Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Science News

ব্রহ্মাণ্ডে আলো ফোটার আগে প্রথম ‘ডেটিং’!

সেই কুশীলবরা ছিল আদতে একটি যৌগের অণু। ব্রহ্মাণ্ডে প্রথম কোনও পদার্থের অণু। হিলিয়াম হাইড্রাইড।

‘এনজিসি-৭০২৭’। যেখানে হদিশ মিলেছে সেই আদিমতম অণুর (বৃত্তের মধ্যে)। ছবি সৌজন্যে: নাসা

‘এনজিসি-৭০২৭’। যেখানে হদিশ মিলেছে সেই আদিমতম অণুর (বৃত্তের মধ্যে)। ছবি সৌজন্যে: নাসা

সুজয় চক্রবর্তী
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০১৯ ১৪:১৬
Share: Save:

সেই কুশীলবরা শেষ পর্যন্ত ধরা দিল। ‘গ্রেফতারি পরোয়ানা’ জারি হওয়ার ৯৪ বছর পর! বিস্তর খোঁজ-তল্লাশের পরেও যারা এত দিন আমাদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে চলছিল।

ব্রহ্মাণ্ডে ভোর হওয়ার অনেক আগেই সেই কুশীলবরা মতলব ভেঁজে নিয়েছিল, কী ভাবে তারা জন্ম দেবে, তারা, নক্ষত্রমণ্ডল, গ্যালাক্সি আর গ্যালাক্সির ঝাঁক ও মহাঝাঁক, এই সব কিছুর। একে অন্যের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ঠিক করে নিয়েছিল, গোটা ব্রহ্মাণ্ডকে তারা কী ভাবে বানাবে। কী ভাবে গড়ে তুলবে একেবারে প্রথম প্রজন্মের তারাদের শরীর। সেই কুশীলবরা ছিল আদতে একটি যৌগের অণু। ব্রহ্মাণ্ডে প্রথম কোনও পদার্থের অণু। হিলিয়াম হাইড্রাইড। যেখানে একটি হিলিয়াম পরমাণু আগ বাড়িয়ে তার একটি ইলেকট্রন দিয়ে হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নিয়েছিল ছন্নছাড়া একটি হাইড্রোজেন পরমাণুকে। হিলিয়ামও ছিল ছন্নছাড়া। ব্রহ্মাণ্ডের সেটাই ছিল প্রথম ‘গটবন্ধন’। দুই ছন্নছাড়ার হ্যান্ডশেক!

নাসার নেতৃত্বে একটি আন্তর্জাতিক গবেষকদল এ বার দেখতে পেল, ব্রহ্মাণ্ডে প্রথম কারা একে অন্যের হাত ধরেছিল। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের ৪৫ হাজার ফুট উপরে থাকা মহাকাশযান ‘সোফিয়া’ (পুরো নাম- ‘স্ট্র্যাটোস্ফেরিক অবজারভেটরি ফর ইনফ্রারেড অ্যাস্ট্রোনমি’)- চোখেই ধরা পড়ল সেই আদিমতম ঘটনা। সেই ঐতিহাসিক গবেষণাপত্রটি বেরিয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’-এ।

মূল গবেষক বনের ম্যাক্স প্ল্যাঙ্ক ইনস্টিটিউট ফর রেডিও অ্যাস্ট্রোনমির অধ্যাপক রল্‌ফ গুস্তেন আনন্দবাজার ডিজিটালকে জানিয়েছেন, ‘‘আমরা ওই আদিমতম অণুর হদিশ পেয়েছি আমাদের মিল্কি ওয়ে গ্যালাক্সিতেই। আমাদের থেকে মাত্র ৩ হাজার আলোকবর্ষ দূরে। ‘এনজিসি-৭০২৭’ নামে একটি প্ল্যানেটারি নেবুলায়।’’

১ হাজার ৩৭০ কোটি বছর আগেকার ঘটনা। সবে হয়েছে সেই ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণ। বিগ ব্যাং। তার পর কেটে গিয়েছে ২০১ সেকেন্ড। মানে, তিন মিনিটের একটু বেশি। থমথম করছে চার পাশ। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের পর যেমন শুনশান হয়ে যায় গোটা এলাকা। জমজমাট গাঢ় অন্ধকারে ঢাকা চার দিক। কোথাও কোনও আলোর দেখা নেই। নেই কোনও সাড়াশব্দও। থম মেরে রয়েছে সব কিছু।

এমনটাই দেখতে হয় সেই হিলিয়াম হাইড্রাইড অণু

সেই সময়, ব্রহ্মাণ্ডে ভোরের আলো ফোটার অনেক আগেই কেউ কেউ শুরু করে দিয়েছিল যাবতীয় সৃষ্টির মতলব ভাঁজার কাজটা। শুরু হয়ে গিয়েছিল ছন্নছাড়া, ভবঘুরেদের নিয়ে কিছু একটা গড়ে তোলার, নির্মাণের প্রস্তুতি। বিগ ব্যাংয়ের পর তখন ব্রহ্মাণ্ডের বয়স সবে এক লক্ষ বছর।

কী হয়েছিল বিগ ব্যাংয়ের পরের তিন মিনিটে?

ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণের পর থম মেরে থাকা শিশু ব্রহ্মাণ্ড তখন ফুটছে রীতিমতো। তাপমাত্রা কত জানেন? এক-এর পর ৩৩টি শূন্য বসালে যে সুবিশাল সংখ্যাটা হয়, তত ডিগ্রি কেলভিন (এক কেলভিন মানে, শূন্যের নীচে ২৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস)। ওই প্রচণ্ড তাপমাত্রায়, ওই অবর্ণনীয় আলোড়নে, আলাদা ভাবে কোনও কিছুরই সৃষ্টি হওয়া সম্ভব নয়। সৃষ্টি হয়ওনি কিছুর, বিগ ব্যাংয়ের পরের ওই তিন মিনিটে।

ব্রহ্মাণ্ডের আদিমতম অণু: দেখুন নাসার ভিডিয়ো

তৈরি হতে পেরেছিল শুধুই তিনটি পরমাণুর ‘হার্ট’ বা ‘হৃদয়’। পরমাণুর নিউক্লিয়াস। যেখানে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে থাকে প্রোটন আর নিউট্রনের মতো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণিকারা। সেই তিনটি পরমাণুর ‘হৃদয়’গুলি ছিল তিনটি মৌলের। হাইড্রোজেন, হিলিয়াম আর লিথিয়ামের। যাদের মধ্যে আবার হিলিয়াম আদতে একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাসীয় মৌল। যার সঙ্গে কারওরই বনিবনা হয় না। হিলিয়াম কারও সঙ্গে হাত মেলায় না বলে।

তবে শুধু ‘হৃদয়’ থাকলেই যেমন কোনও প্রাণী জন্ম নিতে পারে না, ঠিক তেমনই বিগ ব্যাংয়ের পরের তিন মিনিটে ওই তিনটি নিউক্লিয়াস দিয়ে তিনটি মৌলের পরমাণুও গড়ে উঠতে পারেনি।

সেই তিনটি ‘হৃদয়’-এ ছিল কী কী?

ছিল হাইড্রোজেনের নিউক্লিয়াসের একটি প্রোটন। ছিল হিলিয়ামের নিউক্লিয়াসের দু’টি প্রোটন আর দু’টি নিউট্রন। আর ছিল খুব সামান্য পরিমাণে লিথিয়াম মৌলের পরমাণুর নিউক্লিয়াস। যে ‘হৃদয়’-এ ছিল ৩টি প্রোটন আর ৪টি নিউট্রন।

কলকাতার ইন্ডিয়ান সেন্টার ফর স্পেস ফিজিক্সের (আইসিএসপি) অধিকর্তা সন্দীপ চক্রবর্তী ও আইসিএসপি-র অধ্যাপক অঙ্কন দাস বলছেন, ‘‘ওই ভয়ঙ্কর তাপমাত্রায় কোনও মৌলের পরমাণুর শরীর গড়ে তোলার জন্য সেই ‘হৃদয়’গুলি ‘হাত, পা, মস্তিষ্ক’ পাচ্ছিল না। ওই সময় আর যা ছিল সেই বিগ ব্যাংয়ের পরের তিন মিনিটের শিশু ব্রহ্মাণ্ডে, তা হল আলোর কণা ফোটন। কিন্তু সেই ফোটন তখন বাইরে বেরিয়ে আসতে পারেনি। খুব সামান্য একটি জায়গার মধ্যে আটকা পড়ে ছিল।’’

আরও পড়ুন- হাজার হাজার আলোর উজ্জ্বলতম ঝাড়বাতির হদিশ মিলল ব্রহ্মাণ্ডে!

আরও পড়ুন- ৪০ বছর ধরে মহাকাশে হাঁটছে এই দুই পথিক​

তার ফলে, একে অন্যের সঙ্গে ধাক্কাধাক্কি করা ছাড়া আর কিছুই হচ্ছিল না। কখনও ফোটন ধাক্কা মারছিল প্রোটনকে। বা হিলিয়ামকে। বা লিথিয়ামকে। ঘুরে বেড়াচ্ছিল প্রচুর ইলেকট্রনও। কিন্তু তারাও পরমাণুর শরীর গড়ে তুলতে পারছিল না। কিছু গড়ে উঠলেও সঙ্গে সঙ্গে সেই সব ভেঙে যাচ্ছিল, ওই প্রচণ্ড তাপমাত্রায়।

ফলে, বিগ ব্যাংয়ের পরের তিন মিনিট ধরে চলছিল শুধুই বিশৃঙ্খলা। ‘কেওস’। কোনও গঠনমূলক প্রক্রিয়া তখন সম্ভবই ছিল না। হচ্ছিল না বলেই প্রাণ সৃষ্টির মূল উপাদান কার্বন, নাইট্রোজেন আর অক্সিজেন পরমাণু তৈরি হতে পারছিল না।

সন্দীপ ও অঙ্কনের কথায়, ‘‘হয়তো সেটা বুঝতে পেরেই, ব্রহ্মাণ্ড তার পর আচমকাই খুব দ্রুত ঠান্ডা হয়ে পড়তে শুরু করল। ঝপঝপ করে তাপমাত্রা নেমে যেতে থাকল ব্রহ্মাণ্ডের। নামতে নামতে যখন সেটা পৌঁছল ৪ হাজার ডিগ্রি কেলভিনের আশপাশে, তখন সেই ঠান্ডা হয়ে আসা ব্রহ্মাণ্ডে শুরু হল সৃষ্টির প্রাথমিক প্রক্রিয়া। ছন্নছাড়াদের মতো ঘুরতে থাকা ইলেকট্রনগুলি প্রোটনের কাছাকাছি এসে হাইড্রোজেন পরমাণু বানিয়ে ফেলল। ফলে আটকে থাকা আলোর কণা ফোটন তার সঙ্গে ‘ঘুষোঘুষি’ করার ইলেকট্রনকে হারাল।’’

সুইডেন থেকে নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির বিজ্ঞানী গৌতম চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, কার্বন নেই, অক্সিজেন নেই, নাইট্রোজেনের পরমাণু নেই, আশপাশে আর কেউ নেই বলে বিগ ব্যাংয়ের পরের তিন মিনিট থেকে তার পরের ১ লক্ষ বছরের মধ্যে যে হিলিয়ামের কারও সঙ্গে বনিবনা হয় না মৌলদের বিশাল জগতে, সেই হিলিয়ামই যেচে এগিয়ে এল হাইড্রোজেনের কাছে। বলল, ‘‘আমার একটা ইলেকট্রন নিতে পার। এসো আমরা নিজেদের মধ্যে বন্ধন গড়ে তুলি।’’

রল্‌ফ গুস্তেন (উপরে বাঁ দিক থেকে), লিটন মজুমদার, অঙ্কন দাস, গৌতম চট্টোপাধ্যায় (নীচে বাঁ দিক থেকে), সন্দীপ চক্রবর্তী ও সুজন সেনগুপ্ত

শুরু হল প্রথম ‘গটবন্ধন’-এর কাজ। হাতে হাত মেলানো। আর সেটা হল, আশপাশে কার্বন, নাইট্রোজেন আর অক্সিজেন পরমাণু না থাকায়। থাকলে তো তাদের ছেড়ে হিলিয়ামের দেওয়া প্রস্তাব মেনে নিয়ে তার হাতই ধরত না হাইড্রোজেন। সে অক্সিজেনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে হয় হাইড্রোক্সিল আয়ন বা জলের অণু বানাত। না হলে, নাইট্রোজেনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বানাত হয় নাইট্রাস বা নাইট্রোজেনের অন্য কোনও অক্সাইড। অথবা, কার্বনের সঙ্গে হাত মিলিয়ে বানাত মিথেন বা ফরম্যালডিহাইড। যেগুলি প্রাণের বীজ।

সন্দীপ বলছেন, ‘‘এই গটবন্ধনটা তাই ছিল একেবারেই বাধ্যতামূলক। তবে এটাই ছিল ব্রহ্মাণ্ডের আদিমতম গটবন্ধন।’’

আদিমতম, তার প্রমাণ কোথায়?

বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের (আইআইএ) অধ্যাপক সুজন সেনগুপ্ত ও নাসার জেট প্রোপালসান ল্যাবরেটরির ইন্টারস্টেলার অ্যান্ড হেলিওস্ফেরিক ফিজিক্স গ্রুপের অন্যতম সদস্য লিটন মজুমদার জানাচ্ছেন, বিগ ব্যাং থেকে বেরিয়ে এসেছিল প্রচুর পরিমাণে প্রোটন ও ইলেকট্রন। তার পর প্রথম তিন মিনিটের মধ্যে দুটি প্রোটন জোট বেঁধে হিলিয়ামের নিউক্লিয়াস তৈরি করে। এই ঘটনাটিকেই ‘বিগ ব্যাং নিউক্লিওসিন্থেসিস’ বলা হয়। হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম ছাড়াও কিছু পরিমাণে লিথিয়ামও তৈরি হয় সেই সময়। তার পর ব্রহ্মাণ্ড যখন আরও একটু ঠাণ্ডা হয়, তখন ইলেকট্রনরা এই হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের নিউক্লিয়াসের সঙ্গে যুক্ত হয়। ফলে, পৃথিবী-সহ গোটা ব্রহ্মাণ্ডে আজ আমরা যে হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম দেখতে পাই তা সৃষ্টি হয়েছিল সেই তিন মিনিটেই। ব্রহ্মাণ্ড যখন নেহাতই ছিল শিশু! কিন্তু তার পর ব্রহ্মাণ্ড আরও আরও ঠাণ্ডা হতে থাকে। তাঁর ফলে দুটি হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত হয়ে তৈরি হয় হাইড্রোজেন অণু। হিলিয়াম হাইড্রাইড অণু কেন ওই সময় তৈরি হতে পারবে না?

সুজন ও লিটনের বক্তব্য, বিজ্ঞানীরা মনে করতেন বিগ ব্যাং হওয়ার এক লক্ষ বছর পর তেমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল। ১৯২৫ সালে গবেষণাগারে সেই অণু কৃত্রিম ভাবে বানানো হয়েছিল। পরে সাতের দশকে বলা হয়, এই ধরনের অণুর হদিশ মিলবে ব্রহ্মাণ্ডের কোথাও না কোথাও। তা হলে সেই অণুরা গেল কোথায়? এত দিন পর সেই অণুদের সন্ধান পাওয়া গেল। হিলিয়াম একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস। যা অন্য কোন পরমাণুর সঙ্গে হাত মেলাতে চায় না। তাই যেখানে সেখানে এই অণু তৈরি হওয়া সম্ভব নয়। প্ল্যানেটারি নেবুলাদের (যেখানে কোনও তারা মরে গিয়ে লাল বামন নক্ষত্রে পরিণত হয়েছে, সেই এলাকা) থেকে নির্গত অতিবেগুনি রশ্মি হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের হাত মিলিয়ে দিতে পারে। আর অধুনা একটি প্ল্যানেটারি নেবুলার ধারে কাছেই আবিষ্কার হয়েছে এই হিলিয়াম হাইড্রাইড অণুর যা তৈরি হয়েছে সেই আদিম পরমাণু হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম দিয়ে। এই অণুর আবিষ্কার বিজ্ঞানীদের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এর থেকে আমরা ব্রহ্মাণ্ডের বিবর্তনের ধারণাটাকে আরও সমৃদ্ধ করে তুলতে পারব।

লিটনের কথায়, ‘‘এই অণুর আবিষ্কারের গুরুত্বটা এইখানেই যে হিলিয়াম হাইড্রাইড তৈরি হয়েছিল বলেই সেটা পরবর্তীকালে প্রচুর হাইড্রোজেন পরমাণুর জন্মের রাস্তাটা খুলে দিয়েছিল। কারণ, সেই গোড়ার দিকে হিলিয়াম হাইড্রাইড অণু ভেঙেই হাইড্রোজেন অণু তৈরি হয়েছিল। তাতে ফের মুক্ত হয়েছিল হিলিয়াম। ফলে, প্রথম প্রজন্মের তারারা গড়ে উঠল মূলত হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম পরমাণু দিয়ে। সেখানে আর কোনও মৌলের পরমাণু ছিল না।’’

সুজনের বিশ্বাস, ‘‘এ বার এই অণুর হদিশ আরও মিলবে ব্রহ্মাণ্ডের সূদূরতম প্রান্তে। মানে, যে অংশগুলির জন্ম হয়েছিল বিগ ব্যাংয়ের কিছু পরেই। তবে ব্রহ্মাণ্ড ক্রমশই ফুলে, ফেঁপে, চার পাশে দ্রুত হারে ছড়িয়ে পড়ছে বলে তা উত্তরোত্তর দূরে চলে যাচ্ছে আমাদের থেকে।’’

সন্দীপ ও লিটন জানাচ্ছেন, সে ক্ষেত্রে এমন অণুর আরও সন্ধান পেতে গেলে সেই এলাকাটিকে অনেক বেশি উজ্জ্বল হয়ে উঠতে হবে আমাদের রেডিও টেলিস্কোপের চোখে।

আলোর দেখা মিলল তারও অনেক পর

বিগ ব্যাংয়ের ৩ লক্ষ ৮০ হাজার বছর পর আটকে থাকা ফোটন কণা বেরিয়ে আসতে পেরেছিল। ছড়িয়ে পড়তে পেরেছিল ব্রহ্মাণ্ডে। তার ফলেই তৈরি হয়েছিল কসমিক মাইক্রোওয়েভ ব্যাকগ্রাউন্ড (সিএমবি)। আচমকা টেলিভিশন সম্প্রচার বন্ধ হয়ে গেলে স্ক্রিনে আমরা যা দেখি, সেটাই আসলে সিএমবি।

সন্দীপের কথায়, ‘‘তার প্রায় ৩ লক্ষ বছর আগেই আটকে থাকা ফোটন কণারা তাদের ‘ঘুষোঘুষি করার সঙ্গী’ মুক্ত ইলেকট্রন বা প্রোটন কণিকাদের হারিয়ে ফেলেছিল, তারা জোট বেঁধে পরমাণু তৈরি করতে শুরু করে দিয়েছে বলে। ফলে, আটকে থাকা ফোটন কণারা তখন কিছুটা যেন একাই হয়ে পড়েছিল। সেই ফোটন কণারা মুক্তি পেল বিগ ব্যাংয়ের ৩ লক্ষ ৮০ হাজার বছর পর।’’

ছবি ও ভিডিয়ো সৌজন্যে: নাসা

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE