Advertisement
E-Paper

সমুদ্রপারে

মোবাইল ফোন, ক্যালেন্ডার সব ভুলে গিয়ে ছুটি কাটাতে চান? কলকাতার অল্প দূরে রয়েছে এমনই এক ঠিকানা। শুধু লম্বা উইকএন্ড দেখে দল বেঁধে বেরিয়ে পড়ার অপেক্ষা।লিখছেন সুজিষ্ণু মাহাতো মোবাইল ফোন, ক্যালেন্ডার সব ভুলে গিয়ে ছুটি কাটাতে চান? কলকাতার অল্প দূরে রয়েছে এমনই এক ঠিকানা। শুধু লম্বা উইকএন্ড দেখে দল বেঁধে বেরিয়ে পড়ার অপেক্ষা।লিখছেন সুজিষ্ণু মাহাতো

শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০১৭ ০০:০০
গোপালপুরের সমুদ্র সৈকতের

গোপালপুরের সমুদ্র সৈকতের

ছুটি মানেই অনেকের কাছে ছুটোছুটি। রোজকার কাজের ব্যস্ততা ফেলে ঘুরতে গিয়েও সেই ব্যস্ততাই সার। সকালে সানরাইজ, বিকেলে সানসেট, সন্ধ্যায় শপিং, পরদিন এটা, তার পরদিন সেটা... ছুটিতে গিয়েও যেন লিস্টি মিলিয়ে-মিলিয়ে কাজের অন্ত নেই! কিন্তু এ ভাবে যাঁরা ছুটি কাটাতে পছন্দ করেন না, যাঁরা ছুটিতে গিয়ে মোবাইল অফ করে দেন আর ক্যালেন্ডারের কথা ভুলে যান, তাঁদের জন্যও ঠিকানা কম নেই। কলকাতা থেকে অল্প দূরে গোপালপুর-অন-সি তেমনই এক জায়গা।

বলা হয়, পূর্ব উপকূলে যে সব সৈকত রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম সেরা এই গোপালপুর। বাঙালির চিরচেনা পুরীর রাজ্য ওড়িশাতে থাকলেও পুরীর ভিড়, হই-হট্টগোল ছুঁতেই পারেনি এই ছোট্ট জনপদকে। হাওড়া থেকে অন্ধ্রপ্রদেশগামী ট্রেনে বেরহামপুর হয়ে যখন আপনি গোপালপুরের সাগরবেলায় পৌঁছবেন, তখন সত্যিই মনে হবে, সময় যেন এখানে থেমে রয়েছে। আশপাশে তাড়া নেই কারও। তা সে মাথার উপরে পাক দিয়ে যাওয়া শঙ্খচিলই হোক, বা দূরে নীল জলে ভাসতে থাকা নানা রঙের পালতোলা নৌকো। ভরা ট্যুরিস্ট সিজনেও এখানে খুব একটা ভিড় হয় না। হোটেল আগে থেকে বুক করা থাকলে ভালই, কিংবা এখানে পৌঁছেও বেছে নিতে পারেন পছন্দের থাকার জায়গা।

নিরালা সৈকতে বসে থেকেই কেটে যায় সময়

বেরহামপুর থেকে গোপালপুরের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। স্টেশনের বাইরেই মেলে বহু গাড়ি। থাকার জন্য ওটিডিসি-র পান্থনিবাস আছে এখানে। তবে সেটি সমুদ্র থেকে একটু দূরে। এ ছাড়া সমুদ্রের আশপাশে রয়েছে বেশ কয়েকটি হোটেল। দু’চোখ ভরে দেখা আর অনুভব করা ছাড়া গোপালপুরে এসে তেমন কিছুই করার নেই। দেখতে থাকুন নীল জল, সৈকতে জেলেদের মাছ ধরতে যাওয়া, মাছ ধরে ফেরা।

গোপালপুরের সাগর কিন্তু তেমন শান্ত নয়। সমুদ্রস্নানের সময় সাবধান। দীর্ঘ সৈকতে লোক থাকে হাতেগোনা। তাই সমুদ্রের মুখোমুখি বসেও কাটিয়ে দিতে পারেন যতক্ষণ ইচ্ছে। পিছু ডাকবে না কেউ।

মাছ ধরে ফিরছেন জেলেরা

সৈকত থেকে একটু হেঁটেই চলে আসা যায় লাইটহাউসে। বিকেলে সেটি খোলা থাকে। ১৬৫টি সিঁড়ি ভেঙে লাইটহাউসে ওঠাটা একটু কষ্টকর, কিন্তু যে মনোরম দৃশ্য দেখা যায় লাইটহাউসের উপর থেকে, ওটুকু কষ্ট করা সার্থক।

অটো ভাড়া করে ঘুরে নেওয়া যায় ডলফিন পয়েন্ট, হিলটপ, জেটি, গোপালপুর পোর্ট, কাজু ফ্যাক্টরি। হেঁটেই ঘুরে আসা যায় গোপালকৃষ্ণ মন্দিরে।

লোকে বলে, এই মন্দিরের নাম থেকেই জায়গাটির নাম গোপালপুর হয়েছে। বিকেলে সমুদ্রের ধারের রাস্তাতেই বসে ছোট-ছোট দোকান। কোনওটায় পাওয়া যায় ঝিনুকের তৈরি নানা ধরনের জিনিস। কোনওটায় আবার সামুদ্রিক মাছ ভাজা। তবে সামুদ্রিক খাবারে অ‌্যালার্জি থাকলে এই সব অচেনা মাছ না খাওয়াই শ্রেয়।

সপ্তাহান্তের অবসরের জন্য গোপালপুর-অন সি আদর্শ। তবে দিন দুই সময় হাতে থাকলে এখানে থেকেই গাড়ি নিয়ে একদিনের জন্য যাওয়া যায় চিল্কা হ্রদের দিকে। রম্ভা, বরকুলে চিল্কা হ্রদে নৌকাবিহার যেমন মনে থাকবে, তেমনই মুখে লেগে থাকবে চিল্কার কাঁকড়ার স্বাদ। হাতে আর একদিন থাকলে যাওয়া যায় তপ্তপানির উষ্ণ প্রস্রবন ও চন্দ্রগিরি পাহাড় দেখতে। গাড়ি নিয়ে চলে যাওয়া যায় পাতিসেরনপুর সৈকত ও রুশিকন্যা নদীর মোহনা দেখতেও। দুটিরই দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার। আরও একটু দূরে যেতে চাইলে যেতে পারেন অন্ধ্রপ্রদেশের সীমানায় নির্জন সৈকত সোনাপুরে। গোপালপুর থেকে তার দূরত্ব প্রায় ৯০ কিমি।

সূর্যাস্তের সময়

গোপালপুরে যাঁরা আসতে চান, ছোট্ট একটি তথ্য। সম্ভব হলে পূর্ণিমার দিন দেখে যান। নির্জন সৈকতে বসে পূর্ণিমার আলোয় ধুয়ে যাওয়া স্বর্গীয় দৃশ্যের কথা ভাষায় বোঝানো অসম্ভব।

ভুবনেশ্বরের পর থেকে বেরহামপুর পৌঁছনো পর্যন্ত ট্রেনের জানালা থেকেই দেখা যায় চিল্কা হ্রদ। যে সব ট্রেন সকালবেলা বেরহামপুর পৌঁছয়, সেগুলিতে এলে দেখতে পাবেন ভোরের আলোয় চিল্কার অপূর্ব শোভা।

চাঁদনি রাতে ফেরার পরিকল্পনা থাকলে নিশ্চিত করে বলা যায়, বেরহামপুর থেকে ভুবনেশ্বর পর্যন্ত ট্রেন়যাত্রা মনে থাকবে বহুদিন।

ছবি: লেখক

কীভাবে যাবেন

রাতে হাওড়া থেকে ছাড়ে যশবন্তপুর এক্সপ্রেস, চেন্নাই মেল, অমরাবতী এক্সপ্রেস ট্রেন। ট্রেনগুলো সকালে পৌঁছে দেবে বেরহামপুর। এ ছাড়া ফলকনামা এক্সপ্রেস, ইস্ট-কোস্ট এক্সপ্রেস-সহ আরও অনেক ট্রেন আছে। ওড়িশার যে কোনও শহর থেকে বেরহামপুরে যাওয়ার জন্য পরিবহণের সুব্যবস্থা আছে।

কাছাকাছি বিমানবন্দর ভুবনেশ্বর। কলকাতা থেকে বিমানে সময় লাগে ঘণ্টাখানেক। ভুবনেশ্বর থেকে গাড়িতে গোপালপুর পৌঁছতে লাগবে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা।

রোড-ট্রিপের শখ থাকলে গাড়ি নিয়েই চলে যেতে পারেন গোপালপুর। কলকাতা থেকে দূরত্ব প্রায় ৬০০ কিমি। সকালে যাত্রা শুরু করলে সন্ধের মধ্যেই পৌঁছে যাওয়ার কথা গোপালপুরে।

Travel Sea
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy