Advertisement
০৪ জুন ২০২৪
Presents

সুরক্ষা

তিন প্রকল্প। বিমা ও পেনশনের। মূলত গরিব মানুষের কথা মাথায় রেখেই। মোদী সরকারের দাবি, আগামী দিনে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষের রক্ষাকবচ হবে এই তিন প্রকল্প। কী ভাবে? চলুন চোখ রাখিতিন প্রকল্প। বিমা ও পেনশনের। মূলত গরিব মানুষের কথা মাথায় রেখেই। মোদী সরকারের দাবি, আগামী দিনে আর্থিক ভাবে পিছিয়ে থাকা মানুষের রক্ষাকবচ হবে এই তিন প্রকল্প। কী ভাবে? চলুন চোখ রাখি

অমিতাভ গুহ সরকার
শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৫ ০১:৫৩
Share: Save:

যিনি উদয়াস্ত রিক্সা চালিয়ে কিংবা বাড়ি বাড়ি কাজ করে পরিবারের মুখে ডাল-ভাত তুলে দেন, হয়তো আচমকা তিনি মারা গেলেন। তখন পরিবারের কী হবে?

তারপর এই যে রাস্তাঘাট, বড় বড় বাড়ি তৈরির কাজে জুতে থাকেন হাজার হাজার দিনমজুর, একটা সময়ের পরে তাঁদের শরীর আর দেয় না। অক্লান্ত পরিশ্রমের মাসুল দিয়ে এঁদের হয়তো ‘অবসর’ নিতে হয় বহু আগেই। একলা রোজগারের সংসারে হাল টানবে কে?

কোনওক্রমে অতি সামান্য আয়ের ভরসায় বেঁচে থাকা মানুষের জীবনে এ ধরনের প্রশ্নগুলোর উত্তর নেই। তবে নরেন্দ্র মোদীর সরকার সম্প্রতি এই সমস্ত সমস্যার কিছুটা সুরাহা বাতলেছে। সমাজের পিছিয়ে পড়াদের জন্য এ বারের বাজেটে কেন্দ্রের তিন দাওয়াই— ১২ টাকায় দুর্ঘটনা বিমা, ৩৩০ টাকায় জীবনবিমা ও বেলা শেষে পেনশনের সুবিধা। আর্থিক ভাবে দুর্বলদের মাথায় সুরক্ষার ছাতা ধরতে প্রকল্পগুলি সত্যি কতটা কার্যকর হবে, সেটা বলবে সময়। তবে এর সুবিধা নিতে হলে প্রথমে সকলকেই বিষয়গুলো জানতে হবে। বুঝতে হবে। এবং তারপর সিদ্ধান্ত নিতে হবে। নিজের প্রয়োজন না-থাকলে চোখ মেলে দেখতে হবে আশেপাশে কারা এর মাধ্যমে উপকৃত হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে তাঁদের এগিয়ে চলার পথ দেখাতে হবে। আমাদের আজকের আলোচনার লক্ষ্য প্রধানত এটাই।

ছাতার তলায়

মোদী সরকার সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলি এনেছে আর্থিক ভাবে দুর্বল, পিছিয়ে থাকা শ্রেণির বেঁচে থাকার খড়কুটো হিসেবে। অনেকে বলছেন, স্বাধীনতার এত বছর পর হতদরিদ্রের জন্য আনা সত্যিকারের সামাজিক সুরক্ষা। তবে এগুলি কতটা কার্যকর হবে এবং এর হাত ধরে তাঁদের জীবন কতখানি বদলাবে, সেটা দেখার জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।


এর আগে ২০১৪ সাল দেখেছে প্রধানমন্ত্রী জন-ধন প্রকল্প ঘিরে বিপুল উৎসাহ। যার মূল স্লোগানই ছিল, দেশে প্রত্যেকের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট। বিশেষত মহিলা ও দরিদ্রদের জন্য। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পের বীজ বোনা হয় এর মাধ্যমেই। এক বছরের কম সময়ে প্রকল্পটির অধীনে ১৫ কোটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা হয়েছে। এ বার ২০১৫ সালে সিদ্ধান্ত হল, মূলত এই সব অ্যাকাউন্টের মাধ্যমেই সমাজের একদম নিচু তলায় নামমাত্র মূল্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে ওই তিনটি সুরক্ষা প্রকল্প। এগুলি হল—

১) ১২ টাকায় ২ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বিমা। বছরে ১২ টাকা মানে, মাসে মাত্র ১ টাকা।

২) কমবেশি একদিনের মজুরিতে জীবনবিমা।

৩) শেষ জীবনে কানাকড়ি শূন্য হয়ে দিনযাপনের ভবিতব্য ঘোচাতে ন্যূনতম পেনশন।

এই সব সুযোগ পাওয়ার মূল শর্ত হল, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতেই হবে। প্রতিটি প্রকল্পের জন্য ছোট এক পাতার ফর্ম ভর্তি করে জমা করতে হবে আবেদনকারীর নিজের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে। এত কিছু নিজে না-করতে পারলে আশেপাশের কারও সাহায্য নিতে হবে। তবে একবার করা হয়ে গেলে দুশ্চিন্তা অনেক কমবে।

(১) প্রধানমন্ত্রী সুরক্ষা বিমা যোজনা

পরিবারের একমাত্র বা প্রধান রোজগেরে ব্যক্তির আচমকা দুর্ঘটনা ঘটলে তলিয়ে যায় বহু পরিবার। উঠে দাঁড়ানোর আর্থিক জোর থাকে না। সেই ক্ষতি থেকে বাঁচাতেই এই বিমা।

ধরন: দুর্ঘটনা বিমা।

বিমা কেনার যোগ্য কারা: যে- কোনও ব্যক্তি, যাঁর একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আছে।

বয়স: ১৮ থেকে ৭০ বছরের মধ্যে।

প্রিমিয়াম: বছরে ১২ টাকা। অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি কেটে নেওয়া হবে। অন্য কোনও ভাবে প্রিমিয়াম দেওয়া যাবে না।

যোগ দেওয়ার পদ্ধতি: প্রতি বছর ১ জুনের আগে একটি অতি সহজ ফর্ম ভর্তি করে জমা করতে হবে ব্যাঙ্কে। ফর্ম জমা নিয়ে যে রসিদ দেওয়া হবে সেটিই পলিসিপত্র। খুব যত্ন করে রাখতে হবে এই ছোট কাগজটি। নমিনির নাম অবশ্যই উল্লেখ করতে হবে আবেদনপত্রে।

বিমার পরিমাণ: দুর্ঘটনাজনিত কারণে মৃত্যু হলে অথবা পুরোপুরি অক্ষম হয়ে পড়লে পাওয়া যাবে ২ লক্ষ টাকা। আংশিক অক্ষমতার ক্ষেত্রে মিলতে পারে ১ লক্ষ টাকা।

মেয়াদ: প্রতি বছর ১ জুনের আগে রিনিউ করাতে হবে পলিসি। ব্যাঙ্কে লিখিত নির্দেশ দেওয়া থাকলে সময়মতো ফি-বছর অটো-ডেবিট (যে ব্যবস্থায় নির্দিষ্ট সময়ে ব্যাঙ্কই অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা কেটে নিয়ে সংশ্লিষ্ট সংস্থায় জমা করে দেয়) পদ্ধতিতে রিনিউ হয়ে যাবে সেটি। তবে যাঁরা ৩১ মে-র মধ্যে প্রিমিয়াম জমা করতে পারবেন না, তাঁরা ৩১ অগস্ট পর্যন্ত তা দেওয়ার সুযোগ পাবেন। পলিসির মেয়াদ অবশ্য সেই পরের বছরের ৩১ মে-তেই শেষ হবে।

কাদের জন্য উপযুক্ত: সকলের জন্য। বিশেষ করে দুর্ঘটনার ঝুঁকি রয়েছে এমন কাজ করেন যাঁরা। যেমন, গাড়ি-চালক, রাজমিস্ত্রি, রং মিস্ত্রি, কারখানার শ্রমিক, হকার, ঠিকা কাজের লোক, ফুটপাথবাসী, মৎস্যজীবী ইত্যাদি।

বিমা ইস্যু করবে কারা: মূলত সরকারি জেনারেল ইনশিওরেন্স কোম্পানি। বিভিন্ন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে।

সাড়া কেমন: এখনও পর্যন্ত অত্যন্ত উৎসাহজনক। চালু হওয়ার পরে মাত্র কয়েক দিনের মধ্যেই কয়েক কোটি মানুষ কিনে ফেলেছেন এই বিমা।

(২) প্রধানমন্ত্রী জীবন জ্যোতি

বিমা যোজনা

বাজার চলতি জীবনবিমাগুলি কেনার সাধ্য সকলের থাকে না। অথচ সবার জীবনের মূল্যই অপরিসীম, তা তাঁর রোজগার যত কমই হোক না কেন। এই জীবনবিমার লক্ষ্য তাই কম খরচে কিছুটা ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা।

ধরন: জীবনবিমা। এটি একটি টার্ম ইনশিওরেন্স। অর্থাৎ প্রিমিয়ামের টাকা ফেরত পাওয়া যায় না। তবে বিমা চলাকালীন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি মারা গেলে নমিনি ক্ষতিপূরণের টাকা পাবেন।

বিমার পরিমাণ: ২ লক্ষ টাকা।

বয়স: ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সের মধ্যে এই জীবনবিমা কেনা যাবে। তবে যাঁরা ৫০ বছর বয়সের মধ্যে পলিসি কিনবেন, তাঁরা এই প্রকল্প চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন ৫৫ বছর পর্যন্ত। সে ক্ষেত্রে প্রতি বছর শুধু বার্ষিক প্রিমিয়াম জমা করে যেতে হবে।

প্রিমিয়াম: বছরে ৩৩০ টাকা।

মেয়াদ: একটি বছরের ১ জুন থেকে শুরু করে পরের বছরের ৩১ মে পর্যন্ত এর মেয়াদ। অর্থাৎ এক বছর। এবং এই এক বছর পরে ফের প্রিমিয়াম দিয়ে পলিসি চালু রাখতে হবে। অর্থাৎ প্রতি বছর প্রিমিয়াম জমা দিতে হবে ৩১ মে-র মধ্যে। যাঁরা তা করতে পারবেন না, তাঁরা ৩১ অগস্ট পর্যন্ত প্রিমিয়াম দেওয়ার সুযোগ পেতে পারেন। তবে সে ক্ষেত্রেও প্রকল্পটির মেয়াদ আবার পরের বছর ৩১ মে-তেই শেষ হবে। অটো ডেবিটের সুবিধা আছে।

যোগ্যতা: আবেদনকারীর একটি ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থাকতেই হবে।

নমিনেশন: বিমাকারীর মৃত্যুর পরে কে বিমার টাকা পাবেন তা স্পষ্ট করে আবেদনপত্রে লিখতে হবে।

প্রাপ্তি: বিমা চলাকালীন কোনও কারণে মৃত্যু হলে নমিনি পাবেন ২ লক্ষ টাকা। অন্যথায় কোনও প্রাপ্তিযোগ নেই।

বিমাকারী কোম্পানি: মূলত জীবন বিমা নিগম (এলআইসি)।

যোগদানের পদ্ধতি: যে-ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে, সেখান থেকে ফর্ম নিয়ে, ঠিকঠাক ভর্তি করে সেই ব্যাঙ্কেই জমা দিতে হবে। একাধিক ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট থাকলেও একটি অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে একটি জীবন জ্যোতি বিমাই করা যাবে। আবেদনপত্রটি বেশ সরল। অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। প্রয়োজনে ব্যাঙ্ক কর্মী বা অন্য কারও সাহায্য নিতে হবে। রসিদ যত্ন করে রাখতে হবে। এটাই পলিসিপত্র।

কাদের জন্য উপযুক্ত: সকলের জন্য। বিশেষত যাঁদের পক্ষে মোটা টাকার জীবনবিমা করা সম্ভব নয়। মাত্র এক-দু’দিনের মজুরি দিয়ে গোটা বছরের জন্য এই বিমা করা যাবে। পরিবারের বড় ভরসা হয়ে উঠতে পারে এটি। চালু হওয়ার মাত্র পাঁচ দিনের মধ্যে এই প্রকল্পে সংগৃহীত হয়েছে কমবেশি ১.৬০ কোটি টাকা।

(৩) অটল পেনশন যোজনা

অবসরের পরে কী হবে, এটা ভাবলে ভাল ভাল বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করা পেশাদারদেরই ঘুম উড়ে যায়। তা হলে তাঁদের শেষ বয়সটা কেমন কাটবে, যাঁরা দিনের পর দিন, বছরের পর বছর ঘাম ঝরিয়ে কাজ করার পরে দেখেন সঞ্চয়ের জন্য কানাকড়িও বেঁচে নেই? তাঁদের জন্যই এই যোজনা।

ধরন: পেনশন প্রকল্প। মানে, বার্ধক্যে ন্যূনতম নিয়মিত আয়ের ব্যবস্থা।

যোগ দেওয়ার বয়স: ১৮ থেকে ৪০ বছর।

মেয়াদ: কত দিন জমানো যাবে, তা নির্ভর করবে বয়সের উপর। তবে কমপক্ষে ২০ বছর টাকা জমাতে হবে। যেমন, ১৮ বছর বয়সে শুরু করলে জমানো যাবে ৪২ বছর ধরে।

পেনশন শুরু: বয়স ৬০ বছর হলে।

পেনশনের অঙ্ক: কোন বয়সে প্রকল্প শুরু করা হল এবং নিয়মিত জমার অঙ্ক কত, সেই অনুয়ায়ী মাসে ১০০০, ২০০০, ৩০০০, ৪০০০ অথবা ৫০০০ টাকা।

যোগ্যতা: ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়স্ক যে-কোনও মানুষ, যাঁদের ব্যাঙ্কে অ্যাকাউন্ট আছে। তবে যাঁরা অন্য কোনও সরকারি সামাজিক সুরক্ষা পেয়ে থাকেন বা আয়করের আওতায় পড়েন, তাঁরা যোগ দিতে পারবেন না।

সরকারি অনুদান: যাঁরা ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই প্রকল্পে যোগ দেবেন, তাঁদের কেন্দ্র ৫ বছর ধরে জমার ৫০ শতাংশ অথবা বছরে ১০০০ টাকা, এর মধ্যে যেটি কম, তা অনুদান হিসেবে জমা করবে যোগ্য অ্যাকাউন্টগুলিতে (বিমার টাকাপয়সা লেনদেন যেটির মাধ্যমে হবে)। এই উৎসাহ ভাতা পেতে হলে দ্রুত শুরু করতে হবে প্রকল্প।

সেভিংস ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে অটো-ডেবিট পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট অঙ্ক জমা হবে প্রতি মাসে। বয়স অনুযায়ী মাসে কত জমা করলে বেলা শেষে কত পেনশন পাওয়া যাবে, তা দেওয়া হল সঙ্গের সারণিতে। খেয়াল রাখতে হবে অ্যাকাউন্টে যেন সব সময়ে প্রয়োজনীয় টাকা থাকে। একজন একটির বেশি পেনশন অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন না।

নমিনেশন: বাধ্যতামূলক।

কী ভাবে পাবেন: সদস্যের ৬০ বছর বয়স হলে জমা টাকার পুরোটা দিয়ে অ্যানুইটি কেনা হবে। তা থেকেই পেতে শুরু করবেন মাসিক পেনশন। সদস্যের মৃত্যু হলে জমা টাকার পুরোটা পাবেন তাঁর নমিনি। কত টাকা জমেছে তার হিসেব পাওয়া যেতে পারে এসএমএস-এর মাধ্যমে। দেওয়া হতে পারে অ্যাকাউন্ট স্টেটমেন্টও।

কাদের জন্য উপযুক্ত: স্বনির্ভর এবং অসংগঠিত ক্ষেত্রের অসংখ্য কর্মী, যাঁদের প্রভিডেন্ট ফান্ড, গ্র্যাচুইটি, পেনশন নেই ও যাঁরা আয়কর দেন না। অল্প অল্প করে জমিয়ে বার্ধক্যে এঁরা ন্যূনতম নিয়মিত আয় নিশ্চিত করতে পারেন এই প্রকল্পে। পেনশন পাওয়া নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। এতে কেন্দ্রীয় সরকারের ১০০ শতাংশ গ্যারান্টি রয়েছে। ৯ মে উদ্বোধন হওয়ার পর মাত্র ৫ দিনে এই প্রকল্পের সদস্য হয়েছেন ৭০,০০০ মানুষ।


সবিস্তার জানতে ক্লিক করুন।

দায়-দায়িত্ব

মূলত যাঁদের জন্য এই লেখা, তাঁদের অনেকের কাছেই হয়তো এটা পৌঁছবে না। কিংবা তাঁরা হয়তো এই সমস্ত পেনশন বা বিমা প্রকল্পগুলির তথ্য পড়া বা সেগুলি বোঝার মতো জায়গাতেই নেই।

তাই যাঁরা শিক্ষিত, যাঁরা আর্থিক-সামাজিক উন্নয়নের মাপকাঠিতে এগিয়ে রয়েছেন, তাঁদেরই এই সব তথ্য অবহেলিত সেই সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে হবে। কারণ, মানুন, না-মানুন সমাজকে এগিয়ে নিয়ে চলার দায়বদ্ধতা আমাদের সকলের উপরেই বর্তায়। এবং সার্বিক ভাবে আশেপাশের সকলে ভাল থাকলে, তার সুফল প্রতিফলিত হয় গোটা সমাজে।

তা ছাড়া, সমাজের পিছিয়ে থাকা দুঃস্থ মানুষের জন্য কিছু করার বড় সুযোগ এটা। কাজটি কঠিন নয়। চাই একটু উদ্যোগ। মূল দায়িত্ব, প্রকল্পগুলি বোঝাতে হবে। সাহায্য করতে হবে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলা এবং প্রকল্পের ফর্ম ভর্তি করাতে। যাঁদের আগে থেকেই অ্যাকাউন্ট আছে, তাঁদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটি আরও সহজ। মোদ্দা কথা, এঁদের হাত ধরে বিমা এবং পেনশনের দরজায় পৌঁছে দিতে হবে। এই ব্যাপারে কে কী করতে পারেন তা একনজরে দেখব।

আমাদের পাশে এমন অনেক মানুষ থাকেন, যাঁদের এই ধরনের বিমা বা পেনশনের প্রয়োজন অত্যন্ত বেশি। ঘরের দৈনন্দিন কাজ ও রান্নায় যাঁরা সাহায্য করেন, ড্রাইভার, পরিচিত হকার, নানা ধরনের মিস্ত্রি, গ্যাসের ডেলিভারি বয় থেকে শুরু করে অল্প রোজগেরে এবং পিছিয়ে থাকা শ্রেণির সকলেই যাতে সুবিধা নিতে পারেন, তার জন্য সচেষ্ট হওয়া যায়। শিক্ষিত ও সচ্ছল প্রত্যেক মানুষ যদি মাত্র তিন জন করে অবহেলিত মানুষের বিমা ও পেনশন করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নেন, তবেই কাজটা দ্রুত এগোয়।

প্রত্যেক দোকান মালিক নিজের নিজের কর্মচারীদের বিমা করিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিতে পারেন।

বিমা ও পেনশন করানোর দায়িত্ব নিতে পারে এনজিও এবং পাড়ার ক্লাবগুলিও।

শিল্পাঞ্চলে এই দায়িত্ব নিতে পারেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা।

সাহায্য করতে পারেন অবসরপ্রাপ্ত প্রবীণ নাগরিকেরা।

এই ব্যাপারে উদ্যোগী হতে পারে মহিলা সমিতিগুলি।

সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারেন ব্যাঙ্ককর্মীরা।

উদ্যোগী হতে পারে বিভিন্ন এলাকার গ্রাম পঞ্চায়েতগুলি।

সমাজসেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে পারেন অসংখ্য বিমা এবং বিনিয়োগ এজেন্ট।

শুনলে ভাল লাগবে, ৯ মে এই তিনটি সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্প আনুষ্ঠানিক ভাবে চালু হওয়ার পরে ২০ দিনের মধ্যে দেশ জুড়ে প্রকল্পগুলিতে যোগ দিয়েছেন ৮.৫২ কোটিরও বেশি মানুষ। কিছু দিন আগে প্রধানমন্ত্রীই এ কথা জানান।

ভেবে দেখুন

আয় অল্প হলে, তা খরচ করার ক্ষেত্রে পঞ্চাশটা চিন্তা মাথায় আসে। সামাজিক সুরক্ষা প্রকল্পগুলিতে নাম লেখানোর সময়েও হয়তো সেই খরচের কথাটা ভাবাবে। দুশ্চিন্তা হবে কোথা থেকে প্রিমিয়ামের সংস্থান হবে, তা নিয়ে। এই অবস্থায় কয়েকটি কথা মাথায় রাখলে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক সুবিধা হবে।

কোনও অবাঞ্ছিত পরিস্থিতির বিরুদ্ধে আগে থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলা জরুরি। দুর্ঘটনা বিমাই হোক বা জীবনবিমা কিংবা পেনশনের ব্যবস্থা, সবগুলিই আরও বেশি খারাপ সময় থেকে বাঁচার বা পরিবারকে বাঁচানোর ঢাল হতে পারে।

মাসে মাত্র ৭০.৫০ টাকায় ১৮ বছর বয়সের একজন নাগরিক ২ লক্ষ টাকার দুর্ঘটনা বিমা, ২ লক্ষ টাকার জীবনবিমা এবং শেষ বেলায় ১০০০ টাকার মাসিক পেনশনের ব্যবস্থা করতে পারেন।

৪০ বছর বয়স্ক একজন মানুষের একই সুবিধার জন্য সর্বসাকুল্যে খরচ পড়বে ৩১৯.৫০ টাকা।

বয়স ৪০-এর বেশি হলে প্রথম দু’টি সুবিধা আপনি নিতে পারেন। খরচ মাত্র ২৮.৫০ টাকা। বড় জোর একবেলার নিরামিষ খাওয়ার খরচ।

লেখক বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE