নিউ হরাইজনসের চোখে নতুন ওয়ান্ডারল্যান্ড প্লুটো।
ইঁদুরের পিছনে ধাওয়া করতে করতে রূপকথার ওয়ান্ডারল্যান্ডে পৌঁছে গিয়েছিল অ্যালিস। আর নিউ হরাইজনস-এর হাত ধরে বিজ্ঞানীরা পৌঁছে গিয়েছেন অন্য এক ওয়ান্ডারল্যান্ড, প্লুটোয়। বরফের পাহাড়, হিমবাহ, লালচে ধোঁয়াশা ভরা বায়ুমণ্ডল, অসংখ্য খাত আর ভাঁজে ভরা এই বামন গ্রহ। নিউ হরাইজনস-এর সংগ্রহ করা তথ্যের মাত্র পাঁচ শতাংশই ডাউনলোড করা সম্ভব বয়েছে। তাতেই যে ছবি উঠে আসছে তা বিস্মিত বিজ্ঞানীদের প্লুটো নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করছে। আরও তথ্যের জন্য উন্মুখ হয়ে আছেন তাঁরা।
এমনটা যে ঘটতে চলছে তা নিয়ে আগাম ইঙ্গিত দিয়েছিলেন নিউ হরাইজনস-এর গবেষক দলের প্রধান অ্যালান স্টার্ন। নিউ হরাইজনসের পাঠানো তথ্য সবার সামনে তুলে ধরতে গিয়ে প্রতি বারই তিনি বলেন, ‘‘আরও বিস্ময়ের জন্য অপেক্ষা করুন।’’ অপেক্ষার পরে প্রতি বারই বিস্ময় আরও বাড়ে। এ বার যেমন নতুন বিস্ময়, প্লুটোর বুকে সচল হিমবাহ। যে হিমবাহ রয়েছে প্লুটোর হৃদয়ের মতো দেখতে অংশে। এই বরফ নাইট্রোজেন, মিথেন জমে তৈরি। আর তা একের পর এক খাতকে ভরিয়ে, উপচিয়ে চলে যাচ্ছে। কেন সচল এই হিমবাহ? বিজ্ঞানীদের অনুমান, ভূপৃষ্ঠের তলায় রয়েছে উত্তপ্ত সমুদ্র। সেই তাপই হিমবাহকে সচল রাখছে। মজা করে অ্যালান স্টার্ন যাকে বলেছেন, ‘‘স্পন্দিত হৃদয়।’’ সেই হিমবাহের স্রোতের ফলে এত দিনে বেশ সুপরিচিত প্লুটোর হৃদয়ের মতো অংশের দু’দিকের প্রকোষ্ঠের আকার কিছুটা আলাদা হয়ে গিয়েছে।
যদিও জল এমনই জমে গিয়েছে যে তার আর চলন নেই। সেগুলি তৈরি করেছে পাহাড়। এমনই এক নতুন পাহাড়েরও সন্ধান মিলেছে। যার নাম রাখা হয়েছে এভারেস্ট বিজয়ী পর্বতারোহী এডমন্ড হিলারি-র নামে।
সূর্যের উল্টো দিক থেকে প্লুটো। নিউ হরাইজনস-এর চোখে।
পাশাপাশি, বিজ্ঞানীদের অবাক করে দিয়েছে প্লুটোর লালচে আভা, অনেকটা যেন মঙ্গলের মতো। এই লালচে ধোঁয়াশা প্লুটোর পৃষ্ঠ থেকে প্রায় একশো মাইল উপর পর্যন্ত বিস্তৃত। সূর্যালোক সেই লাল ধোঁয়াশার মধ্যে ডুব দিয়ে এক অপরূপ মায়াময় জগত তৈরি করেছে। সেই অপরূপ জগত দেখতে দেখতে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এটি ছড়িয়ে থাকা অসংখ্য বিশেষ ধরনের কণা, ‘থোলিনস’-এর কেরামতি। তেজস্ক্রিয় বিকিরণের ফলে বা হাইড্রোজেন হারিয়ে কোনও কণা ‘থোলিনস’-এ রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছে। তবে বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ নিয়ে ভিন্নমত রয়েছে। নিজের কক্ষপথে সূর্যের চারপাশে প্লুটোর পাশে ঘুরতে পৃথিবীর হিসেবে ২৪৮ বছর লাগে। প্লুটোর উত্তর মেরু ১২০ ডিগ্রি কোণে ঝুঁকে রয়েছে। তাই তৈরি হয়েছে এই লাল আভা।
নিউ হরাইজনস এখন প্লুটো থেকে প্রায় সাত মাইল দূরে চলে গিয়েছে। তবে হরাইজনস প্লুটোর কাছে পৌঁছে গিয়েছিল বড় সুসময়ে। বিজ্ঞানীদের হিসেবে প্লুটোর বায়ুমণ্ডল ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। এমন চললে তা এক দিন মিলিয়ে যেতেও পারে। তার আগেই সেই বায়ুমণ্ডল নিয়ে বিপুল তথ্য সংগ্রহ করে ফেলেছে নিউ হরাইজনস। জানা গিয়েছে প্লুটোর সেই হৃদয়েই বিপুল পরিমাণে কার্বন মনোক্সাইড সঞ্চিত আছে।
প্লুটো পেরিয়ে নিউ হরাইজনস এখন কুপার বেল্টে পৌঁছে গিয়েছে। এই যানের পারমাণবিক জ্বালানি আরও প্রায় দু’দশক যানটিকে সচল রাখবে। চলবে নানা অনুসন্ধান। তার আগেই প্লুটোর যে অরূপ সাগরের সন্ধান দিয়েছে সে তাতে ক্রমেই ডুবে যাচ্ছেন বিজ্ঞানী-গবেষকেরা।
ছবি: এএফপি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy