Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

স্ট্রেস ও টেনশন থেকেই পুরুষের বন্ধ্যত্ব

একই কারণে বাড়ছে শারীরিক সম্পর্কের অক্ষমতাও। রুমি গঙ্গোপাধ্যায়কে বললেন ডা. গৌতম খাস্তগীর।একই কারণে বাড়ছে শারীরিক সম্পর্কের অক্ষমতাও। রুমি গঙ্গোপাধ্যায়কে বললেন ডা. গৌতম খাস্তগীর।

শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৪ ১৫:৫৩
Share: Save:

প্র: পুরুষের বন্ধ্যত্ব ইদানীং নাকি খুব বেড়ে যাচ্ছে?

উ: একদম ঠিক বলেছেন। এখনকার লাইফস্টাইল আর অত্যধিক স্ট্রেসের জন্যই এই সমস্যা।

প্র: লাইফস্টাইলের জন্য বন্ধ্যত্ব!

উ: রোজকার কাজের চাপ, স্ট্রেস, আর তার মোকাবিলায় ধূমপান শুক্রাণুর ক্ষতি করে পুরুষদের বন্ধ্যত্বের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়। খুব বেশি জাঙ্ক ফুড খেলেও একই সমস্যা। পাশাপাশি পুরুষের শারীরিক সম্পর্কের অক্ষমতা বাড়ছে।

প্র: অক্ষমতা কেন?

উ: যাঁদের এই ধরনের সমস্যা হয়, দেখা যায় তাঁদের অনেকেই দিনে ১৬ থেকে ১৮ ঘণ্টা কাজ করেন। বাড়িতেও অফিসের কাজ নিয়ে আসেন। ডেডলাইনের তাগিদায় তাঁদের মাথায় কাজ ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তার পর আর শারীরিক সম্পর্কের ইচ্ছে থাকে না। স্বামী-স্ত্রী’র সম্পর্কটা সুইচের মতো নয়, যে ইচ্ছে মতো জ্বালালাম আর নেভালাম।

প্র: পুরুষদের এই অক্ষমতা মেটাতে নানা বিজ্ঞাপন দেখা যায়। সত্যিই কি এগুলি কাজ দেয়?

উ: আমি এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ নই। তাই এটা সম্বন্ধে কিছু বলতে পারব না। এটুকুই বলতে পারি এগুলির ব্যবহার করার পরও অনেক মানুষ বন্ধ্যত্বের সমস্যা নিয়ে আমাদের কাছে আসেন।

প্র: পুরুষদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা করলেই বন্ধ্যত্ব মিটবে?

উ: চিকিৎসার পাশাপাশি লাইফস্টাইল পরিবর্তন করতে হবে। ওটা এ ক্ষেত্রে খুব জরুরি। তা হলে চিকিৎসার প্রয়োজনই থাকবে না।

প্র: কিন্তু সবাই যে স্ট্রেসে ভুগছেন তা-তো নয়।

উ: সেটা ঠিক। অনেকের কাজে তেমন স্ট্রেস হয়তো নেই। কিন্তু প্রচুর কাজ। অনেক সময় দেখা যায় স্বামী-স্ত্রী দুই জনে দুই রকম শিফট-এ কাজ করেন, ছুটির দিন ছাড়া তাঁদের দেখাই হয় না। বা চাকরির খাতিরে দুই জনে দুই জায়গায় থাকেন, তাঁদেরও এই ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে। অনেকের আবার কিছু সাইকোলজিকাল সমস্যা থাকে। তার থেকে অক্ষমতা তৈরি হয়। আসলে পুরুষের অক্ষমতার ৯৫% ক্ষেত্রে ব্যাপারটা মানসিক।

প্র: কী রকম?

উ: অনেকে স্বামী-স্ত্রী’র শারীরিক সম্পর্ককে সহজ ভাবে নিতে পারেন না। কারও বা বদ্ধমূল ধারণা এতে তাঁর স্ত্রী কষ্ট পাবেন। কেউ বা আগে থেকেই ধরে নেন, তিনি অক্ষম। এই নিয়ে হীনমন্যতায় ভোগেন। আর ব্যাপারটা স্ত্রীর কাছে ধরা পড়ে যাবে, এই ভয়ে আরও বেশি কাজ নিয়ে পালিয়ে পালিয়ে বেড়ান। এঁদের কাউন্সেলিং-এর দরকার হয়।

প্র: কিন্তু এই যে বললেন, স্ট্রেস বা রোজকার কাজের চাপ থেকে সমস্যা হতে পারে, সে ক্ষেত্রে কী করবে? কাজের চাপ আর ব্যস্ততা তো থাকবেই?

উ: সে ক্ষেত্রে আপনাকে কাজ আর ব্যক্তিগত জীবনের মধ্যে ব্যালেন্স করে চলতে জানতে হবে। বেছে নিতে হবে কোনটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

প্র: একটু খুলে বলুন

উ: একটা ঘটনা বলি। সরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে কাজ করতেন এক ডাক্তারবাবু। তাঁকে ১২ ঘন্টা কাজ করতে হত। আর প্রায়ই নাইট ডিউটি। জরুরি চিকিৎসা করতে হত বলে খুব স্ট্রেসড থাকতেন। সারাদিন কাজের পর বাড়ি ফিরে এসে ক্লান্ত থাকতেন। এ দিকে বয়স বেড়ে যাচ্ছিল বলেও চিন্তায় ছিলেন। স্ত্রী’র প্রেগন্যান্সি আসছিল না বলে চিকিৎসা করতে আসেন। তাঁকে বলা হল কাজ বদলাতে। সেটা করাতেই সমস্যা মিটল। আর কোনও চিকিৎসা লাগল না। ছয় মাসের মধ্যে স্ত্রী’র প্রেগন্যান্সি আসে!

প্র: কিন্তু চাইলেই যে সবাই কাজ বদলে ফেলতে পারবে, তা তো নয়। সে ক্ষেত্রে সমাধান হবে কী করে?

উ: যে ভাবেই হোক লাইফস্টাইল আপনাকে পরিবর্তন করতেই হবে। মাথায় রাখতে হবে পুরুষের শারীরিক অক্ষমতার সঙ্গে বন্ধ্যত্বের ব্যাপারটাও জড়িয়ে আছে।

প্র: পুরুষের বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা কী?

উ: বিভিন্ন সহযোগী চিকিৎসায় প্রেগন্যান্সি এনে দেওয়া সম্ভব। এমনকী একটি মাত্র শুক্রাণু থাকলে তা দিয়েও প্রেগন্যান্সি আসতে পারে আজকের আধুনিক চিকিৎসায়। ধরুন আপনি বহুতলে সিঁড়িতে উঠতে পারছেন না। সে ক্ষেত্রে লিফ্ট-এ উঠলেন। অথবা কোথাও তাড়াতাড়ি পৌঁছতে হবে বলে হেঁটে না গিয়ে গাড়িতে গেলেন। ব্যাপারটা সে রকমই।

প্র: বন্ধ্যত্বের মোকাবিলা তো করা গেল। কিন্তু পুরুষের অক্ষমতা?

উ: দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সহযোগী চিকিৎসায় বাচ্চা জন্মানোর পর অনেক পুরুষেরই সহবাসের অক্ষমতা চলে যায়। আলাদা করে অক্ষমতার জন্য কোনও চিকিৎসার দরকার হল না। এমনকী বাচ্চা দত্তক নিলেও দেখা গেছে অনেক পুরুষেরই সহবাসের অক্ষমতা চলে গেছে আপনা আপনি।

প্র: সত্যি! এ রকম হয়?

উ: হ্যা। এমনটা অনেক সময়ই দেখা যায়। প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৮ জনের। আসলে একটা বাচ্চা আসার পর ফ্যামিলি কমপ্লিট করতে হবে, এই চিন্তার বোঝাটা অনেকখানি চলে যায়। অক্ষমতার ব্যাপারটা যতটা না শারীরিক, তার থেকেও বেশি মানসিক।

প্র: শারীরিক কারণেও তো অক্ষমতা তৈরি হতে পারে?

উ: হ্যাঁ হয়। তবে তা খুব কম ক্ষেত্রে। হরমোনের সমস্যা থাকলে, ডায়বেটিসে ভুগলে, নার্ভের সমস্যা থাকলে বা ধরুন কোনও অ্যাক্সিডেন্ট, যেমন পড়ে গিয়ে কোমরের হাড় ভেঙে গেলে অক্ষমতা তৈরি হতে পারে।

প্র: এর চিকিৎসা কী?

উ: যে অসুখগুলোর কথা বললাম, সেগুলি থাকলে তার চিকিৎসা করা হয়। কিছু বিশেষ ধরনের অক্ষমতা ওষুধ দিয়েও সারিয়ে দেওয়া হয়। তবে রোজকার জীবনে কয়েকটি বিষয়ে খেয়াল রাখলে অক্ষমতা আর বন্ধ্যত্ব দুই-ই কমে।

প্র: কী রকম?

উ: কিছু ওষুধ খেলে বন্ধ্যত্ব তৈরি হতে পারে। তাই কখনওই ডাক্তারকে না জানিয়ে কোনও ওষুধ নিজে নিজেই খেয়ে নেবেন না। ওজন বেশি হলে সহবাসে অক্ষমতা তৈরি হতে পারে। তাছাড়া বেশি ওজনের জন্য শুক্রাণুও ত্রুটিযুক্ত হয়। তার থেকে গর্ভপাতের ঝুঁকি বাড়ে। খেলতে গিয়ে কুঁচকি বা জননাঙ্গে আঘাত লাগলেও সমস্যা হতে পারে। তাই এ রকম সমস্যা যদি হয়ে থাকে, অবশ্যই ডাক্তার দেখিয়ে নেবেন। মদ্যপান করলে সহবাসের অক্ষমতা তৈরি হতে পারে। সুতরাং সেটাও মাথায় রাখতে হবে। ধূমপান করলে স্পার্ম কাউন্ট কমে যেতে পারে। বাইরে উল্টোপাল্টা খাওয়ার অভ্যাসটাও কমিয়ে আনতে হবে। বরং শাকসব্জি আর ফল প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। পাশাপাশি পোশাকআশাকের ক্ষেত্রেও পরিবর্তন করা দরকার।

প্র: পোশাকআশাকে পরিবর্তন?

উ: টাইট জিন্স পরলে স্পার্ম কাউন্ট কমে যায়। তাই আঁটোসাঁটো ট্রাউজার বা অন্তর্বাস না পরে ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা কোলের ওপর ল্যাপটপ রেখে কাজ করলে বা একটানা অনেক ক্ষণ বাইক চালালেও একই ঘটনা ঘটে। যার থেকে বন্ধ্যত্বের সম্ভাবনা বাড়ে। এ সব ব্যাপারেও খেয়াল রাখতে হবে।

বন্ধ্যত্ব যেন না আসে

• স্থূলতা সহবাস করার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। তাই ওজনের দিকে খেয়াল রাখুন।

• ধূমপান স্পার্ম কাউন্ট কমায়। মদ্যপান বাড়ায় অক্ষমতা। তাই সমস্যা এড়াতে এই সব নেশা না করাই ভাল।

• যৌন সংক্রামক রোগ থেকেও বন্ধ্যত্ব আসতে পারে। সহবাসের সময় সুরক্ষার দিকে খেয়াল রাখবেন।

• বহুগামিতা থেকে বিরত থাকুন।

• ছোটবেলায় যৌনাঙ্গে আঘাত লাগলে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন।

• বেশ কিছু ওষুধ স্পার্ম কাউন্ট কমায়। তাই ডাক্তারকে না জানিয়ে নিজে নিজে ওষুধ খাওয়ার অভ্যাস ছাড়ুন।

• ভিটামিন-সি, ভিটামিন-ই আর অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে, এ রকম খাবার প্রচুর পরিমাণে খান।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৬৬৬৬০৬

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

health goutam khastogir entertainment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE