Advertisement
০৮ মে ২০২৪

ত্রাতা সেল নামেই, ঘাতকের নিশানায় বুনোরা

তালিকায় উপর দিকে উঠে আসা সব সময়েই যে সুখকর হয় না, হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ!ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো বা এনসিআরবি-র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৪ সালে বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত অপরাধের তালিকায় দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ছিল ষষ্ঠ স্থানে।

কুন্তক চট্টোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪৯
Share: Save:

তালিকায় উপর দিকে উঠে আসা সব সময়েই যে সুখকর হয় না, হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ!

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরো বা এনসিআরবি-র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৪ সালে বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত অপরাধের তালিকায় দেশের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ ছিল ষষ্ঠ স্থানে। ওই বছর এ রাজ্যে বুনোদের উপরে অপরাধের ঘটনা ঘটেছিল ৪৫টি। আর ২০১৫ সালে এমন অপরাধ হয়েছে ৫০টি। সেই সুবাদেই প্রশাসনের মাথাব্যথা বাড়িয়ে ওই অপরাধের তালিকায় চার নম্বরে উঠে এসেছে পশ্চিমবঙ্গের নাম।

অর্থাৎ এই অগ্রগতি আসলে অধোগতিরই সূচক। একই সময়ে বাংলায় মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা অল্প হলেও কমেছে। সেই পরিসংখ্যানের স্বস্তির মধ্যেই এনসিআরবি-র রিপোর্ট জানাচ্ছে, এ রাজ্যে বেড়েছে বন্যপ্রাণের বিপদ! অনেক বনকর্তার প্রশ্ন, চোরাশিকারি আর পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য কমাতে যে-ধরনের পরিকাঠামো প্রয়োজন, এ রাজ্যে তা আদৌ আছে কি?

রাজ্যে জীবজন্তুর উপরে অপরাধ কী হারে বাড়ছে, তার টাটকা দৃষ্টান্ত নৈহাটি। মঙ্গলবার নৈহাটিতে হানা দিয়ে প্রায় দুই কিলোগ্রাম সাপের বিষ উদ্ধার এবং সাত জনকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য ও কেন্দ্রের যৌথ দল। মূল চক্রী এখনও অধরা। বনকর্তারা জানাচ্ছেন, এই চক্রটি আগেও বিষ বিক্রি করেছে। কিন্তু সেই সব ঘটনা সে-ভাবে সামনে আসেনি। এলে বন্যপ্রাণীদের বিরুদ্ধে অপরাধের সংখ্যা আরও বাড়ত বলে মনে করছেন বন দফতরের অনেকে।

রাজ্যের বন দফতর এবং পরিবেশপ্রেমীদের অনেকে বলছেন, গত দু’বছরে উত্তরবঙ্গে দেদার গন্ডার শিকার করা হয়েছে। দাঁতের লোভে চোরাশিকারিদের বুলেট বিঁধেছে হাতির শরীরে। আর তক্ষক, সাপ, প্যাঙ্গোলিন তো পাচার হচ্ছে হামেশাই। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, বেজি এখন চোরাশিকারিদের সহজ শিকার। ভুটান, বাংলাদেশ, মায়ানমার, নেপালে পশুপাখির অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পাচারের জন্য পশ্চিমবঙ্গই করিডর হিসেবে ব্যবহার করে আন্তর্জাতিক চোরাকারবারিরা।

বন দফতর সূত্রে বলা হচ্ছে, বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত অপরাধ যে বাড়ছে, বেশ কিছু কাল ধরে সেটা বিলক্ষণ টের পাচ্ছিলেন বনকর্তারা। তাই ২০১৪ সালে বন্যপ্রাণ অপরাধ ঠেকাতে পৃথক (ক্রাইম কন্ট্রোল) সেল খোলার কথা হয়েছিল। পরিকল্পনা ছিল, ওই শাখার মূল কাজ হবে বন্যপ্রাণ সংক্রান্ত অপরাধ দমন। সেই ‘সেল’ সরকারি ভাবে গড়া হলেও এখনও তেমন কোনও কার্যকর ভূমিকা নিতে পারেনি। কারণ, লোকজনের বড়ই অভাব। সেই সঙ্গে ব্যাপক ঘাটতি রয়েছে পরিকাঠামোয়।

বন দফতরের একাংশ জানাচ্ছেন, রেঞ্জার, বিট অফিসার, ফরেস্ট গার্ডের মতো নিচু তলার কর্মী-অফিসারেরাই বাহিনীর মূল ভিত্তি। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ওই সব পদের বেশির ভাগই খালি। যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেরই যথেষ্ট বয়স হয়েছে। ক্রাইম কন্ট্রোল সেলে কাজ করার মতো শারীরিক সক্ষমতার অভাব রয়েছে তাঁদের। তা ছাড়া শুধু তো কর্মী নয়। নতুন শাখার জন্য যথেষ্ট গাড়ি, আগ্নেয়াস্ত্র, অফিসও দরকার। তারও বন্দোবস্ত হচ্ছে না।

আলাদা সেল খুললে কিছু সুরাহা যে হতেই পারে, তার প্রমাণ হিসেবে অসম ও কর্নাটককে দৃষ্টান্ত করছে এনসিআরবি। তাদের রিপোর্ট বলছে, বন্যপ্রাণের উপরে অপরাধের তালিকায় ওই দু’টি রাজ্য যৌথ ভাবে তিন নম্বরে রয়েছে ঠিকই। তবে গত এক বছরে দুই ক্ষেত্রেই বন্যপ্রাণীদের উপরে অপরাধ কমেছে। তাদের এই সাফল্যে আলাদা অপরাধ দমন শাখা গড়াকেই কৃতিত্ব দিচ্ছেন এ রাজ্যের বনকর্তাদের অনেকে। চোরাশিকারিদের উৎপাত সব থেকে বেশি রাজস্থান ও উত্তরপ্রদেশে। পশ্চিমবঙ্গের মতো ওই দু’টি রাজ্যেও গত এক বছরে এই ধরনের অপরাধ বেড়েছে। পশ্চিমবঙ্গের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) প্রদীপ ব্যাস অবশ্য বলেন, ‘‘ক্রাইম কন্ট্রোল সেল দক্ষিণবঙ্গে কাজ শুরু করেছে। উত্তরবঙ্গেও কাজ শুরুর কথা চলছে।’’

তা হলে অপরাধ বাড়ছে কেন?

‘‘এই রাজ্য চোরাকারবারিদের যাতায়াতের পথ। ফলে এখানে গ্রেফতার, বাজেয়াপ্ত করার ঘটনা বেড়েছে। তারই প্রতিফলন ঘটেছে রিপোর্টে,’’ ব্যাখ্যা প্রদীপবাবুর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Animal NCRB
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE