Advertisement
E-Paper

নিখোঁজ

কেউ হারিয়ে যান স্বেচ্ছায়। কাউকে হারিয়ে ফেলা হয়। হারানোর কাহিনিতে বিচিত্র সব রহস্য খুঁজে পেলেন পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়হারিয়ে যাওয়ার কাহিনি যতটা রহস্যময়, ততটাই তাঁদের ধাওয়া করার রাস্তাঘাট। অলিগলি-রাজপথের গল্প। সাগরমেলার থিকথিকে ভিড়। হোগলাপাতার ছাউনি ঘেরা জলসত্রের পাশে আশি ছুঁইছুঁই রতন দেবীকে বসিয়ে তাঁর ছেলে বললেন, “ইঁয়াহা বৈঠো তনিক, হম অভি আতে হ্যাঁয়।” এখানে একটুখানি বসো, আমি এখনই আসছি। চার বছর কেটে গিয়েছে, ছেলে আর ফেরেনি! সাংবাদিক জানতে পেরে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হোমে কব্জিটা চেপে ধরে কেঁদে ফেললেন ঘোলাটে চোখ আর ঝুলঝুলে চামড়ার সেই বৃদ্ধা।

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০০:২২

হারিয়ে যাওয়ার কাহিনি যতটা রহস্যময়, ততটাই তাঁদের ধাওয়া করার রাস্তাঘাট। অলিগলি-রাজপথের গল্প।

সাগরমেলার থিকথিকে ভিড়। হোগলাপাতার ছাউনি ঘেরা জলসত্রের পাশে আশি ছুঁইছুঁই রতন দেবীকে বসিয়ে তাঁর ছেলে বললেন, “ইঁয়াহা বৈঠো তনিক, হম অভি আতে হ্যাঁয়।” এখানে একটুখানি বসো, আমি এখনই আসছি।

চার বছর কেটে গিয়েছে, ছেলে আর ফেরেনি! সাংবাদিক জানতে পেরে দক্ষিণ কলকাতার এক বেসরকারি হোমে কব্জিটা চেপে ধরে কেঁদে ফেললেন ঘোলাটে চোখ আর ঝুলঝুলে চামড়ার সেই বৃদ্ধা। আপ্রাণ বোঝাতে চাইলেন, ঘাটশিলার কাছে চাকুলিয়া অঞ্চলে তাঁর বাড়ি, যদি একটু খবর দেওয়া যায়। তিনি হারিয়ে গিয়েছেন!

এমন অসংখ্য হারানোর বৃত্তান্ত নেড়েচেড়ে দেখলে কতগুলো সূত্র ভেসে ওঠে। যার ভেতরেই লুকিয়ে থাকে কেন ওঁরা হারিয়ে যান।

কয়েক মাস আগে অনাবাসী ভারতীয় সারু-র গল্প নিয়ে তোলপাড় হয়ে গেল আন্তর্জাতিক মিডিয়া।

মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়ায় বাবা, মা আর দাদার সঙ্গে থাকত সে। ট্রেনে ময়লাকুড়ুনির কাজ করত দাদা। তার সঙ্গে প্রায়ই চলে আসত পাঁচ বছরের সারু।

একদিন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকা একটি ট্রেনে উঠে ঘুমিয়ে পড়ল ছোট্ট সারু। দাদা খেয়াল করেনি। ট্রেন চলে এল কলকাতায়। সারু হারিয়ে গেল। কলকাতায় এক হোমে ঠাঁই হল তার। সেখান থেকে তাকে দত্তক নেন এক অষ্ট্রেলীয় দম্পতি।

২৫ বছর পর স্মৃতিতে থেকে যাওয়া কিছু জায়গার নাম ‘গুগল আর্থ’-এ খুঁজে খান্ডোয়ায় পৌঁছোয় সারু। খুঁজে পায় কোন ছেলেবেলায় হারিয়ে ফেলা সেই পরিবার।

যাঁরা স্বেচ্ছায় হারান তাঁরা ফিরে এলে সে অভিজ্ঞতা সব সময় যে সুখকর হয়, এমন কখনওই নয়।

পনেরো বছর পরে ফিরে এসেছিলেন বেলঘরিয়ার দিবাকর গঙ্গোপাধ্যায়। বিমাসংস্থায় কাজ করতেন। স্ত্রী মিতালি আর সাত বছরের ছেলে তুতান।

মিতালি বলছিলেন, “ওর অফিসে ডিভোর্সি এক মহিলা আসতেন। তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হয়। একদিন কাউকে কিছু না জানিয়ে তাঁকে নিয়ে চলে যায়। বাচ্চাকে নিয়ে তখন যে কী অসম্ভব লড়াই করতে হয়েছিল, এখন ভাবলে নিজেরই অবাক লাগে। তার পর হঠাৎ একদিন দিবাকর ফিরে এল। ক্ষমা চেয়ে আমাদের সঙ্গে থাকতে চাইল। মাথাটা রাগে জ্বলে গিয়েছিল। আমি আর ছেলে দু’জনেই ওকে চলে যেতে বলেছিলাম।”

লালবাজারের গোয়েন্দারা বলছিলেন, দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা পাচার হয়ে যাওয়া বাদ দিলে প্রেমে পড়ে বা বিবাহবহির্ভূত প্রেমে জড়িয়ে পালানোর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে প্রচুর দেনা করে, ইচ্ছামতো চাকরি না-পেয়ে, পরিবারের লোকের সঙ্গে রোজের অশান্তিতে জেরবার হয়ে, পরীক্ষায় ফেল করে, আর মুম্বইয়ে হিরো-হিরোইন হতে চেয়ে হারিয়ে যাওয়ার কেস। তার মধ্যে আবার কিশোরী-যুবতী এবং শিশুদের হারানোর সংখ্যাই নাকি সবচেয়ে বেশি।

বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কথা ধরা যাক। বয়স ১৩ পেরিয়েছে। বাড়ি উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদ। আট বার স্বেচ্ছায় সে বাড়ি থেকে হারিয়েছে এবং কোনও না কোনও শহর-আধা শহরে চপের দোকানে কাজ নিয়েছে!

চপের দোকানের প্রতি শ্রীমানের এমন প্রীতির রহস্য বহু চেষ্টাতেও বার করা যায়নি। সাত বার তাকে খুঁজে ফেরানো গিয়েছে, কিন্তু আট বারের বার সাফল্য এখনও অধরা। আপাতত বাড়ির লোক মিসিং পার্সন বিভাগে হত্যে দিচ্ছেন।

জলজ্যান্ত একটা মানুষ এই ছিল, আর এই হঠাৎ কোথাও নেই— এর ফলাফল ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর ওপর যে কী মারাত্মক হয়ে দেখা দেয়, লালবাজারে ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের চারতলায় মিসিং পার্সন স্কোয়াডের দফতরে অল্পক্ষণ কাটালেই কিছুটা আন্দাজ পাওয়া যায়।

প্রতি দশ মিনিট অন্তর সেখানে ঢুকছেন হারিয়ে যাওয়া মানুষটির কোনও না কোনও কাছের জন। ফ্যাকাশে মুখ, এলোমেলো চুল, অবিন্যস্ত পোশাক। কেউ কথা বলতে-বলতে কাঁদছেন, কেউ চিৎকার করছেন, হঠাৎ টেবিলে আচমকা মাথা ঠুকতে শুরু করছেন কেউ।

“সারা দিন এঁদের ডিল করতে হয় আমাদের। তুলনায় পুলিশি ব্যাপারস্যাপার কিন্তু কম, বরং অনেক গুণ বেশি নিতে হয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞের ভূমিকা,” বলছিলেন বিভাগীয় ইনচার্জ বকুল রানি মিত্র।

• ৪৩ বছর পরেও হারিয়ে যাওয়া বোনের অপেক্ষায় আজও খবরের কাগজে বিজ্ঞাপন দেন সৈয়দ মুজতবা আলীর স্বজন!

• তেন্ডুলকরকে দেখতে তাঁর অন্ধ ভক্ত বাড়ি থেকে পালিয়ে কেন লুকিয়ে থাকেন চায়ের দোকানে?

• অস্ট্রেলীয় দম্পতির দত্তক-পুত্র আড়াই দশক বাদে কী ভাবে মধ্যপ্রদেশে গিয়ে খুঁজে পান তাঁর নিজের বাবা-মাকে!

সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মনে পড়ে তাঁর এক মামা-র কথা। তিনি বাবা-মা বা পরিবারের বড়-ছোট কারও মৃত্যুসংবাদ সহ্য করতে পারবেন না, এই কারণ দেখিয়ে নিজেই বাড়ি থেকে হারিয়ে গিয়েছিলেন। কোনও দিন ফিরে আসেননি।

শিশুমন বিশেষজ্ঞ হিরণ্ময় সাহা বললেন, হারিয়ে যাওয়া শিশুদের ৭০ ভাগই নিম্ন বা নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের। আর্থ-সামাজিক কারণে এঁদের চোখে-চোখে রাখার লোক কম এবং এই বাচ্চারা কোনও এক জায়গায় থিতু হতে পারে না। ঘুরে-ঘুরে বেড়ায়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে স্কিৎজোফ্রেনিয়া বা ফিউজ (fugue)-এর মতো মানসিক সমস্যা যত বাড়ছে, তত বাড়ছে আক্রান্তদের নিখোঁজ হওয়ার আশঙ্কা।

মনোবিদ নীলাঞ্জনা সান্যালের বক্তব্য, স্কিৎজোফ্রেনিয়ায় মানুষ তাঁর আশপাশের লোকজন, পরিবেশকে সব সময় সন্দেহের চোখে দেখে। সেখান থেকে চলে যেতে চায়। আর ফিউজ হল হিস্টেরিয়ার একটা ধরন, যেখানে আচমকা মানুষ নিজের পরিচয় ভুলে সম্পূর্ণ অন্য কোনও মানুষ হয়ে নতুন কোনও পরিবেশে বসবাস শুরু করতে চায়। কয়েক মাস বা কয়েক বছর পরে আবার তাঁর হুঁশ ফিরতে পারে। তখন সে আবার পুরনো জীবনে ফিরে আসে।

এ ছাড়া অ্যালজাইমার্সের মতো রোগে স্মৃতিভ্রংশ হয়ে হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা তো রয়েইছে। লেখিকা তিলোত্তমা মজুমদারের এক কাছের বন্ধুর বাবা অতি সম্প্রতি অ্যালজাইমার্সের কারণে হারিয়ে গিয়েছেন। তাঁকে নাকি শেষবার পাড়ার একজন দেখেছিলেন যে বাড়ির উল্টো দিকে হনহন করে হেঁটে চলে যাচ্ছেন। তিলোত্তমার কথায়, “একজন মানুষ শুধু মনে করতে পারছেন না বলে বাড়ি ফিরতে পারছেন না। এ যে কী অসহয়তা, ভাবলেও শিউরে উঠি।”

রোজই অদ্ভুত সব কেস আসে মিসিং স্কোয়াডে। একটি বাচ্চা তার দাদুর কাছে বিভিন্ন তীর্থস্থানের গল্প শুনত। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময় একদিন বাবার ব্যাগ থেকে ৩০০ টাকা নিয়ে সে একটা চিঠি লিখে গেল—“আমি দাদুর মতো তীর্থ করতে যাচ্ছি ট্রেনে করে।” তার পর সে গেল হারিয়ে। অনেক কষ্টে সাত মাস পর কামাখ্যা থেকে তার খোঁজ পেয়েছিলেন গোয়েন্দারা।

তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই খুঁজে পাওয়ার কাজটা এত সহজ নয়, বলছিলেন সিআইডি-র অফিসারেরা।

যেমন বারুইপুরের ১৫ বছরের এক কিশোরী স্কুলে আসা-যাওয়ার পথে ১৯ বছরের এক ছেলের প্রেমে পড়ল। মেয়েটি আর ছেলেটি একদিন পালাল।

বছরখানেক পর কেস এল সিআইডি-র হাতে। ছেলেটির সঙ্গে একটি মোবাইল ছিল। তার পুরনো কললিস্ট দেখে অফিসারেরা বন্ডেল গেটের একটি বাড়ির এক মহিলার ফোন নম্বর পান। খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ওই মহিলা হলেন ছেলেটির তুতো দিদি। কিশোরীকে নিয়ে পালানোর পর প্রথম কয়েক দিন দিদির বাড়িতেই উঠেছিলেন তাঁরা।

দিদির কাছ থেকে ছেলেটির বাড়ির ঠিকানা মেলে। চম্পাহাটি। বাড়ির সকলেই বাজি বানানোর কাজ করেন। তাঁরাই অফিসারদের যোগাযোগ করিয়ে দেন মেয়েটির সঙ্গে। বালিগঞ্জ স্টেশনে এক মহিলা অফিসার মেয়েটির সঙ্গে দেখা করেন। নাবালিকা তখন গর্ভবতী। কিন্তু সে কিছুতেই ছেলেটির ঠিকানা বলেনি। বাবার কাছেও ফিরতে চায়নি। তাকে রাখা হয় লিলুয়া হোমে। এখনও বাচ্চাকে নিয়ে মেয়েটি সেখানেই আছে এবং জানিয়েছে, ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর সে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতে চায়।

এক কিশোরের কথা শোনালেন সিআইডি অফিসারেরা। ছেলেটির তখন ক্লাস এইট। সোদপুরে বাড়ি। সচিন তেন্ডুলকরের অন্ধ ভক্ত। মুম্বইয়ে সচিনের ক্রিকেট জীবনের শেষ ম্যাচের কয়েক দিন আগে সে নিখোঁজ হয়ে গেল।

বাড়ির লোক একরকম নিশ্চিত যে, ছেলে ম্যাচ দেখতে মুম্বই গিয়েছে। মুম্বই পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হল। কেউ কোনও তথ্য দিতে পারলেন না। বেশ কয়েক দিন পরে কাগজে ছবি দিয়ে নিরুদ্দেশ কলামে বিজ্ঞাপন ছাপা হল। সেই দিনই বিকেলে অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি বিজ্ঞাপনের নীচে দেওয়া ফোন নম্বরে গোয়েন্দাদের ফোন করে জানান, এসপ্ল্যানেডের এক জুতোর দোকানে প্রায় একই রকম দেখতে একটি ছেলেকে তিনি কাজ করতে দেখেছেন।

খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, ঠিক! সচিনের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার টাকা জোগাড় করতে সে দোকানে কাজ নিয়েছিল।

আঠাশ বছর আগে ১৯৮৬ সালের জুন মাসের এক বিকেলে বেহালার বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল দেবশ্রী রায়চৌধুরী ওরফে মৌ।

আলিপুর মাল্টিপারপাস থেকে মাধ্যমিক পাশ করে তখন সে সদ্য গোখেলে ভর্তি হয়েছে। বাবা-মায়ের আদরের মেয়ে আর ফিরল না। বাবা শ্যামাপদ রায়চৌধুরী পাগলের মতো মেয়েকে খুঁজতে শুরু করলেন। তদন্তের দায়িত্ব নিল সিআইডি। জানা গেল পুরুলিয়ার ছেলে সত্যনারায়ণ সেনের সঙ্গে পালিয়ে গিয়েছেন দেবশ্রী। তাদের খুঁজেও পান গোয়েন্দারা। কিন্তু ১৯৮৭-র ১৩ জুলাই সিআইডি খবর দেয়, ডাউন জগন্নাথ এক্সপ্রেসে দেবশ্রী-সত্যনারায়ণকে ফিরিয়ে আনার সময় কোনও ভাবে মহানন্দায় ঝাঁপ দিয়েছে দু’জনে।

সেপ্টেম্বর মাসে হাওড়ার এক হোটেলে রহস্যজনক মৃত্যু হয় দেবশ্রীর বাবা শ্যামাপদবাবুর। দেবশ্রী অন্তর্ধান রহস্য সিআইডি-র সর্বকালের চাঞ্চল্যকর কেসগুলোর অন্যতম। দেবশ্রীর ছোটভাই দীপ তখন ক্লাস ফাইভে পড়ে। আজ চল্লিশ ছুঁইছুঁই বয়সে পৌঁছেও তিনি অপেক্ষা করেন কোনও দিন হয়তো ফিরবে তাঁর হারিয়ে যাওয়া দিদি।

ঠিক যেমন ৪৩ বছর ধরে অপেক্ষা করছেন ঢাকার ধানমন্ডির ফয়জুন্নিসা খানম। মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পরে হারিয়ে যান তাঁর ছোটবোন মনারা চৌধুরী। পরিচিত কেউ জানিয়েছিলেন, মনারাকে কলকাতায় দেখা গিয়েছে। তার পর থেকে এত দিন প্রত্যেক বছর একবার করে কলকাতায় এসে মনারা-র ছবি দিয়ে সংবাদপত্রে নিখোঁজ কলামে বিজ্ঞাপন দেন ফয়জুন্নিসা। খোঁজ নেন থানাগুলিতে।

সম্পর্কে লেখক সৈয়দ মুজতবা আলীর বেয়ান ফয়জুন্নিসার বয়স বাহাত্তর পেরিয়েছে। এখনও স্বপ্ন দেখেন, মনারাকে খুঁজে পেয়ে দুই বোন একসঙ্গে গোপালগঞ্জে আব্বুর ভিটের দালানে পা ছড়িয়ে অনেক গল্প করবেন।

parijat bandyopadhyay
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy