Advertisement
E-Paper

ভরসা রাখুন নতুন করে

টেনশন নয়, গর্ভপাতের পর মনের জোর বাড়ানোই জরুরি। বলছেন ডা. মল্লিনাথ মুখোপাধ্যায়। যোগাযোগ – ৯৮৩১০২১৭৭৭ বেহালার মনোশ্রী মানসিক ভাবে বড় বিপর্যস্ত। বয়স তিরিশ ছাড়িয়ে গেল। অথচ তিন-তিনবার সন্তান এসেও এল না। আচমকা গর্ভপাত। শারীরিক ভাবে তাঁর কোনও ত্রুটি নেই। চিকিৎসক বিশেষজ্ঞের কাছে এই প্রথম তাঁর যাওয়া। পরামর্শ নেওয়া। তিন বছরের মধ্যেই মনোশ্রীর কোলে এল ফুটফুটে সন্তান।

শেষ আপডেট: ২১ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০

বেহালার মনোশ্রী মানসিক ভাবে বড় বিপর্যস্ত। বয়স তিরিশ ছাড়িয়ে গেল। অথচ তিন-তিনবার সন্তান এসেও এল না। আচমকা গর্ভপাত। শারীরিক ভাবে তাঁর কোনও ত্রুটি নেই। চিকিৎসক বিশেষজ্ঞের কাছে এই প্রথম তাঁর যাওয়া। পরামর্শ নেওয়া। তিন বছরের মধ্যেই মনোশ্রীর কোলে এল ফুটফুটে সন্তান।

প্র: স্ট্রেস, টেনশন কার না নেই। সকাল থেকে উদয়াস্ত পরিশ্রম, ছোটাছুটি। এর ফলেই কি গর্ভপাত বাড়ছে?

উ: স্ট্রেস, টেনশন তো থাকবেই। কিন্তু এ সবের সঙ্গে গর্ভপাতের কোনও সম্পর্ক নেই। মারাত্মক চাপে থাকেন এমন মহিলারাও দিব্যি ফুটফুটে সন্তানের জন্ম দিচ্ছেন।

প্র: হঠাৎ কেন তা হলে এই সমস্যা বেড়ে গেল?

উ: সত্যি কথা বলতে কী নানা কারণে বিয়ের বয়স পিছোচ্ছে। আজকাল বেশি বয়সে গর্ভসঞ্চারও হচ্ছে। সুতরাং ঝামেলা তো বাড়বেই।

প্র: কেন বেশি বয়সের কী অসুবিধে?

উ: বয়স হলে শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর কার্যকারিতা বা গুণ তো আর আগের মতো থাকে না। তাই যে দুটো দিয়ে গর্ভসঞ্চার হয়, তাদের একটি বা দুটিই যদি খারাপ থাকে, এবং তা থেকে সন্তানের সমস্যা হওয়ার চান্স থাকে, প্রকৃতি নিজের নিয়মে সেই প্রেগন্যান্সি নষ্ট করে দেয়।

প্র: তা হলে? সব সমস্যা ফেলে কম বয়সে প্রেগন্যান্সি কি আজকাল সম্ভব?

উ: অত ভাববার কিছু নেই। সবারই হবে এমন তো নয়। ডাক্তারের পরামর্শ মতো একটু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে, দু’চারটে নিয়ম মেনে চললে এ সব সামলানো যায়।

প্র: পরীক্ষা মানে জেনেটিক স্টাডি?

উ: জেনেটিক বা ক্রোমোজোমাল কারণে গর্ভপাত অত কমন নয়। কাজেই আগেই এই পরীক্ষা করার দরকার নেই। সোনোগ্রাফি, কিছু রক্ত পরীক্ষা, প্রয়োজনে কিছু বিশেষ ধরনের এক্সরে বা এন্ডোস্কোপি করে কোনও সমস্যা পাওয়া না গেলে ক্রোমোজোমাল ডিফেক্ট থাকতে পারে সে রকম সন্দেহ দৃঢ় হলে তবে জেনেটিক স্টাডির প্রশ্ন। আসলে গর্ভপাতের মূলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে কিন্তু খুব সাধারণ কারণ থাকে। সে সব সামলে নিলে সমস্যা মিটে যায়।

প্র: যেমন?

উ: হরমোনের কিছু সমস্যা, জরায়ুর ফাইব্রয়েড বা পলিপ, ওভারি বা টিউবের কিছু সমস্যা। হয়তো হাইপোথাইরয়েডিজম আছে, কি হালকা সুগার বা লিভার ফাংশনে কিছু গোলমাল, এ থেকেই হয়তো গর্ভপাত হয়ে যাচ্ছে। চিকিৎসায় এ সব সারিয়ে নিলে ঝামেলা মিটে যায়। ভাল করে চিকিৎসা হলে বড় সমস্যাও সামলানো যায় প্রায় ক্ষেত্রেই।

প্র: সত্যিই কি সামলানো যায়? পরের পর গর্ভপাত হতে হতে সময় পেরিয়ে গেল এমনও তো হয়।

উ: তার সংখ্যা কম। রেকারেন্ট মিসক্যারেজ অর্থাৎ দু’বারের বেশি গর্ভপাত হলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে গোলমাল পাওয়া গেলে চিকিৎসায় ৭০ শতাংশেরও বেশি ক্ষেত্রে সমস্যা সামলানো যায়।

প্র: আর গোলমাল না পাওয়া গেলে? অর্ধেক ক্ষেত্রেই নাকি কোনও কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না!

উ: তাও হয়। তবে কারণ পাওয়া গেল না মানেই সব আশা শেষ, এমন নয়। এঁদের মধ্যে প্রায় অর্ধেক মহিলা কিছু দিন পর নিজে থেকে গ্রেগন্যান্ট হয়ে যান। অর্থাৎ প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে কোনও চিকিৎসা লাগে না। আর চিকিৎসা হলে সে সংখ্যাটা পৌঁছে যায় ৮০ শতাংশের কাছাকাছি।

মনকে শক্ত রাখুন


জল বেশি খেতে হবে


চা-কফি কম খাওয়াই ভাল।

বেশি খেয়ে ও শুয়ে বসে থেকে ওজন ও সুগার বাড়াবেন না।


কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরামর্শমতো হালকা ব্যায়াম করুন।


অ্যালকোহল জাতীয় কোনও কিছু খাবেন না।


একবার গর্ভপাত হলেই বার বার হবে এমন নয়। কাজেই ভয় পাবেন না।


মনকে শক্ত রেখে এগোতে হবে।


মনের উত্তেজনা কমাতে গান শোনার অভ্যেস করুন।

প্র: কারণ না পাওয়া গেলে চিকিৎসা করবেন কীসের?

উ: কাগজে-কলমে কারণ না পাওয়া গেলেও অন্যান্য লক্ষণ দেখে বা অভিজ্ঞতাবশত ডাক্তার বুঝতে পারেন কী সমস্যা হতে পারে। তখন সেই অনুযায়ী চিকিৎসা হলে ভাল কাজ হয়। যেমন ধরা যাক ক্লটিং ডিসঅর্ডারের চিকিৎসা।

প্র: মানে রক্তের অসুখের চিকিৎসা?

উ: হ্যাঁ, যাঁদের রক্ত চট করে জমাট বেঁধে যায়, তাঁদের বার বার গর্ভপাত হয়ে যেতে পারে।

প্র: কিন্তু সমস্যা থাকলে তো পরীক্ষায় তা ধরা পড়বে।

উ: বার বার গর্ভপাত হচ্ছে, পেটের বাচ্চার বৃদ্ধি থমকে গেছে বা মৃত সন্তান জন্মেছে, অথচ কোথাও কোনও দোষ পাওয়া যায়নি, সে ক্ষেত্রে এই পরীক্ষা করতে হয়। এবং সব সময়ে যে রিপোর্ট পজিটিভ আসে এমন নয়।

প্র: রিপোর্ট পজিটিভ না এলেও চিকিৎসা?

উ: ১৪-১৫টা পরীক্ষা আছে। একটার পর একটা করিয়ে যেতে হয়। আবার এ সবের মাঝেও নতুন কিছু পরীক্ষা বেরিয়েছে। সে সব করালে অধিকাংশ ক্ষেত্রে রোগ ধরা পড়ে। সামান্য কিছু ক্ষেত্রে রিপোর্ট নেগেটিভ এলেও কিন্তু সমস্যা থাকতে পারে। তখন অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ মতো চিকিৎসা করলে অনেক সময়ই ভাল ফল হয়।

প্র: চিকিৎসা মানে তো রক্ত পাতলা করার ওষুধ খাওয়া। তার তো অনেক সাইড এফেক্ট? বিশেষ করে যেখানে রিপোর্ট থেকেও রোগ আছে কি নেই সে সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না।

উ: সব দিক বুঝেই ওষুধ দেন ডাক্তার। তা ছাড়া, শুধু সন্তানের জন্ম দেওয়া নয়, এই রোগ থাকলে ভবিষ্যতে হার্টঅ্যাটাক, স্ট্রোক বা অন্য ধরনের থ্রম্বোসিস হওয়ার আশঙ্কা বাড়ে। কাজেই বুঝতেই পারছেন, চিকিৎসা না হলে বিপদ আছে। চিকিৎসার সঙ্গে আরও কিছু নিয়ম মানতে হয়।

প্র: যেমন?

উ: হরমোন খেতে নিষেধ করা হয়। কারণ এই জাতীয় ওষুধে রক্ত জমাট বাঁধার চান্স বেড়ে যায়। জল খেতে হয় বেশি আর চা-কফি-অ্যালকোহল-কোলা যথাসম্ভব কম। ওজন কমাতে হয়। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হয়।

প্র: ব্যায়াম! গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকলে তো শুয়ে থাকার কথা!

উ: একেবারেই না। শুধু শুয়ে থাকলে কোনও কাজ হবে না। রক্ত জমাট বাঁধার চান্স বেড়ে বিপদ আরও বাড়বে।

সাক্ষাৎকার: সুজাতা মুখোপাধ্যায়

Abortion
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy