সূর্যগ্রহণ আজ।
সাজসরঞ্জাম নিয়ে প্রস্তুতি চলছিল বেশ কিছু দিন ধরে। ঝলমলে আকাশে সূর্যগ্রহণ দেখার আশায় বুক বেঁধেছিল বাঙালি। কিন্তু সেই আশায় অনেকটাই জল ঢেলে দিল পশ্চিমি ঝঞ্ঝা এবং একটি উচ্চচাপ বলয়। প্রকৃতির এই জোড়া ফলাতেই আজ, বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের আকাশে মেঘ জমবে, হাল্কা বৃষ্টিরও সম্ভাবনা আছে। ফলে সূর্যের দেখা পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দফতরের ডেপুটি ডিরেক্টর জেনারেল গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, ‘‘আকাশ মেঘলা থাকবে। মনে হয় না সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে।’’ প্রকৃতিই চমক দিয়ে মেঘ সরিয়ে গ্রহণ দেখাবে, এমন দুরাশাও অবশ্য পোষণ করছেন অনেকে।
কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের অধিকর্তা সঞ্জীব সেন জানান, কলকাতায় সকাল ৮টা ২৭ মিনিটে শুরু হয়ে গ্রহণ শেষ হবে বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে। সকাল ৯টা ৫৩ মিনিটে গ্রহণের তুঙ্গ পর্ব (যেখানে সূর্যের ৪৫ শতাংশ চাঁদের আড়ালে ঢাকা পড়বে) দেখা যাবে।
বিভিন্ন বিজ্ঞান সংগঠন, বিজ্ঞান প্রচারক সংস্থাও টেলিস্কোপে ফিল্টার লাগিয়ে সরাসরি গ্রহণ চাক্ষুষ করতে প্রস্তুত হচ্ছিল। কিন্তু আচমকা মেঘের হানায় মুহ্যমান তাঁরাও। কেউ কেউ ‘লাইভ স্ট্রিমিং’ দেখানোর ব্যবস্থা করছেন। বিড়লা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড টেকনোলজিক্যাল মিউজ়িয়ামের আধিকারিক গৌতম শীল বলেন, ‘‘প্রকৃতির উপরে আমাদের হাত নেই। নাসার লাইভ স্ট্রিমিং দেখানো হবে।’’
প্রায় এক দশক পরে ভারত থেকে সূর্যের বলয়গ্রাস দেখা যাবে। এই গ্রহণে গোটা সূর্য চাঁদের আড়ালে ঢাকা পড়ে না। তার ফলে সূর্যের বাইরের অংশটি উজ্জ্বল বলয়ের আকারে দৃশ্যমান হয়। এটা হয় পৃথিবী থেকে চাঁদ ও সূর্যের আপেক্ষিক দূরত্বের ফারাকের কারণেই। তবে বলয়গ্রাস এ বার শুধু দক্ষিণ ভারতের একাংশ থেকেই দেখা সম্ভব হবে। সঞ্জীববাবু জানাচ্ছেন, দক্ষিণ ভারতের কান্নুর, কোয়ম্বত্তূর, কোঝিকোড়, কোচি, উটি, মাদুরাই, মেঙ্গালুরু, তিরুচিরাপল্লি-সহ বিভিন্ন জায়গা থেকে এ বার বলয়গ্রাস স্পষ্ট দেখা যাবে। বলয়গ্রাসের পথ থেকে যত উত্তরে বা দক্ষিণে যাওয়া যাবে, ততই আংশিক গ্রহণ হিসেবে সূর্যের কম অংশকে ঢাকা পড়তে দেখা যাবে। তাই এ রাজ্য থেকে সূর্যের আংশিক গ্রহণ দেখা যাবে বলে জানায় পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার। সঞ্জীববাবু জানান, কলকাতা থেকে সূর্যের সর্বোচ্চ ৪৫ শতাংশ, দার্জিলিং থেকে সর্বোচ্চ ৩৬ শতাংশ এবং শিলিগুড়ি ও কোচবিহার থেকে সর্বাধিক ৩৫ শতাংশ ঢাকা পড়তে দেখা যাবে। ২০১৬-র ৯ মার্চ কলকাতা থেকে আংশিক গ্রহণ দেখা গিয়েছিল।
সতর্কতা
খালি চোখে সূর্যগ্রহণ দেখা উচিত নয় বলে জানিয়েছে পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টার। চোখের ক্ষতি এড়াতে বিশেষ সতর্কতা জারি করে তারা জানিয়েছে, অ্যালুমিনাইজ়ড মাইলার, কালো পলিমার কিংবা ১৪ নম্বর শেডের ঝালাই কাচের মাধ্যমে গ্রহণ দেখা উচিত। তবে টেলিস্কোপের সাহায্যে সাদা বোর্ডে সূর্যের প্রতিবিম্ব তৈরি করে গ্রহণ দেখাই সব থেকে ভাল উপায়।
কেউ কেউ এ বার গ্রহণের সঙ্গে মেঘলা আকাশের পূর্বাভাসে এক দশক আগেকার একটি স্মৃতি উস্কে দিচ্ছেন। সে-বার পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের পথ পটনা-সহ চারটি জায়গার উপর দিয়ে গিয়েছিল। কলকাতা থেকে সরকারি জ্যোতির্বিজ্ঞানী, বিজ্ঞান-উৎসাহী এবং সাংবাদিকেরা জড়ো হয়েছিলেন পটনায়। কিন্তু গ্রহণের দিন সকালবেলা প্রকৃতির খেয়ালে মেঘ উড়ে এসে আকাশ ঢেকে দিয়েছিল। পূর্ণগ্রাস ধরা দেয়নি টেলিস্কোপে! কেউ কেউ মনে করিয়ে দিচ্ছেন ২০১২ সালে সূর্যের উপর দিয়ে শুক্রের সরণের (ট্রানজ়িট অব ভেনাস)
বৃত্তান্ত। সে-দিন ভোর থেকেই ভিড় জমতে শুরু করেছিল সল্টলেকে পজিশনাল অ্যাস্ট্রোনমি সেন্টারের ছাদে। কিন্তু ভোর হতেই মেঘের আনাগোনা শুরু হয়। সরণ দেখা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়-দোলাচলের মধ্যে আচমকাই সরে গিয়েছিল মেঘ। গনগনে সাদা সূর্যের উপর দিয়ে কালো বিন্দুর মতে শুক্র গ্রহকে সরে যেতে দেখেছিলেন মানুষজন।
এ বারেও প্রকৃতির কোনও খেয়ালে হঠাৎ মেঘ সরে গিয়ে গ্রহণ চাক্ষুষ করার পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যায় কি না, সেটাই এখন দেখার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy