সুগত (৪৭) • স্ত্রী (৩৭) • মেয়ে (৮) •মা (৭০)
বেসরকারি তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার কর্মী • লক্ষ্য ৫৫ বছরে অবসর
• চান অবসরের পরে সচ্ছল জীবন • মেয়ের শিক্ষা এবং বিয়ের জন্য সঞ্চয়ে আগ্রহী
অনেক সময়েই দেখা যায়, চাকরিতে আমরা বেতন পাই ভালই। রয়েছে নিজের লগ্নিও। পৈতৃক সম্পদও কিছু না-কিছু পাব। কিন্তু তার মানেই কি ভবিষ্যতে ভাল রিটার্ন মেলার সম্ভাবনা থাকে? বা কাজের সময়ে হাতে আসে জমানো টাকা? তা কিন্তু নয়। কারণ সেই একটাই, পরিকল্পনার অভাব। সে জন্যই আমি সবাইকে বলি চাকরি জীবনে পরিকল্পনা মাফিক সঞ্চয় করার জন্য। যাতে বাকি জীবন সেই সঞ্চয় ব্যবহার করেই নিশ্চিন্তে ও সচ্ছল ভাবে কাটানো সম্ভব হয়।
এই কথা বলে আজকের লেখা শুরু করার কারণ সুগতর প্রোফাইল। তাঁর ৪৭ বছর বয়স। অবসর নিতে চান ৫৫ বছরে। ভাল বেতন ও নিজস্ব সম্পদ থাকলেও, সঞ্চয়ের দিকে তাকালে দেখা যাবে বেশির ভাগটাই পরিকল্পনাহীন। সুগতর মূল দু’টি লক্ষ্য। সন্তানের জন্য সঞ্চয় আর অবসর জীবন সচ্ছল ভাবে কাটানো। কী ভাবে নিজের লগ্নি গুছিয়ে নিয়ে এই লক্ষ্যপূরণ সম্ভব, তাই দেখব।
সন্তানের শিক্ষা ও বিয়ে
সুগতর মেয়ের বয়স মাত্র ৮ বছর। পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। ১৮ বছরে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে লাগবে প্রায় ২০ লক্ষ টাকা (৭% মূল্যবৃদ্ধি ধরে)। এর পর রয়েছে বিয়ের খরচ। মূল্যবৃদ্ধি ধরলে তা ২০-২৫ লক্ষে দাঁড়াবে। অর্থাত্ মেয়ের জন্য মোট চাই ৪০-৪৫ লক্ষ। এখন তাঁর হাতে মাস গেলে মাত্র ৩,৫০০ টাকা থাকে, ফলে নতুন লগ্নির সম্ভাবনা নেই। তাই দেখতে হবে কী ভাবে বর্তমান সঞ্চয় থেকে এই অর্থ পেতে পারেন।
সচ্ছল অবসর
ধরে নিচ্ছি মাসে সুগতর সব মিলিয়ে প্রায় ৭৬ হাজার টাকাই খরচ হয়। তা হলে ৮ বছর পরে তা দাঁড়াবে ১.৩০ লক্ষে (৭% মূল্যবৃদ্ধি ধরে)। ৮% সুদের সুরক্ষিত প্রকল্পে লগ্নি করে প্রতি মাসে ওই টাকা পেতে তহবিল হতে হবে প্রায় ১.৯৫ কোটি টাকা। চিকিত্সা ও সামাজিকতা মাথায় রাখলে প্রয়োজন আরও ২৫-৩০ লক্ষ। এই টাকা কি আদৌ জোগাড় করা সম্ভব? আসুন তাঁর লগ্নি প্রকল্পগুলির দিকে চোখ রাখি—
জীবনবিমা
সব মিলিয়ে সুগতর মোট বিমামূল্য ৩০ লক্ষ টাকা। কিন্তু তাঁর কিছু হলে এই টাকা আদৌ যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি—
• এনডাওমেন্ট প্রকল্পের প্রিমিয়াম বেশি, সেই তুলনায় রিটার্ন কম। যা মূল্যবৃদ্ধিকে ছাপিয়ে যেতে পারবে না।
• পেনশন প্ল্যানে লগ্নির বদলে নিজে বিভিন্ন খাতে টাকা রেখে, পরে তা দিয়ে অ্যানুইটি কিনলে লাভ বেশি হত।
• ইউলিপগুলি কিছুটা কাজে আসবে। কিন্তু সব মিলিয়ে তা সুগতর প্রয়োজন মেটাতে পারবে বলে মনে হয় না।
সব মিলিয়ে সুগতর মোট বিমামূল্য ৩০ লক্ষ টাকা। কিন্তু তাঁর কিছু হলে এই টাকা আদৌ যথেষ্ট নয়। পাশাপাশি—
• এনডাওমেন্ট প্রকল্পের প্রিমিয়াম বেশি, সেই তুলনায় রিটার্ন কম। যা মূল্যবৃদ্ধিকে ছাপিয়ে যেতে পারবে না।
• পেনশন প্ল্যানে লগ্নির বদলে নিজে বিভিন্ন খাতে টাকা রেখে, পরে তা দিয়ে অ্যানুইটি কিনলে লাভ বেশি হত।
• ইউলিপগুলি কিছুটা কাজে আসবে। কিন্তু সব মিলিয়ে তা সুগতর প্রয়োজন মেটাতে পারবে বলে মনে হয় না।
• সব শেষে রয়েছে চাইল্ড প্ল্যান। এই প্রকল্পে বিমামূল্য প্রায় ৫ লক্ষ টাকা। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির কথা মাথায় রেখে বলব এই অর্থ কিছুই নয়। ফলে এই প্রকল্পও তাঁর কোনও কাজে লাগবে না।
বরং তিনি যদি ওই ৪,৮৩৩ টাকা শেয়ার ভিত্তিক মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি করতেন, তা হলে পেতেন প্রায় সাড়ে ১৫ লক্ষ টাকা (১২ বছর ১২% রিটার্ন ধরে)। এমনকী রেকারিং বা এই ধরনের কোনও সুরক্ষিত প্রকল্পে টাকা রাখলেও বছরে সুদ পেতেন ১.২৪ লক্ষ বা মাসে ১০ হাজার টাকা (৮% সুদ ধরে)। যার আসল তো থাকতই। এই সব কারণেই বলব আপনি বিমা বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে কিছু প্রকল্প বন্ধ করুন। সেই টাকা অন্য খাতে রেখে তহবিল বাড়ান।
পিএফ
সুগতর পিএফে সঞ্চয় বেশি নয়। এখন যে-টাকা পিএফে কাটা হয়, তা-ও যথেষ্ট নয়। ফলে ৮ বছরে সেই তহবিল কতটা বাড়বে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। যে- কারণে, আমি এখনই তাঁকে পিপিএফে লগ্নির পরামর্শ দেব।
স্থাবর সম্পদ
সুগতর সবচেয়ে বেশি লগ্নি ফ্ল্যাট ও বাড়িতে। তাঁর পৈতৃক জমি-বাড়ি আছে ও সঙ্গে দু’টি ফ্ল্যাট। সব মিলিয়ে মোট বাজার দর প্রায় ১.৪২ কোটি টাকা। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কিছু সমস্যাও রয়েছে।
• যে-পৈতৃক বাড়িতে তিনি থাকেন, তা তাঁর সম্পদ হিসেবে ধরতে পারব না। কারণ, চাইলেই তিনি তা বিক্রি করতে পারবেন না। ফলে তাঁর হাতে থাকছে দু’টি ফ্ল্যাট। যার বাজার দর ৭২ লক্ষ।
• একটি ফ্ল্যাট ইতিমধ্যেই ঋণমুক্ত। কিন্তু সেটি সুগত বন্ধ করে রেখেছেন। ভাড়া দেওয়ার কথাও ভাবেননি। অন্যটি তৈরি, কিন্তু হাতে পাননি। দ্বিতীয়টির জন্য তাঁকে মাসে ৩২ হাজার টাকা কিস্তি দিতে হয়। যা চলবে প্রায় তাঁর অবসর পর্যন্ত। ফলে দেখা যাচ্ছে এই দু’টি ফ্ল্যাট থেকে তাঁর কোনও আয় তো হচ্ছেই না, বরং খরচই হচ্ছে বেশি। • রয়েছে ফ্ল্যাটগুলি রক্ষণাবেক্ষণ করা এবং কর সংক্রান্ত খরচও।
• সুগত চাইলে এই ফ্ল্যাট দু’টি ভাড়া দিতে পারেন। সেই টাকা তিনি অন্য খাতে লগ্নি করতে পারবেন।
• অবসরের সময় যত এগোবে, তাঁর টাকার প্রয়োজন ততই বাড়বে। তখন তাঁকে কমপক্ষে একটি বা দু’টি ফ্ল্যাটই বিক্রি করতে হতে পারে। কিন্তু ফ্ল্যাট বা বাড়ি বিক্রি করা অত সহজ নয়। তার জন্যও হাতে সময় নিয়ে আগাম পরিকল্পনা করতে হবে।
শেয়ার
বুদ্ধিমানের মতো সুগত শেয়ারে লগ্নি করেছেন। যার বর্তমান মূল্য ১০ লক্ষ টাকা। এখন দেখতে হবে কোন সংস্থার শেয়ারে টাকা ঢেলেছেন তিনি। কারণ, অনেক সময়েই আমরা না-বুঝে শেয়ারে লগ্নি করে ফেলি। আর তার পর ক্ষতি হলে নিজের ভুল ধরার বদলে, শেয়ারে টাকা রাখাকেই দায়ী করি। ফলে শেয়ার বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে পোর্টফোলিও খতিয়ে দেখুন। কারণ ৮ বছরে সঞ্চয়ের বেশির ভাগটাই আসবে শেয়ার থেকে। যা অবসরের সঞ্চয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
অর্থাত্ দেখা যাচ্ছে নিজের লক্ষ্যের থেকে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছেন তিনি। কিন্তু ঘাবড়ালে চলবে না। বরং এই আট বছর নিয়মিত পরিকল্পনা মাফিক লগ্নি করে যেতে হবে এবং প্রয়োজনে নিজের লগ্নির ধরনও বদলাতে হবে তাঁকে।
স্বাস্থ্যবিমা
সুগত অফিস থেকে চিকিত্সা খরচ পান। দেখতে হবে অবসরের পরেও তা বজায় থাকবে কি না। না-হলে এখনই স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করতে হবে। ৫৫ বছরে নতুন করে বিমা করতে গেলে প্রিমিয়াম অনেকটাই বেশি পড়বে।
(অনুরোধ মেনে নাম পরিবর্তিত)
সুগতর মতো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ পেতে পারেন আপনিও।
নিজের ঠিকানা ও ফোন নম্বর জানিয়ে চিঠি লিখুন
‘বিষয়’, ব্যবসা বিভাগ, আনন্দবাজার পত্রিকা,
৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা, পিন-৭০০০০১.
ই-মেল: bishoy@abp.in
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy