ছবি: এএফপি।
চাঁদের কক্ষপথে যান তো আগেও পাঠিয়েছে ভারত। এ বার পরীক্ষা চাঁদে নামার। উপর থেকে কিছু ছেড়ে দিলে তা আছাড় খেয়ে পড়বে। এ ক্ষেত্রে আলতো করে নামাতে হবে ল্যান্ডার বিক্রমকে। তার পেটে রয়েছে রোভার প্রজ্ঞান। এরা দু’টিতে মিলে অনেক জটিল খোঁজখবর চালাবে চাঁদে। তাদের অক্ষত রেখে নামাতে হবে। যেটিকে বলা হয় ‘সফট ল্যান্ডিং’। আগে যা কখনও করেনি ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসরো। ফলে এটাই এখন কঠিন চ্যালেঞ্জ তাদের সামনে।
ইসরো সূত্রের খবর, প্রজ্ঞানকে পেটে নিয়ে চাঁদের মাটি ছুঁতে ১৫ মিনিট সময় নেবে ল্যান্ডার বিক্রম। ইসরোর প্রাণপুরুষ বিক্রম সারাভাইয়ের নামে যার নামকরণ করা হয়েছে। আগামী ৬ সেপ্টেম্বর রাতে (রাত ১২টার পরে হওয়ায় সরকারি হিসেবে যা ৭ সেপ্টেম্বর) ওই ১৫ মিনিটই বলে দেবে, ভারতের দূত চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করে ইতিহাস তৈরি করতে পারবে কি না!
দ্বিতীয় চন্দ্রাভিযানেই প্রথম বার ল্যান্ডার ও রোভার তৈরি করেছে ইসরো। সামান্য ভুলচুক হলে সব চেষ্টা জলে যাবে। ফলে ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবনের উদ্বেগ থাকাটা স্বাভাবিক। ওই ১৫ মিনিট নিয়ে তাঁর উদ্বেগ আজ ফুটে উঠেছে তাঁর কথাতেও। বাহুবলীর যাত্রা সফল হওয়ার ঘোষণা করে বলেছেন, ‘‘যাত্রা সবে শুরু। শেষের ১৫ মিনিট কিন্তু কাঁপুনি ধরানো।’’ তবে ইসরোর আধিকারিকদের অনেকেই অবশ্য এখনই ওই ১৫ মিনিট নিয়ে ভাবতে নারাজ। তাঁরা বলছেন, সবে তো যাত্রা শুরু। অবতরণের আগেও বহু বাধা পেরোতে হবে। তাই আগামী ৪৮ দিনই স্নায়ুর চাপ নিয়ে কাটবে তাঁদের।
ইসরো সূত্রের খবর, অবতরণের ৪ দিন আগে অরবিটার থেকে বিচ্ছিন্ন হবে বিক্রম। চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ কিলোমিটার উচ্চতায় ৪ দিন ধরে পাক খাবে সে। সে সময় তার গতি থাকবে ঘণ্টায় ৬১২০ কিলোমিটার। যা কিনা পৃথিবীর দ্রুততম বুলেট ট্রেনের গতির থেকে ১৪ গুণ বেশি। এখান থেকেই শুরু হবে অবতরণ প্রক্রিয়া। ওই গতি এবং উচ্চতা থেকে সাড়ে ১০ মিনিটের মধ্যে ৭.৪ কিলোমিটার উচ্চতায় নেমে আসবে সে। গতি কমে দাঁড়াবে ঘণ্টায় ৫২৬ কিলোমিটার। তার পরের ৩৮ সেকেন্ডে সে নেমে আসবে ৫ কিলোমিটার উচ্চতায়, গতিবেগ কমে হবে ঘণ্টায় ৩৩১ কিলোমিটার।
এর পর থেকে আরও উচ্চতা ও গতি কমবে বিক্রমের। ৫ কিলোমিটার উচ্চতা থেকে ৮৯ সেকেন্ডে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০ মিটার উচ্চতায় নামিয়ে আনা হবে তাকে। তখন গতি কমে হবে ঘণ্টায় মাত্র ১০০ কিলোমিটার। এটাও বড্ড বেশি। এই গতিতে নামলে সব চুরমার হয়ে যাবে। এই অবস্থায় বিক্রম আরও ১২ সেকেন্ড চক্কর কাটবে। এবং এর মধ্যেই চন্দ্রপৃষ্ঠের বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করবে। তার পরে ৬৬ সেকেন্ডে সেটিকে নামিয়ে আনা হবে ১০০ মিটার উচ্চতায়।
এ বার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পালা বিক্রমের। কোথায় নামবে সে? সুদূর পৃথিবীতে বসে ইসরোর কর্তারা বলে দেবেন না সে কথা। বিক্রমের সঙ্গে থাকা কলকব্জাই তাকে বলে দেবে কোথায় নামলে সেটা সবচেয়ে ভাল হবে কাজের পক্ষে। ১০০ মিটার উচ্চতায় থেকে বিক্রম ২৫ মিনিট চক্কর কাটবে। এবং তারই মধ্যে সে সিদ্ধান্ত নেবে, ৭০.৯ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ এবং ২২.৭ ডিগ্রি পূর্ব দ্রাঘিমাংশে নামবে? নাকি বিকল্প স্থান হিসেবে ৬৭.৭ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশ, ১৮.৭ ডিগ্রি পশ্চিম দ্রাঘিমাংশকে বেছে নেবে।
যদি প্রথম নির্বাচিত স্থানে নামতে হয় তা হলে ৬৫ সেকেন্ডের মধ্যে বিক্রম খাড়া ভাবে উচ্চতা কমিয়ে চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১০ মিটার উচ্চতায় চলে আসবে। যদি বিকল্প স্থানে নামতে হয়, তা হলে প্রথম ৪০ সেকেন্ডে ৬০ মিটার উচ্চতায় নামবে বিক্রম এবং পরের ২৫ সেকেন্ডে ১০ মিটারে নেমে আসবে। শেষ ধাপের এই গতি অবশ্য এখনই খোলসা করেনি ইসরো।
তবে ইসরো সূত্রের খবর, ১০ মিটার থেকে মাত্র ১৩ সেকেন্ডের মধ্যে চাঁদের মাটিতে নামবে। অর্থাৎ সে সময় গতি কমে হবে ঘণ্টায় আড়াই কিলোমিটারের সামান্য বেশি। পুরো অবতরণের সময়েই বিক্রমের পাঁচটি ইঞ্জিন চালু থাকবে। বিক্রমের চার পায়ে রয়েছে চারটি সেন্সর। মাটির ছোঁয়া পেলেই সেই সেন্সরগুলি ইঞ্জিনকে বন্ধ করে দেবে। ফলে গতিবেগ শূন্যে গিয়ে ঠেকবে।
চাঁদে নামার পরে ১৫ মিনিট জিরোবে বিক্রম। বুঝে নেবে, সব ঠিকঠাক আছে কি না। তার পরে প্রথম ছবি পাঠিয়ে ইসরোকে জানিয়ে দেবে, ‘অল ইজ় ওয়েল’ !
প্রজ্ঞানকে অবশ্য অপেক্ষা করতে হবে আরও। কারণ চাঁদে তখনও রাত। আর সূর্যের আলোই তার চালিকা শক্তি। বিক্রম নামার পাক্কা ৪ ঘণ্টা পরে চাঁদে সকাল হবে। সূর্যের আলো ডানায় (পড়ুন সোলার প্যানেল) মেখে বিক্রমের ভিতর থেকে ঢাল বেয়ে গড়িয়ে নামবে প্রজ্ঞান।
চাঁদে ভারতের প্রথম রোভার!
এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy