Advertisement
১০ মে ২০২৪

পশ্চিমি ভূতের অপেক্ষায়

ও প্রান্তের হ্যালোউইন এখন জাঁকিয়ে বসেছে বাংলাতেও। জ্বলছে কুমড়োর আলো, চলছে দেদার খানাপিনাউদ্‌যাপনের জন্য কোনও বাহানার দরকার প়ড়ে না। অন্তত বাঙালি যেখানে তেরোশো পার্বণে অভ্যস্ত, সেখানে তো সারা বছরই উৎসব।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

রূম্পা দাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৮ ০০:৫৮
Share: Save:

উদ্‌যাপনের জন্য কোনও বাহানার দরকার প়ড়ে না। অন্তত বাঙালি যেখানে তেরোশো পার্বণে অভ্যস্ত, সেখানে তো সারা বছরই উৎসব। তবে দুর্গাপুজো পেরিয়ে লক্ষ্মীপুজো যেতে না যেতেই অপেক্ষা করতে হয় আরও বেশ কিছু দিনের। তবে আসে দীপাবলি, ভাইফোঁটা, সপ্তাহান্তের ছুটি মিলিয়ে উৎসবের আর এক প্রস্ত। এ বছর তার মাঝেই পড়েছে হ্যালোউইন। মানে পশ্চিমি কায়দায় ভূত চতুর্দশী আর কী!

আঁশশ্যাওড়া, মেছো ভূত কিংবা ব্রহ্মদত্যির মাঝেই কখন যেন বাঙালির আড্ডায় টুক করে ঢুকে পড়েছে ‘ট্রিট অর ট্রিক’-এর মন্ত্র। তবে পা়ড়া সাজিয়ে অদ্ভুত পোশাকে সেজে বাড়ি বাড়ি বাচ্চাদের কড়া নাড়়া এখনও রপ্ত না হলেও রীতিমতো কবজি ডুবিয়ে রসনাতৃপ্তির এই সুযোগ হাতছাড়া করা নেহাতই বোকামো। তাই হ্যালোউইনের থিমে বন্ধুবান্ধব সহযোগে নৈশ আহার-পানীয়ে মজছে বাঙালি। অবশ্য এ বার আর লুচি-মাংস কিংবা অওয়াধি বিরিয়ানি-কোর্মা নয়, খাবারের তালিকায় যোগ হয়েছে কুমড়োর পাই, বাদুড়ে কেক পপস বা ব্লাড অরেঞ্জ ব্ল্যাকবেরি পাঞ্চ।

৩১ অক্টোবর রাত এবং ১ নভেম্বর ভোরের মাঝের সময়টাকেই হ্যালোউইন বলে ধরা হয়। এই বিশেষ রাতে অন্য জগৎ থেকে প্রেতাত্মাদের আবির্ভাব ঘটে। সেই আত্মাদের কেউ ভাল, কেউ কেউ খুবই খারাপ। খারাপ আত্মাদের ভয় দেখানোর জন্যই সাজা হয় কিম্ভূত পোশাকে। সঙ্গে জুড়ে যায় বছর পুরনো ‘জ্যাক-ও-ল্যান্টার্ন’ বা ‘ট্রিট অর ট্রিক’ জাতীয় খেলা। বা়ড়িতে হ্যালোউইনের পার্টি রাখলে মূলত দু’টি বিষয়ে খেয়াল রাখতে হয়— ঘরদোর সাজানো এবং খাবারের তালিকায় অভিনবত্ব।

বাড়ি সাজানোর প্রধান ভাবনাই হল প্রেতাত্মা। ফলে কুমড়ো কেটে শাঁস বার করে ও খোলা শুকিয়ে ভিতরে প্রদীপ জ্বেলে দিতে হবেই। ‘জ্যাক-ও-ল্যান্টার্ন’ যদি সাজানোর প্রাথমিক শর্ত হয়, তা হলে এর পরেই থাকছে কালো বড় ডানাওয়ালা বাদুড়, রক্তচোষা ভ্যাম্পায়ার কিংবা মস্তিষ্কখেকো জ়োম্বি। কালো চার্টপেপার কেটে বাদুড় তৈরি করে ঝুলিয়ে দিতে পারেন হলঘরের দেওয়ালে। থাকতে পারে বাজারচলতি নানা রকম মাস্ক। ভোজের রাতে শুধু হলঘরই নয়, সাজান বাড়ির সদর-দরজাও। ঝুলিয়ে দিন কাগজ-রাংতায় তৈরি নকল মাকড়সার জাল। দিব্যি থাকতে পারে কুমড়োর ভিতরে জ্বলা আলো, মেকি কঙ্কাল। ভূতুড়ে আবহ জমজমাট করতে টেপরেকর্ডারে বাজাতে পারেন নানা ধরনের ‘স্পুকি’ শব্দ।

পার্টির অভ্যাগত কারা হবেন, ঠিক করুন আপনিই। যদি খুদে অতিথিও আপনার তালিকায় থাকে, তা হলে তাদের জন্য থাকুক আলাদা ‘কিড্স ঘোস্ট জ়োন’। সেখানে মজাদার খেলা, ছোটদের ভূতের সিনেমা চলার ব্যবস্থা করতে পারেন। বেলুনে ভরে ক্যান্ডি, ভূত আঁকা পেনসিল, কাগজের মোড়কে ভূতের গল্পের বই রেখে দিন। ছোটখাটো ভূতুড়ে উপহার খুদেদের হ্যালোউইন সন্ধে আরও মজাদার করে তুলবে!

হ্যালোউইন পার্টির খাবারদাবার বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই ফিঙ্গার ফুড। অর্থাৎ আড্ডার ফাঁকে টুকটাক চলবে মুখ, গলা ভিজবে পানীয়ে। কিন্তু সে ক্ষেত্রেও থাকবে ভূতুড়ে অথচ মজাদার টুইস্ট। খাবার টেবিল সাজানো হোক মোমের আলোয়। কাজে লাগান পড়ে থাকা খালি সবজেটে ওয়াইন আর বিয়ারের বোতল। সেগুলোর গায়ে এঁকে দিন ভূতের মুখ-চোখ। ঢাকনার উপরে লাগানো থাক মোটা সাদা মোমবাতি। গলে গলে পড়া মোম আর তার লালচে আলোয় পরিবেশ জমে উঠবেই।

খাবারের পদে থাক কুমড়ো-টম্যাটোর সুপ। টেবিলে বড় সুপবোলে কমলাটে পানীয় ঢেলে তার নাম বদলে দিতেই পারেন। আবার ক্লাসিক রেড ভেলভেট কেকের নাম পাল্টে যেতে পারে ডেড ভেলভেট কেকে। মার্শমেলো দিয়ে তৈরি করতে পারেন মাকড়সা। প্যানকেকের উপরে ছড়িয়ে থাকতে পারে চকলেটের তৈরি পোকামাকড়। লালচে পানীয় তৈরি করে তার নাম দিতে পারেন ডেভিলস পাঞ্চ। আবার টম্যাটো কিংবা চিলি সসের বোতলের গায়ে এঁটে দিতে পারেন ‘ভ্যাম্পায়ার্‌স ব্লাড’-জাতীয় নাম। পাম্পকিন পাইয়ের উপরে চোখ-মুখ যোগ করে নাম হতে পারে ‘মমিজ় আইজ়’। মোদ্দা কথা, মজাদার দেখতে, কিম্ভূত নাম আর চেনা খাবারের পদই এনে দেবে ভৌতিক, গা ছমছমে পরিবেশ।

তাই বাংলা মতে ভূত চতুর্দশী আর দীপাবলিতে বাজির রোশনাইয়ে মাতার আগে নতুন করে হ্যালোউইনের প্রেমে পড়বেন না কি?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Halloween Festival
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE