মিলবার্ন চেরিয়ান মুম্বই নিবাসী শিল্পী। খ্রিস্টজীবনের বিভিন্ন ঘটনা এবং বাইবেলের নানা আখ্যান নিয়ে তিনি সম্পূর্ণ বর্ণনামূলক আখ্যানধর্মী কাজ করেছেন। প্রত্যেকটি ক্যানভাসই তাঁর কল্পনা অনুযায়ী রূপ পেয়েছে। চিত্রপটের এক কোণ থেকে শুরু করে অন্য কোণ অবধি বাড়িঘর-তৈজসপত্র-লোকজন একেবারে ঘনবদ্ধ ভাবে উপস্থাপিত। তবে স্থান কাল পাত্র হিসাবে সে সব অন্য রকম, অন্য কোনওখানের। যে রকমটি হুবহু দেখা যায় বিদেশি গল্পের ইলাস্ট্রেশনে। রংও তদ্রূপ।
আমরা জানি, চিত্রকলা বা ছবির নিজস্ব একটা বক্তব্য থাকে এবং ইলাস্ট্রেশন আখ্যান অনুযায়ী চিত্রিত হয়। কাজগুলি প্রায় সমতলধর্মী এবং মনোরম। উল্লেখযোগ্য দু’টি বড় ক্যানভাসের ‘দি হিলিং’ কাজটি সেন্ট ফ্রান্সিসের জীবনোপাখ্যান। চিত্রপটের উপরের এক কোণে একটু সবুজ সমুদ্রের আভাস, চড়ায় কয়েকটি নৌকো, সামনের জমিতে সেন্ট ফ্রান্সিস কৃপা বিতরণ করছেন। দূরে কোথাও কোথাও বালির চর। ‘সুনামি’ কাজটির রচনারীতি একটু অন্য রকম, মাঝের ইমেজগুলিকে ঘিরে বাকি সমস্ত বিষয় এসেছে। উপরে অল্প আকাশ কাজটিতে পারস্পেক্টিভ বা দূরত্ববোধ তৈরি করেছে। ইয়েলো অকার একটু ব্রাউন-রেড-গ্রিন মিলিয়ে এক ধরনের বিষাদাচ্ছন্ন পরিবেশ, রাতের আলোর মতো হলদেটে লালচে আলোয় বিকেল বা সন্ধ্যার আবহ তৈরি হয়েছে। সমতলধর্মী বর্ণ, অসংখ্য ইমেজ এবং নির্দিষ্ট কোনও ফোকাল পয়েন্ট না থাকায় দৃষ্টিবিভ্রম তৈরি হচ্ছে। ড্রয়িং বেশ দুর্বল।
ছোট কাজগুলিতে ‘মাদার মোস্ট পিয়োর’, ‘দি অ্যাপ্রিসিয়েশন’-এ বাইজেনটাইন পেন্টিংয়ের ছাপ খুব স্পষ্ট। বাকি বেশির ভাগ ছোট কাজগুলি খুবই পরিশ্রমসাপেক্ষ হলেও এগুলির বর্ণ বৈপরীত্য এবং তীব্র ব্রাউনের ব্যবহার এগুলিতে কাঠিন্য এনেছে। রেড, ব্লু, ব্রাউন, গ্রিনের ঔজ্জ্বল্য দৃষ্টিসুখকর নয়। সাধারণ বিষয়নির্ভর কাজগুলি যেমন—‘ট্রায়াম্ফ’, ‘আর্থ’, ‘ফিস্ট’, ‘ভিলেজ’, ‘আফটার সুনামি’ ইত্যাদি। প্রদর্শিত কাজের সংখ্যা কিছু কম হলে ভাল হত। সব সত্ত্বেও ক্যানভাসের বিস্তৃত জমি জুড়ে রং-তুলির কাজ, ধৈর্য, একাগ্রতা এবং গল্পগুলির সঙ্গে একাত্ম হওয়া— এ সবই নিঃসন্দেহে শিল্পীর সততার নিদর্শন।