Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Presents

কুবের উবাচ

সাধারণ ভাবে আমরা স্নাতকস্তর পাশ করার পরে চাকরির খোঁজ করি। কিন্তু সেখানেই ব্যতিক্রম মনোজিত্‌। স্নাতক হওয়ার পরে গ্রামে নিজেদের জমিতে কৃষিকাজ শুরু করেছেন তিনি। সেখানে বছরে দু’বার ধান চাষ করেন।

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৪ ০২:৩২
Share: Save:

মনোজিত্‌ (৩৩) • স্ত্রী (২৯) • ছেলে (১.৫) • বাবা (৬৪) • মা (৫৫)

উপার্জন কৃষিতে • স্ত্রী সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলে সহযোগী শিক্ষক • পরিবারের সঙ্গে থাকেন গ্রামের বাড়িতে
• সন্তানের শিক্ষার জন্য সঞ্চয়ে আগ্রহী • চান, ৫৫ বছরের পর সুরক্ষিত ও সচ্ছল ভবিষ্যত্‌
• ইচ্ছা, গাড়ি কেনা • লক্ষ্য, শহরে নিজের বাড়ি তৈরি • স্বাস্থ্যবিমা সম্পর্কে জানতে চান

শৈবাল বিশ্বাস

সাধারণ ভাবে আমরা স্নাতকস্তর পাশ করার পরে চাকরির খোঁজ করি। কিন্তু সেখানেই ব্যতিক্রম মনোজিত্‌। স্নাতক হওয়ার পরে গ্রামে নিজেদের জমিতে কৃষিকাজ শুরু করেছেন তিনি। সেখানে বছরে দু’বার ধান চাষ করেন। তা বিক্রি করেই মনোজিতের যাবতীয় আয় হয়। শুধু তা-ই নয়, প্রোফাইল দেখে বোঝা যায় চাষের জন্য আলাদা করে সঞ্চয় ও ঋণের ব্যাপারেও তিনি যথেষ্ট পরিকল্পনা করে এগোন। ঠিক সে ভাবেই ভবিষ্যতের সম্পদ তৈরিতেও তিনি আগ্রহী।

এর আগে অন্য একটি প্রোফাইল প্রসঙ্গে চাষের কাজের অনিশ্চয়তা নিয়ে আলোচনা করেছিলাম। ফসলের উত্‌পাদন বাড়ানোর জন্য বৈজ্ঞানিক দিক থেকে অনেক কিছু করা সম্ভব হলেও, আমাদের দেশে কৃষিকাজ অনেকটাই প্রকৃতির উপর নির্ভরশীল। যে-কারণে এই অনিশ্চয়তা কৃষিজীবীদের নিয়মিত লগ্নি চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে বাধার সৃষ্টি করে, সেটি মনোজিতের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। যদিও তিনি যে ইতিমধ্যেই এই বিষয়ে সতর্ক, তা তাঁর প্রোফাইল দেখলেই বোঝা যায়। বিভিন্ন প্রকল্পে তিনি লগ্নি ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরুও করেছেন। এমনকী বহু শহুরে মানুষের তুলনায় তাঁর লগ্নির জ্ঞান বেশি। আমাদের শুধু দেখতে হবে, তাঁর সঞ্চয় আগামী দিনে সমস্ত স্বপ্নপূরণে সাহায্য করবে কি না। আসুন চোখ রাখি মনোজিতের প্রোফাইলে।

সন্তানের শিক্ষা

মনোজিতের ছেলের বয়স দেড় বছর। ফলে উচ্চশিক্ষার আগে টাকা জমাতে আরও ১৬.৫ বছর সময় পাচ্ছেন তিনি। আমার মতে, ১৬ বছরের জন্য সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যানে লগ্নি শুরু করুন। এখানে মাসে ৩,০০০ টাকা করে রাখুন। ১৫% রিটার্ন ধরলে এই খাতে জমবে প্রায় ২৩.৯৬ লক্ষ। ছেলের উচ্চশিক্ষার কাজে তো এটা লাগবেই, তার বাইরে যা থাকবে অবসরের সঞ্চয়ে কাজে লাগাতে পারবেন।

অবসরের জন্য সঞ্চয়

মনোজিত্‌ সঞ্চয় সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানিয়েছেন। এ বার দেখব এই সঞ্চয় চালিয়ে গেলে ৫৫ বছর বয়সে (২০৩৬ সাল) তাঁর কত টাকা জমবে। এ ক্ষেত্রে ধরে নেব ২০৩৬-এর আগে যে- প্রকল্পেরই মেয়াদ শেষ হোক না কেন, তা ফের ৮% সুদের কোনও সুরক্ষিত প্রকল্পে রাখা হচ্ছে

অর্থাত্‌ তাঁর মোট সঞ্চয় হবে প্রায় ১.০৯ কোটি টাকা। এ বার দেখতে হবে এই টাকা তাঁর অবসর জীবনের পক্ষে যথেষ্ট কি না।

মনোজিত্‌ জানিয়েছেন, মাসে তাঁর বর্তমান খরচ ২৩ হাজার টাকা। হিসাবের সুবিধার জন্য ধরে নিচ্ছি তা ২৫ হাজার টাকা। ২২ বছর পরে সেই খরচ দাঁড়াবে ১,১০,৭৬০ টাকা (৭% মূল্যবৃদ্ধি ধরে)।

২০৩৬ সালে তাঁর যে-সম্পদ জমবে, ৮% সুদের কোনও প্রকল্পে সেই টাকা রেখে প্রতি মাসে তিনি পাবেন ৭২,৬৮৯ টাকা অর্থাত্‌ তাঁর ঘাটতি হচ্ছে ১,১০,৭৬০-৭২,৬৮৯ = ৩৮,০৭১ টাকা। এই ঘাটতি পূরণ করতে হলে মনোজিত্‌কে সম্পদ গড়ে তুলতে হবে আরও অন্তত ৫৭,১১,০০০ টাকার।

এ জন্য আয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এসআইপি এবং রেকারিং-এ আরও সঞ্চয়ের দিকে মন দিতে হবে তাঁকে।

শহরে বাড়ি তৈরি

জেলা শহরে তাঁর একটি জমি রয়েছে। সেখানে বাড়ি তৈরি করতে চাইলে লাগবে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা। অবসরের জন্য সঞ্চয়ের রাস্তায় কিছুটা এগোনোর পরে ধীরে ধীরে বাড়ি তৈরির কাজে হাত দেওয়ার কথা ভাবতে হবে তাঁকে। সে জন্য এখন একটি সেভিংস অ্যাকাউন্টে অল্প করে হলেও টাকা জমাতে থাকুন। সময় বুঝে সেই টাকায় স্থায়ী আমানত বা এনএসসি করে রাখুন। এ ভাবে ডাউনপেমেন্টের টাকা সঞ্চয় করা যাবে। বাকিটা ঋণ নিতে হবে।

গাড়ি কেনা

আপাতত তাঁর হাতে গাড়ি কেনার জন্য ডাউনপেমেন্ট বা মাসিক কিস্তি দেওয়ার টাকা নেই। ফলে এখন তা কেনার কথা না-ভাবাই ভাল।

স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করা

• মনোজিতের পরিবারের কারও স্বাস্থ্যবিমা নেই। যে-কারণে এখনই তাঁর নিজের এবং স্ত্রী-ছেলের জন্য কমপক্ষে ৩ লক্ষ টাকার একটি ফ্যামিলি ফ্লোটার বিমা করার পরামর্শ দেব আমি।

• বাবা-মার ক্ষেত্রে বিমার অঙ্ক অনেকটাই বেশি পড়বে। তাই তাঁদের জন্য স্থায়ী আমানতে বেশ কিছু টাকা আলাদা করে রাখুন। সে জন্য তাঁর বাবার যে-টাকা স্থায়ী আমানত আছে, তা থেকে অন্তত ১ লক্ষ টাকা শুধু চিকিত্‌সার জন্য আলাদা করে রাখুন। ভবিষ্যতে অঙ্কটা আরও বাড়ালে ভাল।

মনোজিতের টার্ম পলিসি নেই। আমার মতে, আয় বাড়লে ভাল অঙ্কের টার্ম পলিসি করাতে হবে। আগামী দিনে তাঁর পারিবারিক সম্পত্তিরও বেশ কিছু অংশ তিনি পাবেন। ঠিক মতো সঞ্চয় করতে পারলে তাঁর ও পরিবারের ভবিষ্যত্‌ সুখে কাটবে, সে বিষয়ে আমার কোনও সন্দেহ নেই।

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)

মনোজিতের মতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পেতে পারেন আপনিও।
নিজের ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানিয়ে চিঠি লিখুন

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১.

ই-মেল: bishoy@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kuber ubacho saibal biswas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE