Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Science News

ফলন বাড়াতে পাতার চেহারা বদলানো যাবে আমাদের ইচ্ছেমতোই?

সেই সম্ভাবনার পথ দেখালো একটি সাম্প্রতিক গবেষণা। যা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল 'সায়েন্স'-এর 22 নভেম্বর সংখ্যায়। সেই আন্তর্জাতিক গবেষকদলে রয়েছেন দুই অনাবাসী ভারতীয়। জন্স হফকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিকেত কামাথ ও সমুদ্রসারথি সেনগুপ্ত।

'আটরাকুলারিয়া গিব্বা' একটি জলজ উদ্ভিদ। ছবি: গো বোটানি থেকে নেওয়া

'আটরাকুলারিয়া গিব্বা' একটি জলজ উদ্ভিদ। ছবি: গো বোটানি থেকে নেওয়া

নিজস্ব প্রতিবেদন
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৪:১৩
Share: Save:

গাছের পাতার আকার আকৃতি কি এ বার আমরা বদলে দিতে পারব? করে নিতে পারব, যেমন চাইছি ঠিক তেমনটাই? যাতে সেই পাতা হয়ে উঠবে আরও লম্বা-চওড়া। আরও বেশি করে বুক পেতে থাকতে পারবে সূর্যের আলো নিতে?

সেই সম্ভাবনার পথ দেখালো একটি সাম্প্রতিক গবেষণা। যা প্রকাশিত হয়েছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল 'সায়েন্স'-এর ২২ নভেম্বর সংখ্যায়। সেই আন্তর্জাতিক গবেষকদলে রয়েছেন দুই অনাবাসী ভারতীয়। জন্স হফকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক অনিকেত কামাথ ও সমুদ্রসারথি সেনগুপ্ত।

কী জানিয়েছে এই গবেষণা?

গবেষণা বলছে, কয়েকটি জিনের সামান্য কিছু কেরামতিতেই গাছের পাতার চেহারা, আকার, সব বদলে যায়। আর সেই জিনগুলিকে চাইলে আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। নানা ধরনের আলো ফেলে। চাপ বাড়িয়ে, কমিয়ে। বা তাপমাত্রা বদলিয়ে। কখনও বা বিশেষ ধরনের রাসায়নিক ব্যবহার করে।

আরও পড়ুন:উমেশের পাঁচ উইকেট, ইডেনে গোলাপি বলের টেস্ট ইনিংস ও ৪৬ রানে জিতল ভারত
আরও পড়ুন:মহারাষ্ট্র লাইভ: রাজ্যপাল কারও নির্দেশে কাজ করেছেন, না হলে এমন হত না, বললেন সিব্বল

অন্যতম গবেষক সমুদ্রসারথি বলছেন, "কোনও পাতা সোজা হবে নাকি তা মুড়ে থাকবে বা পতঙ্গ ধরে খাওয়ার জন্য সেই পাতার মধ্যে থাকবে কোনও ফাঁদ, অনেকটা কলসির মতো, সেই সব কিছুই নির্ভর করে গাছের কয়েকটা জিনের সামান্য কিছু কেরামতির উপর। যা সব প্রজাতির সব রকমের গাছের ক্ষেত্রেই ঘটে।"

গাছের পাতার চেহারায় কি যায়-আসে?

অবশ্যই যায়-আসে। আমরা যাঁরা লম্বা, মানতেই হবে, বেঁটেদের চেয়ে আমরা বেশি সুবিধে পাই উঁচু জিনিস হাতের নাগালে পেতে। যাঁরা বুক চিতিয়ে চলি, তাঁদের শরীরের যন্ত্রগুলি অনেক ঠিকঠাক চলে কুঁজো হয়ে হাঁটা মানুষের চেয়ে।

গাছের পাতার ক্ষেত্রেও নিয়মটা একই। যে গাছের পাতা যত সোজা, যত বড়, যত ছরানো, সেই গাছ তত বেশি সুস্থ, সবল। নিজেদের শারীরবৃত্তীয় কাজকর্মগুলি তারা আরও ভাল ভাবে করতে পারে।

কারণ পাতা যত বড়, ছড়ানো আর সোজা হবে, ততই সে সূর্যের আলো টানতে পারবে বেশি। তার ফলে রান্নাবান্নাটা আরও ভাল ভাবে করতে পারবে। যার নাম 'সালোক সংশ্লেষ' বা 'ফটোসিনথেসিস'। এই সালোক সংশ্লেষই গাছকে বাঁচিয়ে রাখে। আমাদেরও।

পাতার কেমন চেহারা গাছের পছন্দ?

আর এক গবেষক অনিকেত জানাচ্ছেন, স্থলজ গাছের বেশির ভাগ প্রজাতিরই পছন্দ সোজা, ছরানো, বড় পাতা। তাতে সূর্যের আলো আরও বেশি করে টানা যায় বলে।

তবে প্রচুর জলজ উদ্ভিদ রয়েছে। পৃথিবীতে জলের পরিমাণ অনেক বেশি। তাই জলজ উদ্ভিদের সংখ্যাও বেশি বহু গুন। আবার ঘন জঙ্গলেও রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির উদ্ভিদ। এরা কেউই সূর্যের আলো ততটা পায় না। তাই এদের খেয়েপরে বেঁচে থাকার জন্য অন্য পথ ধরতে হয়। সালোক সংশ্লেষের ভরসায় থাকলে তো ওই সব গাছপালার পেটই ভরবে না।

বাঁচার লড়াই পাতার চেহারা বদলে দেয়

সমুদ্রসারথির বক্তব্য, ওই সব উদ্ভিদকে পেটের টানে মাংসাশী হতে হয়। পতঙ্গভুক হতে হয়। বাঁচার জন্য, টিঁকে থাকার জন্য। সেই বেঁচে থাকার লড়াইটা এক এক উদ্ভিদের ক্ষেত্রে এক এক রকম।

যারা পতঙ্গ খেয়ে বাঁচে তাদের পাতার চেহারা সোজা, ছড়ানো হওয়ার দরকার পরে না। বরং তাদের পাতায় ফাঁদ থাকলেই ভাল। সেটা কলসির চেহারার হতে পারে। অন্য চেহারারও হয়। সেই পাতা অনেকটাই মুড়ে থাকবে। যাতে পতঙ্গ ঢুকলে তাকে জাপ্টে ধরতে পারে। বিবর্তনের প্রক্রিয়া তাকে যে সেই ভাবেই শিখিয়েছে!

কাজটা কোন উদ্ভিদের ওপর করা হয়েছে?

উদ্ভিদটির নাম- 'ইউট্রি কুলারিয়া গিব্বা'। একটি জলজ উদ্ভিদ। মাংসাশী। পতঙ্গ ধরে খায়। পতঙ্গ খেয়েই বাঁচে।

এই উদ্ভিদের পাতাগুলো একেবারেই মোরা। কলসির মতো। সেই কলসির গায়ে নিচের দিকে রয়েছে কয়েকটি সূচের মতো এলাকা।

গবেষকরা কী দেখেছেন?

বিশেষ কয়েকটি জিনই ওই গাছের পাতার কলসিগুলি তৈরি করছে। সেই জিনগুলির কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়া হলেই পাতার কলসিগুলি তৈরি হচ্ছে না। নিচের সূচগুলি জন্মানোর পরেই কলসি তৈরির প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। জানাচ্ছেন সমুদ্রসারথি।

"শুধু তাই নয়, এও দেখা গিয়েছে, সব গাছের ভিতরেই একটা 'সেলফ মেড কম্পাস' থাকে। সেই কম্পাসই ঠিক করে দেয় গাছ বা তার পাতাগুলো কোন দিকে বেশি বাড়বে। পাতার ভারে গাছটাকে কোন দিয়ে বেশি নুইয়ে দেবে", বললেন অনিকেত।

এমনকী, কলসিগুলো পাতার কোন দিকটায় তৈরি হবে, সেটাও ঠিক করে দেয় ওই কম্পাসই।

ফলন বাড়ানো কী ভাবে সম্ভব?

কোন জিন এই পাতার চেহারা বদলাতে মূল ভূমিকা নেয়, তা যখন জানতে পারা গেল, তখন তাদের নিয়ন্ত্রণ করে পাতার চেহারা বদলে নেওয়ার কাজটা অনেকটাই সহজ হয়ে গেল বলেই মনে করছেন গবেষকরা। তাঁরা সেই কথা লিখেছেন গবেষণাপত্রেও।

সমুদ্রসারথি বললেন, "ফলন বাড়াতে কোনও এলাকার গাছের পাতাকে যদি আরও বড়, আরও ছরানো করে তুলতে হয়, আশা করছি, সেই কাজটা করার পথ দেখাতে পেরেছি আমরা।"

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE