Advertisement
০৮ মে ২০২৪

জোরালো নয় মুন্সিয়ানা

‘নন্দিনীর পালা’ নাটকটি দেখলেন পিয়ালী দাসকথক পারফর্মিং রেপার্টয়্যার এর প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হল ‘নন্দিনীর পালা’ নাটকটি। পরিচালনায় কৃতী মজুমদার। প্রথমেই প্রশ্ন জাগে, নাটকের নাম নন্দিনীর পালা কেন? কারণ রক্তকরবীর মূল ধারাকে অক্ষত রেখেই এগিয়েছে নাটক।

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০১৬ ০০:০৩
Share: Save:

কথক পারফর্মিং রেপার্টয়্যার এর প্রযোজনায় মঞ্চস্থ হল ‘নন্দিনীর পালা’ নাটকটি। পরিচালনায় কৃতী মজুমদার। প্রথমেই প্রশ্ন জাগে, নাটকের নাম নন্দিনীর পালা কেন? কারণ রক্তকরবীর মূল ধারাকে অক্ষত রেখেই এগিয়েছে নাটক। সংযোজনও নামমাত্র। কৃষি বনাম শিল্পের দ্বন্দ্ব কিংবা কাজের বিপরীতে হৃদয়ের দাবি, ভালবাসা পাওয়ার আকুতি— এ সংঘাত চিরন্তন, আজও।

সমস্ত মঞ্চটাই জালে আবদ্ধ। যে পথে হেঁটে চলে বেড়ায় নন্দিনী, কিশোর, বিশু পাগল, চন্দ্রা, অধ্যাপক কিংবা যক্ষপুরীর শ্রমিকেরা। রাজাকে দেখা যায় না। শোনা যায় কণ্ঠস্বর। তবে এ নাটকে দেখা যায় একাধিক রাজাকে। যারা সবাই ল্যাপটপ নিয়ে কাজে ব্যস্ত। অনেকটা কলসেন্টারে কর্মরত কর্মীদের মতো। ক্ষমতার শীর্ষে থাকা ব্যক্তির সঙ্গে অনুগত-অনুচর বৃন্দকে বোঝাতেই এই প্রতিবিম্ব। তবে উপস্থাপনার মুন্সিয়ানার অভাবে বিষয়টা এখানে স্পষ্টতা পায়নি। তাই নিজের বিরুদ্ধে নিজেই যুদ্ধ ঘোষণা করা ক্ষমতাহীন রাজা যখন সামনে এসে দাঁড়ায়, সে দৃশ্যও মনকে নাড়া দেয়নি। কেননা, এ নাটকের সবচেয়ে জোরালো মুহূর্ত সমস্ত আবরণ চূর্ণ করে রাজার প্রকাশ্যে আসা। কিন্তু কোথায় সে চমক! ক্ষীণ কণ্ঠস্বরে ঢাকা পড়ে গেল রাজার ভয়ঙ্করতা কিংবা দৃঢ়তা। প্রশংসনীয় নন্দিনীর ভূমিকায় নির্দেশক কৃতী মজুদারের অভিনয়। তাঁর হৃদয়ের কোমলতা, কণ্ঠস্বরের ওঠানামা, রঞ্জনকে কাছে পাওয়ার ব্যাকুলতা সুন্দরভাবে ধরা পড়ে। ভাল লাগে মুক্তকণ্ঠে বিশু পাগলের গলায় রবীন্দ্রসঙ্গীত। অভিনয়ে সোমনাথ পাল। চন্দ্রাও (তারামণি ঘোষ) মানানসই। এছাড়াও অভিনয়ে ছিলেন রাজা প্রশান্ত ভট্টাচার্য, কিশোর সুমিত দে, ফাগুলাল সন্দীপ হালদার, অধ্যাপক শেষাদ্রী মিত্র প্রমুখ।

লেডি ম্যাকবেথের লোভ

শেক্সপিয়রের চারশোতম মৃত্যুর বছরে ‘রণন’ মঞ্চস্থ করল ম্যাকবেথ-এর একটি অভিনব প্রযোজনা। কাহিনি ‘ম্যাকবেথ’-এর নাট্যাংশ। চারজন কুশীলব থাকলেও মঞ্চে চরিত্র একটিই— লেডি ম্যাকবেথ। প্রত্যেক কুশীলবই লেডি ম্যাকবেথের লোভ, উচ্চাশা, মাতৃত্ব, অন্তর্দ্বন্দ্ব ইত্যাদির বিভিন্ন মানস-প্রতিরূপ। ছিল কয়েকটি প্রতীকী মুহূর্ত।

গোটা প্রযোজনাই ম্যাকবেথের স্বগতোক্তি। তার সঙ্গে পরিচালক বিক্রম আয়েঙ্গার মিলিয়েছেন ভারতীয় লোক ও মার্গ সঙ্গীত আর মঞ্চচারণায় ভারতীয় ধ্রুপদী নৃত্যছন্দ। নাটকের নাম ‘ক্রসিং’। পরিচালকের অভিনব পরীক্ষা-প্রয়াসে নৃত্য ও সঙ্গীত নাটককে গতিময় করলেও— পূর্ণাঙ্গ নাটকের রূপ নেয়নি। এমন নয় যে কুশীলবদের একজনই লেডি ম্যাকবেথ ও অন্য তিনজন তার নানা মানসরূপের প্রতিনিধি। ফলে লেডি ম্যাকবেথ সম্পূর্ণ চরিত্র হয়ে উঠতে পারেন। সকলের মুখেই একই সংলাপ প্রতিধ্বনির মতো ফেরে। মঞ্চ ও দেহচারণার বৈচিত্রে হেরফের ক্লান্তিকর মনে হতেও পারে। পুনরুচ্চারণের প্রয়োজন হয়েছে সঙ্গীত ও নৃত্য প্রয়োগের প্রয়োজনে। শেক্সপিয়রের নাটকের ভাষার, সংলাপের এমন এক তীব্র কাব্যগুণ ও জোরালো নাটকীয় অভিঘাত আছে যা অক্ষত না রাখলে মঞ্চায়নের অন্যান্য উপাদানের প্রয়োগ সুষ্ঠু হলেও প্রযোজনা সার্থক হয় না। তবে এক লিরিক গতিময়তা প্রযোজনাকে সচল রেখেছে। চার কুশীলবের স্বচ্ছন্দ অভিনয়, অনাড়ম্বর অথচ ব্যঞ্জনাময় মঞ্চ-পরিকল্পনা এবং অবশ্যই সঙ্গীতের নিজস্ব আবেদন এই অভিজ্ঞতার অন্যতম উৎস।

মনসিজ মজুমদার

প্রেমে ও প্রতিবাদে

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে হাওড়ার গীত কলাকেন্দ্র-র অনুষ্ঠানে নন্দন সিংহ পরিবেশন করলেন একক আবৃত্তি। মহুল মুখোপাধ্যায়ের সংযোজনায় শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়-এর আবহে উচ্চারিত হল সহিষ্ণুতা, সম্প্রীতি, প্রেম ও প্রতিবাদের কবিতার শ্রুতিরূপ।
তিনি এ দিন প্রায় দশটি কবিতা পাঠ করলেন। এই প্রবীণ শিল্পীর পাঠে খুঁজে পাওয়া যায় প্রতিটি কবিতার অন্তর্নিহিত অনুভবের ছোঁয়া। যার একদিকে ধরা দেয় প্রেম অন্য দিকে প্রতিবাদ।

কখনও দৃপ্ত, কখনও উদাত্ত

পৌষালী’ নিবেদিত ‘কাজলের সঙ্গে কিছুক্ষণ’। সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে কাজলের চার দশক ধরে এই আবৃত্তির জগতে থাকার এক অভিজ্ঞতা। একক আবৃত্তির এই অনুষ্ঠানে শিল্পী নজরুলের ‘কামালপাশা’ দিয়ে শুরু করলেন। কণ্ঠের উত্থান-পতনের সৌকর্যে অপেক্ষা করেছে নানা চমক। নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, সুকান্ত, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, মণিভূষণ, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব গুহ প্রমুখ কবি সাহিত্যিকদের নানা রচনা। কাজল কখনও দৃপ্ত, কখনও উদাত্ত, কখনও মায়াময়-বাঙ্ময়। ‘১৪০০ সাল’, ‘অন্যযুগের সখা’, ‘জেলখানার চিঠি’, ‘রবীন্দ্রনাথের চিঠি নজরুলকে’ প্রতিটিতেই চমক।
‘স্মরণে বরণে’, ‘তোমায় গান শোনাবো’ এবং ‘জন্মভূমি আজ’ তিন পর্বে কাজল গানও গাইলেন।
রক্তকরবীর বিশুপাগলের গান, বর্ষার গান, ঠুংরি, রাগপ্রধান। চর্চিত কণ্ঠ আবৃত্তির মতোই সাবলীল। অভিনব মঞ্চ পরিকল্পনায় সঞ্চালক চন্দ্রমৌলি। শেষে কঠিন অসহিষ্ণু সময়কে মনে রেখে কাজল ‘শান্তি আসুক’ কবিতা পাঠ করলেন আহসন হাবিবের বাণীতে। সঠিক নির্বাচন। প্রাককথনে ছিলেন পণ্ডিত অরুণ ভাদুড়ি, মধুমিতা বসু।

স্বপ্ন দেখার দেশে

সম্প্রতি বাগুইআটি ‘নৃত্যাঙ্গন’-এর বার্ষিক অনুষ্ঠানের সূচনা করলেন নৃত্যশিল্পী শ্রীলেখা মুখোপাধ্যায়। পরে নৃত্য ‘দুর্গাস্তুতি’তে অংশ নিলেন শিঞ্জিনী বিশ্বাস, ঐশিকা দাস, অঙ্কিতা সাহা প্রমুখ। ছোটদের নৃত্য ‘কিশলয়’ মন্দ লাগে না। অংশগ্রহণে সুকন্যা দাস, রিধিমা দে প্রমুখ। ছোটদের নৃত্যনাট্য ‘স্বপ্নে দেখা সেই দেশ’-এ অংশ নিলেন সুপর্ণা হাজরা, ধৃতি মুখোপাধ্যায় প্রমুখ। এ দিন সম্বর্ধিত হলেন কৌশিক সেন, শ্রীলেখা মুখোপাধ্যায়, শ্রাবণী সেন, সৌমিলি বিশ্বাস, রথীন্দ্রমোহন বন্দ্যোপাধ্যায়।

দ্বিতীয় পর্বে শ্রাবণী সেনের পরিচালনায় পরিবেশিত হল ১০ টি দেশাত্মবোধক গান। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গান ‘এবার তোর মরা গাঙে’। সমবেত সঙ্গীতে ছিলেন গোপা দাস, সৌমি পাল, কৃষ্ণা ঘোষ, সুতপা পাল প্রমুখ। শ্রাবণী সেন শোনালেন ‘সার্থক জনম আমার’। সব শেষে ছিল দেশাত্মবোধক গানের নৃত্যআলেখ্য ‘বন্দেমাতরম’। অংশ নিয়েছিলেন জয়িতা বিশ্বাস, শিঞ্জিনী বিশ্বাস, ঋতিকা খান্ডেলওয়াল। পরিচালনায় জয়িতা বিশ্বাস। সঞ্চালনায় মধুমিতা বসু এবং কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

পিনাকী চৌধুরী

অন্তহীন

অন্তহীন রবীন্দ্রনাথ শীর্ষক অনুষ্ঠানে রবীন্দ্রগান-পাঠ ও নৃত্যে অংশ নিয়েছিলেন কোহিনুর সেন বরাট, শাশ্বতী সেনগুপ্ত, ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়, শুভদীপ চক্রবর্তী, পম্পা রায় বসু প্রমুখ। শুরুতেই শাশ্বতী গাইলেন ‘দূরে কোথায়’। পরের তিনটি গানেও তিনি নিজের সুনাম বজায় রাখতে পেরেছেন। শেষে দর্শকদের মন জয় করে নেয় নৃত্যানুষ্ঠান, যার পরিচালনায় ছিলেন কোহিনুর সেন বরাট।

গান ও পাঠে

সুজাতা সদনে ‘প্রয়াস’ ও ‘কথন’ এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হল ‘ফাল্গুনী প্রেম’। শুরুতেই শ্রাবণী নাগ শোনালেন ‘এ কী লাবণ্যে’, ‘কেটেছে একেলা’, ‘এসো এসো আমার ঘরে’। অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন দীপ্র চক্রবর্তী, মৌসুমী পাল, অভিরূপ গুহ প্রমুখ। এ ছাড়াও অন্যান্য শিল্পীর গাওয়া গান মন্দ নয়। পাঠে ছিলেন ঋতমিত্র গুহ, কাকলি দেবনাথ প্রমুখ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

brief news culture
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE