All you need to know about Navy Day of India and Operation Trident dgtl
Navy Day
বোকা বানাতে রুশ ভাষা, বিশেষ অস্ত্রে তছনছ করাচি বন্দর! ভারত বদলা নেয় ‘অপারেশন ট্রাইডেন্ট’ দিয়ে
ভারতীয় নৌবাহিনীর বিশেষ অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত উৎসাহের সঙ্গে পালন করে সারা দেশ। ভারতীয় নৌবাহিনীর বীরত্ব ও দেশের সামুদ্রিক সীমানা রক্ষায় তাদের ভূমিকা এবং আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতেই নৌবাহিনী দিবস উদ্যাপিত হয় ভারতে।
আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক
শেষ আপডেট: ০৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৪:২৩
Share:Save:
এই খবরটি সেভ করে রাখার জন্য পাশের আইকনটি ক্লিক করুন।
০১২১
প্রতি বছর ৪ ডিসেম্বর ‘নৌবাহিনী দিবস’ পালন করে ভারতীয় নৌবাহিনী। ২০২৪ সালেও তার অন্যথা হয়নি। বুধবার হইহই করে এই দিনটি উদ্যাপন করেছে ভারত। সেই উদ্যাপনে যোগ দিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুও। ওড়িশার পুরী সৈকতে ভারতীয় নৌসেনা আয়োজিত অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি।
০২২১
‘নৌবাহিনী দিবস’ পালন করা হয়েছে মুম্বইয়েও। এই উপলক্ষে ঢেলে সাজানো হয় বাণিজ্যনগরীর ‘গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়া’কে। ভারতীয় নৌবাহিনীর অভিজাত মার্কোস কম্যান্ডোরা তাঁদের নির্ভুল এবং উন্নত যুদ্ধ প্রশিক্ষণ প্রদর্শনীর মাধ্যমে দর্শকদের মুগ্ধ করেন। জাতীয় নিরাপত্তায় ভারতীয় নৌসেনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথাও তুলে ধরা হয় সেই প্রদর্শনীতে।
০৩২১
নৌবাহিনীর হেলিকপ্টার, যুদ্ধবিমানের ‘এয়ার শো’ পুরী এবং মুম্বই— উভয় শহরের আকাশকে জীবন্ত করে তুলেছিল। দর্শক এই দৃশ্য দেখার জন্য পুরীর সৈকত এবং মুম্বইয়ের তাজ প্যালেস হোটেল চত্বর ও রোড সেন্টারের কাছে জড়ো হয়েছিল। মুম্বই এবং পুরী ছাড়া ভারতের অন্য জায়গাতেও এই দিনটি পালন করা হয়।
০৪২১
কিন্তু কেন এই দিনটি ভারতীয় নৌসেনার কাছে এত গুরুত্বপূর্ণ? কেনই বা এই দিনটিকে নৌবাহিনী দিবস হিসাবে পালন করা হয়?
০৫২১
ভারতীয় নৌবাহিনীর বিশেষ দিনটি উৎসাহের সঙ্গে পালন করে সারা দেশ। ভারতীয় নৌবাহিনীর বীরত্ব ও দেশের সামুদ্রিক সীমানা রক্ষায় তাদের ভূমিকা এবং আত্মত্যাগকে সম্মান জানাতেই নৌবাহিনী দিবস উদ্যাপিত হয় ভারতে।
০৬২১
তবে এর পাশাপাশি এক অন্য ইতিহাসও রয়েছে নৌদিবস পালনের নেপথ্যে। দিনটি ভারতীয় নৌসেনার ‘অপারেশন ট্রাইডেন্ট’-এর সাফল্যের কথা মনে করিয়ে দেয়।
০৭২১
‘অপারেশন ট্রাইডেন্ট’ ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সময়ের এমন এক নৌ অভিযান, যা ভারতীয় নৌবাহিনীর ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রতীক। ফলে নৌদিবস শুধু বিজয় উদ্যাপনের দিন নয়, নৌবাহিনীর আত্মত্যাগ এবং নিরলস প্রচেষ্টাকেও স্বীকৃতি দেওয়ার দিন।
০৮২১
২৫ মার্চ, ১৯৭১। পশ্চিম পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বাংলাদেশ (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান) জনগণের উপর নৃশংস ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে ৩ ডিসেম্বর ভারত আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই যুদ্ধে যোগদান করে।
০৯২১
নৌবাহিনী দিবসের শিকড় ১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের মধ্যেই নিহিত। ৩ ডিসেম্বর ভারতীয় বিমানঘাঁটিতে আকস্মিক হামলা চালায় পাকিস্তান। পাকিস্তানের হামলা সামলে পাল্টা হামলার পরিকল্পনা করে ভারতও।
১০২১
‘অপারেশন ট্রাইডেন্ট’ হয় ঠিক এক দিন পর, অর্থাৎ ৪ ডিসেম্বর। ওই দিন রাতে এক বিশেষ অভিযানে নামে ভারতীয় নৌসেনা।
১১২১
৪ ডিসেম্বর রাতে ভারতীয় নৌবাহিনী করাচি বন্দরে পাক নৌ সদর দফতরে অভিযান চালায়।
১২২১
১৯৬৫ সালের ভারত-পাক যুদ্ধের পরেই রাশিয়া থেকে একাধিক ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বোট আনিয়েছিল ভারত। তার মধ্যে তিনটি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বোট ছিল ‘অপারেশন ট্রাইডেন্ট’-এর মূল হাতিয়ার।
১৩২১
আইএনএস বীর, আইএনএস নিপাত এবং আইএনএস নির্ঘাত— সেই তিনটি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বোট-সহ আরও কয়েকটি ‘বিদ্যুৎ’ শ্রেণির ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বোট নিয়ে করাচি বন্দরের দিকে রওনা দেয় ভারতীয় রণতরী।
১৪২১
আইএনএস বীর, আইএনএস নিপাত এবং আইএনএস নির্ঘাতের জ্বালানি ক্ষমতা কম ছিল। আর সেই কারণেই ওই তিনটি ক্ষেপণাস্ত্রবাহী বোট নিয়ে যাওয়া হয় ভারতীয় রণতরীর সঙ্গে বেঁধে। যাত্রাপথে ভারতীয় নাবিক ও অফিসারেরা রুশ ভাষায় কথা বলে একে অপরের সঙ্গে রেডিয়োয় যোগাযোগ রাখছিলেন। পাকিস্তানি রাডারে যাতে তাঁরা ধরা না-পড়ে যান, তার জন্য এই কৌশল। উত্তর আরব সাগরে ভারতীয় গতিবিধির সন্ধানে থাকা পাকিস্তানি নৌসেনাকে বোকা বানানোর জন্যই ছিল সেই উদ্যোগ।
১৫২১
করাচি বন্দর তখনও ৪০ কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে ভারতীয় নৌসেনার নজরে পড়ে যে, পাক বন্দর পাহারা দিচ্ছে সে দেশের রণতরী পিএনএস খাইবার। এই সেই পিএনএস খাইবার, যা দিয়ে ’৬৫-এর যুদ্ধের সময় গুজরাতের উপকূলে হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তান।
১৬২১
পিএনএস খাইবারকে দেখামাত্র আইএনএস নির্ঘাতকে পথ বদলে পাক রণতরীর উপর হামলার নির্দেশ দেন আইএনএস নিপাতের স্কোয়াড্রন কম্যান্ডার বব্রু যাদব।
১৭২১
রাত ১১টা নাগাদ পিএনএস খাইবারে হামলা চালায় আইএনএস নির্ঘাত। অতর্কিত হামলায় ঘাবড়ে যায় পাক নৌসেনা। অন্ধকারে এলোপাথাড়ি গুলি চালাতে থাকে তারা। অন্য দিকে, আইএনএস নির্ঘাতের একের পর এক নির্ভুল ক্ষেপণাস্ত্র হানায় পাক রণতরীর ইঞ্জিনের কক্ষে আগুন ধরে যায়। দুই শতাধিক পাক সেনাকে নিয়ে ডুবে যায় পিএনএস খাইবার। ১৯৬৫-র বদলা নেয় ভারত।
১৮২১
এর পরে আরও তিনটি পাক নৌজাহাজে হামলা চালিয়ে সেগুলি ধ্বংস করে দেয় ভারতীয় নৌবাহিনী। ধ্বংস হওয়া জাহাজগুলির মধ্যে একটি আমেরিকা থেকে পাওয়া অস্ত্র নিয়ে করাচি বন্দরের দিকে যাচ্ছিল।
১৯২১
জাহাজগুলি ধ্বংস করার পর করাচি বন্দরের পাক নৌসেনা দফতরেও হামলা চালিয়েছিল ভারতীয় নৌসেনা। প্রাণ হারিয়েছিল প্রতিবেশী দেশের শত শত সেনা। কমোডর কাসরগোড় পটনাশেট্টী গোপাল রাওয়ের নেতৃত্বে সমুদ্রে নিজেদের শক্তির প্রমাণ দিয়েছিল ভারতীয় নৌবাহিনী।
২০২১
এই মিশনের সময় উৎসর্গ করা জীবনকে সম্মান জানাতে ৪ ডিসেম্বর নৌবাহিনী দিবস পালিত হয়। এটি ভারতের জলরক্ষায় নৌবাহিনীর অগ্রণী ভূমিকার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে এবং এর অবদান সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর সুযোগ হিসাবে কাজ করে।
২১২১
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর প্রায় ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা ভারতীয় সেনাবাহিনীর সামনে অস্ত্র নামিয়ে রাখে। এই দিনটিকে ভারতের শৌর্যের ইতিহাসে একটি সোনালি দিন বলে মনে করা হয়। ভারতকে সেই ঐতিহাসিক জয় এনে দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ভারতীয় নৌবাহিনী।