Advertisement
০৪ মে ২০২৪

দুই কবির সখ্য

দ্বন্দ্ব নয়। রবীন্দ্রনাথ ও দ্বিজেন্দ্রলালের গভীর বন্ধুত্বের উৎস খুঁজলেন নীলা মজুমদার।আমাকে বা রবিবাবুকে বাঙালি কোনও দিন ভুলে যাবে না। আর ভুলে যাবে না কেন জানিস?’‘কেন বাবা?’ ‘ভুলে যাবে না এই জন্য যে আমরা রেখে যাব বাঙালির প্রাণের জিনিস- সুরে বাঁধা গান।’

শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০১৬ ০১:৩৮
Share: Save:

আমাকে বা রবিবাবুকে বাঙালি কোনও দিন ভুলে যাবে না। আর ভুলে যাবে না কেন জানিস?’

‘কেন বাবা?’

‘ভুলে যাবে না এই জন্য যে আমরা রেখে যাব বাঙালির প্রাণের জিনিস- সুরে বাঁধা গান।’ দ্বিজেন্দ্রলাল বলছেন তাঁর আদরের পুত্র মন্টুকে।

বাঙালির প্রাণের গান রচনা করেছেন রবীন্দ্রনাথ ও দ্বিজেন্দ্রলাল। বাঙালির প্রাণের এই দুই কবির জন্মকালও খুব কাছাকাছি। রবীন্দ্রনাথের জন্ম ১৮৬১ সালে, দ্বিজেন্দ্রলালের ১৮৬৩ সালে। দুই কবির মধ্যে বন্ধুত্বও ছিল নিবিড়, তবু কাঁটা লুকিয়ে ছিল কোথাও। বন্ধুত্বে ভাঁটা, ভালবাসায় বিচ্ছেদ। কিন্তু কেন?

শৈশবে রবি দুষ্টুমি করছেন, তাঁকে একটু সামাল দেবার জন্য মাস্টারমশাই বোর্ডে একটা ছড়া লিখে দিলেন। ‘রবি করে জ্বালাতন আছিল সবাই। বরষা ভরসা দিল তার ভয় নাই।’ বললেন, লেখো তো তুমি এর পরে দুটি লাইন। কী আশ্চর্য, শিশু রবি তক্ষুনি লিখে ফেললেন ‘মীনগণ হীন হয়ে ছিল সরোবরে। এখন তাহারা সুখে জলক্রীড়া করে।’ ঠিক এই সময়ে ছোট দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর প্রথম কবিতা লিখেছেন ‘গগন-ভূষণ-তুমি জনগণ মনোহারী। কোথা যাও নিশানাথ হে নীল নভোবিহারী’—যা শুনে তাঁর পিতা দেওয়ান কার্তিকেয়চন্দ্র রায় মন্তব্য করেছিলেন— এই ছেলে যশস্বী হবে। আবার দ্বিজেন্দ্রলালের প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘আর্য্যগাথা’ প্রথম খণ্ড প্রকাশিত হয় ১৮৮২ সালে। রবীন্দ্রনাথের প্রথম দিকের ‘সন্ধ্যাসংগীত’ প্রকাশিত হয় ১৮৮২ সালে। বিলেত থেকে ফিরে এসে দ্বিজেন্দ্রলাল প্রকাশ করলেন আর্য্যগাথা দ্বিতীয় খণ্ড ১৮৯৩ সালে। ইতিমধ্যে দশটি বছর পার হয়ে গিয়েছে। প্রকাশিত হয়েছে রবীন্দ্রনাথের মানসী কাব্য, মায়ার খেলা, চিত্রাঙ্গদা নৃত্যনাট্য এবং আরও অনেক অসাধারণ রচনা। তত দিনে কবিখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে। দ্বিজেন্দ্রলালের সাহিত্যজীবনের প্রথম লগ্ন। তখন তো কেউ তাঁর নামই জানত না। এগিয়ে এলেন রবীন্দ্রনাথ। কবি হিসেবে বরণ করে নিলেন দ্বিজেন্দ্রলালকে। তাঁর ‘আর্যগাথা’ কাব্যগ্রন্থটির দ্বিতীয় খণ্ড প্রকাশিত হওয়ার পর রবীন্দ্রনাথ কবিতাগুলির ভূয়সী প্রশংসা করেছিলেন। আর তার পরেই কৃতজ্ঞতায় দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁর ‘বিরহ’ রবীন্দ্রনাথকে উৎসর্গ করেন। সাহিত্য সৃষ্টির মাধ্যমে দুজনের পরিচয় আর ভালবাসা।

আবগারি বিভাগ থেকে দ্বিজেন্দ্রলালের পর্যটনের জন্য একটি বজরা নির্দিষ্ট ছিল। একদিন সেই বজরাটিতে সাহিত্যিক বন্ধুদের তিনি একটি পার্টি দিলেন। সুরেশচন্দ্র সমাজপতি লিখেছেন—‘কথা ছিল এখান থেকে বরাবর খড়দা পর্যন্ত গিয়ে সেখানে একটা বাগানে আহারাদি করা যাবে এবং তারপর ধীরে সুস্থে ফেরা যাবে। বজরা রওনা হল। রবিবাবুও এ পার্টিতে ছিলেন। হঠাৎ খুব মেঘ করে এল ঝড় এবং বৃষ্টি। এ দিকে বাজে তখন প্রায় এগারোটা। শ্যামবাবু জানালেন, আমরা ব্যারাকপুরে লাটসাহেবের বাড়ির বাগানে নেমেছি। সেখানেই নেমে পড়া সাব্যস্ত হল। কিন্তু রাতের ওই দুর্যোগে একখানিও গাড়ি পাওয়া গেল না। অনন্যোপায় হয়ে সেই ঘোর অন্ধকারে পদব্রজে খড়দহ যাত্রা এবং সেই বাগানের আবিষ্কার। রাত্রে যৎসামান্য আয়োজন। প্রত্যুষে উঠেই যে যার সব ট্রেনে করে কলকাতায় ফিরে আসা গেল। দুজন মহাকবি অম্লান বদনে এই সব অসামান্য কষ্ট সহ্য করেছিলেন এবং হাস্যামোদ, কবিত্ব ও রসিকতার অফুরন্ত প্রবাহে সেই দারুণ দুশ্চিন্তা ও ক্লেশকে আনন্দময় করে রেখেছিলেন। দুই কবির মধ্যে এ সময় খুব সম্প্রীতি ছিল এবং তাঁদের বন্ধুত্ব সম্বন্ধটাও ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল।’

যখন পূর্ণিমা মিলন ক্লাব প্রতিষ্ঠা করলেন দ্বিজেন্দ্রলাল, কে না যোগ দিয়েছিলেন সেই সাহিত্যবাসরে। তাঁর ৫ নং সুকিয়াস্ট্রিটের বাড়িতে রবীন্দ্রনাথও এসেছিলেন। ফাগ খেলা চলেছে। দ্বিজেন্দ্রলাল মুঠো মুঠো করে ফাগ মাখিয়ে কবিকে লাল রং-এ রঞ্জিত করলেন। রবিবাবু বললেন, ‘আজ দ্বিজুবাবু শুধু যে আমাদের মনোরঞ্জন করেছেন তা নয়, তিনি আজ আমাদের সর্বাঙ্গ রঞ্জন করলেন। এর পরে রবিবাবু গান ধরলেন—সে যে আমার জননী রে।’

১৩১০ সালে মোহিতচন্দ্র সেন রবীন্দ্রনাথের ‘কাব্যগ্রন্থ’ নামে ২৬টি কবিতা সম্পাদিত ও সংকলিত করে প্রকাশ করেছিলেন। তার ভূমিকাতে রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাব্যের মধ্যে কোনও অদৃশ্য নির্দেশ অনুভব করার কথা বলেছিলেন। ভূমিকাতে ছিল ‘আমারে কর তোমার বাণী’ গানটি। ১৩১১ সালে বঙ্গবাসী পত্রিকা থেকে সংকলিত ‘বঙ্গভাষার লেখক’ নামে একটি বই প্রকাশিত হয়। রয়েছে রবীন্দ্রনাথের স্বলিখিত আত্মজীবনী। যার মধ্যে তিনি তাঁর কোনও কোনও রচনা সম্বন্ধে জীবনদেবতা—ঐশ্বরিক প্রেরণা কথাটি উল্লেখ করেছেন। লেখাটি পড়লেন দ্বিজেন্দ্রলাল এবং চিঠি লিখলেন রবীন্দ্রনাথকে।

তিরস্কার করে তিনি কবির কাছে জানতে চাইলেন, রবিবাবু কি ডিভাইন ইন্সপিরেশনের দাবি করেছেন? করে থাকলে তার ব্যাখ্যা কী? রবিবাবু উত্তরে জানালেন, তিনি যা ভাল বুঝেছেন তা লিখেছেন। এ সম্বন্ধে কারও কাছে জবাবদিহি করবার কোনও প্রয়োজন অনুভব করছেন না। দ্বিজেন্দ্রলাল উত্তরে বললেন, রবিবাবু যদি তার লেখাগুলি সম্পর্কে ডিভাইন ইন্সপিরেশন দাবি করতে লজ্জিত ও সংকুচিত না হন, তবে তিনি প্রমাণ করে দেবেন যে ওই রচনাগুলি দৈবশক্তি প্রণোদিত তো নয়ই বরং লালসাপূর্ণ। প্রমাণস্বরূপ তিনি বিশ্লেষণ করলেন, রবিবাবুর প্রেমের গানগুলি চোখ বুলিয়ে নিন। ‘সে আসে ধীরে’ ‘সে কেন চুরি করে’ ইত্যাদি গানগুলি সবই ইংরাজি কোর্টশিপের গান। তাঁহার ‘তুমি যেওনা এখনই’ ‘কেন যামিনী’ প্রভৃতি অভিসারিকার গান।

‘সোনার তরী’ যখন প্রকাশিত হল, তখন সেই আত্মভাব-নিমগ্ন কল্পচারণা, সংকেত ব্যঞ্জনার আলোছায়া ও অন্তরের আধ্যাত্মিক অনুভূতি অনেক কবি, সাহিত্যিক ও সাহিত্য সমালোচকের মর্মমূলে পৌঁছল। সোনার তরী কবিতাটিকে তাঁরা রবীন্দ্রনাথের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবিতা রূপে গণ্য করলেন। ‘তাঁহার সোনার লেখণী অক্ষয় হউক’ এই ভাবে কবিতাটিকে শীর্ষে স্থান দিলেন। কিন্তু দ্বিজেন্দ্রলাল কবিতাটিকে আক্রমণ করলেন। তাঁর মতে, ‘রবীন্দ্রসাহিত্য অস্পষ্ট’। দ্বিজেন্দ্র বলছেন, ‘যদি স্পষ্ট করিয়া না লিখিতে পারেন সে আপনার অক্ষমতা। ...অস্পষ্টতা একটা দোষ, গুণ নহে’ (কাব্যের অভিব্যক্তি প্রবাসী ১৩১২ কার্তিক)।

আসলে, দ্বিজেন্দ্রর মতে রবি খালি ‘প্রেম’ নিয়ে লিখতে বসেন। নাটক নভেলও তাই। ‘কেন পৃথিবীতে মাতা নাই, ভ্রাতা নাই, বন্ধু নাই—সব নায়ক আর নায়িকা? তাও যদি কবিরা দাম্পত্য প্রেম লইয়া কাব্য লেখেন, তাহাও সহ্য হয়। ইহাদের চাই হয় বিলাতি কোর্টশিপ নয়ত টপ্পার প্রেম। নহিলে প্রেম হয় না। অবিবাহিত পুরুষ ও নারী চাই-ই। ফল দাঁড়ায় এই যে এরূপ প্রেম হয় ইংরাজি (অতএব আমাদের দেশে অস্বাভাবিক) না হয় দুর্নীতি মূলক’ (কাব্যে নীতি সাহিত্য ১৩১৬ জৈষ্ঠ সংখ্যা)।’

তখন রবীন্দ্রভক্ত ও রবীন্দ্রবিরোধী সুস্পষ্ট দুটি দল। ‘বাংলাদেশের সাহিত্যিক মহলে পত্রিকার অফিস হইতে কলেজের হস্টেল পর্যন্ত লেখাপড়া জানা ভদ্রসমাজ যেন দুই দলে বিভক্ত হইয়া গিয়াছিল। ‘দ্বিজুবাবুর দল’ ও ‘রবিঠাকুরের দল’। (রবীন্দ্রজীবনী দ্বিতীয় খণ্ড প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়)

১৩১১ সালে দুই সাহিত্যিকের মনোমালিন্য কোন জায়গায় পৌঁছেছিল, তা বোঝা যাবে রবীন্দ্রনাথের একটি চিঠি থেকে। রবীন্দ্রনাথ লিখছেন, ‘আপনার নিন্দুকের দলে আমি যোগ দিতে পারব না।’

অথচ এমন নয় যে তিনি রবীন্দ্র সাহিত্যের অনুরাগী ছিলেন না। অনেকগুলি উদাহরণ দেওয়া যায় যেখানে তিনি রবীন্দ্ররচনার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। ‘যেতে নাহি দিব’ কবিতাটি পড়ে তার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন।

রবি ও দ্বিজেন্দ্র সমসাময়িক অসামান্য প্রতিভার অধিকারী। যখন রবীন্দ্রনাথের যশ মধ্যাহ্ন সূর্যের দীপ্তির মতো ছড়িয়ে পড়ল, যখন তাঁর প্রতিভার অনুরাগীর সংখ্যা সীমাহীন হয়ে উঠল, তখন কি কোনও ঈর্ষার কাঁটা বিদ্ধ করল দ্বিজেন্দ্রলালকে? মনের এই শোচনীয় অবস্থায় তিনি রবীন্দ্রনাথকে ভীষণ ভাবে এবং অন্যায় ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণ করে রচনা করলেন ‘আনন্দবিদায়’ প্রহসন। ‘স্টার’ রঙ্গালয়ে তা মঞ্চস্থ করলেন। বিশিষ্ট দ্বিজেন্দ্রজীবনী লেখক দেবকুমার রায়চৌধুরী এ সম্পর্কে লিখেছেন ‘আমি বন্ধুবরের কাছে গিয়া এ ব্যাপার হইতে নিরস্ত হওয়ার জন্য তাঁকে বারবার অনুরোধ করি, হাসিতে হাসিতে দ্বিজেন্দ্রলাল বলিলেন ‘ওহে আগে অভিনয়টা দেখ, তারপরই না হয় অত গালাগাল দিও। এখনই অত চটছ কেন? অভিনয় দেখিতে দেখিতে আমার এত দুঃখ ও বিরক্তি বোধ হইতে লাগিল যে, আমি তখন বিশেষ করিয়া বারংবার অভিনয়টা বন্ধ করাইয়া দিবার জন্য দ্বিজেন্দ্রলালকে বলিয়াছিলাম, যতক্ষণ অভিনয় চলিয়াছিল এবং যখন সব শেষ হইয়া গেল তখনও। দ্বিজেন্দ্রলালের মুখের দিকে আমি যতবারই চাহিলাম দেখিলাম উহা অস্বাভাবিক বিকৃত ও বিবর্ণ হইয়া পড়িয়াছে, বোধ হইল, যেন তৎকালে তাঁহার অন্তরে দারুণ অনুশোচনার উদয় হইতেছে। দেবকুমার আরও লিখছেন দ্বিজেন্দ্রলাল তাঁকে বলেছেন, ‘সত্যি এটা আমার অত্যন্ত ভুল হয়ে গেছে। আমি আর এমন কাজ করব না। সেই থেকে, বলব কী তোমায়, আমার ভিতরটা জ্বলছে।’

তবুও অন্তরে দুই কবির যে মহামিলন ছিল একটি ঘটনায় তা প্রমাণিত। মৃত্যুর কিছুদিন আগে দ্বিজেন্দ্রলাল বললেন আমাদের দেশ, আমাদের সরকার যদি সত্যকার সমঝদার হত, তবে রবীন্দ্রনাথকে তারা নাইট উপাধি দিত। ‘আমাদের শাসনকর্তারা যদি বঙ্গ সাহিত্যের আদর জানিতেন তাহা হইলে রবীন্দ্রনাথ আজ নাইট উপাধিতে ভূষিত হইতেন।’ এই লেখাটি লেখবার পরে যদি তিনি তিনটি মাসও জীবিত থাকতেন তা হলে দেখতে পেতেন রবীন্দ্রনাথের জয় ঘোষণায় বিশ্বলোক মুখরিত হয়েছে। তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। দ্বিজেন্দ্রলালের উক্তি সার্থক হয়েছে।

আর দ্বিজেন্দ্রলালের মৃত্যুর পর রবীন্দ্রনাথের উক্তি ‘সাময়িক পত্রে যে সকল সাময়িক আবর্জনা জমা হয়, তাহা সাহিত্যের চিরসাময়িক উৎসব সভার সামগ্রী নহে। দ্বিজেন্দ্রলালের সম্বন্ধে আমার যে পরিচয় স্মরণ করিয়া রাখিবার যোগ্য তাহা এই যে আমি অন্তরের সহিত তাঁহার প্রতিভাকে শ্রদ্ধা করিয়াছি। আর যা ঘটিয়াছে তাহা মায়া মাত্র।’

সূত্র: দ্বিজেন্দ্রলাল—দেবকুমার রায়চৌধুরী, রবীন্দ্রজীবনে—প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, বঙ্গভাষার লেখক— বঙ্গবাসী পত্রিকা সম্পাদিত, দ্বিজেনরচনাবলী—ডঃ রথীন্দ্রনাথ রায় সম্পাদিত, স্মৃতিচারণ—দিলীপকুমার রায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

poets rabindranath tagore dwijendralal roy
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE