ার জন্য জমা দিতে হয় প্লাস্টিক!

২০১৩ সালে আমেরিকা থেকে অসমের শিশুদের অবস্থা নিয়ে গবেষণা করতে এসেছিলেন মাজিন মুখতার। টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সের (টিস) ছাত্রী পারমিতা শর্মার সঙ্গে তাঁর আলাপ হয়। পারমিতা মাজিনকে অসমের সমাজ, অর্থনীতির বাস্তব চিত্র আর প্রতিকূলতা বোঝানোর ভার নেন। শেষ পর্যন্ত দু’জনে জুটি বেঁধে দরিদ্র ও খেটে খাওয়া বাচ্চাদের জন্য স্কুল খোলার পরিকল্পনা করেন।

দীপর বিলের আশপাশে বিস্তর পাথর খাদান। সেখানে বাবা-মায়ের পাশাপাশি বাচ্চারাও কাজ করে। তাদেরই প্রথম স্কুলে টানার চেষ্টা করেন মাজিন-পারমিতা। ২০১৬ সালে ২০ জনকে নিয়ে একটি খোড়ো চালায় শুরু হয় এই ‘অপ্রাতিষ্ঠানিক’ স্কুল। মূল উদ্দেশ্য ছিল, বৃত্তিমূলক শিক্ষা ও সাধারণ শিক্ষার মধ্যে সেতুবন্ধন করা। মাজিন ও পারমিতার কথায়, স্থানীয় ছেলেমেয়েদের পাথর ভাঙার রোজগার বন্ধ করে স্কুলে টানা সহজ ছিল না। তাদের জন্য বিশেষ সময়ে, বিশেষ বৃত্তিমুখী পাঠ্যক্রম তৈরি করতে হয়। বোঝাতে হয় অভিভাবকদের। বয়সের ভিত্তিতে নয়, অক্ষরে অভিজ্ঞতা, বুদ্ধি ও জ্ঞানের ভিত্তিতে ক্লাস ভাগ করা হয়।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

এরই পাশাপাশি, টাকা আদান-প্রদানের অভ্যাস ও হিসেবে বাচ্চাদের পোক্ত করার জন্য অভিনব ব্যবস্থা। ঠিক হয়, বড়রা বাচ্চাদের পড়াবে। বিনিময়ে পাবে ‘ব্যবসায়ী লুডো’র ধাঁচে নকল টাকা। আশপাশের দোকানের সঙ্গে বিশেষ বন্দোবস্তের ভিত্তিতে ছাত্ররা ওই টাকার বিনিময়ে দোকান থেকে প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনতে পারে। দোকানদারকে পরে নকল টাকার বিনিময়ে আসল টাকা ফিরিয়ে দেন মাজিনা-পারমিতা। আবার, কারও কাছে বেশ কিছু টাকা জমলে তার ইচ্ছে মতো অনলাইন থেকেও জিনিস কেনার ব্যবস্থাও করা হয়।

পারমিতা জানান, ওই এলাকার মানুষ শীতকালে প্লাস্টিকের বর্জ্য পুড়িয়ে গা গরম করতেন। তা শরীর ও পরিবেশ, দুইয়ের পক্ষেই ক্ষতিকর। জোর করে তা বন্ধ করার চেষ্টা না করে তাঁরা অন্য পথ নেন। ঘোষণা করেন, এ বার থেকে স্কুলের বেতন হিসেবে প্রতি সপ্তাহে যে যত পারবে প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে। এখন তা ছাত্রছাত্রীদের কাছে নেশার মতো হয়ে গিয়েছে। বাচ্চাদের মাধ্যমে ধীরে ধীরে পরিবেশ রক্ষার বার্তাও বাসিন্দাদের মধ্যে ছড়াচ্ছে। প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে বিভিন্ন জিনিস তৈরিও শিখছে ছাত্ররা।

আপাতত অক্ষরের ৪ থেকে ১৫ বছর বয়সী শতাধিক পড়ুয়া স্কুলে সোলার প্যানেল বসানো, বিভিন্ন হাতের কাজ শেখা, ফল-আনাজের চাষ, বাগান তৈরি, বিদ্যুতের কাজ, সেলাইয়ের মতো বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণের পাশাপাশি, আশপাশের অসহায় ও অনাথ প্রাণীদের উদ্ধারের কাজেও হাত লাগিয়েছে। তৈরি করেছে একটি উদ্ধারকেন্দ্রও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Guwahati School গুয়াহাটি
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE