খাতায়-কলমে বসন্ত হলেও গরমের দাপট কিন্তু বাড়ছে। এই সময়ে রোদের তীব্রতা, ধুলোবালি, র্যাশ-ব্রণ থেকে বাঁচতে হলে ত্বককে দিতে হবে বাড়তি সুরক্ষা। সূর্যের আলট্রা ভায়োলেট রশ্মির কথাও ভুলে গেলে চলবে না। ত্বকের ঔজ্জ্বল্য নষ্ট করতে কিন্তু আলট্রা ভায়োলেট রশ্মির জুড়ি নেই! শীতকালটা যেমন-তেমন কাটালেও এই মরসুমে তাই সানস্ক্রিন মাস্ট। সঙ্গে আরও কী কী করলে উপকার পাবেন, তারই হদিশ রইল।
প্রাকৃতিক উপায়
একশো শতাংশ প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করলে কিন্তু হেসে উঠবে আপনার ত্বক। সারা দিন বাইরে ঘোরাঘুরি করলে বাড়ি ফিরে অবশ্যই তোয়াজ করতে হবে স্কিনকে। বেরোনোর আগে একটা টম্যাটো আর আধখানা পাতিলেবু রস করে দু’ টেবিল চামচ জল মিশিয়ে ফ্রিজে রেখে জমিয়ে নিয়ে বরফ বানান। বাড়ি ফিরে সেই বরফ মুখে ঘষে নিন। ত্বক সতেজ থাকবে। কালচে ছোপও দূর হবে। শুধু টক দই ব্যবহার করলেও ফল পাবেন।
ট্যান দূর করতে
রোদে ঘোরাঘুরি করতে হলে ট্যান পড়বেই ত্বকে। তাই তরমুজের রস এবং লাউয়ের রস একসঙ্গে মিশিয়ে টোনার বানিয়ে রাখুন। বরফ হিসেবে জমাতেও পারেন। পোড়া ভাব একদম দূর হয়ে যাবে। ত্বক মসৃণও হবে। অনেক সময়ে ট্যান পড়লে মুখের ত্বক বেশ শুকিয়ে যায়। সে ক্ষেত্রে ঠান্ডা দুধের সঙ্গে কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে একটা প্যাক বানিয়ে নিতে পারেন। আবার যাঁদের ত্বকে দুধ সহ্য হয় না, তাঁরা এক টেবিল চামচ পাতিলেবুর রসের সঙ্গে খানিকটা চিনি মিশিয়ে একটা মাস্ক বানিয়ে লাগাতে পারেন। মিনিট কুড়ি লাগিয়ে রেখে ধুয়ে ফেলবেন। তবে সবচেয়ে ভাল উপায়, বেশি এসপিএফ যুক্ত সানস্ক্রিন ব্যবহার করা। সঙ্গে ছাতাও মাস্ট।
সঠিক খাবার
এই সময়ে খাওয়াদাওয়ার দিকে বিশেষ নজর দিন। ফল, শাক, আনাজপাতি, জুস এবং জল বেশি করে খাবেন। এই সময়ে নানা রকম রোগব্যাধির প্রকোপও বাড়ে। তাই প্রয়োজন যথেষ্ট সতর্কতা। কারণ রোগব্যাধির ছাপ কিন্তু ত্বকের উপরে পড়বেই। অতিরিক্ত চিনিযুক্ত পানীয়, সফট ড্রিঙ্ক বা তেলেভাজা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন বা বুঝেশুনে খান। চিনি কম খেলে কিন্তু ত্বকে প্রাকৃতিক ঔজ্জ্বল্য আসে। রান্নায় বেশি মশলা ব্যবহার না করলে উপকার পাবেন। তেতো জাতীয় খাবার বেশি করে খান।
নজরে রাখুন
শীত পেরিয়ে গেলেও এই সময়টায় কিন্তু অতি বেগুনি রশ্মির দাপটে ত্বকের অতিরিক্ত নরম জায়গাগুলোর উপরে প্রভাব পড়ে। যেমন ঠোঁট এবং চোখের চারপাশ। চড়া রোদে বেরোলে তাই প্রোটেকশন নিয়ে বেরোনো প্রয়োজন। সানগ্লাস-গগল্স ব্যবহার করবেন সব সময়ে। লিপবামও নিয়মিত ব্যবহার করুন। না হলে ঠোঁট শুষ্ক হয়ে যেতে পারে। এসপিএফ যুক্ত লিপবামও এখন বাজারে পাওয়া যায়। কিনে রাখতে পারেন। চোখের চারপাশটা মসৃণ রাখতে আমন্ড অয়েলযুক্ত আইক্রিম মাসাজ করতে পারেন প্রতি রাতে শোওয়ার আগে।
শাইন নয়, গ্লো চাই
তৈলাক্ত ত্বকের সমস্যা যাঁদের রয়েছে, তাঁদের ত্বকে তেলতেলে ভাবটা বড্ড বেশি দেখা যায়। শসা এবং মুসুর ডাল একসঙ্গে বেটে মিশিয়ে প্যাক বানিয়ে নিয়মিত লাগান। ২০-২৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেললেই তেলতেলে ভাব কেটে যাবে। তা ছাড়া সিদ্ধ ওটস, ডিমের সাদা অংশ, লেবুর রস এবং আপেলের টুকরো থেঁতো করে প্যাক বানিয়ে লাগাতে পারেন। অযাচিত শাইন চলে যাবে। গ্লো আসবে ত্বকে। অনেকেরই এই সময় থেকে হিট র্যাশ বেরোনো শুরু হয়। তা এড়াতে টক দইয়ের সঙ্গে কাঁচা হলুদ এবং নিমপাতা বাটা মিশিয়ে লাগাতে পারেন। র্যাশ কেটে যাবে। তার সঙ্গে ত্বক উজ্জ্বলও হবে।
ঘন ঘন জলের ঝাপটা
এই সময়টায় ধুলোবালি এবং ঘামের কারণে মুখের ত্বক অকারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর থেকে কিন্তু ব্রণর সমস্যাও দেখা দেয়। তাই বারবার জলের ঝাপটা দিয়ে মুখ ধোওয়া ভাল। সেটা না করতে পারলে ব্যাগে ফেশিয়াল ওয়াইপস রেখে দেবেন। তা দিয়ে মুখ মুছে নিলেও ত্বক সতেজ থাকবে। ব্রণ হলে তার থেকে রক্ষা পেতে নিমপাতা বাটা, হলুদ বাটা, মুলতানি মাটি এবং তার সঙ্গে চিরতার জল মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে লাগান। উপকার পাবেন।
মেকআপ কেমন
এই সময়টায় মেকআপের ক্ষেত্রে কতকগুলো জিনিস মাথায় রাখবেন। এমন ভারী ফাউন্ডেশন লাগাবেন না, যাতে ত্বকের রোমকূপগুলো বন্ধ হয়ে যায়। বিবি ক্রিম বা সিসি ক্রিমের উপরে ভরসা রাখুন। ম্যাট লুক সানস্ক্রিনের উপরে ট্রান্সলুসেন্ট পাউডার লাগালেও কাজ হয় কিন্তু। ত্বক বেশি শুষ্ক থাকলে টিন্টেড ময়শ্চারাইজ়ার লাগাবেন। গাঢ় রঙের লিপস্টিক লাগালে ত্বকে বাড়তি মেকআপের দরকার নেই। চোখে রঙিন মেকআপ রাখতে পারেন। তবে যা-ই করুন, রাতে শোওয়ার আগে ভাল করে ক্লেনজ়ার দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নেবেন। তার পরে টোনার ব্যবহার করে হালকা নাইটক্রিম মাসাজ করে শোবেন।
ছবি: দেবর্ষি সরকার
মডেল: তৃণা সাহা
মেকআপ ও হেয়ার: উজ্জ্বল দত্ত
পোশাক: রিবক, ক্যামাক স্ট্রিট
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy