• আমি একটি এসআইপি-তে লগ্নি করেছি। ইউটিআই-ব্যাঙ্কিং সেক্টর ফান্ড। মাসে দিই ৭০০ টাকা করে। ফান্ডটি কেমন? দীর্ঘ মেয়াদে ভাল রিটার্ন পাব কি? আমার সন্তানের পড়াশোনা চালানোর জন্যই এই লগ্নি। এটা কি চালিয়ে যাব? না কি বন্ধ করে দেব? অন্য কোনও এসআইপি-তে সরিয়ে নেব?
আর মাইতি
উত্তর: কোনও নির্দিষ্ট সংস্থার ফান্ড সম্পর্কে এখানে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। আমি শুধু সামগ্রিক বিচারে কোন ধরনের ফান্ড কেমন, কোনটা কখন ভাল রিটার্ন দিতে পারে, কোনটা নয় ইত্যাদির একটা ধারণা দিতে পারি, যাতে সেই বিষয়গুলি মাথায় রেখে আপনার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।
• সেক্টর ফান্ডের তহবিল দিয়ে শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সেক্টর বা শিল্পের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার কেনা হয়। কাজেই তহবিল বাড়ানোর জন্য সেখানে যে পরিসর পাওয়া যায়, সেটা তুলনায় অনেকটাই ছোট। অর্থাৎ ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডে যেমন তহবিল বিভিন্ন ধরনের শিল্পের শেয়ারে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা যায়, যে কোনও সেক্টর ফান্ডেই সেই সুযোগ কম।
• এই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় ডাইভার্সিফায়েড ফান্ডের তুলনায় সেক্টর ফান্ডে ঝুঁকিও বেশি। কারণ একটি শিল্পেরই বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারে সবটা তহবিল লাগানো থাকে বলে, কোনও কারণে সংশ্লিষ্ট শিল্পে কোনও সমস্যা দেখা দিলে তার প্রভাব পড়তে পারে গোটা তহবিলে। আর সেই দিক থেকেই বলা যায়, এই মুহূর্তে ব্যাঙ্কিং সেক্টর ফান্ডে ঝুঁকি কিছুটা বেশি। কারণ সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন ব্যাঙ্ক নানা ধরনের সমস্যার মধ্যে দিয়ে চলেছে। যেগুলির খুব তাড়াতাড়ি মিটে যাওয়ার সম্ভাবনাও কম।
• তাই এই পরিস্থিতিতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রাখতে হবে। স্বল্প মেয়াদে ব্যাঙ্কিং সেক্টর ফান্ডের বিপুল বেড়ে ওঠার সম্ভাবনা কম ঠিকই, তবে মাঝারি থেকে দীর্ঘ মেয়াদে কিন্তু তা ভাল রিটার্ন দিতে পারে। কারণ, ব্যাঙ্কিং ও আর্থিক পরিষেবা ক্ষেত্রে সংস্কারের কাজকর্ম আগামী দিনে গতি পেলেই পাশা উল্টে যেতে পারে। তখন দিন ফিরবে ব্যাঙ্কিং শিল্পের। এবং তখন হয়তো চোখে পড়ার মতো বাড়বে ওই শিল্পের বিভিন্ন সংস্থার শেয়ার দর।
• সুতরাং সব শেষে এটাই বলা যায় যে, স্বল্প মেয়াদে ব্যাঙ্কিং সেক্টর ফান্ড বড় রিটার্ন এনে দেবে, এই প্রত্যাশা না-করাই ভাল। তবে দীর্ঘ মেয়াদে ধৈর্য ধরে লগ্নি চালিয়ে যেতে পারলে, লক্ষ্য পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা। আর মনে রাখবেন, যে কোনও এসআইপি-র ক্ষেত্রেই যে উদ্দেশ্যে লগ্নি করা হয়েছে, তা পূরণ হওয়ার পরই তার থেকে বেরিয়ে আসা উচিত। স্বল্প মেয়াদে এসআইপি-র থেকে ভাল রিটার্ন এমনিতেও পাওয়ার সুযোগ কম। যদি মাসে মাসে এসআইপি-র কিস্তি দিতে কোনও অসুবিধা না-থাকে, তা হলে ব্যাঙ্কিং শিল্পের অবস্থা ভাল হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারেন আপনি। আর তাতে আপনার লোকসান হবে বলে আমার এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে না।
• আমার বয়স ২৫ বছর। বেতন মাসে ৩০,০০০ টাকা। বাড়িতে মা-বাবা আছেন। তাঁদের খরচ দিতে হয়। কিছু দিন পর বিয়ে করারও ইচ্ছে আছে। এই অবস্থায় আমি মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি করতে চাই। কী করব? ঝুঁকি বেশি নিতে পারব না। এলআইসি, আমার এবং পরিবারের মেডিক্লেম, পিপিএফ ইত্যাদি করেছি।
মিউচুয়াল ফান্ডের প্রাথমিক বিষয়গুলি জানার জন্য কোনও বই পাওয়া যায় কি? থাকলে তার নাম ও লেখকের নামও জানাবেন।
সুদীপ সাহা
উত্তর: আপনার বয়স কম। আমি বলব ভাল কোনও ফান্ডে এসআইপি (সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান) শুরু করার এটাই সঠিক সময়। এসআইপি করলে সাধ্যমতো অল্প অল্প করে টাকা জমা করতে পারবেন। এককালীন বড় অঙ্ক লগ্নি করতে হবে না। আপনি অনায়াসে একটা দীর্ঘ মেয়াদি ইক্যুইটি ফান্ডে লগ্নি করার কথা ভাবতে পারেন। শেয়ার নির্ভর ফান্ডে ঝুঁকি তুলনায় বেশি। কারণ শেয়ার বাজারে ওঠা-পড়া চলতেই থাকে। কিন্তু অনেক লম্বা সময় ধরে লগ্নি করে গেলে সব ঝুঁকি এড়িয়ে রিটার্নের পরিমাণ অন্য অনেক ফান্ডের থেকে অনেকটাই বেশি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আর আপনার বয়স অল্প বলে লম্বা সময় ধরে একটু একটু করে লগ্নি চালিয়ে যাওয়া আপনার পক্ষে সুবিধাজনক।
চাইলে অবশ্য মাঝারি বা দীর্ঘ মেয়াদের ডেট ফান্ড বা ঋণপত্র ভিত্তিক ফান্ডে লগ্নির কথাও ভাবতে পারেন। এই ফান্ডগুলি থেকে আপনার একটি নির্দিষ্ট আয়ের ব্যবস্থা হতে পারে।
আর সব থেকে ভাল হয় ডেট এবং ইক্যুইটি মিলিয়ে মিশিয়ে লগ্নি করতে পারলে। এই ধরনের মিশ্র ফান্ডও (হাইব্রিড ফান্ড) পাওয়া যায় বাজারে। খোঁজ নিতে পারেন।
তবে যে ধরনের মিউচুয়াল ফান্ডেই লগ্নি করুন বা যে পদ্ধতিকেই বেছে নিন, ফান্ডটি খুব দেখেশুনে সতর্ক হয়ে বাছুন। সে ক্ষেত্রে ওই ফান্ড পরিচালনা করবে যে সংস্থা, সেটির সম্পর্কে খোঁজ নিতে পারেন। কারা আছে ওই সংস্থায়। এর আগে তারা কী কী ফান্ড এনেছে। সেগুলি কী রকম রিটার্ন দিয়েছে ইত্যাদি। এ ছাড়া, যে ফান্ডটি বাছলেন, সেটির অতীতে পারফর্ম্যান্স খতিয়ে দেখতে পারেন। যদিও অতীতের পুনরাবৃত্তি না-ও হতে পারে। তবু তার থেকে একটা ধারণা অন্তত পাবেন।
আপনার পরের অংশের উত্তরটা হল, ফান্ড নিয়ে বহু বই রয়েছে। নেটেও পড়তে পারেন। সেবির ওয়েবসাইটে (www.sebi.gov.in) গিয়ে দেখুন। মিউচুয়াল ফান্ডগুলির সংগঠন অ্যামফির (www.amfiindia.com) ওয়েবসাইটও দেখতে পারেন।
(পরামর্শদাতা: নীলাঞ্জন দে)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy