Advertisement
E-Paper

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে প্রাতঃক্রিয়া করুন

অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে যার স্টুলের পরিমাণ যত কম, তার হজমশক্তি তত ভাল। অর্থাৎ খাবারের অনেকটাই হজম হয়ে যাচ্ছে, ফলে অবশেষ কিছু পড়ে থাকছে না। তাই তো মাতৃদুগ্ধ সেবনকারী শিশুর ক্ষেত্রে নিয়মিত স্টুল হলেও পরিমাণে অল্পই হয়।

শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৭ ০০:১৬

কনস্টিপেশন বা কোষ্ঠবদ্ধতা বিষয়টা এক কথায় সম্পূর্ণ হয় না। আসলে এই কোষ্ঠবদ্ধতার সমস্যা বয়স এবং ব্যক্তিবিশেষের উপর নির্ভর করে। অর্থাৎ সবার ক্ষেত্রে একই রকম নয়। আপনার যে ধরনের সমস্যা, সেটা অন্য কারও নাও হতে পারে।

বয়স্কদের ক্ষেত্রে কেউ কেউ দিনে দু’বার কমোডে না বসলে সন্তুষ্ট থাকতে পারেন না। অনেকে আবার প্রত্যেক দিন পটি না হলে অস্বস্তিতে ভুগতে থাকেন। কার কাছে কোনটা নর্মাল, সেটা এক-একজন মানুষের উপর নির্ভর করে। তবে বাইরের দেশে কনস্টিপেশনের সংজ্ঞা অনুযায়ী সপ্তাহে তিন দিন স্টুল না হলে, সেটাকে কনস্টিপেশন ধরা হয়। আর এক সপ্তাহ স্টুল না হলে ওরা ধরে সেটাকে সিভিয়ার কনস্টিপেশন। আমাদের এই পরিবেশে কনস্টিপেশনের এ-সংজ্ঞা কিন্তু পুরোপুরি মানা যায় না। আমাদের ফুড হ্যাবিট বিদেশের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা শাক-পাতা খাওয়া মানুষ। তাই দৈনন্দিন একটু স্টুল না হলে মন ভরে না। তবে পরিমাণ বা নিত্যতাটাই বিবেচ্য নয়, ঘনত্বটাও বিবেচ্য। এক দিন ছাড়া ছাড়া কিংবা প্রতিদিন যদি কারও একটুও স্টুল হয়, তবে তিনি কনস্টিপেশনের আওতায় পড়েন না। অনেকে সন্তুষ্ট না হয়ে ডাক্তারের কাছে আসেন কনস্টিপেশন হয়েছে ভেবে। তখন আমরা তাকে প্রয়োজনীয় এমন কিছু ওষুধ দিয়ে থাকি, যাতে স্টুলের পরিমাণটা বেড়ে যায়। কিন্তু সেটা শুধু মাত্র পেশেন্টকে সন্তুষ্ট করার জন্যই। ডাক্তারের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কিন্তু সেটা কোনও চিকিৎসার আওতায় পড়ে না। এ ক্ষেত্রে পেশেন্টকে আমরা কিছু নিয়ম মেনে চলার পরামর্শ দিই। আর ৯০ শতাংশ ক্ষেত্রে কাউন্সেলিং-এই রোগীর সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। আমরা টাইম-রিফ্লেক্স অনুসরণ করতে বলি, প্রত্যহ একই সময়ে কমোডে গিয়ে বসা উচিত। ছেলেদের থেকে কিন্তু মেয়েদের কনস্টিপেশনের সমস্যা বেশি হয়। কারণ সংসারের হাজারো কাজে, ব্যস্ততায় তাদের নিয়ম মেনে বাথরুমে যাওয়া হয়ে ওঠে না।

অন্য দিক থেকে দেখতে গেলে যার স্টুলের পরিমাণ যত কম, তার হজমশক্তি তত ভাল। অর্থাৎ খাবারের অনেকটাই হজম হয়ে যাচ্ছে, ফলে অবশেষ কিছু পড়ে থাকছে না। তাই তো মাতৃদুগ্ধ সেবনকারী শিশুর ক্ষেত্রে নিয়মিত স্টুল হলেও পরিমাণে অল্পই হয়। বাচ্চা যতই বড় হয়, ততই নিত্যতা কমতে থাকে আর পরিমাণে বাড়ে।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মায়েরা একটু বেশিই চিন্তিত থাকেন। বাচ্চাদের স্টুল না হলে মায়েরা পানের বোঁটা দিয়ে করানোর চেষ্টা করেন। আমাদের পরামর্শ, মায়েদের এতে অত ভয় পাওয়ার কারণ নেই। এ ক্ষেত্রে দরকার হয় মায়েদের ঠিকমতো কাউন্সেলিং করা। বাচ্চা প্রত্যহ পায়খানা করছে না মানেই সে অসুস্থ এমনটি নয়। ছ’মাসের পর থেকে যেহেতু বাচ্চারা ব্রেস্ট মিল্ক ছাড়াও বটল ফিড করতে শুরু করে বা ফরমুলা ডায়েট নেয় — সে কারণে এই সময় থেকে সমস্যার সূত্রপাত হতে পারে।

আমরা যখন কোনও খাবার খাই সেটা পেরিস্টলসিস মুভমেন্ট পদ্ধতিতে স্টমাক থেকে রেক্টাম পর্যন্ত নামতে থাকে। ছ’মাসের ছোট শিশুরা তাই যখনই দুধ খায়, তখনই একটু স্টুল করে ফেলে (গ্যাসট্রোকোলিক রিফ্লেক্স)। এটা কিন্তু একটা স্বাভাবিক ঘটনা। এই বিশেষ মুভমেন্টকে কাজে লাগিয়ে বাচ্চাদের রেগুলার ‘বাওয়েল হ্যাবিট’ করানো সম্ভব। বসতে পারে এমন বাচ্চাকে খাওয়ানোর ঠিক পরে পরেই ১০ মিনিট ধরে স্টুল করাতে বসিয়ে রাখুন।

ডাক্তারের কাছে তখনই যেতে হবে, যদি স্টুলের সঙ্গে রক্ত থাকে, বাচ্চা বমি করে বা খেতে না চায়, কিংবা সপ্তাহ ধরে স্টুল না হয়। তলপেটে ব্যথা হলেও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কী ধরনের খাবার খাবেন

কনস্টিপেশনের সমস্যায় শাকপাতা, বেল, ইসবগুল খুবই উপযোগী পথ্য। এই সব খাবারে সেলুলোজ থাকে, যেটা আমরা হজম করতে পারি না। এতে স্টুলের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়।

স্টার্চ কিন্তু আমাদের গ্যাসট্রিক মুভমেন্টে সাহায্য করে। রুটির বদলে ভাত খেলে স্টুলের নিত্যতা ঠিকমতোই হওয়ার কথা। গমের মধ্যেও ফাইবার আছে। তবে গ্যাসট্রিক মুভমেন্টে ভাতটাই বেশি সহায়তা করে।

কলা সহ যে-কোনও ফলেই প্রচুর ফাইবার থাকে। তাই রোজকার খাদ্যতালিকায় ফল রাখতে পারি।

ফাইবার জাতীয় খাবারের অবশ্য একটা সমস্যা আছে। কিছু আন্ত্রিক জীবাণু নির্দিষ্ট ফাইবার ভেঙে দিয়ে গ্যাস তৈরি করে। তাই ফাইবার জাতীয় খাবার বেশি খেলে পেটে গ্যাস তৈরি হতে পারে, সে ক্ষেত্রে রোগীকে বুঝে নিতে হবে কোন ধরনের রাফেজ তার শরীরের পক্ষে উপযোগী নয়। তখন সেই খাবারগুলি বর্জন করতে হবে।

বাচ্চাদের ক্ষেত্রে আবার উল্টোটা। ফাইবার জাতীয় খাবার বেশি দিয়েও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা যায় না। বাচ্চাদের জন্য তাই ব্যালান্স ডায়েটই (কার্বোহাইড্রেট-প্রোটিন-ফ্যাট সম-পরিমাণ) অধিক কার্যকরী হয়।

কখন যাবেন ডাক্তারের কাছে?

তিন দিন পেরিয়েও স্টুল না হলে।

একই খাদ্যাভ্যাসের মধ্যে থেকেও অ্যাকিউট কোনও কারণে স্টুল আটকে গেলে।

হঠাৎ কনস্টিপেশনের সমস্যা তৈরি হলে বা পেনসিলের মতো সরু হয়ে স্টুল হতে থাকলে, অন্ত্রে কোথাও কোনও গ্রোথ হয়েছে কি না, তা পরীক্ষা করানো একান্ত আবশ্যক।

রেক্টামে কোনও টিউমার হলে সেখান থেকে ব্লিডিং হতে পারে।

এ ছাড়া স্টুল না হয়ে পেট ফুলে গেলে বা ওজন কমতে থাকলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

কাদের কনস্টিপেশন হতে পারে?


যে সব আদুরে বাচ্চা সারা দিন আইসক্রিম, চকোলেট বা ফাস্ট ফুড খেয়ে থাকে, তাদের খাবারে কোনও অবশেষ থাকে না।

বয়স্কদের ক্ষেত্রে গার্ড মুভমেন্টের ক্ষমতা কমে যায়। তখন সমস্যা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে ডায়াবেটিক পেশেন্টদের ক্ষেত্রে এই ক্ষমতাটা অনেক কমে যায়।

কম চলচ্ছক্তিসম্পন্ন মানুষদের ক্ষেত্রে স্টুল নীচের দিকে নামতে অসুবিধা হয়।

কোনও কোনও সার্জিকাল কারণেও কনস্টিপেশন হতে পারে।

প্রেগন্যান্সির সময়ে হর্মোনাল কারণে বা স্বাভাবিক প্রসবের পর কোষ্ঠকাঠিন্য হয়ে থাকে।

অ্যানিমিয়া, মানসিক অবসাদ, স্ট্রোক, পারকিনসানিজম, হাইপো বা হাইপার পিটুইটারিজমও কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণ। পায়ুপথে ফিশার থাকলে ব্যথার কারণে রোগী স্টুল করা এড়িয়ে চলে।

সমস্যা এড়াতে

প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় মেনে স্টুল করতে যান। ফাইবার যুক্ত খাবার গ্রহণ করুন। ফলের রসের বদলে গোটা ফল খান। কোনও মেডিক্যাল বাধা না থাকলে সারা দিনে বেশি করে জল খান।

এড়িয়ে চলবেন

দুগ্ধজাত যে-কোনও খাবার ও প্রয়োজনাতিরিক্ত আয়রন, ক্যালসিয়াম জাতীয় ওষুধ।

ক্যালসিয়াম কন্টেনিং অ্যান্টাসিড দীর্ঘ দিন ধরে খাওয়া।

ফাস্ট ফুড, কফি, অ্যালকোহল।

দীর্ঘ দিন ধরে স্টিমুল্যান্ট পারগেটিভ নেওয়া।

বাওয়েল রিফ্লেক্স-এ অবহেলা

অনুলিখন: পিয়ালী দাস

তথ্য সহায়তা: ডা. সুবীরকুমার মণ্ডল

Health Care Excretion প্রাতঃক্রিয়া
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy