Advertisement
১৮ মে ২০২৪
Presents

কুবের উবাচ

শৈবাল বিশ্বাসদেবাশিসের প্রোফাইল পড়ে আমি কিছুটা হলেও অসুবিধায় পড়েছি। তিনি নিজের চিঠিতে তিনটি আলাদা বেতনের কথা লিখেছেন। এখন তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরি করেন। সেখানে তাঁর নিট বেতন ২৬,১০০ টাকা।

শেষ আপডেট: ২৮ অগস্ট ২০১৪ ০১:২৫
Share: Save:

দেবাশিস (২৬) • মা (৬০) • বাবা (৬৬)

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের কর্মী • জেলা-শহরে থাকেন বাবা-মায়ের সঙ্গে
• আগামী মাসেই নতুন কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে যোগ দেবেন • ২০১৭ সালে বিয়ে, সে জন্য সঞ্চয়ে আগ্রহী
• চান বাইক এবং পরবর্তী কালে গাড়ি কিনতে • বছরে এক বার পরিবারের সঙ্গে বেড়াতে যেতে ইচ্ছুক

দেবাশিসের প্রোফাইল পড়ে আমি কিছুটা হলেও অসুবিধায় পড়েছি। তিনি নিজের চিঠিতে তিনটি আলাদা বেতনের কথা লিখেছেন। এখন তিনি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরি করেন। সেখানে তাঁর নিট বেতন ২৬,১০০ টাকা। সেপ্টেম্বরেই দেবাশিস নতুন কেন্দ্রীয় সরকারি চাকরিতে যোগ দেবেন। তখন তাঁর বেতন হবে ২৮ হাজার টাকা। আবার তাঁর দাবি, নতুন বেতন-কমিশন চালু হলে সেই বেতনই দাঁড়াবে ৫০ হাজার টাকায়। এখানেই আমার সমস্যা। তাঁর প্রোফাইল বিশ্লেষণ করতে গিয়ে কোন বেতন ধরে হিসাব করব, সে নিয়েই চিন্তায় পড়েছি আমি।

আমরা জানি সরকারি নিয়ম অনুসারেই বেতন-কমিশন চালু হবে এবং তা সময়সাপেক্ষ। আবার সেই বেতন আসলে কত দাঁড়াবে, তা-ও এখন থেকে জানা পুরোপুরি সম্ভব নয়। ফলে স্বল্পকালীন মেয়াদে তাঁর যে-সমস্ত লক্ষ্য রয়েছে, সেগুলির জন্য ৫০ হাজার ধরে হিসাব করে লাভ নেই। যে-কারণে এগুলির জন্য আমি তাঁর আসন্ন বেতন ২৮ হাজার টাকা ধরেই হিসাব করলাম। আবার দীর্ঘকালীন মেয়াদের লক্ষ্য, যেমন, জীবনবিমা ইত্যাদির জন্য কিছুটা বেশি বেতন ধরেই বিশ্লেষণ করতে হবে আমাকে। কারণ, আগামী দিনে তাঁর সত্যিই বেতন বাড়লে সেই অনুসারে জীবনযাত্রার মান, সঞ্চয়ের পরিকল্পনা সবই বদলাবে। ফলে সেই মতো বিমার অঙ্কও পাল্টাতে হবে। ফলে সেখানে রইল ৫০ হাজারের কথা।

দেবাশিস রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক থেকে কেন্দ্রীয় সরকারি কাজে যোগ দেবেন। অর্থাত্‌ এই পুরো সময়েই তিনি সুরক্ষিত সরকারি কাজের জগতে ঘোরাফেরা করছেন। কিন্তু বর্তমানে তো আমরা বেসরকারি ক্ষেত্রে অনেকেই চাকরি করি। সেখানে চাকরির সুরক্ষা কম থাকলেও, হঠাত্‌ করে বেতন বাড়ার সুযোগ থাকে। অর্থাত্‌ দেবাশিসের মতো পরিস্থিতি আমাদের অনেকেরই। যারা হয়তো আগামী দিনে চাকরি বদলাব এবং সেই সূত্রে বেতনও বাড়বে। এই ক্রমাগত বদলে যাওয়া পরিস্থিতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে সঞ্চয়ের ভাবনা কী করে ভাবতে হবে, আমরা তা কিছুটা বোঝার চেষ্টা করব দেবাশিসের প্রোফাইল ধরে।

আগের কাজ আগে

বিয়ের জন্য সঞ্চয়

শুধুমাত্র বাবা-মায়ের উপর ভরসা না-করে, নিজের বিয়ের খরচ নিজেই দিতে চান দেবাশিস। এখন তরুণ প্রজন্মের অনেকের মধ্যেই এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। যা যথেষ্ট প্রশংসার। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে বিয়ের জন্য ৪ লক্ষ টাকা সঞ্চয়ের পরিকল্পনা করছেন তিনি। আসুন দেখে নিই কী ভাবে সেই লক্ষ্যে পৌঁছনো সম্ভব।

সেপ্টেম্বরে নতুন চাকরিতে ঢোকার পরে তাঁর বাড়ি ভাড়া ইত্যাদির খরচ কমবে বলে জানিয়েছেন দেবাশিস। তাঁর মতে, এর ফলে হাতে থাকবে বাড়তি ৪ হাজার টাকা। আবার বেতন বাড়বেও প্রায় ২ হাজার। অর্থাত্‌ মোট ৬ হাজার। আর এখনই মাস গেলে তাঁর থাকে প্রায় ৫ হাজার টাকা। অর্থাত্‌ অক্টোবর থেকে দেবাশিসের মাসে নগদ ১১ হাজার টাকা হাতে থাকবে। এই টাকা থেকেই তাঁকে বিয়ের জন্য সঞ্চয় করতে হবে। কিন্তু মুশকিলটা হল, তাঁর হাতে সময় থাকছে মাত্র ২৭ মাস। সে জন্য মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা ঢালাটা ঝঁুকির হয়ে যাবে। যে-কারণে, ১০ হাজার টাকা প্রতি মাসে রেকারিং করার পরামর্শ দেব। এ ভাবে ব্যাঙ্কে টাকা রাখলে ওই সময়ে হাতে আসবে প্রায় ৩ লক্ষ টাকা। বাকি এক লক্ষ ঋণ নিতে পারেন।

অবসরের জন্য পরিকল্পনা

দেবাশিস বিয়ের পরে অবসরের জন্য সঞ্চয় শুরুর কথা ভাবছেন। সাধারণত লগ্নির পরিকল্পনা করার সময়ে চাকরি জীবনের শুরু থেকেই অবসরের কথা মাথায় রাখার পরামর্শ দিই। যত তাড়াতাড়ি শুরু করতে পারবেন, ততই আপনার লাভ। কিন্তু এখানে যেহেতু বিয়ের জন্য সঞ্চয়টাই তাঁর এই মুহূর্তের প্রয়োজন, সে কারণে তাঁর পরিকল্পনার সঙ্গে সহমত হতে হচ্ছে আমাকে। কারণ বিয়ের জন্য জমানোর পরে অবসরের জন্য সঞ্চয়ের টাকা থাকছে না।

বিয়ের সময়ে দেবাশিসের বয়স হবে ২৯ বছর। কিন্তু তাঁর দায়িত্বও অনেকটাই বেড়ে যাবে। ফলে তখন কিন্তু তাঁকে সেই মতো পরিকল্পনা করেই লগ্নি সাজাতে হবে। আমার মতে, ওই সময়ে তাঁর সঞ্চয়ের অনুপাত হতে হবে: ডাইভার্সিফায়েড ইকুইটিতে এসআইপি (৫০%), শেয়ার (১০%), পিপিএফ (২০%), রেকারিং (১০%) এবং গোল্ড-ইটিএফ (১০%)। তবে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই ভাগ-বাটোয়ারা বদলাতে হবে।

স্থির করুন জীবনবিমার অঙ্ক

আমি সবাইকেই বলি জীবনবিমার জন্য টার্ম পলিসি বেছে নিতে। কারণ, বিমার লক্ষ্যই হল উপার্জনকারীর কিছু হলে যাতে পরিবার অথৈ জলে না-পড়ে। যে সব বিমায় রিটার্ন পাওয়া যায়, সেগুলিতে প্রিমিয়ামের অঙ্ক তুলনায় অনেক বেশি। কিন্তু কভারেজ এবং রিটার্ন কম। কিন্তু টার্ম পলিসিতে কম টাকায় বেশি কভারেজ মেলে।

যেহেতু প্রথমেই বলেছি, জীবনবিমার জন্য আমি ৫০ হাজার বেতন ধরে হিসাব করব। সে ক্ষেত্রে তাঁর বছরে বেতন দাঁড়াবে ৬ লক্ষ। কোনও সুরক্ষিত প্রকল্পে লগ্নি করে (৮% সুদ ধরে) ওই টাকা প্রতি বছর পেতে বিমার অঙ্ক হতে হবে ৭৫ লক্ষ টাকা। তবে বিমা করার আগে কয়েকটি বিষয় দেখে নিতে হবে

৩০-৩৫ বছরের অর্থাত্‌ যতটা সম্ভব বেশি মেয়াদের টার্ম পলিসি কিনুন। এমন যাতে না-হয়, যখন বিমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তখনই কোনও কভারেজ থাকল না। বিমা কেনার আগে সংস্থা সম্পর্কে খোঁজ নিন। সংস্থার টাকা ফেরতের ইতিহাস এবং তাদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ আছে কি না, দেখে নিন তা-ও। নির্দিষ্ট অঙ্কের বিমার জন্য বেশ কয়েকটি সংস্থার প্রিমিয়াম তুলনা করুন। দেখুন কোনটা আপনার উপযুক্ত।

স্বাস্থ্যবিমার খোঁজ

দেবাশিসের বাবা-মায়ের ২ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমা রয়েছে। পাশাপাশি, নতুন চাকরিতে ঢোকার পর কেন্দ্রীয় সরকারি স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের (সিজিএইচএস) সুবিধা পাবেন তিনি। এই সিজিএইচএস প্রকল্পটি খুবই ভাল। এতে শুধুমাত্র হাসপাতালের খরচ নয়, ওষুধ এবং ডাক্তারের খরচও মেলে। কিন্তু এর একটা নির্দিষ্ট সীমা রয়েছে। ফলে তার অঙ্ক খতিয়ে দেখতে হবে। আর যে-হারে চিকিত্‌সার খরচ বাড়ছে, বাবা-মায়ের জন্য আরও কিছু অর্থের বিমা করিয়ে নেওয়া উচিত। নিজের জন্য এখন প্রয়োজন না-হলেও, পরে অন্য একটি স্বাস্থ্যবিমা করার কথা ভাবতে পারেন।

অপেক্ষা করুন

এর বাইরেও কিছু ইচ্ছা রয়েছে দেবাশিসের। যেমন, বাইক কেনা, বছরে একবার ঘুরতে যাওয়া। সেগুলি নিয়ে এ বার কথা বলব।

বাইক কেনা

দেবাশিসের হাতে এখন এত টাকা নেই, যে তিনি বাইক কেনার কাজে হাত দিতে পারেন। এখন তা কিনতে গেলে তাঁর উপর আরও এক দফা বাড়তি ঋণের বোঝা চাপবে। আমার মতে, বরং তাঁর অন্য লক্ষ্যগুলি (যেমন: বিয়ের জন্য সঞ্চয়, জীবনবিমা কেনা ইত্যাদি) আরও বেশি জরুরি। সেই কারণে তাঁকে বলব তাড়াহুড়ো করে বাইক না-কিনে, কিছু দিন অপেক্ষা করুন। অন্তত যত দিন শিক্ষাঋণ চলছে, তত দিন। তা যদি না-করতে পারেন, সে ক্ষেত্রে নতুন চাকরিতে কমপক্ষে এক বছর কাটানোর পরেই বাইক কিনুন।

প্রতি বছর বেড়াতে যাওয়া

অবশ্যই আপনি প্রতি বছর বেড়াতে যেতে পারবেন। তবে তার আগে দেখে নিতে হবে কোনও ভাবে সঞ্চয় যাতে ভাঙতে না-হয়। আপনি চিঠিতে জানিয়েছেন, পুজোর খরচের জন্য এক বছর মেয়াদের রেকারিং করেন। এই অভ্যাস খুবই ভাল। এ বার বেড়াতে যাওয়ার জন্য সে ভাবেই রেকারিং-এর ব্যবস্থা করতে হবে। বিয়ের পরে ওই ১০ হাজার টাকার কিছু অংশ রেকারিং-এ রেখে দিতে পারেন। দেখবেন প্রতি বছরই ঘুরতে যাওয়ার অর্থ থাকছে।

এসআইপি-তে সুবিধার খতিয়ান

সিস্টেম্যাটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি) নিয়ে দেবাশিসের বিভিন্ন প্রশ্ন রয়েছে। আমি তাঁকে বিষয়টি নিয়ে কিছু কথা বলে রাখতে চাই—

এসআইপি-র অন্যতম সুবিধা হল কোন সময়ে লগ্নি করা উচিত, কত টাকা লগ্নি করা উচিত এই চিন্তা থেকে মুক্তি। এতে নিয়মিত সঞ্চয়ের অভ্যাস তৈরি হয়। বেশি সময় ধরে নিজের পকেট বুঝে টাকা ঢালার সুবিধা রয়েছে। দরকার পড়লে লগ্নি বন্ধও করা যায়। জমানো টাকা পছন্দ মতো সময়ে তুলে নিতে পারবেন। দীর্ঘ দিন লগ্নি করলে ঝঁুকি কিছুটা কমে। লগ্নির টাকা চক্রবৃদ্ধি হারে বাড়ার সুযোগ থাকে। যে-কারণে নির্দিষ্ট সময় অন্তর অল্প টাকা ঢেলে ভাল মুনাফার দেখা মেলে। এক বার মাত্র চেক জমা দিয়ে সংস্থাকে নির্দেশ দিলেই চলে। পরের মাস থেকে আপনার বেছে দেওয়া দিনে অ্যাকাউন্ট থেকেই টাকা কেটে নেবে ফান্ড সংস্থা।

(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)

দেবাশিসের মতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পেতে পারেন আপনিও। নিজের ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানিয়ে চিঠি লিখুন

‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১.

ই-মেল: bishoy@abp.in

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

kuber ubacho saibal biswas
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE