পর্তুগালের গুলবেনকিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স-এর গবেষক স্বাধীনচন্দ্র জানা।
বাঙালি বিজ্ঞানীর হাত ধরে জীবকোষের এক রহস্যের সমাধান করলেন পর্তুগালের গবেষকরা। তাঁদের সাফল্য পথ দেখাতে পারে মানবদেহের জিন ঘটিত কিছু রোগ নিরাময়ে।
কোন রহস্যের সমাধান করলেন ওঁরা? জীবদেহ কোটি কোটি কোষ দিয়ে গড়া। যেন কোষের ইমারত। এক একটা কোষ অন্য কোষের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে কাজ করে। চারপাশের পরিবেশ থেকে নির্দেশ নেয়। আশপাশে সঙ্কেত পাঠায়। এ ভাবে সঙ্কেত দেখানোর কাজটি করে যে, তার নাম ‘সিলিয়াম’। কোষের দেওয়ালে লেগে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র লোম। নামের উৎস লাতিন, অর্থ চোখের পাতা। সিলিয়াম হল কোষের অ্যান্টেনা, যার মাধ্যমে কোষ সঙ্কেত দেয় বা নেয়। সঙ্কেত হতে পারে নানা চরিত্রের। ধ্বনি, ঘ্রাণ, আলো বা অন্য কিছু।
মানবদেহের অনেক বিপত্তির মূলেই থাকে সিলিয়ামের কাজে বিঘ্ন। মেদ, অন্ধত্ব, বন্ধ্যত্বের পিছনে লুকিয়ে থাকে সিলিয়ামের গোলমাল। মানে, এ সব ক্ষেত্রে সিলিয়াম যথাযথ কাজ করে না। কারও কারও ক্ষেত্রে ও সব ব্যাধি একসঙ্গে দেখা যায়, আবার কারও কারও বেলায় বিশেষ একটা বিপত্তি। কেউ বন্ধ্যা না হয়েও অন্ধ। আবার কেউ অন্ধ কিন্তু বেশ রোগা। এ থেকে বিজ্ঞানীরা বুঝতে পারেন নানা রকমের সিলিয়াম আছে। এক এক রকম অ্যান্টেনা এক এক রকম সঙ্কেত দেয় বা নেয়।
রহস্য এখান থেকেই। সিলিয়াম তো বানায় কোষ। তা হলে কোষ কি এক এক রকম অ্যান্টেনা বানাতে আলাদা আলাদা ইস্পাত, ইট, চুন-সুরকি ব্যবহার করে? মানে, নানা কাজের সিলিয়ামের উপাদান কি আলাদা? ওই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছিলেন পর্তুগালের লিসবনে গুলবেনকিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স-এর এস ও মেনদোনকা, পি মাচাদো, হে রোচা, এস ওয়ার্নার, এ পেরেরা, এইচ মাইয়াতে, মনিকা বেটেনকোর্ট দিয়াস এবং স্বাধীনচন্দ্র জানা।
পরীক্ষা-নিরীক্ষায় যা জানতে পেরেছেন ওঁরা, তা এ রকম: অ্যান্টেনা বানানোর উপাদান যদিও সাধারণ কিছু পদার্থ, তবু কোষ তার দেওয়ালে এক এক জায়গায় সিলিয়াম বানাতে নানা সময়ে নানা অনুপাতে ওই সব পদার্থ ব্যবহার করে। ফলে, অ্যান্টেনা গড়ে ওঠে নানা কাজের যোগ্য হয়ে।
গুলবেনকিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স-এর গবেষকদের ওই অনুসন্ধানের নেতা ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের ছেলে স্বাধীন। ওঁদের গবেষণার রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে ‘নেচার সেল বায়োলজি’ জার্নালে। পেপারের শিরোনাম, ‘ডিফারেন্সিয়াল রেগুলেশন অব ট্রানজিশন জোন অ্যান্ড সেনট্রিওল প্রেটিনস কনট্রিবিউটস টু সিলিয়ারি বেস ডাইভারসিটি’।
সিলিয়ামের গোলমালের মূলে জিন। ওই গোলমালের শিকার হাজারে এক জন মার্কিন নাগরিক বা ইউরোপের মানুষ। ভারতীয় উপমহাদেশে ওই বিপত্তির শিকার কত মানুষ, সে সংখ্যা জানা নেই। স্বাধীন ও তাঁর সহকর্মীরা এ বার এগোতে চান সিলিয়ামের গোলমালজনিত ব্যাধি নিরাময়ে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy