Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
Presents
রাজ্য সরকারের বাজেট

রাজ্যে করের নয়া জমানা

কিছু দিন আগেই কার্যকর হয়েছে রাজ্যের নয়া কর ব্যবস্থা। চলুন আজ একটু বিশদে জেনে নিই কোথায়, ঠিক কী কী বদলাল। সৌরভ চন্দ্রআমজনতার কাঁধের বোঝা বাড়বে না, অথচ সরকারের সিন্দুক ভরবে। এই কৌশল নিয়েই গত ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যের বাজেট পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তিনি চড়া মূল্যবৃদ্ধির এই জমানায় রাজ্যবাসীর উপর নতুন কোনও কর বসাননি।

শেষ আপডেট: ১৭ জুলাই ২০১৪ ০২:২২
Share: Save:

আমজনতার কাঁধের বোঝা বাড়বে না, অথচ সরকারের সিন্দুক ভরবে। এই কৌশল নিয়েই গত ফেব্রুয়ারিতে রাজ্যের বাজেট পেশ করেছিলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। তিনি চড়া মূল্যবৃদ্ধির এই জমানায় রাজ্যবাসীর উপর নতুন কোনও কর বসাননি। বরং করছাড়ের পরিধিকে কয়েকটি ক্ষেত্রে আরও কিছুটা ছড়িয়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর লক্ষ্যে সরল করেছেন কর জমার ব্যবস্থাও। তবে লোকসভা ভোটের জন্য বিষয়গুলি কার্যকর করার ঘোষণা আটকে ছিল। সব মিটে যাওয়ার পরেই রাজ্য সরকার জানিয়ে দিয়েছে, বাজেট প্রস্তাব কার্যকর হওয়ার দিনক্ষণ। চলুন এই সূত্রে ফের এক বার দেখে নিই রাজ্যের কর ব্যবস্থায় চলতি অর্থবর্ষে (২০১৪-’১৫) কী কী বদল এল এবং কবে থেকে।

বৃত্তিকরে বদল

কোনও ব্যবসা তৈরি হওয়ামাত্রই তা প্রফেশন ট্যাক্স বা বৃত্তিকরের আওতায় আসে। সার্টিফিকেট অব এনরোলমেন্ট নিতে হয় এ জন্য। এবং বৃত্তিকর বাবদ নির্দিষ্ট টাকা জমা দিতে হয় রাজ্য সরকারের ঘরে। স্বনিযুক্ত ব্যক্তিদেরও ওই কর জমার জন্য সার্টিফিকেট অব এনরোলমেন্ট নিতে হয়। পাশাপাশি, ব্যবসা চালাতে কেউ যদি কর্মী নিয়োগ করেন, তা হলে সেই কর্মীদের বৃত্তিকর জমা দেওয়ার জন্য নিয়োগকারীকে নিতে হয় সার্টিফিকেট অব রেজিস্ট্রেশন। সে ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের বেশি বেতন দিতে হলেই সংশ্লিষ্ট কর্মীকে দেওয়া টাকার একটা অংশ সরকারকে দিতে হয় ওই কর বাবদ। তা কর্মীদের বেতন থেকে কেটে নিয়ে জমা দেন নিয়োগকর্তাই। এই বৃত্তিকরের চৌহদ্দিতে এ বার কিছু পরিবর্তন এসেছে, যা গত ১ এপ্রিল থেকে কার্যকর ধরা হবে বলে জানানো হয়েছে। যেমন

সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

বেড়েছে ঊর্ধ্বসীমা

চাকরিজীবীদের জন্য: এত দিন কেউ মাসে ৭,০০০ টাকা বা তার বেশি বেতন পেলে, তবেই তাঁকে বৃত্তিকর দিতে হত। করছাড়ের এই ঊর্ধ্বসীমা বাড়িয়ে ৮,৫০০ টাকা করা হয়েছে। অর্থাত্‌ গত এপ্রিল থেকে চালু হওয়া নিয়ম অনুযায়ী, মাসে ৮,৫০০ টাকার কম বেতন পেলে আর ওই কর দিতে হবে না। সেই হিসাবে, বছরে আয় ১ লক্ষ টাকা হলে বৃত্তিকরের আওতার বাইরে থাকবেন।

স্বনিযুক্তদের জন্য: যাঁরা স্বাধীন ভাবে কাজ করেন, তাঁদের বৃত্তিকর ছাড়ের ঊর্ধ্বসীমা বছরে ১৮,০০০ থেকে বাড়িয়ে ৬০,০০০ টাকা করা হয়েছে। এই তালিকায় আছেন আইনজীবী, ডাক্তার, সংস্থার ডিরেক্টর, ডাকঘর ও বিমা এজেন্ট, মূল্যায়নকারী বা সার্ভেয়র, ইঞ্জিনিয়ারিং, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, আর্কিটেক্ট, কর ও ম্যানেজমেন্টের মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রের উপদেষ্টা ইত্যাদি পেশা।

ব্যবসায়ীদের জন্য: ছোট ব্যবসায়ীরা ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়ে ছাড় পাবেন।

সহজ হল জমা

তথ্য কম: এত দিন বৃত্তিকরের সূচিটি (শিডিউল) ছিল দীর্ঘ। এর আওতায় ২৩টি তালিকার (সিরিয়াল) মধ্যে ১০০টি এন্ট্রি থাকত। এন্ট্রি কমিয়ে ৪টি করা হয়েছে। এগুলি হল—

১) মাসিক বেতন পান যে কর্মীরা।

২) স্বনিযুক্ত ব্যক্তিরা

৩) কো-অপারেটিভ সোসাইটি, বিপণি, পার্টনারশিপ ফার্ম, কেব্‌ল অপারেটর, এমএসও, কেব্‌ল টিভি এজেন্ট, ইন্টারনেট ক্যাফে, মাল্টিপ্লেক্স, প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ও টিউটোরিয়াল হোম, এসি নেই এমন বিউটি পার্লার-স্পা-সেলুন, লাইব্রেরি, এসটিডি বুথ ইত্যাদি বিভিন্ন ব্যবসা ও পরিষেবা (সম্পূর্ণ তালিকা পাবেন www.wbcomtax.nic.in ওয়েবসাইটে)।

৪) এস্টেট এজেন্ট, প্রোমোটার, ব্রোকার, কমিশন এজেন্ট, ক্লিয়ারিং এজেন্ট, কাস্টম এজেন্ট, শিপিং ব্রোকার, চটকল, চালকল, পেট্রোল পাম্প ও সার্ভিস স্টেশন, এসি বিউটি পার্লার ও রেস্তোরাঁ, চুল কাটার এসি সেলুন, রোগ নির্ণয় কেন্দ্র ইত্যাদি কিছু নির্দিষ্ট ব্যবসা। (সম্পূর্ণ তালিকা পাবেন www.wbcomtax.nic.in ওয়েবসাইটে)।

জমা অনলাইনে: বৃত্তিকরের আওতায় রেজিস্ট্রেশন কিংবা এনরোলমেন্ট (বিষয়গুলি জানতে দেখুন ৫ ডিসেম্বর ২০১৩-র বিষয় আশয়) করানো ছিল বেশ কষ্টসাপেক্ষ। এ বার থেকে করদাতারা অনলাইনেই রেজিস্ট্রেশন ও এনরোলমেন্ট সার্টিফিকেট বার করে নিতে পারবেন। www.wbcomtax.nic.in ওয়েবসাইটটি থেকেই।

কমলো খরচ

এমন হতেই পারে যে, একটি সংস্থার এক বা একাধিক কারখানা ও গুদাম আলাদা শাখা বা দফতর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। অর্থাত্‌ সেখানে কোনও কর্মী নিয়োগ করে হিসাবপত্র (বুকস অব অ্যাকাউন্টস) রাখার ব্যবস্থা নেই। সে ক্ষেত্রে ওই কারাখানা ও গুদামের জন্য আলাদা করে প্রফেশন ট্যাক্সের এনরোলমেন্ট নিতে হবে না। বিশেষ নির্দেশ জারি করে এটি আগেই কার্যকর করা হয়েছে।

দরজা এখনও খোলা

যাঁরা করযোগ্য, অথচ সার্টিফিকেট অব রেজিস্ট্রেশন বা সার্টিফিকেট অব এনরোলমেন্ট সময়মতো না-নিয়ে বৃত্তিকরে ফাঁকি দিয়েছেন, তাঁদের কোনও চোখ রাঙানি ছাড়াই করের আওতায় আনতে এর আগে চালু হয়েছিল প্রফেশন ট্যাক্স অ্যামনেস্টি স্কিম। কিন্তু এর সুবিধা যাঁরা এখনও নিতে পারেননি, তাঁদের জন্য এ বার ওই রকম আরও একটি প্রকল্প আনা হয়েছে। এতেও কোনও সুদ বা জরিমানা ছাড়াই, এক একটি সার্টিফিকেট বার করার জন্য সুবিধামতো ১,২০০ থেকে ২,০০০ টাকা জমা দিতে হবে। এই প্রস্তাবটি কার্যকর হয়েছে ১ জুলাই থেকে।

ভ্যাটে বদল

ব্যবসা থেকে কর আদায়ের মূল উত্‌স ভ্যাট বা যুক্তমূল্য কর। এই ব্যবস্থা সরলীকরণের জন্য এসেছে কিছু বদল।

ঝক্কি কমলো

ডিলারদের জন্য অনলাইনে আরও সহজে ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নেওয়ার পদ্ধতি চালু হয়েছে। www.wbcomtax.nic.in ওয়েবসাইটে গিয়েই ওই আবেদন করা যাবে। এ ছাড়া, এত দিন নিয়ম ছিল যে, নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী (বাধ্যতামূলক ভাবে নয়) কেউ ভ্যাটের আওতায় নথিভুক্ত হতে চাইলে, তাঁকে ন্যূনতম ৫০ হাজার টাকার কেনাবেচার প্রমাণ দাখিল করতে হবে। সেই বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়া হয়েছে। অর্থাত্‌ এই প্রমাণ ছাড়াই এখন থেকে ভ্যাটে নথিভুক্ত হওয়া যাবে।

তা ছাড়া, যে-সব ডিলার এমন ঘর বা জায়গার মধ্যে ব্যবসা করেন, যেটি তাঁর নিজস্ব নয় বা সরাসরি বাড়ির মালিকের কাছ থেকে ভাড়া নেওয়া নয়, তাঁদের রেজিস্ট্রেশন করার জন্য এখন থেকে আর ১ লক্ষ টাকা (সিকিউরিটি) জমা রাখার দরকার নেই। এই বিষয়টি কার্যকর হয়ে গিয়েছে ১ জুলাই থেকে।

করে সুবিধা

এত দিন কারখানার পুরনো যন্ত্রপাতি (প্ল্যান্ট অ্যান্ড মেশিনারি) কিনলে ভ্যাট আইনের আওতায় ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট (আইটিসি) পাওয়া যেত না। এখন থেকে তা পাওয়া যাবে। প্রসঙ্গত, পশ্চিমবঙ্গের একজন ডিলার এ রাজ্যের মধ্যে বা আন্তঃরাজ্যে কোনও পণ্য বিক্রি করলে, সরকারের ঘরে সেটির উপর আরোপিত কর (রাজ্যে হলে ভ্যাট, অন্য রাজ্যে হলে সিএসটি) জমা দিতে হয় তাঁকে। এ বার ওই ডিলার নিজে সেই পণ্যটি এ রাজ্য থেকে কেনা বা উত্‌পাদনের সময়ে যে-কর (ভ্যাট) দিয়েছেন, তা রাজ্য সরকারকে দেয় করের টাকা থেকে বাদ যায়। একেই বলে আইটিসি। নিয়ম কার্যকর হয়েছে ১ জুলাই থেকে।

গতি আনতে

ভ্যাট রিফান্ড প্রক্রিয়া আরও দ্রুত করার জন্য বিক্রয়কর আধিকারিকদের ডিলারদের দফতরে হাজির হয়ে খাতাপত্র যাচাই করার প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ তুলে দেওয়া হয়েছে।

ওই একই লক্ষ্যে, কিছু বদল আনা হয়েছে ডিলারকে আন্তঃরাজ্য কেনাবেচার ক্ষেত্রে ইনপুট ট্যাক্স ক্রেডিট বা আইটিসি রিফান্ডের ক্ষেত্রেও।

যে-ডিলাররা এ রাজ্যে উত্‌পাদন করে বা কিনে অন্য রাজ্যে বিক্রি করেন, আইটিসি বাবদ তাঁদের অনেক টাকা সরকারের কাছে জমা থাকে। এর মানে হল, রাজ্যে পণ্যটি উত্‌পাদন করা বা কেনার সময়ে ডিলারকে ভ্যাট বাবদ একটা টাকা গুনতে হয়। আর তিনি যখন অন্য রাজ্যে পণ্যটি বিক্রি করতে যান, তখন সেটির উপর নেওয়া হয় সেন্ট্রাল সেল্‌স ট্যাক্স বা সিএসটি। এই সিএসটি-র হার যেহেতু ভ্যাটের থেকে কম, তাই এ রাজ্যে চোকানো ভ্যাটের থেকে ওই সিএসটি-র টাকা বাদ দিয়ে যেটা পড়ে থাকে, সেটা ডিলারকে ফিরিয়ে দেয় রাজ্য সরকার। এত দিন এই টাকা পুরোপুরি ফেরত দেওয়ার জন্য রাজ্য আগে সব হিসেব, খাতাপত্র খতিয়ে দেখত (অ্যাসেসমেন্ট)। তার পর ডিলাররা টাকা পেতেন। কিন্তু এ বার থেকে যদি ওই রিফান্ডের পরিমাণ মোট ব্যবসার ৫০ শতাংশের বেশি হয়, তা হলে ডিলারদের দাখিল করা হিসাবের ভিত্তিতে ওই টাকা আগেই ফেরত দেবে সরকার। হিসাবপত্র খতিয়ে দেখা হবে পরে। ১ এপ্রিল থেকেই চালু হয়ে গিয়েছে এই ব্যবস্থা।

সস্তা হল

মহিলাদের সুবিধার কথা ভেবে এ বার ২৫ টাকা পর্যন্ত স্যানিটারি ন্যাপকিন, ১০০০ টাকার কম দামের গ্যাস স্টোভ, চুল বাঁধার ব্যান্ড ও ক্লিপের উপর ভ্যাটের হার ১৪.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করা হয়েছে।

সম্পত্তি হস্তান্তরে বদল

এ ক্ষেত্রে বাজেটে যে-বদলগুলি ঘোষণা হয়েছে, তার সবক’টিই গত ১ জুন থেকে বলবত্‌ হয়েছে।

ক্রেতার বোঝা কমাতে

ফ্ল্যাট ও বাড়ির স্ট্যাম্প ডিউটি কমলো। এত দিন ২৫ লক্ষ টাকার ফ্ল্যাট ও বাড়ির ক্ষেত্রে ৬% স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হত। সম্পত্তির বাজার দর তার বেশি হলে কর দিতে হত ১% বেশি। ওই সীমা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৩০ লক্ষ টাকা। অর্থাত্‌ ৩০ লক্ষ টাকার সম্পত্তির জন্যও ৬% হারেই স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হবে।

সুদে ছাড়

এত দিন দলিলে স্ট্যাম্প ডিউটির ঘাটতি দিতে দেরি করলে প্রতি মাসে ২% হারে সুদ গুনতে হত। এমনকী এর কোনও ঊর্ধ্বসীমাও ছিল না। এই সুদ ২% থেকে কমে হচ্ছে ১%, যার ঊর্ধ্বসীমা হবে ২০ হাজার টাকা।

ই-স্টাম্পিং প্রসারে

সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ২০১৪-’১৫ অর্থবর্ষের মধ্যে রাজ্যে ২৪৬টি রেজিস্ট্রেশন অফিসের সবগুলিতেই ই-স্টাম্পিং ব্যবস্থা চালু হবে। ই-স্ট্যাম্পিং হল অনলাইনে স্ট্যাম্প ডিউটি মেটানোর ব্যবস্থা। এতে উজিয়ে স্ট্যাম্প পেপার সংগ্রহ বা জমা দিতে কোথাও দৌড়তে হয় না, বাড়িতে বসেই www.wbfin.wb.nic.in ওয়েবসাইট খুলে (গভর্নমেন্ট রিসিপ্ট পোর্টাল সিস্টেম বা জিআরআইপিএস লিঙ্কে গিয়ে) কাজ সারা যায়। এমনিতে স্ট্যাম্প ডিউটির পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকার বেশি হলে এত দিন অনলাইনেই ওই কর দিতে হত। এ বার আরও বেশি মানুষকে এই পদ্ধতির আওতায় আনতে উদ্যোগী হল রাজ্য।

বন্ধকী ঋণে সুবিধা

এখন বাড়ি মেরামত ও সংস্কারের জন্য তা বন্ধক রেখে ঋণ নেওয়া যায়। বাড়ি দ্বিতীয়বার বন্ধক রাখার জন্য গৃহীত অর্থের উপর কোনও ঊর্ধ্বসীমা ছাড়াই এত দিন ৪% হারে স্ট্যাম্প ডিউটি দিতে হত। এ বার থেকে দ্বিতীয়বার বন্ধকের ক্ষেত্রেও মূল বন্ধকের মতোই স্ট্যাম্প ডিউটি হবে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা।

বড় করদাতার জন্য

করদাতাদের সুবিধার জন্য আনা হয়েছে একজানালা ব্যবস্থা। যে সমস্ত বিক্রেতা সরকারের ঘরে বেশি কর জমা দেন, তাদের ঝক্কি কমাতে খোলা হচ্ছে বিশেষ বিভাগ। দায়িত্বে থাকবেন একজন নোডাল অফিসার। ভ্যাট, ডব্লিউবিএসটি, সিএসটি, এনট্রি ট্যাক্স, প্রফেশন ট্যাক্স সব কিছু জমা এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় দেখভাল করবেন তিনি।

নজরদারি নিয়ে

এত দিন বিক্রয়কর আধিকারিক বা সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক দফতরে (চার্জ অফিস) কর্মরত কেউ, প্রায়শই বিনা অনুমতিতে যখন-তখন বিক্রেতাদের ব্যবসাস্থলে চলে যেতেন। এখন থেকে তা করা যাবে না। নতুন নিয়মে নথিভুক্ত ডিলারের অফিসে যেতে হলে সংশ্লিষ্ট চার্জ অফিসার বা তাঁর ঊর্ধ্বতন অফিসারের কাছ থেকে কারণ-সহ লিখিত অনুমতি নিয়ে যেতে হবে।

কর ফাঁকি রুখতে

কর ফাঁকি আটকাতে এ বার বিশেষ কৌশল নিয়েছে রাজ্য। সে ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার বা কর্পোরেশন-পঞ্চায়েতের মতো বিভিন্ন স্থানীয় প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ কোনও করযোগ্য পণ্য কেনার সময়, সংশ্লিষ্ট ডিলারের প্রাপ্য দাম থেকে ট্যাক্স কলেকটেড অ্যট সোর্স (টিসিএস) বাবদ টাকা কেটে নেবে। ওই হার হবে পণ্যটির ভ্যাটের সমান। এর জন্য সংশ্লিষ্ট ওই ডিলারকে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। রিটার্ন জমার সময় সার্টিফিকেটটি দাখিল করলে আলাদা করে ওই পণ্য বিক্রি বাবদ সেই পরিমাণ কর দিতে হবে না।

ছোট সংস্থার সুবিধায়

ক্ষুদ্র ও অতি-ক্ষুদ্র সংস্থাগুলির জন্য ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্রোমোশন অ্যাসিস্ট্যান্স স্কিম’-এ সুবিধা পাওয়ার সময়সীমা ২০১৫ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় ছোট সংস্থাগুলি করছাড় পায়।

উত্তরবঙ্গের জন্য

আগামী ১ জানুয়ারির মধ্যে উত্তরবঙ্গের ডিলারদের জন্য শিলিগুড়িতে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল কমার্শিয়াল ট্যাক্সেস অ্যাপেলেট অ্যান্ড রিভিশনাল বোর্ড’-এর বেঞ্চ খোলার কথা বলা হয়েছে। ফলে বিক্রয় কর নিয়ে সমস্যার আপিল বা রিভিশন শুনানির জন্য ওই অঞ্চলের বাসিন্দাদের কলকাতা পাড়ি দিতে হবে না। কাজ মিটবে ওই বেঞ্চের দ্বারস্থ হলেই। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে দার্জিলিং, কালিম্পং ও কার্শিয়ঙের ডিলারদের ২০০৮ সালের ১ এপ্রিল থেকে ২০১১ সালের ৩০ জুন সময়ের রিটার্ন জমা দেওয়ার মেয়াদ বাড়িয়ে ৩১ জুলাই করা হয়েছে। যাতে তাঁরা সুদ ও লেট ফি ছাড়াই তা জমা দিতে পারেন।

চা শিল্পের স্বার্থে

চা শিল্পের বিকাশ ও শ্রমিকদের সুবিধার জন্য ‘গ্রামীণ কর্মসংস্থান সেস’ ও ‘শিক্ষা সেস’ চলতি আর্থিক বছরে সম্পূর্ণ ভাবে মকুব করা হচ্ছে।

লেখক আইনজীবী ও কর বিশেষজ্ঞ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

saurabh chandra tax structure west bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE