টু-জি স্পেকট্রাম, আদর্শ আবাসন বা পশুখাদ্য কেলেঙ্কারির মামলা নিয়ে যখন হইচই, সেই সময়েই অন্য একটি মামলায় হঠাৎ তৎপরতা বাড়িয়েছে সিবিআই! আর তাতেই ফের দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক!
লাভালিন দুর্নীতির মামলায় কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নকে বেকসুর ঘোষণার বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। তিরুঅনন্তপুরমে সিবিআইয়েরই বিশেষ আদালত সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য বিজয়নকে মুক্ত ঘোষণা করেছিল। তার পরে কেরল হাইকোর্ট সিবিআইকে রীতিমতো ভর্ৎসনা করেছিল কোনও তথ্যপ্রমাণ ছাড়াই বিজয়নের নাম ওই মামলায় জড়ানোর জন্য। হাইকোর্টের ওই আদেশের পুনর্বিবেচনা চেয়েই সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করা হয়েছে সিবিআইয়ের তরফে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতার সময়কে ঘিরে। সিবিআইয়ের আদালত বিজয়নকে ছাড় দিয়েছিল ২০১৩ সালে। মাথার উপর থেকে অভিযোগের কালো মেঘ প্রায় সরে যাওয়ায় গত বছর বিধানসভা ভোটে দলের অন্দরে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে উঠে এসেছিলেন প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক বিজয়ন। বাম জোট এলডিএফের জয়ের পরে মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাঁকেই। অন্য দিকে, সাম্প্রতিক কালে দুই বাম-শাসিত রাজ্য কেরল ও ত্রিপুরায় সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়েছে সঙ্ঘ ও বিজেপি। কেরলে শাসক দলের সঙ্গে তাদের সংঘাত এখন নিয়মিত এবং রক্তাক্ত। ঠিক সেই সময়েই সিবিআইকে দিয়ে আবার হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টে দরবার করাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর দফতর, এই অভিযোগ করার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছে বামেরা।
সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য এম এ বেবির কথায়, ‘‘সিবিআইয়ের বিশেষ আদালত পিনারাইকে অভিযোগ থেকে মুক্তি দিয়েছিল ২০১৩ সালে। তার পরে চার বছর সিবিআই কী করছিল? আরএসএস-বিজেপি কেরলের বাম গণতান্ত্রিক সরকারকে উৎখাত করতে মরিয়া হয়েছে বলেই কি এখন তাদের পুনর্বিচারের কথা মনে পড়ল? এই প্রশ্ন তো স্বাভাবিক ভাবেই উঠবে!’’ প্রসঙ্গত, বিশেষ আদালতের রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে সিবিআইয়ের আবেদন হাইকোর্টে খারিজ হয়েছে গত অগস্ট মাসে। তার দু’মাসের মাথায় সর্বোচ্চ আদালতে গিয়েছে সিবিআই।
কেরলে ই কে নায়নারের মন্ত্রিসভায় বিজয়ন ছিলেন বিদ্যুৎমন্ত্রী। সেই সময়ে রাজ্যের তিনটি জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র সংস্কারের জন্য কানাডার সংস্থা এসএনসি-লাভালিনকে বরাত দেওয়া হয়। বেনিয়ম করে ওই বরাত দিয়ে বিজয়ন সরকারি কোষাগারের ৩৭৪ কোটি টাকা ক্ষতির কারণ ঘটিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। ওই অভিযোগকে ঘিরে কেরলের রাজনীতিতে শুধু হইচই হয়েছিল, তা-ই নয়। তোলপাড় হয়েছিল সিপিএমের অন্দরেও। দুর্নীতির অভিযোগ থাকা কাউকে দলের মাথায় রাখার বিরুদ্ধে বারংবার সরব হয়েছিলেন ভি এস অচ্যুতানন্দন। বিজয়ন-ভি এসের সেই কাজিয়া পরে আরও বড় বিবাদের চেহারা নেয়। সিবিআইদের দাখিল করা চার্জশিটে অবশ্য বিজয়নের বিরুদ্ধে প্রামাণ্য কিছু ছিল না। আর হাইকোর্ট প্রশ্ন তুলেছিল, ব্যক্তিগত ভাবে বিজয়নের লাভবান হওয়ার কোনও তথ্য না থাকা সত্ত্বেও কেন তাঁর নাম এই মামলায় টেনে আনা হয়েছে?
সুপ্রিম কোর্টে আর্জির জেরেই আপাতত ফিরল পুরনো বিতর্ক!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy