সফরে ২৩তম ভারত-রাশিয়া বার্ষিক শীর্ষবৈঠকে যোগদান করবেন পুতিন। পাশাপাশি, শুক্রবার দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসের বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা সংক্রান্ত একাধিক চুক্তি সই হতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম, রাশিয়া থেকে আরও এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কেনা। ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ‘বন্ধু’ বলে অভিহিত করে পুতিন জানিয়েছেন, ভারত সফরের জন্য মুখিয়ে রয়েছেন তিনি। এই সফরে ভারত এবং রাশিয়ার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সমঝোতা নিয়ে বহু আলোচনা হবে বলেও জানান মস্কো-প্রধান।
রুশ প্রেসিডেন্টের ভারত সফরের আগে পাঁচস্তরীয় নিরাপত্তাবলয় প্রস্তুত করা হয়েছে। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, রাশিয়া থেকে জনা পঞ্চাশ শীর্ষ নিরাপত্তাকর্মী আগেই দিল্লি পৌঁছে গিয়েছিলেন। রাশিয়ার শীর্ষনেতার সুরক্ষা নিশ্চিত করার জন্য অত্যাধুনিক নিরাপত্তা জাল মোতায়েন করা হয়েছে রাজধানীর বুকে। পৃথিবীর ক্ষমতাধর রাষ্ট্রপ্রধান বিদেশসফরে গেলেই দু’টি বিশেষ বাহনের উপস্থিতি নজর কাড়ে বিশ্বের।
মার্কিন প্রেসিডেন্টের যেমন ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’, ঠিক তেমনই পুতিনের রয়েছে ‘উড়ন্ত ক্রেমলিন’ ইলিউশিন আইএল–৯৬–৩০০ পিইউ । একে বিমান না বলে উড়ন্ত দুর্গ বলাই শ্রেয়। বিশেষ ভাবে তৈরি এই বিমানে চড়েই রাশিয়া থেকে ভারতে উড়ে এসেছেন রুশ প্রেসিডেন্ট। দীর্ঘপাল্লার, চার ইঞ্জিনযুক্ত রুশ বিমানটি যেন ছোটখাটো এক প্রাসাদ। কী নেই তাতে!
ইলিউশিন ডিজ়াইন ব্যুরো ১৯৮০ সালে দূরপাল্লার এই রুশ বিমানটি তৈরি করে। এটি ১৯৮৮ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথম বার আকাশে উড়েছিল। ১৯৯০ সাল থেকে নিরবচ্ছিন্ন ভাবে রুশ প্রেসিডেন্টের বিদেশ সফরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিমানটি। আইএল-৯৬-৩০০পিইউ দূরপাল্লার আইএল-৯৬ প্ল্যাটফর্মে তৈরি, যার দৈর্ঘ্য ৫৫ দশমিক ৩৫ মিটার এবং ডানা বা উইংস্প্যান ৬০ দশমিক ১২ মিটার।
‘ফ্লাইং ক্রেমলিন’-এ রয়েছে উন্নত এনক্রিপ্টেড যোগাযোগ ব্যবস্থা, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা এবং ইলেকট্রনিক জ্যামিং প্রযুক্তি। মাঝ-আকাশে হ্যাকিং বা কোনও বাধা তৈরি হলে তা রুখে দেওয়ার সমস্ত কঠোর সুরক্ষার বন্দোবস্ত করা রয়েছে বিমানে। শত্রুপক্ষের হামলা থেকে সব রকম ভাবে রাষ্ট্রনেতাকে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দিতে পারে ‘এয়ার ফোর্স ওয়ান’-এর রুশ সংস্করণটি।
বিমানটিতে রয়েছে প্রেসিডেন্টের ব্যক্তিগত ডাইনিং রুম এবং কনফারেন্স রুম। এ ছাড়াও বিমানে সিনিয়র সদস্যদের জন্য আলাদা অফিস রুম আছে। বিমানে সব সময় মজুত থাকে চিকিৎসক এবং প্রেসিডেন্টের জন্য রক্ত। রাস্তায় চলার সময় প্রেসিডেন্টের গাড়ির আগে-পিছে যেমন আরও অন্য গাড়ি থাকে কনভয়ে, তেমন সুরক্ষার জন্য প্রেসিডেন্টের বিমানের আগেও একাধিক নজরদারি বিমান উড়তে থাকে।
প্রেসিডেন্টের বিমানের সুরক্ষাব্যবস্থাও দুর্ভেদ্য দুর্গের মতোই। শত্রুর রাডারের নজর এড়াতে এবং ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা আটকানোর জন্য ইলেকট্রনিক প্রতিরোধ ব্যবস্থা যেমন রয়েছে, তেমনই ক্ষেপণাস্ত্র এড়াতে ইনফ্রারেড ডিকয় ব্যবস্থা বসানো রয়েছে বিমানে। নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা গলে মাছিও যাতে গলতে না পারে তাই এই ব্যবস্থা।
একাধিক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে পুতিনের জেটে একটি ‘পারমাণবিক বোতাম’ রাখা রয়েছে। যদিও এটি এখনও নিশ্চিত নয়। পারমাণবিক বোতাম মূলত একটি জটিল ‘চেন-অফ-কমান্ড সিস্টেম’। কঠোর প্রোটোকল ও সুরক্ষা ব্যবস্থা জড়িয়ে থাকে এর সঙ্গে। একক কোনও ব্যক্তির নির্দেশে এই বোতামটি কার্যকর হয় না। একাধিক নিরাপত্তা ধাপ পেরিয়ে পারমাণবিক আক্রমণের নির্দেশে কোড সম্পূর্ণ করা সম্ভব।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে রাশিয়ার পারমাণবিক অনুমোদন প্রক্রিয়াটি রুশ প্রেসিডেন্টের চেগেট পারমাণবিক ব্রিফকেসের সঙ্গে সংযুক্ত। বিমানের কোনও পৃথক ‘বোতাম’ নেই। যদিও বিভিন্ন দেশের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে প্রয়োজনে জেটটি পারমাণবিক কম্যান্ড পরিচালনা করতে সক্ষম। তবে এ যাবৎ এই বিষয়ে ক্রেমলিন বা মস্কো কেউই কোনও আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেয়নি।
ভারতের আকাশে পুতিনের বিমান প্রবেশের মুহূর্ত থেকে ল্যান্ডিং পর্যন্ত এক দিনে হাজার হাজার বার বিমানটির গতিপথ নজরবন্দি করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট পুতিনের যাত্রাপথটি আঁটসাঁট নিরাপত্তার জালে মুড়ে ফেলে রুশ পাহারদার প্রযুক্তি। ফলে পুরো রুটেই নজিরবিহীন সতর্কতা বজায় রাখা হয়। ভারতীয় আকাশসীমায় প্রবেশের পর বিমানটিকে নজরদারি বিমানের সঙ্গে দেখা গিয়েছে বলে সূত্রের দাবি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy