E-Paper

স্কুলে ছুটি চলছে, আয়ের খোঁজে পথে খুদেরা

খলিলাবাদ মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র, রুকুনপুর হাইস্কুল, হরিহরপাড়া হাইস্কুল, গোবরগাড়া হাইমাদ্রাসা, পদ্মনাভপুর হাইমাদ্রাসার অনেক ছাত্র কেউ ঝাঁটা তৈরির কারখানায় কাজ করছে।

মফিদুল ইসলাম

শেষ আপডেট: ২০ মে ২০২৪ ০৮:২৭
আইসক্রিম বিক্রি করছে এক খুদে। হরিহরপাড়ায়।

আইসক্রিম বিক্রি করছে এক খুদে। হরিহরপাড়ায়। নিজস্ব চিত্র।

গরমের ছুটি চলায় বন্ধ রয়েছে সরকারি ও সরকার পোষিত প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা, সিনিয়র মাদ্রাসা। শিক্ষকদের একাংশের মতে, যার ফলে ব্যাহত হচ্ছে পঠনপাঠন। অন্যদিকে অনেক ছাত্র বিভিন্ন পেশার সঙ্গে
যুক্ত হচ্ছে।

ছাত্রদের একাংশ কেউ গ্রামে গ্রামে ঘুরে দিনভর আইসক্রিম বিক্রি করছে। কেউ আবার বিভিন্ন কারখানায়, মোটরবাইক সারানোর গ্যারাজে কাজ করছে। ছাত্রদের কেউ কেউ ট্র‍্যাক্টরের খালাসিরও কাজ করছে। অন্যদিকে বাড়ছে নাবালিকা মেয়েদের বিয়ের ঘটনাও। ফলে স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়বে বলেও আশঙ্কা করছেন শিক্ষকদের একাংশ। হরিহরপাড়ার স্বরূপপুর হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া বছর তেরোর এক ছাত্র দিনভর আইসক্রিম বিক্রি করে দিনে একশো থেকে দেড়শো টাকা পর্যন্ত আয় করছে। ওই ছাত্রের বাবা ভিন রাজ্যে কাজ করে। তার মা বলেন, “স্কুলে ছুটি চলছে। তবে আগে যে সময় ছুটি পড়ার কথা ছিল, তার কিছু দিন আগে থেকেই স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছিল তাপরপ্রবাহের জন্য। অভাবের সংসার। তাই ছেলে আইসক্রিম বিক্রি করছে। যা আয় হচ্ছে, তা দিয়ে নুন তেলের টাকাটুকু তো ঘরে আসছে।” ওই বিদ্যালয়েরই পঞ্চম শ্রেণির পড়ুয়াও সাইকেল চড়ে গ্রাম ঘুরে আইসক্রিম বিক্রি করছে। তার বাবা এলাকার একটি দোকানে কাজ করেন।

ওই অভিভাবক বলেন, “অভাবের সংসার। এখন স্কুল বন্ধ। ছেলে যা রোজগার করছে তা দিয়ে সংসারের অভাব কিছুটা মিটছে।”

খলিলাবাদ মাধ্যমিক শিক্ষা কেন্দ্র, রুকুনপুর হাইস্কুল, হরিহরপাড়া হাইস্কুল, গোবরগাড়া হাইমাদ্রাসা, পদ্মনাভপুর হাইমাদ্রাসার অনেক ছাত্র কেউ ঝাঁটা তৈরির কারখানায় কাজ করছে। কেউ আবার মোটরবাইক সারানোর গ্যারাজে কাজ করছে। এক অভিভাবক কোনও রাখডাক না করেই বলেন, “পড়াশোনা করেও চাকরি জুটছে না। এখন স্কুল ছুটি। হাতের কাজ শিখলেও ভাতের অভাব হবে না। তাই ছেলেকে মোটরবাইক গ্যারাজে কাজ করতে লাগিয়েছি।”

গত কয়েক দিনে হরিহরপাড়ার বিভিন্ন এলাকায় বেশ কয়েক জন নাবালিকার বিয়ের খবর মিলেছে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা সূত্রে। কয়েকটি বিয়ে প্রশাসনের তরফে রদ করা হলেও চুপিসাড়ে বেশ কিছু বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি মাইনুল ইসলাম বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে স্কুল, মাদ্রাসা ছুটি থাকার ফলে কর্মদিবস কমছে। পঠনপাঠন ব্যাহত হচ্ছে। পড়ুয়াদের অনেকে আয়ের পিছনে ছুটছে। এর ফলে স্কুলছুট হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে। এ নিয়ে সরকারের ভাবা উচিত।” শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ৯ মে থেকে ২০ মে পর্যন্ত গ্রীষ্মকালীন ছুটি। তবে এ বছর অত্যাধিক গরমের কারণে ২২ এপ্রিল থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছুটি ঘোষণা করেছে শিক্ষা দফতর। একটি সূত্রের খবর, আগামী ৩ জুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে পারে।

পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক তৃণমূল শিক্ষক সমিতির জেলা সভাপতি দিলীপ সিংহ রায় বলেন, “অত্যধিক গরমে ছেলেমেয়েরা যাতে অসুস্থ হয়ে না পড়ে সে জন্য বাড়তি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে ছাত্রছাত্রীরা যাতে বাড়িতে পড়াশোনা করে, স্কুলছুট না হয়ে পড়ে, সেদিকে সকলকেই খেয়াল রাখতে হবে। অভিভাবক,দেরও দায়িত্ব রয়েছে তাঁদের এবং শিক্ষকদেরও এ নিয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। স্কুলছুট রুখতে আমাদের সরকার অনেক প্রকল্প চালু করেছে।”

হরিহরপাড়া চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী বলেন, “সরকারি ঘোষণায় স্কুল ছুটি রয়েছে। শিক্ষকদের কাছে অনুরোদ করব, ছাত্রছাত্রীরা যাতে স্কুলছুট না হয়ে পড়ে সেদিকে যেন তাঁরা নজর রাখেন।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Summer Vacation

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy