Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Presents
রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট

লগ্নির নতুন পথ

চড়া দাম জমি-বাড়ির বাজারে পা রাখতে দিচ্ছে না। হাতে অন্তত লাখ দুই-তিন আছে কি? তা হলে ভেবে দেখতে পারেন। বহু লগ্নিকারী রয়েছেন, যাঁরা লাভের আশায় জমি-বাড়ি-সম্পত্তি (রিয়েল এস্টেট) কিনে রাখতে চান, কিন্তু পুঁজির অভাবে পারেন না। কারণ বাস্তবে এ ধরনের সম্পত্তি কিনতে গেলে এক লপ্তে অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়ে। এই সমস্ত লগ্নিকারীর জন্য এ বার ভারতের বাজারে আসতে চলেছে বিনিয়োগের সম্পূর্ণ নতুন একটি মাধ্যম।

নীলাঞ্জন দে
শেষ আপডেট: ২৩ অক্টোবর ২০১৪ ০২:২১
Share: Save:

বহু লগ্নিকারী রয়েছেন, যাঁরা লাভের আশায় জমি-বাড়ি-সম্পত্তি (রিয়েল এস্টেট) কিনে রাখতে চান, কিন্তু পুঁজির অভাবে পারেন না। কারণ বাস্তবে এ ধরনের সম্পত্তি কিনতে গেলে এক লপ্তে অনেক বেশি অর্থের প্রয়োজন পড়ে। এই সমস্ত লগ্নিকারীর জন্য এ বার ভারতের বাজারে আসতে চলেছে বিনিয়োগের সম্পূর্ণ নতুন একটি মাধ্যম। নাম রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট (আরইআইটি)। যেটি বাজারের মাধ্যমে অত্যন্ত সংগঠিত ভাবে লগ্নির সুযোগ করে দেবে রিয়েল এস্টেটে। আরও স্পষ্ট ভাবে বললে এর মাধ্যমে লগ্নি করা যাবে বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত হবে এমন আবাসনে।

বাণিজ্যিক আবাসনে লগ্নি টানার এই ট্রাস্ট আকারে-প্রকারে অনেকটা মিউচুয়াল ফান্ডের মতো। ফান্ডের মতো এতেও লাভ-লোকসানের হিসেব করার জন্য ‘ন্যাভ’ কষা হবে। আবার একই সঙ্গে স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত করে শেয়ারের মতোই কেনাবেচা করা যাবে এই ধরনের ট্রাস্টের ইউনিট। যদিও এতে নূন্যতম লগ্নির অঙ্ক ২ লক্ষ টাকা হওয়ায় বুঝতে কষ্ট হয় না যে, নিতান্ত সাধারণ রোজগেরেদের লগ্নির জায়গা করে দেওয়া আরইআইটির উদ্দেশ্য নয়। তবুও সচেতন লগ্নিকারী হিসেবে সকলেরই এই লগ্নি ট্রাস্টের খুঁটিনাটি জেনে রাখা উচিত।

চরিত্র বিচার

ব্রিটেন, আমেরিকা, জাপান, হংকং, সিঙ্গাপুরের মতো উন্নত দেশগুলির বাজারে বহু দিন ধরেই চালু রয়েছে এই ধরনের লগ্নি ট্রাস্ট। এ বার সেই ধাঁচেই ভারতের জন্য তৈরি হচ্ছে রিয়েল এস্টেট ইনভেস্টমেন্ট ট্রাস্ট। অর্থনীতিকে পুরোপুরি ঘুরিয়ে দাঁড় করাতে বাণিজ্যিক আবাসন, দোকান, অফিস, হোটেল, গুদাম ইত্যাদিতে দেশি-বিদেশি লগ্নি টানাই যার লক্ষ্য।

চলুন এ বার দেখে নিই আরইআইটির চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলি—

এটি ট্রাস্ট হিসেবেই তৈরি হবে। মিউচুয়াল ফান্ডের মতো কেনা-বেচা হবে এর ইউনিট। বাজারে আসতে হলে লাগবে সেবির অনুমোদন।

মিউচুয়াল ফান্ডের মতোই এখানে থাকবে ট্রাস্টি, স্পনসর ও ম্যানেজার।

যে কোনও বাণিজ্যিক অর্থাত্‌ ব্যবসায়িক ভাবে ব্যবহার করার ফলে আয় হয়, এমন আবাসনে লগ্নি করবে আরইআইটি। লগ্নি সরাসরিও করা যেতে পারে। আবার বিশেষ সংস্থা (স্পেশ্যাল পারপাস ভেহিক্ল বা এসপিভি) গড়েও হতে পারে। তবে ওই এসপিভি-র ৫০ শতাংশের বেশি শেয়ার থাকতে হবে ট্রাস্টের হাতে।

আরইআইটির সম্পদের পরিমাণ হতে হবে কমপক্ষে ৫০০ কোটি টাকার বেশি। মিউচুয়াল ফান্ডের মতোই প্রথমবার ইউনিট বাজারে ছেড়ে তহবিল তুলবে ট্রাস্ট। এই প্রাথমিক ইস্যুর আকার হতে হবে অন্তত ২৫০ কোটি টাকা। পরবর্তী কালে ফের তহবিল তোলার জন্য ফলো অন ইস্যু বা রাইটস ইস্যু করা যাবে।

ট্রাস্টের ইউনিট কিনতে হলে লগ্নিকারীকে ন্যূনতম ২ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করতেই হবে।

স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত করে শেয়ারের মতোই কেনা-বেচা করা যাবে লগ্নি ট্রাস্টটির ইউনিট।

শেয়ার বাজারে লেনদেন করা সময়ে কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা মূল্যের ইউনিট কেনা-বেচা করা বাধ্যতামূলক।

ট্রাস্টের মোট তহবিলের অন্তত ৮০% লগ্নি করতেই হবে বাণিজ্যিক আবাসনে। বাকি অংশ লাগানো যাবে আবাসন সংস্থার শেয়ার, ঋণপত্র ইত্যাদিতে।

নিশানায় কারা

মিউচুয়াল ফান্ডের সঙ্গে আরইআইটির অনেক মিল আছে। কিন্তু ফান্ডের মতো তা সাধারণ রোজগেরেদের নাগালের মধ্যে নেই। ন্যূনতম ২ লক্ষ টাকার প্রাথমিক লগ্নি বা কমপক্ষে ১ লক্ষ টাকা মূল্যের ইউনিট কেনা-বেচার শর্ত পূরণ করার জন্য অবশ্যই পকেটের অন্তত একটু জোর লাগে। যেখানে মিউচুয়াল ফান্ডে টাকা ঢালতে গেলে হাতে মাত্র কয়েক হাজারের পুঁজি থাকলেই চলে।

সুতরাং এটা খুব পরিষ্কার যে, এক লপ্তে কয়েক লক্ষ টাকার পুঁজি ঢালা যাঁদের পক্ষে তেমন সমস্যা তৈরি করে না, তাঁরাই আরইআইটির নিশানায়। বর্তমানে এ রাজ্যের শহরতলিতেই জমি-বাড়ির দাম ৩০-৪০ লক্ষ টাকা পেরিয়ে গিয়েছে। ততটা উপরে ওঠা যদি সম্ভব না-ও হয়, তবে ওই লগ্নিকারীরা অন্তত যাতে তুলনায় কম পুঁজি ঢেলে লগ্নি করার সুবিধা নিতে পারেন, প্রধানত সেই লক্ষ্যেই আনা হয়েছে লগ্নির এই মাধ্যম।

কাজেই অতি সাধারণ আয়ের কেউ রিয়েল এস্টেটে বিনিয়োগ করতে চাইলে, ওই ক্ষেত্রের শেয়ারে টাকা ঢালে এমন ফান্ড কিনতে পারেন। কিংবা একটু সাহসী হয়ে সরাসরি বিভিন্ন রিয়েল এস্টেট সংস্থার শেয়ারও কিনে ফেলতে পারেন। কিন্তু রিয়েল এস্টেট লগ্নি ট্রাস্টের কথা তাঁদের পক্ষে সাধারণ ভাবে ভাবা হয়তো একটু মুশকিলই।

সুরক্ষা-সুবিধা

আরইআইটি গড়ার নির্দেশিকা অনুমোদন করেছে বাজার নিয়ন্ত্রক সেবি। লগ্নিকারীর সুরক্ষা ও সুবিধার কথা মাথায় রেখে সেখানে রয়েছে বেশ কিছু বন্দোবস্ত। যেমন

আরইআইটি মুনাফার মুখ দেখলে, অন্তত প্রতি ছ’মাসে সেই লাভের ন্যূনতম ৯০% ডিভিডেন্ড হিসেবে দিতে হবে লগ্নিকারীদের।

প্রতি বছর সম্পূর্ণ মূল্যায়ন করা হবে লগ্নি ট্রাস্টের। আর প্রতি ছ’মাসে খতিয়ে দেখা হবে সেই তথ্য ঠিক আছে কি না।

ওই মূল্যায়ন বা খতিয়ে দেখার দিন থেকে পরের ১৫ দিনের মধ্যে ট্রাস্টের ন্যাভ ঘোষণা করতে হবে।

বাস্তবে জমি-বাড়ির মতো সম্পত্তি কিনতে গেলে নথিপত্র জোগাড়ের জন্য বিশাল ঝক্কি থাকে, এখানে লগ্নি করার ক্ষেত্রে সেই ঝামেলা বইতে হবে না।

রিটার্ন কেমন?

যে-কোনও লগ্নির প্রধান লক্ষ্যই হল ভাল রিটার্ন ঝুলিতে পোরা। লগ্নিকারীর আয় যা-ই হোক না কেন, তাতে এই চাহিদার হেরফের ঘটে না। সে ক্ষেত্রে মিউচুয়াল ফান্ড বা শেয়ারের মতো এই লগ্নি ট্রাস্টেও তহবিল কতটা ফুলেফেঁপে উঠছে, সেটাই প্রধান বিচার্য বিষয়। লগ্নিকারীর আয়ের সুযোগ রয়েছে ডিভিডেন্ড থেকেও। তবে আগামী দিনে সত্যিই এই ট্রাস্ট কতটা রিটার্ন দিতে পারবে, এই মুহূর্তে সে প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর দেওয়া সম্ভব নয়। আমি এ ব্যাপারে কোনও রকম অনুমানের মধ্যেও যাব না। শুধু এটুকু বলতে পারি, অতীতে রিয়েল এস্টেট ভালই মুনাফা দিয়েছে লগ্নিকারীদের। কারণ, জমি-বাড়ির মতো সম্পত্তির মূল্যায়ন বেড়েই চলেছে। এমনকী সেটা এতটাই বেশি যে, সমালোচকদের একাংশ সন্দেহও প্রকাশ করছেন যে, ওই দাম এতটা বেশি হওয়া স্বাভাবিক কি না।

তবে এখানে একটা কথা বলে রাখা ভাল যে, এ ব্যাপারে কোনও সন্দেহ নেই রিয়েল এস্টেট যেমন সম্ভাবনাময়, তেমনই আবার ঝুঁকিপূর্ণ। বাজার নিয়ন্ত্রক সেবির অবশ্য আশ্বাস, এই ক্ষেত্রের বিভিন্ন ঝুঁকি সামলানো যাবে আরইআইটির মাধ্যমেই।

আরইআইটি নিয়ে আশায় বুক বাঁধছে সব পক্ষই। সেবি মনে করছে এর হাত ধরে বড় মাপের দেশি-বিদেশি লগ্নি আসবে। লগ্নিকারীদের আশা, চিরাচরিত পথের বাইরে বিনিয়োগ ছড়িয়ে দেওয়ার আর একটি সুযোগ আসছে তাঁদের সামনে। শিল্পমহলের ধারণা, সম্ভাবনাময় নির্মাণ শিল্প এর হাত ধরে আরও বিকাশের রাস্তা খুঁজে পাবে। তবে কতটা দক্ষতার সঙ্গে এই ট্রাস্ট পরিচালনা করা হবে সেটা সময়ই বলবে। যা-ই হোক না কেন, একটা কথা অবশ্য আমি আবারও বলব, লগ্নি সংক্রান্ত যে-কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে পারলে একবার কোনও পেশাদার আর্থিক উপদেষ্টার সঙ্গে অবশ্যই পরামর্শ করে নিন।

লেখক মিউচুয়াল ফান্ড বিশেষজ্ঞ(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

real estate investment trust nilanjan dey tips
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE