Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Cancer

ক্যানসার প্রতিরোধে ‘জাদু’ দেখাবে এআই

বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসার চিকিৎসা ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। ক্যানসার এমন এক অসুখ, যাতে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েও প্রিয়জনকে বাঁচাতে অক্ষম হন। ঘরকে ঘর উজাড় হয়ে যায়।

চলছে এএসিআর-এর বার্ষিক সম্মেলন।

চলছে এএসিআর-এর বার্ষিক সম্মেলন। —নিজস্ব চিত্র।

সায়ন্তনী ভট্টাচার্য
শেষ আপডেট: ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ০৮:৩৬
Share: Save:

এআই এখন প্রদীপের সেই ‘জিনি’! চিকিৎসা ক্ষেত্রেও সে গুটিগুটি পায়ে ঢুকে পড়েছে। বর্তমানে ক্যানসার গবেষণা ও চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞদের অন্যতম আশা-ভরসা হয়ে উঠেছে আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম মেধা। আর সে কথাই প্রতিধ্বনিত হল আমেরিকার সর্ববৃহৎ ক্যানসার-বিষয়ক সংগঠন ‘আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্যানসার রিসার্চ’ (এএসিআর)-এর বার্ষিক সম্মেলনে। আমেরিকার সান দিয়েগো শহরে সম্প্রতি শেষ হয়েছে চার দিন ব্যাপী সম্মেলন। যোগ দিয়েছিলেন হাজার হাজার দেশি-বিদেশি মানুষ। এঁদের মধ্যে কেউ চিকিৎসক, নার্স, কেউ গবেষক, কেউ নিজেই ক্যানসার রোগী, কেউ আবার রোগীর সেবাশুশ্রূষাকারী ‘কেয়ারগিভার’। ছিলেন ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলির প্রতিনিধি, ক্যানসার-সাংবাদিকেরাও। এই সম্মেলনের লক্ষ্য হল— একযোগে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই।

প্রশান্ত মহাসাগরের ধার ঘেঁষে সান দিয়েগো শহর। সুদূর বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত, রৌদ্রোজ্জ্বল ভূমধ্যসাগরীয় আবহাওয়া, মেক্সিকান খাবার (মেক্সিকো সীমাম্তের একেবারে কাছে এ শহর), স্পেনীয় ঔপনিবেশিক ইতিহাসের ছোঁয়া শহরের ইতিউতি। এ সবের টানে সারা বছরই পর্যটকের আনাগোনা লেগে থাকে। তবে বর্তমানে এই শহর আমেরিকার বায়োটেকনোলজি হাব-ও হয়ে উঠেছে। ‘ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফর্নিয়া, সান দিয়েগো’ (ইউসিএসডি), ‘সল্ক ইনস্টিটিউট’-এর মতো একাধিক নামজাদা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে এ শহরে। এ বছর তাই এমনই এক শহরকে বেছে নেওয়া হয়েছিল এএসিআর-এর সম্মেলনের জন্য।

বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ক্যানসার চিকিৎসা ক্রমশ উন্নত হচ্ছে। ক্যানসার এমন এক অসুখ, যাতে মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েও প্রিয়জনকে বাঁচাতে অক্ষম হন। ঘরকে ঘর উজাড় হয়ে যায়। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় রোগীর মৃত্যুহার উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, ক্যানসার নিয়েই বহু রোগী দীর্ঘদিন বেঁচে থাকছেন, সম্পূর্ণ সুস্থ না-হলেও তাঁদের জীবনযাপনের মান উন্নত হয়েছে। আমেরিকাতে যেমন মৃত্যুহার ৩৩ শতাংশ কমেছে (বিশেষজ্ঞদের একাংশের দাবি)। এই উন্নত চিকিৎসার অন্যতম কারণ ‘পার্সোনালাইজ়ড ট্রিটমেন্ট’। অর্থাৎ রোগীবিশেষে তাঁর জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসা। আর এই ক্ষেত্রেই গবেষক-চিকিৎসকদের সাহায্য করছে এআই।

এএসিআর-এর সম্মেলনে ছিলেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী, ক্যানসার গবেষক অরিন্দম বসু। তিনি জানান, ‘প্রজেক্ট জিনি’ নামে একটি প্রকল্প শুরু হয়েছে। এতে অংশ নিয়েছে বিশ্বের ১৯টি ক্যানসার সেন্টার। এই প্রকল্পের লক্ষ্যই হল ক্যানসার সংক্রান্ত হাজার হাজার ক্লিনিক্যাল তথ্য ও জিনোমিক তথ্য এআই-এর সাহায্যে একত্রিত করা। অরিন্দম বলেন, ‘‘প্রতিটি ক্যানসার রোগীর রোগ-চরিত্র ভিন্ন। এ হেন কর্কটরোগের বৈশিষ্ট্যগুলি যত বিশদে জানা সম্ভব হবে, তত ক্যানসারকে বাগে আনা সহজ হবে।’’

‘ইউনিভার্সিটি অব ম্যাঞ্চেস্টার’-ও একটি প্রকল্পে হাত দিয়েছে। নাম ‘টিম উম্ব’। এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসার নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে তারা। এই ক্যানসার বাসা বাঁধে জরায়ুর পর্দায়। ‘টিম উম্ব’-এর লক্ষ্য এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারকে ভাল করে জানা এবং রোগের প্রথম পর্যায়েই তাকে চিহ্নিত করার পথ খুঁজে বার করা। গোড়াতেই যদি ক্যানসারের রাশ টানা যায়, সে ক্ষেত্রে রোগীকে বাঁচানো সহজ হয়।

সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী মাইরিয়া ক্রিসপিন। তিনি ‘মেশিন লার্নিং’-এর উপর জোর দিয়েছেন। তাঁর কথায়, ক্যানসার রোগীর সম্ভাব্য চিকিৎসা সহজ করে দিতে পারে এআই-প্রযুক্তি। ‘মেমোরিয়াল স্লোয়ান কেটেরিং’-এর কম্পিউটেশনাল অঙ্কোলজি বিভাগের প্রধান সোহরাব শাহ বলেছেন, রোগীর দেহে ড্রাগ রেজ়িস্ট্যান্স (কোনও ওষুধ কাজ না করার কারণ) অনুমান করতে সাহায্য করবে এআই। হার্ভার্ড মেডিক্যাল স্কুলের বিজ্ঞানী লোরেলেই মুচি জোর দিয়েছেন, বিশ্বজুড়ে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত তথ্য এআই-এর সাহায্যে সঠিক ভাবে নথিভুক্তকরণে। কানাডার ‘প্রিন্সেস মার্গারেট ক্যানসার সেন্টার’-এর বিজ্ঞানী বেঞ্জামিন হাইব-কেন্সের মতে, কার্সিনোজেনেসিস-কে বুঝতে সাহায্য করবে মেশিন লার্নিং।

তবে প্রযুক্তির ‘জিনি’ যতই জাদু দেখাক না কেন, এর পাশাপাশি মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধিও যে জরুরি, তা মনে করিয়ে দিয়েছেন অরিন্দম। যেমন, তামাক ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন হওয়া, তামাকজাতীয় দ্রব্যে অতিরিক্ত কর চাপানো, নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ক্যানসার স্ক্রিনিং ইত্যাদি। অরিন্দম বলেন, ‘‘ধরুন কোনও গেম শোয়ে প্রথম পুরস্কার দেওয়া হল ক্যানসার পরীক্ষার ফ্রি ভাউচার। সেটা কি সম্ভব নয়! বিষয়টা কিন্তু এতটাই জরুরি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE