Advertisement
E-Paper

বহুরূপীর ঘরে ফাটল

খোঁজ নিলেন স্রবন্তী বন্দ্যোপাধ্যায় নিজের হাতে গড়া দল থেকে সরে এসেছিলেন শম্ভু মিত্র।থাকতে পারেননি শাঁওলী মিত্রও। বেরিয়ে এসে পরবর্তী সময়ে গড়েছিলেন ‘পঞ্চম বৈদিক’।এর পর দল থেকে চলে এসেছিলেন তৃপ্তি মিত্রও।

শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:৩৭
রাজার খোঁজে

রাজার খোঁজে

নিজের হাতে গড়া দল থেকে সরে এসেছিলেন শম্ভু মিত্র।

থাকতে পারেননি শাঁওলী মিত্রও। বেরিয়ে এসে পরবর্তী সময়ে গড়েছিলেন ‘পঞ্চম বৈদিক’।

এর পর দল থেকে চলে এসেছিলেন তৃপ্তি মিত্রও।

দীর্ঘ সময় ধরে আরও কত কত জন...! এ বার আবার ‘ভাঙন’। সেই ‘বহুরূপী’ নাট্যদলে।

তবে এ বারের ভাঙনের সুর হয়তো’বা অন্য। দলের দীর্ঘ দিনের তিন শিল্পী সুমিতা বসু, সুকৃতি লহরী আর তুলিকা দাস বেরিয়ে গেলেন। আর নতুন প্রজন্মের চারজনকে ‘বিশ্রাম’-এ পাঠালো দল!

দলের ওই তিন পুরনো অভিনেত্রী শুধু যে নিয়মিত অভিনয় (বা নির্দেশনা) করেছেন তা নয়, দলের নানা কাজকর্মে যুক্ত থেকেছেন বহু কাল। বছর হিসেবে, তার সংখ্যা কারও ৩৬, কারও ৩১, কারও বা ২৮!

কিন্তু কেন এমন হল?

“ভাবিনি কোনও দিন বেরিয়ে আসতে হবে! আসলে কুমারকাকার (রায়) হাতে তৈরি আমি। দলে কোনও অস্বচ্ছতা মেনে নিতে পারিনি,’’ গলা ধরে এল নাট্যকর্মী সুকৃতি লহরীর।

ওঁর সঙ্গে কথালাপের সেই সন্ধেতেই কলকাতায় নতুন মোড়কে মঞ্চস্থ হচ্ছিল ‘ফুল্লকেতুর পালা’। যে নাটকে ১২ বছর ধরে সুকৃতিই ছিলেন ফুল্লরা! গত বছর তাঁকে কার্যনির্বাহী সদস্যপদ থেকে বাদ দেওয়া হয়। কারণ জানতে চাওয়া হলে নাকি জবাব মেলেনি। লম্বা চার পাতার চিঠি লিখেছিলেন ‘বহুরপী’র সম্পাদককে। উত্তর আসেনি তারও।

‘‘অথচ জানেন, শুধু বহুরূপী-র নিয়ম মানব বলে অন্য কোনও দলে ভাল অফার থাকলেও কোনও দিন কাজ করিনি, এমনকী শাঁওলী মিত্রের পরিচালনায় ‘চাঁদবণিকের পালা’-তেও না,’’ বলছিলেন সুকৃতি।

২০০৮-এ কুমার রায় ‘বীর্যশুল্কা’ পরিচালনা করার দায়িত্ব দিয়েছিলেন দলের এক তরুণীকে। তার পর ‘রাজার খোঁজে’, ‘নীরো’। কুমার রায়ের আবিষ্কার সেই তুলিকা দাসই দলের নাটকে পরিচালক হয়েছেন। শুধু পরিচালক নন, কোষাধ্যক্ষও।

তুলিকা বলেন, ‘‘দু’বছর আগে এই দায়িত্বগ্রহণের পর থেকেই নানা প্রশ্ন উঠেছিল মনে। এখন তো স্যালারি গ্রান্ট, প্রোডাকশন, ফেস্টিভ্যাল, ম্যাগাজিন— সব মিলিয়ে যথেষ্ট ভাল ফান্ডিং বহুরূপীর।’’

বহুরূপী-র ৫০ বছরে ‘নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনসম্বল’-এর ‘চাঁদবণিকের পালা’

প্রশ্ন তুললেই বিপদ, সে যে কোনও বিষয়েই হোক, এমনই অভিজ্ঞতা নবীন অভিনেতা ময়ূখ দত্ত, ঋষভ বসু, পিয়ালী সামন্ত, মনোমিতা চৌধুরীরও। উত্তেজিত তুলিকা বলতে থাকেন, ‘‘ইসমৎ চুঘতাই নিয়ে একটা কাজ করছিলাম। সন্ধে সাড়ে ৬টা থেকে ৯টা পর্যন্ত রিহার্সাল করার পর, ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি, এই নাটকের মূল তিনটি চরিত্রকে দল সেই মুহূর্তে জানিয়েছে ‘সংশোধিত’ হয়ে দলে আসতে, তাই তাদের ‘বিশ্রাম’ নিতে বলা হয়েছে। অথচ, এটা যৌথ সিদ্ধান্ত নয়। সাম্প্রতিক প্রযোজনা ‘কথা নালন্দা’-তেও এরা গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করত। ওদের চোখে জল। আর সেই মুহূর্তে মনে হল, এ বহুরূপী তো আমার বহুরূপী নয়!’’

উত্তেজিত সুমিতা বসুও। ’৯৫ সালে তাঁর স্বামী সৌমিত্র বসু ‘বহুরূপী’ থেকে বেরিয়ে নতুন দল করেন। কিন্তু, প্রাণের ‘বহুরূপী’-কে সে দিনও ছাড়তে পারেননি সুমিতা।

কিন্তু এ বার? “ওখানে হিটলারি রাজ চলছে। ওরা মেয়েদের প্রাধান্য মেনে নিতে পারে না। ২২-২৩ বছরের ছোট ছেলেমেয়েদের প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না সত্তর বছরের একটা নাটকের দল! কুমারকাকা বা তারাপদ কাকার (মুখোপাধ্যায়) সময় দলে এমনটা কল্পনাও করা যেত না!’’ বলছিলেন সুমিতা।

কিন্তু দলে থেকে যাওয়া ‘বহুরূপী’র সদস্যেরা কী বলছেন?

রাজা অয়দিপাউস

নাট্যকর্মী দেবেশ রায়চৌধুরী ফোনে বললেন, ‘‘কয়েক জন কর্মী স্বেচ্ছায় দল ছেড়েছেন। দলের বিধিনিয়মের সঙ্গে তাঁরা মানিয়ে নিতে পারছিলেন না।’’

কিন্তু দলে অস্বচ্ছতার প্রতিবাদেই নাকি এই তিনজন দল ছেড়েছেন? জানতে চাইলে ফোনের ওপার চুপচাপ।

বহুরূপীর সভাপতি সমীর চক্রবর্তী কোনও মন্তব্য করতে চাননি। তাঁর কথায়: ‘‘যা বলার সম্পাদক বলবেন।’’

দলের সম্পাদক প্রবাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ভাঙন শব্দটায় আমার আপত্তি আছে। এটা কোনও ভাঙন নয়। যাঁরা চলে গেছেন, তাঁরা বহুরূপীর নিয়ম এবং আদর্শ মানতে পারছিলেন না। তাঁরা হয়তো অন্য দলও গড়বেন। সে কারণেই বেরিয়ে গেছেন।’’

দল ভাঙা-গড়া নিয়ে অবশ্য ভিন্নধারার মত দিলেন আশি-উত্তর প্রবীণ নাট্যকর্মী।

নবান্ন

‘‘আমি বহুরূপীর কেউ নই। তবু বলব, দল তো আসলে পরিবার। ঝগড়়া, মারামারি, রাগ সব হবে। সাফার করব। কিন্তু দলেই থাকব। এমনটাই হওয়া উচিত। যাঁরা ছাড়লেন তাঁদের এটাই বলছি। আর যাঁরা নেতৃত্বে আছেন তাঁদের বলি, তাঁরা যেমন ‘পেটাবেন’ তেমনই বুকে আগলে রাখাটাও তাঁদের রপ্ত করতে হবে। আমি একবার দলের এক দুষ্টু ছেলেকে দরজা বন্ধ করে গাছের ডাল দিয়ে পিটিয়েছিলাম। তার পর ওর সামনেই ডালটা নিজের পিঠে মেরেছিলাম। এরই নাম ভালবাসা। নয়তো নাটকের দল আর রাজনৈতিক দলের ফারাক থাকবে কেন?’’ ব্যাখ্যা দিলেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত।

ফিরে যাওয়া যাক আরও এক প্রবীণের কথায়। সময়টা ’৭৯ সাল। শম্ভু মিত্র লিখলেন, ‘‘অত্যন্ত সাধারণ খুনের আসামিকেও তার বক্তব্য জিজ্ঞেস করা হয়, কিন্তু বহুরূপী-তে আমার বিচার করা হল আমাকে কিছু জিজ্ঞাসা না করে। কেন তোমরা আমার মুখোমুখি হতে পারলে না? নিশ্চয় কোনও বাধা ছিল।’’

নতুন করে আবার সেই ছেঁড়াতারের বেসুরো সুরই যেন বেজে উঠল বহুরূপী-র ঘরে!

ছবি: সৌজন্যে ‘বহুরূপী’, আনন্দবাজার আর্কাইভ

Bohurupee
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy