Advertisement
১৭ মে ২০২৪

বিবিধ রতন

যার ভাঁড়ার ছিল রেডিয়োর বিবিধ ভারতী। বাড়ির ছোটদের জন্য যা নিষিদ্ধ ফল, বড়দের কাছে তাই-ই কি না হয়ে উঠত আশ্চর্য মৌতাত! রোমন্থনে শঙ্করলাল ভট্টাচার্যশ্রীলঙ্কা তখনও শ্রীলঙ্কা হয়নি। লঙ্কা বললে মনে আসত রামায়ণ। সিংহল বললে ইতিহাসের বই আর সত্যেন দত্তের কবিতা। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কা তখনও নাম-গোত্র-মানচিত্রে সিলোন। আর সিলোন ভারতের কোন প্রান্তে, এই জ্ঞানও যার নেই সেই ভারতীয় কিশোর-কিশোরীও সারা দিন কান উঁচিয়ে আছে একটা রেডিয়ো স্টেশনের ধ্বনিতরঙ্গের জন্য, যার নাম রেডিয়ো সিলোন। বাঙালিদের কথাই বলি। তাদের শনি-রবির দুপুর মানেই যেমন ছিল ‘অনুরোধের আসর’ তেমনই সন্ধে নামলে মালাই বরফ, বেলফুল বা নিশির ডাকের মতো হত রেডিয়ো সিলোনের হিন্দি সিনেমাগান।

মডেল: অপরাজিতা আঢ্য। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

মডেল: অপরাজিতা আঢ্য। ছবি: সুব্রত কুমার মণ্ডল

শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০১৪ ০০:০৫
Share: Save:

শ্রীলঙ্কা তখনও শ্রীলঙ্কা হয়নি। লঙ্কা বললে মনে আসত রামায়ণ। সিংহল বললে ইতিহাসের বই আর সত্যেন দত্তের কবিতা। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কা তখনও নাম-গোত্র-মানচিত্রে সিলোন।

আর সিলোন ভারতের কোন প্রান্তে, এই জ্ঞানও যার নেই সেই ভারতীয় কিশোর-কিশোরীও সারা দিন কান উঁচিয়ে আছে একটা রেডিয়ো স্টেশনের ধ্বনিতরঙ্গের জন্য, যার নাম রেডিয়ো সিলোন।

বাঙালিদের কথাই বলি। তাদের শনি-রবির দুপুর মানেই যেমন ছিল ‘অনুরোধের আসর’ তেমনই সন্ধে নামলে মালাই বরফ, বেলফুল বা নিশির ডাকের মতো হত রেডিয়ো সিলোনের হিন্দি সিনেমাগান।

বাণিজ্যিক ফর্মুলায় চালানো রেডিয়ো সিলোন তখন দুনিয়া মাত করে দিচ্ছে। কারণ নিশির ডাকগুলো চড়ছে লতা, রফি, গীতা, আশা, হেমন্ত, মুকেশ, তালাত, মান্না, কিশোর, শমসদ বেগমের গলা বেয়ে।

এমনিতেই ছেলেমেয়েদের উপর কড়া নজর বাড়ির বড়দের যাতে হিন্দি বায়োস্কোপের চক্করে না পড়ে, তার উপর রেডিয়োর এই নয়া উৎপাত।

এবাড়ি ওবাড়ি দিয়ে ভেসেই আসছে কখনও না কখনও ‘আ যা রে, ম্যাঁয় তো কবসে খড়ি ইস পার’ বা ‘সর যো তেরা চকরায়ে ইয়া দিল ডুবা যায়ে’ বা ‘সুহানা সফর অউর ইয়ে মৌসম হসিন’ বা ‘তগদিরসে বিগড়ি হুই তগদির বনা লে’ বা ‘হ্যয় অপনা দিল তো আওয়ারা’ বা ‘বাবু, সমঝো ইশারে, হর্ন পুকারে পম পম পম’ বা ‘জানে কঁহা মেরা জিগর গয়া জি’ ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

হিন্দি গানের প্রতি বাঙালি যুবার এই নেশার টান সব চেয়ে বেশি চমকিত করেছিল বাঙালি গার্জেনকুলকে, যাঁরা এই সব গানের নাম রেখেছিলেন লারেলাপ্পা।

তাতে রেডিয়ো সিলোনের হিন্দি গানের প্রোগ্রামকে ঠেকানো যায়নি। সারা ভারত জুড়ে তখন একটাই হাওয়া— রেডিয়ো সিলোন।

বিবিধ ভারতী এখানেই একটা নিজস্ব ঘরানা হিসেবে থেকে গেল। কত অপূর্ব চরিত্রের সঙ্গে আলাপ হল ‘ইনসে মিলিয়ে’ প্রোগ্রামে। চোখে দেখতে পাচ্ছি না দিনের অতিথি বা সাক্ষাৎকার গ্রাহককে। অথচ কী অবলীলায় তাঁদের এক মূর্তি ফেঁদে ফেলছি মনে মনে। কিংবা ধরা যাক প্রোগ্রামে এমন কেউ হাজির যাঁর কাজে আপনি অভিভূত কিন্তু ফটোগ্রাফে ছাড়া তাঁকে চাক্ষুষ করেননি। তাঁর কণ্ঠস্বর শোনার কোনও প্রশ্নই নেই। ধরুন তেমন এক অতিথি এসে এক সন্ধ্যায় তাঁর প্রিয়তম গানগুলো বাজিয়ে শোনাচ্ছেন, তাঁর ভাল লাগার কারণ ব্যাখ্যা করে...

এরকম এক অতিথি হিসেবে একদিন পেয়েছিলাম সুরকার মদন মোহনকে। যাঁর অজস্র গান তখন সারাক্ষণ মাথায় ঘোরে, কম্পোজিশনে এত সুরের দম আর বৈচিত্র, ভাল লিরিক পেলে তাকে গজলের টেকনিকে মর্মভেদী করে তোলার সহজ কেতা, সব মিলিয়ে এক অজিব ফনকার, আশ্চর্য আর্টিস্ট।

ছবিতে ওঁর মুখের সঙ্গে পরিচয় ছিল। কিন্তু নিজের ভাষ্য দিয়ে একটার পর একটা গান যখন দিতে শুরু করলেন তখন আহ্লাদে দমছুট হওয়ার জোগাড় আমার। অপূর্ব নির্বাচন, তাল মিলিয়ে তেমনই ব্যাখ্যা।

আমি শুধু অপেক্ষায় কখন নিজেরই একটা গান দেবেন। চাইছি ‘অদালত’ ছবিতে লতাকে দিয়ে গাওয়ানো ‘উনকো শিকায়েত হ্যায় কে হম কুছ নহি কহতে’ দেবেন কিংবা হালের সুপার ডুপার হিট, ওই লতাকে দিয়ে ‘মেরা সায়া’-র ‘তু যঁহা যঁহা চলেগা মেরা সায়া সাথ হোগা’ দেবেন, কিন্তু নিজের একটা গানও তিনি দিলেন না। সেই লতার গান দিয়েই শেষ করলেন, তবে রবিশঙ্করের সুরে ‘অনুরাধা’ ছবি থেকে ‘কৈসি বিতে দিনে, কৈসি বিতি রতিয়াঁ, পিয়া জানে না’ দিয়ে। বাজাবার আগে বললেন ‘এবার আমার অতি প্রিয় এক গান বাজাব যেটি নির্মাণ করেছেন মশহুর সিতারি পণ্ডিত রবিশঙ্কর। তিলক শ্যাম রাগের কী অপূর্ব প্রয়োগ! আপনারা শুনুন।’

ব্যক্তির চরিত্রসুধা বিতরণে বিবিধ ভারতী যে কাজ করে রেখেছে অ্যাদ্দিনে তা বলে শেষ করব কী, শুরুই করতে পারি না। কারণ একটাই: শুধু মুখের কথায় কোনও মানুষের যতটা মেধা ও হৃদয় ধরা পড়ে তার অনুরণন সহজে মোছার নয়।

তাছাড়া গান জিনিসটা রেডিয়োয় শুনলে যেভাবে মরমে পশে, টিভির পর্দায় শিল্পীর প্রোগ্রামে সেটা তেমন হয় না। দৃশ্যটাই তখন একটা আপদ বিশেষ। ভূতের গল্প যেমন যতটা জমতে পারে ধ্বনির প্রয়োগে, টিভিতে সরাসরি ভূত দেখিয়ে তার ধারেকাছে যাওয়া মুশকিল। বেতারের এই কাল্পনিক ক্ষেত্র ও রসের অলিন্দগুলোর পূর্ণ সদ্ব্যবহার করে গেছে বিবিধ ভারতী। এরকম এক স্মরণ ও বরণের আসরের কথা এখানে না বললেই নয়। বলছি...

কলকাতায় ওঁর শেষ অনুষ্ঠান করে গেলেন বেগম আখতার ত্যাগরাজ হলে। ফরাশপাতা আসরে প্রায় এক স্বপ্নের মেহফিল। নিজের পছন্দ তো গাইছেনই, উপরন্তু যা যা ফরমায়েশ আসছে তাও প্রাণ ঢেলে শুনিয়ে দিচ্ছেন। তখন কে ভাবতে পেরেছিল যে এর ক’দিন বাদে খবর আসবে যে ওঁর ইন্তেকাল হয়েছে।

আজকের দিনে হলে টেলিভিশনের পর্দা ওঁর অ্যালবামের ছবি, ভিডিয়ো ফুটেজ ও সেলিব্রিটিদের ‘বাইট’-এ ছয়লাপ হয়ে যেত। কিন্তু সে সময় বিবিধ ভারতীর একটা দীর্ঘ সান্ধ্য অনুষ্ঠান ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যে যা ঘটিয়ে ফেলল তা আমার বেতারস্মৃতিতে চিরকাল অম্লান থাকবে। কারণ প্রোগ্রামে বাজানো হয়েছিল মৃত্যুর কিছু দিন আগে খৈয়ামের সুরে বেগমের গাওয়া এক গুচ্ছ অলৌকিক গজল, যা ওঁর চিরবিদায়ের পর ‘ইন মেমোরিয়াম’ শিরোনামে লংপ্লে অ্যালবাম হয়ে প্রকাশ পেল। অ্যালবামকে অলৌকিক করেছিল বিশেষ একটি নিবেদন— মীর তকি মীরের কথায়, বেগমের গলায় ‘উল্টি হো গয়ি সব তদ্বিরেঁ কুছ ভি দওয়া ন কাম কিয়া’। মৃত্যুর পর তাঁর এই গান আমরা প্রথম শুনছি, এবং ক্ষণে ক্ষণে চোখে জল আসছে যখন, তখন ভেসে উঠল গায়িকার স্মরণে নিজের কবিতা পাঠ ফৈজ আহমেদ ফৈজের। যেখানে শের-এর বাণীতে খেদ প্রকাশ করা হচ্ছে একটা জগৎ খুঁজে না পাওয়ায়, একটা স্বর্গ খুঁজে না পাওয়ায়। এক খুদা-র খোঁজ না পাওয়ায়। আমার ধারণা বেগম এই কবিতাটাও গেয়ে গেছেন জীবনে।

যদি মনে হয় বিবিধ ভারতীর স্তুতিতে বড্ড আবেগ এসে পড়ছে তার কারণ একটাই। হিন্দি সিনেমার গানের রেকর্ড কেনা যখন নিষেধ তখন বিবিধ ভারতীই আমাদের গ্যারার্ড চেঞ্জারে চাপানো হাফ ডজন লং প্লে। কখনও ‘ভুলে বিসরে গীত’-এ শুনছি কে এল সায়গল, পঙ্কজ মল্লিক, সি এইচ আত্মা, নুরজাহান, মালেকা পোখরাজ, শাকিলা বানো ভোপালি, কখনও ‘আপ কি পসন্দ’-এ লতা, গীতা, আশা , রফি, কিশোর, মুকেশ, মান্না, মহেন্দ্র কপূর, কখনও ‘ছায়াগীত’-এ সিনেমার গানে জগজিৎ সিংহ, যেসুদাস, সুমন কল্যাণপুর, বাণী জয়রাম আর ‘বিনাকা গীতমালা’-র কাউন্টডাউন দিয়েই তো হিসেব কষেছি নিজের ভাল লাগা আর সারা ভারতবাসীর পছন্দের মধ্যে কোথায় মিলন, কোথায় বিচ্ছেদ। নিজের এবং জনগণের পছন্দের মিল যা-যা ঘটেছিল তার এক ছোট্ট তালিকা এরকম...

লতার ‘আ যা রে, ম্যায় তো কবসে’, ‘যব প্যার কিয়া তো ডরনা ক্যা’, ‘মেরে মেহবুব তুঝে মেরি মুহব্বত কি কসম’, ‘তু যঁহা যঁহা চলেগা’, এবং একটি নয় তিনটি...‘কাটোঁসে খিচকে ইয়ে আঁচল’, ‘ও মেরি ওয়াতন কে লোগোঁ’ আর ‘আল্লা তেরো নাম, ঈশ্বর তেরো নাম।’

দেখলেন তো, শুধু লতার গানেরই তালিকা মেলাতে গিয়ে হল্লাক হয়ে যাচ্ছি, বাকি সবার হিট গানের লিস্ট বানাতে গেলে পাতা ফুরিয়ে যাবে। শুধু আর একটা গানের স্মৃতি দিয়ে শেষ করব।

গীতা দত্ত মারা গেছেন। ‘অনুভব’ ছবিতে ওঁর প্লেব্যাক ‘মুঝে জান কহো মেরি জান’ শুনে চোখের জল চেপে বাড়ি এসেছি। এর ক’দিন বাদে পাড়ার বন্ধুর বাড়ির ছাদে বসে ক’জন আমরা রাতের শহরের আকাশরেখা দেখছি, তাতে দূরে হাওড়া ব্রিজও আছে। হঠাৎ কোত্থেকে, কার বাড়ির রেডিয়ো থেকে ভেসে এল গীতার ‘মুঝে জান কহো মেরি জান।’ মুহূর্তের মধ্যে গোটা সন্ধেটা অন্য রাস্তা ধরে নিল। সৌজন্য বিবিধ ভারতী।

বঙ্গ ভাণ্ডারে তব

‘সুরভিত অ্যান্টিসেপটিক ক্রিম বোরোলিন’ জিঙ্গলটা শুনলে আপনার কী মনে আসে? কবে হাত ছড়েছিল, তাতে বোরোলিন মাখিয়েছিলেন? না। কবে প্রথম সবুজ টিউবের মলমটা কিনেছিলেন? তাও না। তাহলে? ভাবুন একটা চনমনে, যুবতীকণ্ঠ, বেশ সুরে ও নখরায় পাড়া জাগিয়ে গেয়ে যাচ্ছে কথাগুলো, আপনার মনে প্রশ্ন জাগিয়ে— গলাটা কার?

জানতে বেশি সময় লাগেনি আপনার যে নিশিকণ্ঠীর নাম শ্রাবন্তী মজুমদার। সময় লাগেনি কারণ তত দিনে আপনি গাঁথা পড়েছেন ‘বোরোলিনের সংসার’ অনুষ্ঠানে। যখন টিভি সিরিয়াল নেই, মোবাইল- ফেসবুক-টুইটার নেই, কফি খেতে যাবার নাম করে মল-এ ঢুকে সিনেমা দেখা নেই, তখন ‘বোরোলিনের সংসার’ই বাড়ির সব্বার বর্ধিত সংসার। কী আমুদে গপ্পের নাটক! আর শ্রাবন্তী তাঁর খিলখিলে হাসি, স্মার্ট পেশকারি আর অদৃশ্য উপস্থিতিতে যথার্থই সে আসরের মক্ষিরানি!

আরও একটি মনছোঁয়া অনুষ্ঠানের কথা মনে পড়ছে। ‘আরব্যরজনী’র গল্প। রেডিয়ো তরঙ্গ বেয়ে শেহরাজাদের কাহিনি শুনতে শুনতে রবিবারের এক দুপুরেই পাড়ি দেওয়া যেত বাগদাদ শহরে!

বাণিজ্যিক বেতার অনুষ্ঠানের বাইরে আকাশবাণী কলকাতার শুধু আর একটা অনুষ্ঠানের কথা ভাবা যায় যেখানে নিবেদকের কণ্ঠ পাল্লা দিত অনুষ্ঠানের বিলিতি গানের সঙ্গে। প্রোগ্রামের নাম ‘মিউজিকাল ব্যান্ড বক্স’, সাহেবসুবো কণ্ঠের প্রেজেন্টারের নাম স্রেফ বি.কে। অনেক পরে খোঁজ মিলেছিল যে বি.কে আদ্যক্ষরের পিছনে লুকিয়ে আছেন এক বিশিষ্ট বাঙালি ভদ্রলোক— বরুণকুমার হালদার।

আমিন সায়ানি

শ্রাবন্তী মজুমদার

বাংলা বাণিজ্যিক অনুষ্ঠানের বৈচিত্র দিন দিন বেড়ে সে সবও ছোট্ট ছোট্ট প্রতিষ্ঠান হয়েছিল। পরবর্তী কালে টিভির পর্দায় লিমকা-র ক্যুইজ কন্টেস্ট যে চল সৃষ্টি করল এবং যার চরম পরিণতি ঘটল অমিতাভ বচ্চন সঞ্চালিত কেবিসিএল-এ, তার একটা উষাঝলক আমরা পেয়েছিলাম ইস্কুলের ছেলেমেয়েদের নিয়ে করা বাংলা বেতারের বোর্নভিটা ক্যুইজ কন্টেস্টে। এমনও তরুণী মা দেখেছি তখন যিনি সময় করে সেই সব প্রশ্নোত্তর শিখে নিতেন ছেলেকে শেখাবেন বলে।

তবে বাংলা বাণিজ্যিক বেতার কেল্লা মেরেছিল রবিবারের এক সকালের অনুষ্ঠানে। ভাবুন, সময়টা সকাল আর দিনটা রবিবার, আর প্রোগ্রাম কীসের? না, ভূতের গল্পের! বিলিতি রহস্য ও ভূতের গল্প অবলম্বনে কী যে সব পঞ্চব্যঞ্জন! আজও আমাদের স্মৃতির ওষ্ঠ ছুঁয়ে আছে। ফটফটে দিন, অথচ আমরা ভয় পেতে ভালবাসছি।

নীহাররঞ্জন গুপ্তের ‘কালো ভ্রমর’ অবলম্বনে বেতারের ধারাবাহিক নাটকের প্রবর্তনও যদ্দুর মনে হয় এই ভাবেই। বেতারের নাটকের এমনিতেই মহা টান, সেই কালচারে বাণিজ্যিক উদ্যোগ যোগ হয়ে এক ধুন্ধুমার কাণ্ড বেঁধে গিয়েছিল। এই ভাবেই শুনেছি বাঙালির হৃদয় ছুঁয়ে ফেলেন ঊর্মিমালা বসু, সৌমিত্র বসু কিংবা গৌতম চক্রবর্তীর মতো ট্যালেন্টরা।

তবে যে একটা অনুষ্ঠানের স্মৃতি থেকে আজও নিষ্ক্রান্ত হইনি তা হল রবিবার-রবিবার সকালে একেক জন সেলিব্রিটিকে দিয়ে তাঁদের মনের মতো গান উপহার করা। হরলিক্সের এই অতীব পরিশীলিত অনুষ্ঠানে শুধু বেসিক বাংলা বা ছায়াছবির গানই আসত না, অতিথি তাঁর হৃদয়ের যুক্তি দিয়ে নিজের পছন্দের সীমা ছড়িয়ে দিতে পারতেন।

এ রকম একটা অনুষ্ঠানের কথা এখানে বলি। সেই সকালে অতিথি ছিলেন সদ্য ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’ ছবির নায়ক হয়ে সাড়া ফেলে দেওয়া ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়। ওই বয়েসে সত্যজিতের ছবির হিরো, তায় বিদ্বজ্জন হিসেবে প্রবল সৌরভ।

ওঁর গানের সিলেকশন দিয়ে তো বুঁদ করছিলেনই, কিন্তু যে গানে শেষ করলেন তাতে যেন ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’-র সিদ্ধার্থ রক্তমাংসে বেরিয়ে এল। বললেন, এবার আমি শেষ করব ‘ক্ষুধিত পাষাণ’ ছবিতে বাগেশ্রীতে গাওয়া উস্তাদ আমির খানের গাওয়া একটা গান দিয়ে— ‘কৈসে কাটে রজনী অব সজনি’।

বেতারের বাণিজ্যিক পরিষেবার এক সেরা কীর্তি দিয়েই শেষ করতে হয়। তা হল, সে সময়কার এক অতি জনপ্রিয় মিউজিক ট্যালেন্ট হান্ট মারফি রেডিয়ো কন্টেস্টে প্রথম হয়ে গানের জগৎ ও আমাদের জীবনে আবির্ভাব আরতি মুখোপাধ্যায়ের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE