Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪
Presents
মিউচুয়াল ফান্ড

লাভের ভাগ খরচে

মুনাফা বাড়াতে বারে বারে একই তহবিল একবার এ ফান্ডে, একবার ও ফান্ডে খাটাচ্ছেন। এতে লাভের একটা অংশ বেমালুম উড়ে যাচ্ছে না তো? নীলাঞ্জন দে২২,২৩, ২৪, ২৫, ২৬ হাজার। গত কয়েক মাসে একের পর এক ধাপ পেরিয়ে যত এগিয়েছে সেনসেক্স, ততই ভিড় বাড়তে দেখা গিয়েছে শেয়ার বাজারে। যাঁরা ঝুঁকির দোহাই দিয়ে এত দিন স্টক এক্সচেঞ্জের ত্রিসীমানায় যেতেন না, তাঁরাও অনেকে তড়িঘড়ি শেয়ার কিনেছেন।

শেষ আপডেট: ১৪ অগস্ট ২০১৪ ০১:৩৮
Share: Save:

২২,২৩, ২৪, ২৫, ২৬ হাজার। গত কয়েক মাসে একের পর এক ধাপ পেরিয়ে যত এগিয়েছে সেনসেক্স, ততই ভিড় বাড়তে দেখা গিয়েছে শেয়ার বাজারে। যাঁরা ঝুঁকির দোহাই দিয়ে এত দিন স্টক এক্সচেঞ্জের ত্রিসীমানায় যেতেন না, তাঁরাও অনেকে তড়িঘড়ি শেয়ার কিনেছেন। যাঁদের অতটা সাহসে কুলোয়নি, তাঁরা অনেকেই অন্তত ইকুইটি (শেয়ার নির্ভর) ফান্ডে টাকা ঢালতে কসুর করেননি। কারণ শেয়ার সূচক ওঠায় ওই সমস্ত ফান্ডের ন্যাভও বেশ দ্রুত বেড়েছে।

এই সব লগ্নিকারীর কেউ ফান্ডে লগ্নি করার জন্য অন্য সঞ্চয় প্রকল্প ভেঙেছেন। আবার যাঁদের আগে থেকেই মিউচুয়াল ফান্ড আছে, তাঁদের অনেকে তুলনায় কম ঝুঁকি বা স্থায়ী আয়ের ফান্ড থেকে দ্রুত ইকুইটি ফান্ডে তহবিল সরিয়ে এনেছেন। এ সবই ঘটেছে জমানো টাকা অনেক বেশি বাড়িয়ে নেওয়ার আশায়। যা সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গিতে অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে মুনাফা কোথায় বাড়বে প্রতিনিয়ত সেই হিসেব করে চলা এবং তার নিরিখে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পাশাপাশি সচেতন লগ্নিকারীদের আরও একটি বিষয় সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত। আর সেটা হল মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেনের খরচ (ট্রানজাকশন কস্ট)। কারণ প্রথম থেকেই এই খরচ হিসেব না-করে বারে বারে ফান্ড বদল বা একই তহবিল এ দিক-ও দিক করতে থাকলে আখেরে লাভের গুড় অনেকটাই চলে যেতে পারে এর গ্রাসে।

বাড়তি দায়

আলোচনাটা সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আগে প্রথমেই বলা দরকার মিউচুয়াল ফান্ডের লেনদেন সংক্রান্ত খরচ আসলে কী?

ধরুন, আপনি কোনও অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থার কাছ থেকে একটি ফান্ড কিনলেন। তার জন্য আপনার ইচ্ছে ও সামর্থ্য অনুযায়ীই টাকা খাটাবেন আপনি। কিন্তু ওই লগ্নির পাশাপাশি আরও কয়েকটি খরচ থাকে ফান্ডের। যার মধ্যে রয়েছে ব্রোকারেজ ফি, পরিষেবা প্রদান ও পরিচালনার ফি, ডিস্ট্রিবিউশন কমিশন-সহ ফান্ড চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় আরও বেশ কয়েকটি বিষয়। এই সবগুলিকেই একত্রিত করে হিসেব হয় লেনদেন সংক্রান্ত মোট খরচ।

এ ছাড়া, কিছু ক্লোজড এন্ড ফান্ডের (নির্দিষ্ট মেয়াদের ফান্ড) ক্ষেত্রে মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগেই যদি আপনি ফান্ড ভাঙিয়ে বেরিয়ে যান, তা হলে লাগতে পারে আরও একটি খরচ, যাকে বলে এগ্‌জিট লোড। ওপেন এন্ড ফান্ড অর্থাত্‌ যেগুলি কেনা বা বিক্রির নির্দিষ্ট সময় নেই, সেগুলির ক্ষেত্রেও কিছু সংস্থা অনেক সময়ে এগ্‌জিট লোড নেয় ফান্ড ভাঙিয়ে বেরোনোর একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে। এই এগ্‌জিট লোডও কিন্তু লেনদেন খরচের মধ্যেই পড়ে। এই খরচ ফান্ডের রিটার্নের খানিকটা খেয়ে নেয়।

মিউচুয়াল ফান্ডের পরিভাষায় সব ধরনের লেনদেন খরচকে সম্মিলিত ভাবে বলা হয় ‘টোটাল এক্সপেন্স রেশিও’। শতাংশে এর হিসেব দেয় অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাগুলি। বোঝাই যাচ্ছে, রেশিও কম হওয়া লগ্নিকারীর পক্ষে মঙ্গল। কারণ রেশিও কম থাকলে তাঁর মোট রিটার্ন বাড়বে। আর এই কারণেই খরচ বাঁচানোর পরিকল্পনা করে তবেই লগ্নি সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

হাতে রইল পেন্সিল

ফান্ডে লগ্নি করলে যে লেনদেন খরচ খাতে বাড়তি টাকা বেরোবে সে তো বোঝা গেল। এমনকী তা লগ্নিকারীর লাভের পরিমাণে ভাগ বসাচ্ছে সেটাও পরিষ্কার। কিন্তু প্রশ্ন হল, প্রয়োজনের তুলনায় বেশি বার ফান্ড কেনাবেচার ক্ষেত্রে সাবধান হওয়ার প্রসঙ্গ উঠছে কেন? সেটাই স্পষ্ট করি এ বার।

শেয়ার বাজার নিশ্চয়ই ভাল। অতএব অন্য জায়গা থেকে বিনিয়োগ সরিয়ে এনে আপনি ফান্ড কিনলেন। কিন্তু এতে যেটা হল

আপনি একটি উদ্দেশ্য নিয়ে হয়তো তুলনায় স্থায়ী এবং ঝুঁকিহীন জায়গায় (সঞ্চয়ের অন্য কোনও মাধ্যমে বা অন্য কোনও ফান্ডে) টাকা রেখেছিলেন। কিন্তু লাভের লোভে সেই লক্ষ্যে জলাঞ্জলি দিলেন। অথচ কিছু দিন পরে দেখলেন, যে-ভাবে ও যতটা ফান্ডের ন্যাভ বাড়বে ভাবছিলেন, সে ভাবে বাড়ল না। অর্থাত্‌ আপনার আশা পূর্ণ হল না। বরং মাঝেমধ্যে বাজার নামার কারণে হয়তো তা পড়ছে। ব্যস। ঝুঁকির প্রথম আভাস পেয়েই ফের আপনার সিদ্ধান্ত বদলাল। এবং আপনি ভুলে গেলেন যে, শেয়ার ভিত্তিক ফান্ডে মুনাফা করতে গেলে দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নি করে যাওয়াটাই দস্তুর। ফলে আবার আপনি ফিরে গেলেন পুরনো সঞ্চয়ের মাধ্যমে বা অন্য কোনও ফান্ডে। একবার নয়, রিটার্ন বাড়ানোর আশায় আপনি যদি বারে বারেই একই তহবিল এ ভাবে সরাতে থাকেন, তা হলে কিন্তু শেষ পর্যন্ত লাভের ঝুলি তেমন না-ও ভরতে পারে।

কারণ এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি দেখেই চটজলদি ব্যাঙ্ক বা অন্য কোনও সঞ্চয়ের মাধ্যমে ফিরে গেলেও আপনাকে ফান্ডের লেনদেন খরচ গুনতেই হচ্ছে। অথচ সেই অনুপাতে মুনাফা হয়তো হয়নি। এ ভাবে ঘন ঘন লগ্নির মাধ্যম বদল করে ফান্ডে আসলে এবং বেরিয়ে গেলে, আপনার লাভ হোক চাই না-হোক, প্রতিবারই লেনদেন খরচ গুনতে হবে। ফলে সব মিলিয়ে আপনার পকেট থেকে যে কত টাকা বেরিয়ে যাবে, আপনি ধরতেই পারবেন না।

আবার যদি অনেক বেশি বার এক ফান্ড থেকে অন্য ফান্ডে একই তহবিল সরাতে থাকেন, তা হলেও প্রত্যেক বারই প্রতিটি ফান্ডের লেনদেন খরচ বইতে হচ্ছে। হিসাব করলে দেখবেন সব মিলিয়ে অঙ্কটা পিলে চমকে দেওয়ার মতো হতে পারে। অর্থাত্‌ যে লাভের কথা মাথায় রেখে বার বার ফান্ড কেনাবেচা করছেন, তার অনেকটাই লেনদেন খরচের ঝুলিতে চেপে বেরিয়ে যাচ্ছে।

শেয়ার বাজার মোটামুটি ভাল অবস্থায় আছে বলে ইকুইটি ফান্ডের কথা মাথায় রেখেই এখানে বিষয়টি ব্যাখ্যা করা হল বটে। তবে লাভের লক্ষ্যে অন্যান্য ধরনের ফান্ডের ক্ষেত্রেও একই তহবিল বার বার সরিয়ে কেনাবেচার করার প্রবণতা দেখা যায় অনেকের মধ্যে। তাতেও এই একই সমস্যা। মাথায় থাকে না এই লেনদেন খরচের বিষয়টি। ফলে একটি তহবিল থেকে ফান্ড ধরে রেখে যা লাভ করা যেত, তার অনেকটাই বেরিয়ে যায় বারে বারে তা বদল করার দরুন।

আর একটি বিষয়ও মাথায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ। চরিত্রগত ভাবেই মিউচুয়াল ফান্ড কেনা ও বেচা অন্য অনেক লগ্নির তুলনায় সহজ। প্রকৃতপক্ষে, সহজে ফান্ড কেনা ও বিক্রির পথ খুলে রাখা লগ্নিকারী টানার অন্যতম হাতিয়ার অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট সংস্থাগুলির। বিশেষ করে বাজার ভাল থাকার সময়ে এই সুবিধার অপব্যবহার করে অনেকে। কারণ একটি তহবিল যত বেশি বার বিভিন্ন ফান্ডে সরিয়ে সরিয়ে খাটাবেন, সংস্থার লাভ কিন্তু তত বেশি। যদিও তাতে লগ্নিকারীর লোকসানের সম্ভাবনাই বাড়ে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে এসআইপি-র লগ্নিতেও কিন্তু সতর্ক থাকতে হবে। ধরুন, একটা লম্বা সময়ের জন্য ইকুইটি ফান্ডে এসআইপি করলেন আপনি। যেখানে নির্দিষ্ট সময় অন্তর নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা জমা দিতে হচ্ছে। বাজার বাড়ায় ফান্ডের ন্যাভও বাড়ছে। এ বার ধরুন, আপনি কোনও কারণে এসআইপিতে জমা তহবিলের (মুনাফা সমেত) একটা অংশ তুলে নিতে চান এবং বাকিটা দিয়ে তা যেমন চলছিল চালিয়ে যেতে চান। সে ক্ষেত্রে যদি ওই এসআইপি-তে এগ্‌জিট লোড থাকে, তা হলে কিন্তু লেনদেন খরচের বহর ভয় পাইয়ে দেওয়ার মতো হতে পারে। ফলে বারে বারে এটা করতে থাকলে খরচের খাতে নিজের অজান্তেই অনেকটা টাকা বেরিয়ে যাবে।

অতএব...

গোটা বিষয়টি থেকে একটাই কথা উঠে আসে কোনও এক সময়ে একটি ফান্ড থেকে ভাল রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতেই পারে এবং আপনি তাতে তহবিল সরিয়েও আনতে পারেন। কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি বার একই তহবিলের লগ্নির ক্ষেত্র বদলের আগে বা এক ফান্ড থেকে অন্য ফান্ডে তা ঘন ঘন স্থানান্তরিত করার আগে ভাল করে ভাবনা-চিন্তা করে নিন। দেখে নিন, সত্যিই ওই বদলের কোনও দরকার আছে কিনা। এটা হতেই পারে, ওই তহবিল যতটা বাড়াবেন ভেবে বা তার থেকে যতটা লাভ করবেন ভেবে তাড়াহুড়ো করে সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, বর্তমান জায়গায় দাঁড়িয়েই সেই লক্ষ্য পূরণ করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে কেনই বা শুধু শুধু লেনদেন খরচের খাতে টাকাগুলো গুনবেন আপনি!

লেখক মিউচুয়াল ফান্ড বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

টুকরো খবর

জীবনবিমায় উদ্যোগ রিলায়্যান্স লাইফের

জীবনবিমা গ্রাহকদের বিশেষ সুবিধা দিতে উদ্যোগী হল রিলায়্যান্স লাইফ ইনশিওরেন্স। সেই লক্ষ্যে ‘ক্লেমস গ্যারান্টি’ নামের একটি প্রকল্প চালু করেছে তারা। সংস্থার দাবি, এই প্রকল্পে বিমাকারীর মৃত্যু হলে ১২টি কাজের দিনের মধ্যে বিমার টাকা তাঁর উত্তরাধিকারীর হাতে তুলে দেওয়া হবে। সে জন্য নমিনিকে উপযুক্ত প্রমাণ দিতে হবে। তবে, বিমার টাকা পেতে হলে কমপক্ষে তিন বছর প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে বলে জানিয়েছে সংস্থা। ইউলিপ প্রকল্পের ক্ষেত্রে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে টাকা ফেরতের ব্যবস্থা নেবে তারা। যদি ওই নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সংস্থা টাকা ফেরত দিতে না-পারে, তখন ৬.৫% হারে সুদও দেওয়া হবে বলে দাবি তাদের।

ডিএসপি ব্ল্যাকরকের নয়া মিউচুয়াল ফান্ড

বাজারে নতুন একটি মিউচুয়াল ফান্ড প্রকল্প আনল ডিএসপি ব্ল্যাকরক। এই গ্লোবাল অ্যালোকেশন ফান্ডটি একটি ফান্ড অব ফান্ডস। যার টাকা মূলত খাটানো হবে সংস্থারই ইন্টারন্যাশনাল ফান্ডে। এটি ওপেন এন্ডেড। প্রাথমিক পর্যায়ে লগ্নি করা যাবে আজ, বৃহস্পতিবার পর্যন্ত। তার পর থেকে ন্যাভের ভিত্তিতে লগ্নি করা যাবে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

mutual fund profit nilanjan dey
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE