Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Presents
গোল্ড ফান্ড

সোনা এখন দূরেই ভাল

গোল্ড ফান্ডে টাকা ঢেলে আপনি কি বড় রিটার্নের আশায় বসে? তা হলে জেনে রাখুন, গত ১২ মাসে ওই ফান্ডের মূল্য কিন্তু বাড়েনি বললেই চলে। নিখছেন নীলাঞ্জন দে সোনা ভাল। কিন্তু সব সময়ে নয়। অন্তত সাম্প্রতিক কালে মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার এই সত্যিটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪— এ দিন গোল্ড ফান্ডের ন্যাভ যা দাঁড়াল, সেই অনুযায়ী ফান্ডের মূল্য গত ১২ মাসে বেড়েছে মাত্র ১%। যে-সব লগ্নিকারী সোনা নির্ভর ফান্ডে টাকা ঢালার পরিমাণ বাড়িয়ে গিয়েছেন, তাঁদের জন্য এ খবর ঘুমহীন-রাত বয়ে আনতে পারে।

শেষ আপডেট: ১৩ মার্চ ২০১৪ ০২:২৫
Share: Save:

সোনা ভাল। কিন্তু সব সময়ে নয়। অন্তত সাম্প্রতিক কালে মিউচুয়াল ফান্ডের বাজার এই সত্যিটাই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৪— এ দিন গোল্ড ফান্ডের ন্যাভ যা দাঁড়াল, সেই অনুযায়ী ফান্ডের মূল্য গত ১২ মাসে বেড়েছে মাত্র ১%। যে-সব লগ্নিকারী সোনা নির্ভর ফান্ডে টাকা ঢালার পরিমাণ বাড়িয়ে গিয়েছেন, তাঁদের জন্য এ খবর ঘুমহীন-রাত বয়ে আনতে পারে। আর যাঁরা এই মুহূর্তে এ রকম কোনও ফান্ডে লগ্নির কথা ভাবছেন, তাঁদের জন্য এটা আগাম সতর্কবার্তা। তবে খুব বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ার আগে একটা কথা বলে রাখি, যাঁরা গোল্ড ফান্ডের করুণ অবস্থাটা বুঝতে না-পেরে লগ্নি চালিয়ে গিয়েছেন, তাঁদের এখনই হাল ছেড়ে দেওয়ার কোনও কারণ নেই। ভাল করে চিন্তা-ভাবনা করে এগোতে পারলে লোকসান এড়িয়ে লাভের মুখ দেখার পথও খোলা আছে। চলুন বিষয়টা খতিয়ে দেখে নিই।

আপনি কোন দলে?

সোনায় দু’ভাবে লগ্নি করা যায়। প্রথম পথ, সরাসরি সোনা কেনা। তবে সাধারণ লগ্নিকারীদের অনেকের পক্ষেই এই দামি ধাতু নিয়মিত কিনতে থাকা সম্ভব হয় না। তাই এ ক্ষেত্রে সম্পদ তৈরির দ্বিতীয় পথটি হল, সোনা নির্ভর মিউচুয়াল ফান্ড কেনা। এই ফান্ড আবার দু’ধরনের হতে পারে। ইটিএফ এবং ফান্ড অব ফান্ডস।

১) ইটিএফ মানে হচ্ছে এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ড। বোঝাই যাচ্ছে এই ইনডেক্স ফান্ডটি (যে-ফান্ড নির্দিষ্ট একটি ইনডেক্স বা সূচক বেছে নিয়ে, তার আওতায় থাকা বিভিন্ন সংস্থার শেয়ারে লগ্নি করে) স্টক এক্সচেঞ্জে নথিভুক্ত থাকে। সূচক হিসেবে গোল্ড ইটিএফ ফান্ড বেছে নেয় গোল্ড ইনডেক্স-কে। শেয়ার বাজারে কিন্তু একাধিক গোল্ড ইনডেক্স থাকে। এই ইনডেক্স বাড়লে আপনার লাভ, পড়লে আপনার লগ্নির মূল্যও পড়বে। আর এই কারণেই বিশ্ব জুড়ে সোনার দাম বেশ কয়েক মাস ধরে পড়তে থাকায়, বহু লগ্নিকারী ভয় পেয়ে গিয়েছেন। লোকসানের আশঙ্কায় ইটিএফে যাঁরা লগ্নি করেছেন, তাঁদের একটা বড় অংশ সোনা বেচে শেয়ার বাজার থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন। ফলে পড়েছে গোল্ড ইনডেক্স। যার জেরে নিম্নমুখী হয়েছে ইটিএফের দাম।

২) অন্য দিকে, ফান্ড অব ফান্ডস হল এমন এক ধরনের ফান্ড, যা বিভিন্ন ধরনের গোল্ড ইটিএফে টাকা খাটায়। বলা যেতে পারে, এটা পরোক্ষ ভাবে গোল্ড ইটিএফ-এই লগ্নি করে। কাজেই খুব স্বাভাবিক ভাবে গোল্ড ইটিএফ ধাক্কা খাওয়ায়, তার জের পড়েছে এই ফান্ডের উপরেও।

ভাবতে বসুন

দেখুন, যে-কোনও লগ্নিতেই একটা ব্যাপার ধ্রুবসত্য। সেটা হল, আপনি সঞ্চয়কে কতটা বাড়াতে চান, সেই লক্ষ্য এবং আপনার ঝুঁকি নেওয়ার ক্ষমতা— এই দু’টোই আর পাঁচটা মানুষের থেকে আলাদা হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনি কী ভাবে লগ্নি করবেন, সেটাও যেমন ওই রিটার্নের খিদে ও ঝুঁকি বওয়ার ক্ষমতার উপর নির্ভর করবে, তেমনই লগ্নি থেকে বেরোনোর উপায় কী হতে পারে, সেই ভাবনাতেও মূল বিষয় এই দু’টিই। এ ক্ষেত্রে সম্ভাব্য সমাধান হল—

• যদি আপনার লগ্নির লক্ষ্য ইতিমধ্যেই পূরণ হয়ে গিয়ে থাকে, তবে অনিশ্চয়তায় ঘিরে থাকা ফান্ডটি ভাঙিয়ে বেরিয়ে আসার কথা ভাবতে পারেন। একলপ্তে সম্ভব না-হলে, অন্তত ধাপে ধাপে তো বেরোনো যেতেই পারে।

• যদি ফান্ড-মূল্য এখন মুনাফা দেওয়ার মতো অবস্থায় না-থাকে, তা হলে আপনি মাঝারি বা দীর্ঘ মেয়াদের জন্য সোনা নির্ভর নতুন ফান্ড কেনার কথা ভাবতে পারেন। তবে সেটা সোনার দামে বড়সড় পতন হলে, তবেই। নয়তো এ পর্যন্ত হওয়া লোকসান ভবিষ্যতে পোষাতে পারবেন না।

• আবার চাইলে ফের সোনা নির্ভর ফান্ড না-কিনে, অন্য ভাল কোনও ফান্ডে লগ্নি করেও ভবিষ্যতে লোকসান উসুল করার চেষ্টা করতে পারেন।

মাথায় রেখে এগোন

এই পর্যন্ত এসে আপনাকে কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মাথায় রেখে এগোতে হবে। যাতে যে-সিদ্ধান্তই নিন না-কেন, একটা সময়ের পরে আপনি যেন সঞ্চয় বাড়ানোর লক্ষ্যে নিরাপদে পৌঁছে যেতে পারেন। বিষয়গুলি হল—

ক) আপনার টাকা-পয়সা কোন কোন খাতে লগ্নি করে রেখেছেন, সেই নথি নিয়ে বসুন। হিসেব করে দেখুন, এর মধ্যে গোল্ড ফান্ডে কত টাকা ঢালা হয়েছে। পরিমাণটা বেশি হলে, এখনই তা কমাতে শুরু করুন।

খ) আপনি যদি দ্রুত গোল্ড ফান্ড বেচে বেরিয়ে আসতে চান, তা হলে বেশি লোভ করবেন না। এই মুহূর্তে যতটা বেশি রিটার্ন পাবেন, সেটাকেই যথেষ্ট মনে করবেন। কারণ মনমতো আরও বড় মুনাফায় ফান্ড বেচার সুযোগ এখনই আর না-ও আসতে পারে।

গ) লোকসান পুষিয়ে নেওয়ার জেদে সত্যিই যদি ফের সোনা নির্ভর নতুন কোনও ফান্ড কিনবেন বলে মনস্থির করেন, তা হলে প্রথম থেকেই ছক কষে এগোন। সোনার দাম অন্তত ৫ থেকে ১০% নামলে তবেই ফান্ড কেনার কথা ভাবতে পারেন।

মনে রাখবেন, যে-কোনও লগ্নিতেই সময়ে সময়ে মুনাফা ঘরে তোলার সুযোগ থাকা উচিত। আদর্শ লগ্নি-কৌশল সেটাই। সোনাও এত দিন এই চাহিদা মিটিয়ে এসেছে। বহু বছর ধরে তরতরিয়ে উঠেছে তার দাম। সঞ্চয় বাড়ানোর পথ হিসেবে জিতে এসেছে লগ্নিকারীদের ভরপুর আস্থা। আজ বাজার-পরিস্থিতির চাপে পড়ে ছবিটা যদি একটু বদলায়, তা হলে হা-হুতাশের কোনও কারণ নেই। দামের ওঠা-পড়ার বৃত্তে এটাই স্বাভাবিক ধরে নিয়ে বরং আপাতত সোনাকে একটু দূরে রাখাই ভাল।

পরামর্শদাতা মিউচুয়াল ফান্ড বিশেষজ্ঞ

(মতামত ব্যক্তিগত)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

gold fund nilanjan dey
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE