মিলিটারি পোশাকে তিনটি দুলালী বালিকা। হাতে খেলার বন্দুক নিয়ে একজন শিল্পীকে কিডন্যাপ করে আর গন্তব্যস্থলে বই নিষিদ্ধ জানতে পেরে তিনি বলেন ‘একো, ফুকো আর লাকা ছাড়া সব কিছু ফাঁকা’। অশোকনগর নাট্যমুখের প্রযোজনা ‘নেমেসিস’-এর (গল্প: রবিশঙ্কর বল, নাট্যরূপ: সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়, পরিচালনা: অভি চক্রবর্তী) এমত সূচনা দেখে মনে হবে এ নাটক উচ্চমার্গী বিদ্বজ্জনদের নিয়ে প্রহসন। আসলে কমিউনিজমবিরোধী উচ্চমার্গের বৌদ্ধিক ব্যঙ্গনাটক। কমিউনিজমের তত্ত্ব ও ইতিহাস ছাড়াও লেনিনের ‘হাউ টু বি আ গুড কমিউনিস্ট’ ও কাফকার ‘দ্য ট্রায়াল’-এর সঙ্গে দর্শকের কিছু পরিচয় থাকা জরুরি। জানতে হবে কমিউনিজম ব্যক্তি-স্বাতন্ত্র্য বরদাস্ত করে না, মার্ক্স-এঞ্জেল-লেনিন ছাড়া কিছু পড়া নিষিদ্ধ। যে দর্শক কেবল পশ্চিমবঙ্গে কমিউনিস্ট শাসন দেখেছেন তাঁকে জানতে হবে কৃষকের জমিতে শিল্প করা সাম্যবাদ নয়। নতুন তথ্যও জানা যাবে। সাম্যবাদী ব্যবস্থায় প্রমীলা বাহিনী পুরুষ নেতাদের আদেশ পালন করে, এবং প্রাকৃত প্রয়োজনেও ব্যবহৃত হয়। স্ট্যালিন-সদৃশ এক উচ্চাসীন নেতা প্যান্টোমাইম ‘নারীসেবা’ নেন আর আপ্তবাক্য আওড়ান। যা দেখে বন্দি নায়ক বলেন, ‘মা...বাজি’!
কমিউনিস্টদের রংবাজিতে ব্যঙ্গ আছে কিন্তু রঙ্গ নেই। এমন পরিস্থিতি নেই যাতে ব্যঙ্গ-বিধ্বস্ত সাম্যবাদীদের দেখে দর্শকরা নিভাঁজ ঠোঁটেও হাসতে পারেন। আছে সুপ্রিম নেতার ভাঁড়ামি, তাতে রসিকতা নেই। নাটকে বিশেষ কিছু ঘটে না। বন্দি শিল্পী তার নাম ও ব্যক্তিত্ব দুই হারান। তাঁর উপর ভার পড়ে যেখানে কমিউনিজমের শেষ আশ্রয় সেই জাদুঘর গড়ে তোলার। সাম্যবাদের স্টিম রোলারে নিহত মানুষের করোটি দিয়ে সাজানো হয় মিউজিয়ম। নাটক যেমনই হোক প্রযোজনায় যত্নের অভাব নেই। আছে সার্থক প্রযোজনার উপযুক্ত উপকরণ দৃশ্যময় মঞ্চ, মঞ্চে চলচ্চিত্রের সুষ্ঠু প্রয়োগ, চমৎকার মাপেট (অদ্রীশ রায়), আবহ সঙ্গীত ও গান (রূপম ইসলাম)। পরিচালক আঠারো জন কুশীলবকে মঞ্চে ভিড় করতে দেননি, কেবল নাচের দৃশ্য ছাড়া। নাটক দুর্বল হওয়ায় চরিত্রগুলি কার্ডবোর্ডের মতোই। তা সত্ত্বেও অংশুপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের জোসেফ আর সঙ্গীতা চক্রবর্তীর ক্রিস্টিন উল্লেখযোগ্য অভিনয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy