Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Science News

পৃথিবীর জলস্তর নিয়ে আরও বেশি বিপদের ছবি নাসার নতুন গবেষণায়

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা এই হুঁশিয়ারি দিয়েছে।

গ্রিনল্যন্ডের বরফের চাঙর। ছবি- নাসার সৌজন্যে।

গ্রিনল্যন্ডের বরফের চাঙর। ছবি- নাসার সৌজন্যে।

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৩:৩৬
Share: Save:

গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের দৌলতে উষ্ণায়নের জন্য খুব দ্রুত হারে বরফ গলে যাচ্ছে গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার। এই হার বজায় থাকলে আর ৮০ বছর পর ভয়ঙ্কর অবস্থা হবে সমুদ্রগুলির। শুধু গ্রিনল্যান্ড আর অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলে যাওয়ার জন্যই আমাদের সমুদ্রগুলির জলস্তর প্রায় দেড় ফুট উঠে আসবে।

মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক গবেষণা এই হুঁশিয়ারি দিয়েছে। গবেষকদল জানিয়েছে, এই হারে গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার বরফ গললে ২১০০ সালে পৃথিবীর সবক’টি সমুদ্রের জলস্তর ১৫ ইঞ্চিরও (৩৮ সেন্টিমিটার) বেশি উঠে আসবে। যা এ পর্যন্ত সব পূর্বাভাসের চেয়েই অনেক বেশি। অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।

চলতি সপ্তাহে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘ক্রায়োস্ফিয়ার’-এর বিশেষ ইস্যুতে এই পূর্বাভাস প্রকাশিত হয়েছে। যা করা হয়েছে নাসার গডার্ড স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের নেতৃত্বে ‘আইস শিট মডেল ইন্টার-কমপ্যারিজন প্রজেক্ট (আইএসএমআইপি৬)’-এর তথ্যের ভিত্তিতে।

গত বছর ‘ইন্টার-গভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)’-এর একটি বিশেষ রিপোর্টে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল, ২১০০ সালে আমাদের সমুদ্রগুলির জলস্তরের উচ্চতা-বৃদ্ধির এক-তৃতীয়াংশই হবে গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকার পুরু বরফের চাঙড়গুলি গলে যাওয়ার জন্য।

আইপিসিসি-র ওই রিপোর্টে জানানো হয়েছিল গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলার জন্য ২০০০ থেকে ২১০০ সালের মধ্যে সমুদ্রগুলির জলস্তর উঠে আসবে ৩.১ থেকে ১০.৬ ইঞ্চি (৮ থেকে ২৭ সেন্টিমিটার)। আর অ্যান্টার্কটিকার বরফ গলার জন্য এই শতাব্দীতে সমুদ্রের জলস্তর উঠে আসবে ১.২ থেকে ১১ ইঞ্চি (৩ থেকে ২৮ সেন্টিমিটার)।

আরও পড়ুন- মঙ্গলের আকাশ ভরে যাবে ড্রোনে-কপ্টারে, জানাল নাসা​

আরও পড়ুন- এ বার মঙ্গল অভিযানে নাসার বড় ভরসা ভারতের বলরাম

প্রকল্পের মূল গবেষক বাফালো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সোফি নোউইকি বলেছেন, ‘’৮০ কি ১০০ বছর পর সমুদ্রের জলস্তর কতটা উঠে আসবে তা নির্ভর করবে খুব পুরু বিশাল বিশাল বরফের চাঙড়গুলি কী হারে গলে যাবে তার উপর। আর বরফের সেই সুবিশাল চাঙড়গুলির প্রায় সবটাই আছে গ্রিনল্যান্ড ও অ্যান্টার্কটিকায়। এই বরফের চাঙড়গুলির গলে যাওয়া নির্ভর করছে উষ্ণায়নের উপর।’’

গবেষকরা জানিয়েছেন সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে যাওয়ার হার। কারণ, পরিবেশের তাপমাত্রা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে যাওয়ায় গ্রিনল্যান্ডের পুরু বিশাল বিশাল বরফের চাঙরগুলির উপরের স্তর দ্রুত গলে যাচ্ছে। আর সমুদ্রের তাপমাত্রা উত্তরোত্তর বেড়ে চলায় গ্রিনল্যান্ডের সমুদ্র-লাগোয়া হিমবাহগুলিও গলতে শুরু করেছে।

পুর্বাভাস দিতে গিয়ে গবেষকরা হিসাবটা কষেছেন দু’রকম ভাবে। তাঁরা দেখেছেন গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমনের হার যদি এখনকার চেয়ে বেড়ে যায় তা হলে শুধু গ্রিনল্যান্ডের বরফের চাঙড়গুলি গলে যাওয়ার জন্যই ২১০০ সালে সমুদ্রগুলির জলস্তর উঠে আসবে সাড়ে ৩ ইঞ্চি (৯ সেন্টিমিটার)। আর সেই নির্গমন কিছুটা কম হলে গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে যাওয়ার জন্য ২১০০ সালে সমুদ্রগুলির জলস্তর উঠে আসবে সাড়ে ১.৩ ইঞ্চি (৩ সেন্টিমিটার)। এর আগের কোনও পূর্বাভাসেই এতটা বিপদের ছবি ফুটে বেরয়নি।

এই গবেষণা ২০২২ সালে আইপিসিসি-র রিপোর্ট তৈরির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE