All you need to know about how Israel becomes a Nuclear Power dgtl
Nuclear Power of Israel
গুপ্তচরবৃত্তি থেকে চুরি! আমেরিকাকে বোকা বানিয়ে পরমাণু শক্তি হাতে পেতে হলিউডকেও কাজে লাগায় ইজ়রায়েল
ইজ়রায়েলের জন্ম ১৯৪৮ সালে। আর তখন থেকে সে দেশের পারমাণবিক আকাঙ্ক্ষারও সূত্রপাত। ইজ়রায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়ন বিশ্বাস করতেন যে, এ বিশ্বে টিকে থাকার জন্য পরমাণু অস্ত্র থাকা অপরিহার্য।
আনন্দবাজার ডট কম ডেস্ক
শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০২৫ ১০:৫৪
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২৭
১৯৮১ সালে ইরাক এবং ২০০৭ সালে সিরিয়ার পর ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ভেস্তে দিতে উঠেপড়ে লেগেছে ইজ়রায়েল। এর নেপথ্যে রয়েছে ‘বেগিন ডকট্রিন’। ১৯৭৭-’৮৩ সাল পর্যন্ত ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন মেনাহেম বেগিন। চারদিকে শত্রুবেষ্টিত হওয়ায় ইহুদি ভূমির নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে বিশেষ একটি নীতির প্রচলন করেন তিনি। এরই নাম ‘বেগিন ডকট্রিন’।
০২২৭
১৯৮১ সালে ‘অপারেশন অপেরা’ নামে অভিযান চালিয়ে ইরাকের ওসিরাক পরমাণু চুল্লিতে ইজ়রায়েলি হামলার পর ‘বেগিন ডকট্রিন’ নীতি তৈরি হয়। এতে বলা হয়, কোনও দিক থেকে বিপদের আশঙ্কা থাকলে আগাম আক্রমণ করে আগেই তা গুঁড়িয়ে দিতে হবে।
০৩২৭
২০০৭ সালে ‘অপারেশন অর্চার্ড’-এর মাধ্যমে সিরিয়াতেও একটি পরমাণু চুল্লি ধ্বংস করে ইজ়রায়েল। এর পর ২০২৫-এ ইরানে হামলা। গত ৪৪ বছর ধরে নিজেদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি পূরণ করে চলেছে ইজ়রায়েল।
০৪২৭
ইরানের পরমাণু কর্মসূচির পথে ইজ়রায়েল অন্তরায় হয়ে রয়েছে অনেক দিন ধরে। ২০১০ সালে ইরানের পরমাণু কর্মসূচিতে সাইবার হানা শুরু করে। ২০২৫-এ সরাসরি সংঘাতে নেমেছিল দুই দেশ।
০৫২৭
তবে পশ্চিম এশিয়ায় এমন একটি দেশও রয়েছে যে গত পাঁচ দশক ধরে গোপনে নিজেদের পরমাণু অস্ত্রের ভাঁড়ার বাড়িয়ে চলেছে। আর সেই দেশ হল খোদ ইজ়রায়েল। মনে করা হয় বর্তমানে ইজ়রায়েলের কাছে প্রায় ৯০টি পরমাণু বোমা মজুত রয়েছে।
০৬২৭
ইজ়রায়েল কী ভাবে এত বিশাল পারমাণবিক অস্ত্রভান্ডারের মালিক হল, তা হলিউডের সিনেমাকেও হার মানাবে। আর যদি হলিউডে কোনও প্রযোজক সেই সিনেমা বানান, তা হলে আর্নন মিলচানের চেয়ে ভাল আর কেউ ছবিটির প্রযোজনা করতে পারবেন না।
০৭২৭
কারণ মনে করা হয় ‘প্রিটি উওম্যান’, ‘এলএ কনফিডেনশিয়াল’, ‘মিস্টার অ্যান্ড মিসেস স্মিথ’, ‘ফাইট ক্লাব’, ‘দ্য রেভেন্যান্ট’ এবং ‘১২ ইয়ার্স আ স্লেভ’-এর মতো সফল হলিউড প্রযোজক মিলচান নিজেই হলিউডে ইজ়রায়েলি গুপ্তচর সংস্থা মোসাদের হয়ে কাজ করেছিলেন। লস অ্যাঞ্জেলসে নিজের পরিচিতি ব্যবহার করে নাকি ইজ়রায়েলের পরমাণু কর্মসূচির জন্য প্রযুক্তি এবং ইউরেনিয়াম সংগ্রহ করেছিলেন তিনি।
০৮২৭
ইজ়রায়েলের জন্ম ১৯৪৮ সালে। আর তখন থেকে সে দেশের পারমাণবিক আকাঙ্ক্ষারও সূত্রপাত। ইজ়রায়েলের প্রথম প্রধানমন্ত্রী ডেভিড বেন-গুরিয়ন বিশ্বাস করতেন যে, এ বিশ্বে টিকে থাকার জন্য পরমাণু অস্ত্র থাকা অপরিহার্য।
০৯২৭
ইজ়রায়েলের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে গবেষণা করা ইতিহাসবিদ অ্যাভনার কোহেন তাঁর বই, ‘দ্য ওর্স্ট-কেপ্ট সিক্রেট: ইজ়রায়েলের বার্গেন উইদ দ্য বম্ব’-এ লিখেছেন যে পরমাণু অস্ত্র তৈরির নেশায় বুঁদ হয়েছিলেন গুরিয়ন। তিনি বলেছিলেন, ‘‘আইনস্টাইন, ওপেনহাইমার এবং টেলর— তিন জনই ইহুদি। এঁরা আমেরিকার পরমাণু বোমা তৈরিতে অবদান রেখেছেন। আমার বিশ্বাস ইজ়রায়েলের বিজ্ঞানীরাও তাঁদের নিজস্ব জনগণের জন্য তা করতে পারবেন।’’
১০২৭
১৯৪০-এর শেষের দিকে ইজ়রায়েলি বিজ্ঞানীদের অনেকেই ইউরোপ এবং আমেরিকা থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে পরমাণু প্রযুক্তি নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। গবেষণা তদারকি করার জন্য ১৯৫২ সালে ইজ়রায়েলি অ্যাটমিক এনার্জি কমিশন (আইএইসি) তৈরি হয়। প্রাথমিক ভাবে ইজ়রায়েলের পরমাণু কর্মসূচির জন্য পরিকাঠামো, প্রযুক্তি এবং উপকরণের অভাব ছিল। ফলে সে সব দিক থেকে নিজেদের শক্তিশালী করতে গোপন কৌশল খাটাতে শুরু করে ইজ়রায়েল।
১১২৭
১৯৫৭ সালে ফ্রান্সের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি করে ইজ়রায়েল। ইজ়রায়েলের নেগেভ মরুভূমিতে ডিমোনা পরমাণুকেন্দ্রের জন্য ২৪-মেগাওয়াট পরমাণু চুল্লি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করতে সম্মত হয় ফ্রান্স। যদিও সেই চুক্তির কথা সারা বিশ্বের কাছে গোপন রেখেছিল ইজ়রায়েল। এমনকি, বন্ধু আমেরিকাও সে বিষয়ে ঘুণাক্ষরে টের পায়নি।
১২২৭
কিন্তু কেন ইজ়রায়েলকে সাহায্য করেছিল ফ্রান্স? কোহেন তাঁর বইয়ে লিখেছেন, ১৯৫৬ সালের সুয়েজ খাল সঙ্কটের সময় ফ্রান্সকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল ইজ়রায়েল। তা ছাড়া, উত্তর আফ্রিকায় উপনিবেশগুলিকে রক্ষা করার জন্য ইজ়রায়েল ছিল ফ্রান্সের গোয়েন্দা তথ্যের প্রাথমিক উৎস।
১৩২৭
আর সে কারণেই ইজ়রায়েলকে পরমাণু শক্তি হাতের মুঠোয় আনতে সাহায্য করেছিল ফ্রান্স। প্লুটোনিয়াম পুনঃপ্রক্রিয়াকরণের জন্য নকশাও সরবরাহ করেছিল, যা পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ফ্রান্সের সাহায্যে পেয়ে ইজ়রায়েলের স্বপ্নের ভিত তৈরি হলেও স্বপ্নপূরণের জন্য আরও অনেক গুরুত্বপূর্ণ জিনিসের প্রয়োজন ছিল, বিশেষ করে ইউরেনিয়াম এবং প্রযুক্তিগত দক্ষতা।
১৪২৭
১৯৫৮ সালের শেষের দিকে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট হন চার্লস দ্য’গল। তিনি ফ্রান্স-ইজ়রায়েলের মধ্যে পারমাণবিক সখ্য বন্ধ করার চেষ্টা করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, ইজ়রায়েলি পরমাণুকেন্দ্রে কী হচ্ছে তা বিশ্বের কাছে তুলে না ধরলে তিনি ইজ়রায়েলকে ইউরেনিয়াম সরবরাহ করবেন না।
১৫২৭
ফলে পরমাণু কর্মসূচি এগিয়ে নেওয়ার জন্য ইজ়রায়েলের কাছে সেই সময় একমাত্র উপায় ছিল চরবৃত্তি। বলা হয়, ইউরোপ এবং আমেরিকার ইহুদি বিজ্ঞানীদের একটি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে গোপন পরমাণু প্রযুক্তি কুক্ষিগত করে ইজ়রায়েল।
১৬২৭
জানা গিয়েছিল, ইজ়রায়েলি চরেরা ইজ়রায়েলের প্রতি সহানুভূতিশীল ইহুদি-আমেরিকান বিজ্ঞানীদের মাধ্যমে আমেরিকার পরমাণুকেন্দ্র থেকে গোপন তথ্য পাচার করাত। সেই তথ্য এবং প্রযুক্তি কাজে লাগিয়েই পরমাণু অস্ত্র তৈরির চাবিকাঠি গড়ে ফেলেছিল ইজ়রায়েল।
১৭২৭
এত কিছুর পরেও পরমাণু অস্ত্র তৈরির প্রাণভোমরা ইউরেনিয়াম ইজ়রায়েলের হাতে আসেনি। ইজ়রায়েলের কাছে ইউরেনিয়াম ছিল দুর্লভ এক পদার্থ। তাই ইউরেনিয়াম পেতে নতুন করে গোপন অভিযান চালাতে শুরু করে ইহুদি চরেরা।
১৮২৭
এর মধ্যে সবচেয়ে কুখ্যাত ঘটনাটি ঘটে ১৯৬০-এর দশকের মাঝামাঝি। আমেরিকার পেনসিলভানিয়ার অ্যাপোলোয় অবস্থিত ‘নিউক্লিয়ার ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট কর্পোরেশন’ থেকে প্রায় ২০০-৬০০ পাউন্ড অত্যন্ত সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম উধাও হয়ে যায়। আমেরিকার নাকের নীচ দিয়ে বেরিয়ে যায় সেই ইউরেনিয়াম।
১৯২৭
১৯৬৯ সালের ১৯ জুলাই আমেরিকার তৎকালীন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হেনরি কিসিঞ্জার লিখেছিলেন, ‘‘পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণ রয়েছে যে ইজ়রায়েলের পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় কিছু উপাদান ১৯৬৫ সালে অবৈধ উপায়ে আমেরিকা থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।’’
২০২৭
২০১৪ সালের ‘বুলেটিন অফ দ্য অ্যাটমিক সায়েন্টিস্টস’-এর একটি প্রতিবেদনে উদ্ধৃত গোয়েন্দা নথি দৃঢ় ভাবে ইঙ্গিত দেয় যে, পেনসিলভানিয়া থেকে উধাও হওয়া ইউরেনিয়াম পাঠানো হয়েছিল ইজ়রায়েলে এবং সেটি ইহুদি দেশে পাঠাতে সম্ভবত সাহায্য করেছিলেন ‘নিউক্লিয়ার ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট কর্পোরেশন’-এর মালিক জালমান শাপিরো। জালমান এক জন ইহুদি সহানুভূতিশীল হিসাবে পরিচিত ছিল।
২১২৭
মনে করা হয় পরমাণু অস্ত্র তৈরিতে ব্যবহৃত গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন উপকরণ সংগ্রহের জন্য কিছু সংস্থাও তৈরি করেছিল ইজ়রায়েল। ভিক্টর গিলিনস্কির ২০০৪ সালের ‘দ্য ননপ্রলিফারেশন রিভিউ’-তে প্রকাশিত নিবন্ধ অনুযায়ী, ইজ়রায়েলের ‘ম্যাটেরিয়ালস অ্যান্ড ইকুইপমেন্ট এক্সপোর্ট কর্পোরেশন’-এর মতো সংস্থাগুলি ইউরোপ এবং আমেরিকা থেকে ইজ়রায়েলি পরমাণুকেন্দ্র ডিমোনায় ইউরেনিয়াম এবং অন্যান্য প্রযুক্তি সরবরাহ করেছিল।
২২২৭
১৯৬৮ সালে ভূমধ্যসাগরের মাঝখানে ইউরেনিয়াম আকরিক ভর্তি একটি সম্পূর্ণ মালবাহী জাহাজ নিখোঁজ হয়ে যায়। মনে করা হয় এর নেপথ্যও ছিল মোসাদ। ইজ়রায়েলের পরমাণু চুল্লির জন্য প্রয়োজন ছিল ডিউটেরিয়াম অক্সাইড বা ‘ভারী জল’ও। তার জন্য ব্রিটেন এবং নরওয়ের দিকে ঝুঁকেছিল ইজ়রায়েল। নরওয়ের কাছ থেকে ২০ টন ডিউটেরিয়াম অক্সাইড কিনেছিল ব্রিটেন। ব্রিটেনের থেকে আবার গোপনে সেই পদার্থের কিছুটা কিনে নেয় ইজ়রায়েল।
২৩২৭
১৯৬৪ সালের মধ্যে ইজ়রায়েলের ডিমোনা পারমাণবিক চুল্লি সক্রিয় হয়ে ওঠে, যা পরমাণু অস্ত্র তৈরির জন্য প্লুটোনিয়াম তৈরি করত। প্লুটোনিয়াম পৃথকীকরণের জন্য একটি অত্যন্ত গোপন ভূগর্ভস্থ ব্যবস্থাও ছিল সেখানে। মনে করা হয়, ইজ়রায়েলের সরকারি মহলেরও খুব কম লোকই এর অস্তিত্ব সম্পর্কে জানতেন।
২৪২৭
এর পর আমেরিকাও ডিমোনা নিয়ে সন্দীহান হয়ে ওঠে। ৬০-এর দশকে কমপক্ষে তিন বার ডিমোনা পরিদর্শন করে আমেরিকা। তবে আমেরিকার তরফে জানানো হয় যে, ডিমোনায় পরমাণু অস্ত্র তৈরির কোনও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ প্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি। মনে করা হয়, এ ক্ষেত্রে আমেরিকাকেও বোকা বানিয়েছিল ইজ়রায়েল।
২৫২৭
অনুমান করা হয়, ১৯৬৭ সাল নাগাদ ইজ়রায়েলের হাতে প্রথম পরমাণু অস্ত্র আসে। ১৯৭০-এর দশকেও আমেরিকায় মোসাদের গোপন কার্যকলাপ অব্যাহত ছিল। আর তখনই হলি প্রযোজক মিলচানকে নাকি ব্যবহার করেছিল ইজ়রায়েল।
২৬২৭
মনে করা হয়, ১৯৬৫ সালে মিলচানকে নিয়োগ করেছিলেন ইজ়রায়েলের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট শিমন পেরেস। গুরুত্বপূর্ণ ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ প্রযুক্তি সুরক্ষিত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে। ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধিকরণ প্রযুক্তির বেশ কিছু ‘ব্লুপ্রিন্ট’ও নাকি তিনি চুরি করেছিলেন ইজ়রায়েলের হয়ে।
২৭২৭
মজার বিষয় হল, ইজ়রায়েল এবং ইরান উভয়েরই পরমাণু কার্যকলাপ চুরি করা ওই একই ব্লুপ্রিন্টের উপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছিল। আর সেই ইরানকেই পরমাণু কার্যকলাপ বন্ধ করার হুমকি দিয়ে কয়েক দিন আগে সে দেশে হামলা চালাচ্ছিল ইজ়রায়েল।