Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

ছেলের বানানো অ্যান্টেনা বেয়ে বার্তা আসবে পৃথিবীতে, গর্বিত বাবা

ছেলের সাফল্যে বৃদ্ধ গর্বিত। গর্বিত স্ত্রী অসীমাদেবীও। কিন্তু ছেলের কীর্তিতে তাঁদের রোজনামচা পাল্টায়নি। মধুসূদনবাবু এখনও চাষ এবং হোমিওপ্যাথি নিয়ে পড়াশোনা করেন। অসীমাদেবী ঘর-গোয়াল সামলান।

শিবপুর গ্রামের বাড়িতে চন্দ্রকান্তের বাবা ও মা। ছবি: সুশান্ত সরকার

শিবপুর গ্রামের বাড়িতে চন্দ্রকান্তের বাবা ও মা। ছবি: সুশান্ত সরকার

প্রকাশ পাল
গুড়াপ শেষ আপডেট: ১৪ জুলাই ২০১৯ ০৪:২০
Share: Save:

গাঁয়ের কাঁচা রাস্তা এখন পাকা। তাঁদের একসময়ের টালির ঘর পাল্টে গিয়ে এখন দোতলা পাকা বাড়ি। মিটেছে অর্থাভাব। তবু রোজনামচায় ছেদ পড়েনি!

আজ, রবিবার রাত শেষে ‘চন্দ্রযান-২’ পাড়ি দেবে মহাকাশের বুকে। যাঁর ছেলের বানানো অ্যান্টেনার মাধ্যমে পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে সৌরমণ্ডল থেকে বার্তা পাঠাবে ওই মহাকাশযান, সেই চন্দ্রকান্ত কুমারের বাবা মধুসূদনবাবু শনিবার দুপুরেও দু’টি গরুর গা ধুচ্ছিলেন। বয়স ছেষট্টি দেখলে কে বলবে! হুগলির গুড়াপের খাজুরদহ-মিল্কি পঞ্চায়েতের শিবপুর গ্রামের এই বৃদ্ধের চেহারা এখনও সুঠাম।

ছেলের সাফল্যে বৃদ্ধ গর্বিত। গর্বিত স্ত্রী অসীমাদেবীও। কিন্তু ছেলের কীর্তিতে তাঁদের রোজনামচা পাল্টায়নি। মধুসূদনবাবু এখনও চাষ এবং হোমিওপ্যাথি নিয়ে পড়াশোনা করেন। অসীমাদেবী ঘর-গোয়াল সামলান। তাঁদের বড় ছেলে বছর তেতা‌ল্লিশের চন্দ্রকান্ত ‘চন্দ্রযান-২’ মিশনের ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল)। ছোট ছেলে শশীকান্তও বেঙ্গালুরুতে ইসরোয় চাকরি করেন। তাঁর বিষয় ‘মাইক্রোওয়েভ’।

মধুসূদনবাবুর বলেন, ‘‘এমনও হয়েছে, গয়না বন্ধক দিয়ে ছেলের কলেজের বেতন দিয়েছি। সব কষ্ট ছেলেরা সুদে-আসলে পূরণ করে দিয়েছে। দুই ছেলের নামে চাঁদ জুড়েছিলাম কিছু না ভেবেই। কিন্তু বড় ছেলে সেই চন্দ্রযানে কাজ করছে, আমরা খুব খুশি।’’ অসীমাদেবী বলেন, ‘‘ছেলেদের যতটুকু প্রয়োজন ছিল ততটা দিতে পারিনি। তবে চেষ্টার ত্রুটি রাখিনি। ওরা আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে।’’ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারেই শিবপুর গ্রামে চন্দ্রকান্তের বাড়িতে ঢোকার মুখে ধানের মড়াই, কাঁঠাল গাছ, খানকতক ফুলগাছ। শান-বাঁধানো উঠোনে রোদে শুকোচ্ছিল কাঁঠাল-বীজ। মধুসূদনবাবু জানান, চন্দ্রকান্তের প্রথম স্কুল মাজিনান প্রাথমিক বিদ্যালয়। মাজিনান নব বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়েন। ১৯৯২ সালে খাজুরদহ উচ্চ বিদ্যা‌লয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেন। উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন ধনিয়াখালি মহামায়া বিদ্যামন্দির থেকে। সকালে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়ে হোটেলে খাওয়াদাওয়া সেরে স্কুলে যেতেন। ছুটির পরে টিউশন নিয়ে বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যেত। স্কুলবেলায় পড়ার ফাঁকে বাবাকে চাষের কাজেও সাহায্য করতেন চন্দ্রকান্ত। বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন থেকে পদার্থবিদ্যায় বিএসসি অনার্স পাশ করেন তিনি। তার পরে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে ‘রেডিয়ো ফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স’ নিয়ে এমএসসি এবং এমটেক। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি-ও করেন।

অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মধুসূদনবাবুই বড় ছেলেকে পড়িয়েছেন। উচ্চশিক্ষার খরচ চালাতে টিউশন করেছে‌ন চন্দ্রকান্ত। ইসরোতে চাকরি পান ২০০১ সালে। ধনিয়াখালি মহামায়া বিদ্যামন্দিরের প্রধান শিক্ষক শুভাশিস নন্দীর কথায়, ‘‘চন্দ্রকান্তবাবু এই স্কুলের উজ্জ্বল নক্ষত্র। ওঁর জন্য এই প্রতিষ্ঠান গর্বিত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chandrayaan 2 ISRO Chandrakanta Kumar Moon
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE