Advertisement
১১ মে ২০২৪
Presents

শপথ নিন আপনিও

আজই শপথ নেবে নতুন সরকার। কিন্তু আপনার কোষাগার? সঞ্চয় আর তহবিল বাড়াতে হলে গোড়ার বিষয়ে নজর দেওয়ার শপথ নিতে হবে আপনাকেও। মনে করাচ্ছে বিষয় আশয়। আজ প্রথম কিস্তি।আজই শপথ নেবে নতুন সরকার। কিন্তু আপনার কোষাগার? সঞ্চয় আর তহবিল বাড়াতে হলে গোড়ার বিষয়ে নজর দেওয়ার শপথ নিতে হবে আপনাকেও।

শেষ আপডেট: ৩০ মে ২০১৯ ০৪:৪৪
Share: Save:

লোকসভা ভোট শেষ। এখন তাই প্রচার থেকে ছুটি। কিন্তু আপনার ছুটি নেই। ছুটি নেই সঞ্চয়ের সহজ পাঠ পড়া থেকে।

শেয়ার থেকে মিউচুয়াল ফান্ড, ব্যাঙ্ক থেকে বিমা— সমস্ত বিষয়ে সব খুঁটিনাটি হয়তো জানা সম্ভব নয়। কিন্তু ঠিক জায়গায় টাকা রেখে ভাল রিটার্নের মুখ দেখার প্রাথমিক শর্তই হল তার গোড়ার বিষয়গুলি ভাল করে জানা। যেমন, কোনও শেয়ারের দামের রোজকার ওঠাপড়া আপনার ঠোঁটস্থ না থাকতে পারে, কিন্তু সেই সংস্থার আর্থিক অবস্থা কেমন, তার সম্পর্কে মোদ্দা ধারণা কিন্তু থাকতেই হবে। ব্যাঙ্কিং অ্যাপের সব খুঁটিনাটি আপনি জানতে না-ই পারেন। কিন্তু চেক লেখার নিয়ম না জানলে চলবে কী করে? তাই আজ আমরা ঝালিয়ে নেব সেই সব বিষয়গুলি, যা কথার শেষে ফুটনোটের মতো থাকে, কিন্তু তার দিকে ততটা নজর দিই না। অথচ শুধুমাত্র সেগুলি মাথায় রাখলেই অনেক সময়ে বড় বিপদ বা ঝামেলা এড়ানো যায়। আর সে জন্যই লগ্নির জগতে কোন জিনিস মাথায় রাখতেই হবে, চলুন তা জেনে রাখি।

শেয়ার

শেয়ার বাজার মানেই কিছুটা ঝুঁকি, অনিশ্চয়তা। ফলে বাড়তি সতর্কতা এখানে জরুরি। এ জন্য মনে রাখুন—

কী করবেন

• সেবি দ্বারা স্বীকৃত ব্রোকিং সংস্থার কাছেই অ্যাকাউন্ট খুলতে হবে। যাচাই করতে হবে তার বিশ্বাসযোগ্যতা। এ জন্য সেবির সাইটে নথিভুক্ত সংস্থার নাম দেওয়া থাকে, তা দেখে নিন।

• অ্যাকাউন্ট খোলার আগে ভাল করে পড়তে হবে সমস্ত নিয়ম।

• লেনদেনের নথিতে সন্দেহ হলে সঙ্গে সঙ্গে সংস্থাকে প্রশ্ন করুন।

• নো ইয়োর কাস্টমার বা ক্লায়েন্ট ফর্ম ঠিক মতো ভরতে হবে। চাইলে সংস্থার কারও সাহায্য নিতে পারেন। কিন্তু নিশ্চিত করতে হবে যাতে তিনি ঠিকমতো সব তথ্য দেন।

• লেনদেনের চুক্তিপত্র ঠিক আছে কি না, যাচাই করুন।

• যে সংস্থার শেয়ার বাছাই করছেন, তার পরিচালনা, আর্থিক অবস্থা (ঋণ, সম্পদ ইত্যাদি) যাচাই করুন। দেখে নিন প্রোমোটার বা ডিরেক্টরদের বিরুদ্ধে মামলা চলছে কি না। জানতে হবে বিভিন্ন রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বিষয়গুলি সম্পর্কেও।

• দরকার হলে শেয়ার কত দ্রুত ভাঙানো যাবে এবং কত দিনের মধ্যে হাতে টাকা আসবে, তা দেখে নিন।

• শেয়ার কেনাবেচার সময়ে ব্রোকার/সাব-ব্রোকারকে স্পষ্ট নির্দেশ দিন। তিনি আপনার কথা বুঝতে পেরেছেন কি না, ভাল করে জেনে নিন। মনে রাখবেন, যত বার শেয়ার কেনাবেচা করবেন, তার জন্য সংস্থা ব্রোকারেজ পাবে। অথচ সামান্য ভুলে আপনার বিপুল ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।

• ঝুঁকির কথা মাথায় রাখুন।

• বেশি লাভের আশায় শেয়ার ধরে রাখাই সব সময়ে বুদ্ধিমানের কাজ নয়। বরং অতি লোভ না করে ঠিক সময়ে শেয়ার বিক্রি করতে হবে।

• কেনার পরে সময়ে টাকা দিন।

• ডেলিভারি ইনস্ট্রাকশন স্লিপ যত্ন করে রাখতে হবে।

• লেনদেনে সন্দেহ বা অভিযোগ থাকলে কর্তৃপক্ষের কাছে যান।

কী করবেন না

• সাধ্যের বাইরে গিয়ে শেয়ার কিনবেন না। কোনও শেয়ারের দাম বাড়ছে দেখলেই লগ্নি করা ঠিক নয়।

• চড়া রিটার্নের প্রতিশ্রুতির ফাঁদে পা দেবেন না।

• অনেক সময়ে নথিভুক্ত সংস্থা ছাড়াও শেয়ার লেনদেন হয়। সেগুলি বেশি ঝুঁকির। ভাল হয় সেই ধরনের বাজার বহির্ভূত লেনদেন না করলে।

• বন্ধু-বান্ধবের বা টিভি-এসএমএসে দেওয়া অযাচিত পরামর্শ বা গুজবের উপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেবেন না।

• প্রচার বা বিজ্ঞাপন দেখে প্রভাবিত হয়ে লগ্নি করলে ক্ষতি হতে পারে।

• ডি-ম্যাট অ্যাকাউন্টের ফাঁকা ডেলিভারি ইনস্ট্রাকশন স্লিপে সই করে কাউকে দেবেন না।

মিউচুয়াল ফান্ড

এত দিনে আমরা জেনে গিয়েছি যে, মূল্যবৃদ্ধিকে ছাপিয়ে রিটার্ন বাড়ানোর জন্য শেয়ারের মতোই লগ্নির অন্যতম জায়গা হল ফান্ড। কিন্তু এখানেও কিছু জিনিস মনে রাখা জরুরি—

• একলপ্তে বড় টাকা ঢালতে সচ্ছন্দ না-হলে বাছতে পারেন সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি)।

• যে ফান্ড বাছছেন, তার ফান্ড ম্যানেজারের অতীত পারফরম্যান্স কেমন তা দেখুন।

• ফান্ডের তহবিল কোন কোন ক্ষেত্রে কী ভাবে বণ্টন করা হয়েছে। তা খেয়াল রাখতে হবে।

• তহবিল বণ্টনের উপরে ভিত্তি করে পাল্টে যায় ফান্ডের নাম ও চরিত্র। যেমন, ইকুইটি ফান্ড বেশি টাকা খাটায় শেয়ারে, ডেট ফান্ড ঋণপত্রে। তাই কোনটার কী বৈশিষ্ট্য জানা জরুরি।

• ফান্ড পরিচালনার খরচ থাকে। তেমনই নির্দিষ্ট সময়ে আগে ভাঙিয়ে নিলেও একটা অংশ কেটে নেওয়া হয়। ফলে খেয়াল রাখতে তা-ও।

• কোনও কোনও ফান্ডে করছাড়ের সুবিধা থাকে। আপনারটা সেই ধরনের ফান্ড কি না, জেনে নিতে হবে।

• শেয়ারের মতো ফান্ডের ক্ষেত্রেও অন্যের কথা শুনে না-বাছাই উচিত।

• নির্দিষ্ট সময় অন্তর বা বাজারে গুরুত্বপূর্ণ কোনও বদল হলে ফান্ডের অগ্রগতি যাচাই করতে হবে। কিন্তু তার মানেই ফান্ড বদলে ফেলা নয়। কারণ, অনেক সময়ে কম মেয়াদে কোনও ফান্ড চড়া রিটার্ন না দিলেও, দীর্ঘ মেয়াদে তা পুষিয়ে নেয়।

• ভাল রিটার্ন পেতে বেশি দিন লগ্নি ধরে রাখা জরুরি।

• লগ্নি করতে হবে ঝুঁকির কথা ভেবে।

• ফান্ডের নেট অ্যাসেট ভ্যালু (ন্যাভ) গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু শুধু সেটাই বাছাইয়ের মাপকাঠি নয়।

ব্যাঙ্ক

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে সেভিংস অ্যাকাউন্টের ব্যবহার মনে হয় সবচেয়ে বেশি। ব্যাঙ্কে না গিয়েও এটিএমে টাকা তোলা থেকে শুরু করে কাউকে চেক দেওয়া, এই সব ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয় এই অ্যাকাউন্ট। এ ক্ষেত্রেও কিছু বিষয় মেনে চলতে হবে। চলুন দেখে নিই সেগুলি কী কী—

কী দেখবেন

• ব্যাঙ্কের স্বাস্থ্য, ভাবমূর্তি, শেষ দু’এক বছরে তার সম্পর্কে খবর জানতে হবে। মনে হতেই পারে, সেভিংস অ্যাকাউন্ট খুলতে এ সব কেন? কিন্তু ধরুন ব্যাঙ্ক হঠাৎ বন্ধ হয়ে গেল, তখন আপনার টাকার কী হবে?

• ব্যাঙ্কের শাখার দূরত্ব কতটা। এটিএম কাছে কি না, দেখে নিতে হবে।

• এখন অনেকেই কেনাকাটা সারেন নেটে। ফলে নেট ব্যাঙ্কিং পরিষেবা ভাল না হলে মুশকিল। মোবাইলে লেনদেনও এখন অনেকটাই প্রচলিত, দেখতে হবে অ্যাপ ঠিকঠাক কি না।

• ব্যাঙ্কের শাখায় পরিষেবা কেমন, বাড়িতে বয়স্ক ব্যক্তি থাকলে তাঁদের জন্য আলাদা পরিষেবা মেলে কি?

• সেভিংস অ্যাকাউন্ট এবং আমানতে সুদ কেমন, প্রথমেই জেনে নিতে হবে।

• অনেকের আত্মীয় বিদেশে থাকেন। সেখানে টাকা পাঠানো বা বিদেশ থেকে জমার সুবিধা কেমন।

• বাড়ির কাছের শাখায় লকারের সুবিধা আছে তো?

• ঋণের বন্দোবস্ত কেমন।

কার্ড-নেটে সাবধান

• কার্ড পেলে সবার আগে তার পিছনে সই করতে হবে।

• কার্ড কারও হাতে দিলে, সতর্ক থাকতে হবে।

• কার্ডের তথ্য অপরিচিত ব্যক্তিকে দেওয়া ঠিক নয়।

• অচেনা অনির্ভরযোগ্য সাইটে কার্ড না ব্যবহার করাই ভাল।

• যে কোনও কেনাকাটার পরেই খুঁটিয়ে দেখতে হবে বিলের স্টেটমেন্ট।

• ক্রেডিট কার্ডের টাকা সুদমুক্ত মেয়াদের মধ্যেই মেটান। না-হলে অন্তত জমা দিতে হবে ন্যূনতম অঙ্ক।

• ডেবিট, ক্রেডিট কার্ডে কখন কত টাকা কাটা হচ্ছে, তা বুঝতে মোবাইলে অ্যালার্টের সুবিধা নিন।

• সামর্থ্যের বাইরে গিয়ে কার্ডে কেনাকাটা না-করাই ভাল।

• ঠেকায় না পড়লে এটিএম থেকে ক্রেডিট কার্ডে টাকা না তুললেই ভাল।

• কার্ড হারালে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাঙ্ককে জানাতে হবে।

সজাগ থাকুন চেকেও

আমরা কার্ডকে যতটা গুরুত্ব দিই, চেক ব্যবহারে ততটা সতর্ক থাকি না। কিন্তু সামান্য ভুলে তা নিয়ে বড় সমস্যা হতে পারে। তাই খেয়াল রাখতে হবে—

• চেকবইয়ের যত্ন নিতে হবে। তা ছিঁড়ে বা ভিজে গেলে অথবা চুরি গেলে ঝামেলা বাড়বে।

• সেটি হারালে ব্যাঙ্কে জানান।

• চেক কাটার সময়ে অ্যাকাউন্ট পেয়ি লিখে দিলে ভাল।

• অ্যাকাউন্ট পেয়ি না-হলে, যিনি টাকা তুলবেন অন্তত তাঁর নাম লিখে দিতে হবে। নামের বানান অবশ্যই দেখে নিতে হবে।

• চেক ও ব্যাঙ্কের সই যেন এক হয়।

• পোস্ট ডেটেড চেক দিলে খেয়াল রাখতে হবে যেন সেই তারিখে অ্যাকাউন্টে টাকা থাকে।

• ফাঁকা (ব্ল্যাঙ্ক) চেকে কখনওই সই করা ঠিক নয়।

• চেকে কথাতেও টাকার অঙ্ক লিখতে হয়। সে ক্ষেত্রে শেষে ‘ওনলি’ শব্দটি লিখতে হবে। এতে সেই অঙ্ক কেউ বদলাতে পারবেন না।

• চেক বাতিল করতে হলে তাতে স্পষ্ট ও বড় করে (CA•CEL) শব্দটি লিখতে হবে।

• চেকে এক বারের বেশি লেখা হলে তা বাতিল হয়ে যায়। তাই ভুল করে থাকলে পরের চেক কাটাই ভাল।

• চেকবইয়ে কত টাকার কোন চেক কাকে দিচ্ছেন, তা লিখে রাখুন।

নালিশ জানাতে

ব্যাঙ্ক পরিষেবা নিয়ে হয়রানি হলে অভিযোগ জানানো যায়। এ জন্য—

• লিখিতভাবে অভিযোগ জানাতে হবে ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা দফতরে।

• সেখানে সমস্যার কোনও সুরাহা না হলে রিজার্ভ ব্যঙ্কের কাছে যেতে হবে।

• তাদের সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট না হলে নালিশ জানানো যায় মুম্বইয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের আপিল কর্তৃপক্ষের কাছে।

• তার সিদ্ধান্তেও খুশি না হলে দ্বারস্থ হওয়া যায় ব্যাঙ্কিং ওম্বুডসমানের।

• কোথাও প্রতিকার না-পেলে শেষে আদালতে যেতে পারেন।

• সবার আগে ব্যাঙ্কের গ্রাহক পরিষেবা বিভাগে লিখিত ভাবে নালিশ জানাতেই হবে। না হলে কিন্তু রিজার্ভ ব্যাঙ্ক বা ওম্বুডসমান, কেউই অভিযোগ গ্রহণ করবে না।

এর বাইরে অনেক কথা আছে, যেগুলি এখানে লেখা সম্ভব হল না। তবে যে কোনও বিষয়ে যত জানবেন, ততই আপনার সুবিধা। কিন্তু অন্তত এইটুকু আপনাকে জানতেই হবে।

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Economy Investment Share Market
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE