Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

কৃতী দলিত ছাত্রের আত্মহত্যায় নাম জড়াল কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর

বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হলেন এক দলিত ছাত্র। হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিবারের এই ঘটনায় নাম জড়িয়ে পড়ল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয়র। অভিযোগ, তাঁরই সুপারিশে সপ্তাহ দুয়েক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষক ছাত্রকে হস্টেল থেকে বার করে দেওয়া হয়। কেড়ে নেওয়া হয় ক্লাস রুম ছাড়া ক্যাম্পাসের অন্যান্য জায়গায় তাঁর প্রবেশাধিকারও। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি দু’সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

রোহিত ভেমুলা

রোহিত ভেমুলা

সংবাদ সংস্থা
শেষ আপডেট: ১৮ জানুয়ারি ২০১৬ ১৭:০২
Share: Save:

বিশ্ববিদ্যালয়ের হস্টেলে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হলেন এক দলিত ছাত্র। হায়দরাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে রবিবারের এই ঘটনায় নাম জড়িয়ে পড়ল কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বন্দারু দত্তাত্রেয়র। অভিযোগ, তাঁরই সুপারিশে সপ্তাহ দুয়েক আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষক ছাত্রকে হস্টেল থেকে বার করে দেওয়া হয়। কেড়ে নেওয়া হয় ক্লাস রুম ছাড়া ক্যাম্পাসের অন্যান্য জায়গায় তাঁর প্রবেশাধিকারও। গোটা ঘটনা খতিয়ে দেখতে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি দু’সদস্যের এক তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

আত্মঘাতী রোহিত ভামুলা (২৬) ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক-ছাত্র ছিলেন। তাঁর কাছে একটি সুইসাইড নোটও পেয়েছে পুলিশ। সেখানে রোহিত লিখেছেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য কেউ দায়ী নয়। চোখের জল ফেলো না। জেনে রেখো, বেঁচে থাকার চেয়ে আমি এই মৃত্যুতেই বেশি খুশি।’ হস্টেলে এক সহপাঠীর ঘরে তাঁর ঝুলন্ত দেহ দেখতে পাওয়ার পর তা আটকে রেখে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন ছাত্রছাত্রীরা। রবিবার সারা রাত রোহিতের দেহের কাছেই বসে ছিলেন তাঁরা। দত্তাত্রেয়র পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আপ্পা রাওয়ের শাস্তির দাবিও জানাতে থাকেন। সোমবার সকালে পুলিশ এসে ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে। পরে রোহিতের দেহ উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় ময়নাতদন্তের জন্য। পাশাপাশি তাঁরা আট ছাত্রকে গ্রেফতারও করে।

ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, গত অগস্টের একটি ঘটনায় রোহিত-সহ আরও পাঁচ ছাত্রের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিতে স্মৃতি ইরানিকে চিঠি লেখেন দত্তাত্রেয়। আর সেই চিঠির জেরেই তাঁদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন দত্তাত্রেয়।

ঘটনার সূত্রপাত গত বছরের অগস্ট মাসে। ১৯৯৩-এর মুম্বই বিস্ফোরণের মূল অভিযুক্ত ইয়াকুব মেননের মৃত্যুদণ্ড নিয়ে বিশ্ববিদ্যলয় চত্বরে বিক্ষোভ দেখানোর সময় বিজেপি প্রভাবিত ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের এক ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়ের অম্বেডকর ইউনিয়নের সদস্য রোহিত ও তাঁর সতীর্থদের বিরুদ্ধে। প্রাথমিক ভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদন্ত কমিটি রোহিতদের ক্লিন চিট দেয়। কিন্তু পরে তাদের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, দত্তাত্রেয় চিঠি লিখে স্মৃতি ইরানিকে জানান ওই বিশ্বাবিদ্যালয় জাতিবাদের আখড়া হয়ে উঠেছে। চরমপন্থী এহং জাতীয়তাবাদ বিরোধী হয়ে উঠেছে ছাত্রছাত্রীদের একাংশ।

এর পরেই গত বছরের ২১ ডিসেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের রোহিত-সহ পাঁচ কৃতি ছাত্রকে হস্টেল থেকে বের করে দেওয়া হয়। হস্টেল তো বটেই, ক্লাসরুম এবং গবেষণাগার বাদে বিশ্ববিদ্যায়ের অন্যান্য জায়গাতেও তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। অন্য ছাত্রছাত্রীরা সামাজিক ভাবে তাদের বয়কট করতে শুরু করে। হস্টেল থেকে বার করে দেওয়ার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের গেটের বাইরে তাঁবু খাটিয়ে গত কয়েক দিন ধরে থাকছিলেন রোহিতরা।

এর পরে তাঁরা উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে চায়। কিন্তু, উপাচার্য তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি। রোহিতের এক সহপাঠী জানান, এই নিয়ে তাঁদের মনে দুঃখ বোধ ছিল। সেটাই আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায় যখন বিশ্ববিদ্যালয়ের এক দলিত শিক্ষক তাঁদের সঙ্গে দেখা করতে এসে, দলিত ছাত্রদের পাশে না দাঁড়িয়ে উপাচার্যের পক্ষ নিয়েই কথা বলেন। এর পরেই রোহিতরা ভেঙে পড়ে।

এই পরিস্থিতিতে রবিবার সকালে লুকিয়ে হস্টেলে যান রোহিত। সুইসাইড নোটে তিনি উমা অণ্ণার কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। কেননা তাঁর ঘরেই তো গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন রোহিত!

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE